প্রাকৃতিক ভাবে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে অভূতপূর্ব ৭ টি তথ্য

4.7/5 - (4 votes)

প্রাকৃতিক ভাবে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে অভূতপূর্ব ৭ টি তথ্য

এখনকার দিনে চুল পড়া বা চুল উঠে যাওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। কিন্তু ক্রমাগত চুল পড়ে গেলে আমাদের মাথায় চুলের ঘনত্ব অনেক কমে যায় যার প্রভাব আমাদের সৌন্দর্যের উপর পড়ে। তাই প্রাকৃতিকভাবে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। 

আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ হতে পারে যেরকম, অতিরিক্ত চুলের অযত্ন, অনিয়মিত জীবন যাপন, শারীরিক অসুস্থতা, উচ্চ মাত্রায় পুষ্টি বা নিউট্রেশন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ না করা এবং জেনেটিক্যাল বা বংশগত সমস্যা। 

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় কি ? 

নিয়মিত চুলের যত্ন নেওয়া এবং পরিচর্যা করা আমাদের চুল পড়া বন্ধ করার অন্যতম উপায়। নিয়মিত চুলে তেল দেওয়া এবং জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করা আমাদের চুলের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

চুলে নারকেল তেলের ব্যবহার

আমরা প্রতি সপ্তাহে দুই দিন, এক থেকে দুই ঘন্টার জন্য চুলে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারি। তারপর জৈব বা অর্গানিক শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুলকে ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। 

নারকেল তেল সাহায্য করে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকলগুলির কার্যকারিতা কে বৃদ্ধি করতে যার ফলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয়। নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার করলে আমাদের মাথার ত্বকে বিভিন্ন রকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধু তাই নয় নিয়মিত আমাদের চুলে তেলের ব্যবহার দ্রুত চুল লম্বা করার অন্যতম উপায়। 

চুলে পাতি লেবুর ব্যবহার

আমরা প্রতি সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একদিন ৩০ মিনিটের জন্য আমাদের চুলে পাতিলেবু ব্যবহার করতে পারি । তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। 

পাতিলেবুর মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এই ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সাহায্য করে আমাদের মাথার ত্বকে খুশকি হবার প্রবণতাকে কম করতে যার ফলস্বরূপ আমাদের চুল পড়া বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। 

চুলে ডিমের ব্যবহার

আমরা প্রতি সপ্তাহে একদিন ৩০ মিনিটের জন্য সরাসরি একটি ডিম আমাদের চুলে ব্যবহার করতে পারি। তারপর জৈব বা অর্গানিক শ্যাম্পু প্রয়োগ করে আমাদের চুল ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। 

ডিমের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং জিংক যা আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতাকে কম করে। 

চুলে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর ব্যবহার

প্রতি ১৫ দিনের মধ্যে একদিন আমরা আমাদের চুলে সরাসরি অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী জেল ব্যবহার করতে পারি ৪৫ মিনিটের জন্য তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুলকে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। 

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী জেলের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস থাকে যা সাহায্য করে আমাদের মাথার ত্বকে কোনরকম ইনফেকশন বা সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনাকে কম করতে। শুধু তাই নয় নিয়মিত ঘৃতকুমারী জেল ব্যবহার করলে আমাদের মাথায় খুশকি হবার প্রবণতা অনেক কমে যায়। 

চুলে পেঁয়াজের রসের ব্যবহার

প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন আমরা আমাদের চুলে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারি ৪০ মিনিটের জন্য। তারপর জৈব বা অর্গানিক শ্যাম্পু ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের চুল পরিষ্কার করে ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। 

পেঁয়াজের রসের মধ্যে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট  যা সাহায্য করে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলির কার্যকারীতাকে বৃদ্ধি করতে এবং আমাদের মাথায় নতুন চুল উৎপন্ন করতে। 

