আপনি কি স্বপ্ন দেখছেন ফাস্ট ফুডের ব্যবসা খোলার? আজকাল ফাস্ট ফুড কথার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। শিল্পে এটিকে কুইক সার্ভিস রেস্তোরাঁ (QSR) বলা হয়। ভারতের কিউএসআরের মূল্য আগের বছর ছিল ১.৮৫ লক্ষ টাকা এবং পরবর্তীতে এটি অর্থাৎ ২০২৯ সালের ভেতর এটির মূল্য ২.৮০ লক্ষ টাকায় পৌঁছবে। এই ব্যবসা যেমন লাভের তেমন ঝুঁকিপূর্ণও। এটিতে যেমন কারোর লাভ হয় তেমন অনেকের ক্ষতিও হয়। এগুলো ভেবে নিয়েই একজনকে বিনিয়োগ করতে হবে।
ফাস্ট ফুডের ব্যবসার চাহিদা আমাদের দেশে খুব বেড়ে গেছে। বিশেষ করে অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপগুলোর জন্যই এই ব্যবসার চাহিদা আরো বেড়ে চলেছে। আশা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে এটি আরো এগোবে। তাই আপনি যদি নিজের ফাস্ট ফুড ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে এটিই তার উপযুক্ত সময়। খিদে সব মানুষেরই লাগে। নানা মানুষের নানা চাহিদা কেউ এই খাবার খাবে তো কেউ আবার অন্যকিছু। তাই অনেক আইটেমের সঙ্গে শুরু করুন নিজস্ব ব্যবসা।
ফাস্ট ফুড ব্যবসা হল যেটি অনেকগুলো একসাথে বানানো হয় এবং দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হয় মানুষের কাছে। ফাস্ট ফুড ব্যবসায় খাবার মূলত গ্রাহকদের আসার আগেই বানিয়ে রাখা হয়। এছাড়া রাঁধুনিরা অর্ডার আসার সাথে সাথেই খাবার বানিয়ে ফেলে আর যদি আগে থেকেই তৈরি থাকে তাহলে সেটি পরিবেশন করে দেয়। যদি কেউ সেটি বাড়িতে নিয়ে যায় তাহলেও তাকে দিয়ে দেওয়া হয়। চলুন এবার জেনে নিই কিভাবে ফাস্ট ফুড ব্যবসা শুরু করবেন।
কি ধরনের রেস্টুরেন্ট খুলতে হবে
প্রথমেই বলে দিচ্ছি যেকোন কাজ বা ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই ভালো মতো ভেবে নিতে হবে। একটি ব্যবসা তৈরি করার আগে দরকার ভালো প্ল্যানের। এরমধ্যে রয়েছে আপনি যদি রেস্টুরেন্ট খুলতে চান তাহলে কি ধরনের রেস্টুরেন্ট খুলতে চান সেটি আগেই ভেবে নিতে হবে যেমন ভেজ রেস্টুরেন্ট না নন- ভেজ রেস্টুরেন্ট, ফাস্ট ফুডের দোকান নাকি ডাইনিং রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি।
নিজের ক্ষমতা অনুযায়ীই রেস্টুরেন্ট বা ফাস্ট ফুডের দোকান খোলা উচিত। তারপর খুঁজতে হবে উপযুক্ত জায়গা যেখানে রেস্টুরেন্ট দিলে ভালো লাভ হবে মানে মানুষের ভিড় হবে বেশি। এরপর আসছে এই ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা খরচ হয়। ভারতে ছোট করে হলেও ফাস্ট ফুডের ব্যবসা শুরু করতে ১.৫ লক্ষ টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকার খরচ হয়।
ফাস্ট ফুড ব্যবসা শুরু যেগুলোর দরকার হয়:
দোকান ভাড়া
জলের ব্যবস্থা
রান্নাঘরের আসবাবপত্র
বার্নার
রেফ্রিজারেটর
বাসনপত্র
কাঁচামাল (আটা, চাল, আটা ইত্যাদি)
টেবিল-চেয়ার
সজ্জা
প্রিন্টেড মেনু
বিজ্ঞাপন
কর্মী
ফাস্ট ফুড ব্যবসা
প্রথমে খুঁজতে দোকান ভাড়া বা রেস্টুরেন্ট ভাড়ার জায়গা যেখানে আপনি ফাস্ট ফুড ব্