এখানে জৈব বা অর্গানিক শ্যাম্পু বলতে বোঝানো হয়েছে সেই প্রকার শ্যাম্পু গুলিকে যার মধ্যে রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ অনেক কম এবং বেশিরভাগটা জৈব প্রকৃতির পদার্থ দিয়ে তৈরি যেমন, নিম শ্যাম্পু, অনিয়ন শ্যাম্পু, অ্যালোভেরা শ্যাম্পু, আলমন্ড শ্যাম্পু ইত্যাদি। 

সঠিক খাদ্যাভ্যাস

বাহ্যিকভাবে চুলের যত্ন নেওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ ততটাই গুরুত্বপূর্ণ আভ্যন্তরীণ দিক থেকে আমাদের চুলের যত্ন নেওয়া। তাই চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে আলোচনায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে অবগত হওয়া আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

আমাদের চুলের জন্য বিশেষ কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল বা খনিজ উপাদানের প্রয়োজন হয় যেরকম, 

  • ভিটামিন এ আমাদের দ্রুত চুল বৃদ্ধির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 
  • ভিটামিন ই সাহায্য করে আমাদের মাথার ত্বকের উপরি অংশের মৃত কোষগুলিকে সরিয়ে নতুন কোষ উৎপন্ন করতে। 
  • ভিটামিন সি সাহায্য করে আমাদের মাথার ত্বকে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমনের সম্ভাবনা কে কম করতে। 
  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, বিশেষ করে ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিন সাহায্য করে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলির কার্যকারিতা কে বৃদ্ধি করতে এবং নতুন চুল উৎপন্ন করতে। 
  • আয়রন এবং জিংক দুটি মিনারেল বা খনিজ উপাদান আমাদের চুলের গঠনের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়।
  • প্রোটিন সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের চুলের জন্য। কারন আমাদের চুল প্রোটিনের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন ছাড়া আমাদের চুল পাতলা হয়ে যায় এবং দ্রুত উঠে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য আমাদের খাবারের তালিকায় নিয়মিত রাখা বিশেষ প্রয়োজন। 

আমাদের চুল পড়া বন্ধ করার জন্য পুষ্টি যুক্ত খাদ্য দৈনিক আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে যেরকম,

  •  দুগ্ধজাত দ্রব্য, পনির, টক দই, দুধ, ঘি ইত্যাদি। 
  • প্রোটিন যুক্ত খাদ্য ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি। 
  •  ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাদ্য অথবা সবুজ শাকসবজি যেরকম ব্রকলি, পালং শাক, ক্যাপসিকাম, গাজর ইত্যাদি। 
  • ভিটামিন ই এবং জিংক সমৃদ্ধ বিভিন্ন প্রকার বাদাম যেরকম আখরোট, কাজুবাদাম, পেস্তা, চিনা বাদাম ইত্যাদি। 

দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ

দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করলে আমাদের মাথায় রক্ত সঞ্চালন খুব ভালোভাবে হয়। অর্থাৎ আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলির মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি এবং অক্সিজেন রক্তের মাধ্যমে খুব সহজেই পৌঁছায়। যার ফলস্বরূপ আমাদের মধ্যে অতিরিক্ত চুল পড়ার প্রবণতা কমে যায়। 

সাধারণত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ আমরা দুই ভাগে ভাগ করে থাকি প্রথমটি কার্ডিও অর্থাৎ দৈনিক একটি নির্দিষ্ট পথ হাটা, দৌড়ানো, লাফ দড়ি করা ইত্যাদি। 

দ্বিতীয়টি ওয়েট লিফটিং অথবা আমাদের শরীরের সর্বস্ব শক্তি প্রয়োগ করে ওজনকে তোলা। এই দুই প্রকার ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ আমাদের চুলের জন্য বিশেষ উপকারী। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি গুলি অবলম্বনের পরেও যদি আপনার চুল পড়া বন্ধ না হয় তাহলে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন।

 
শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

Leave a Comment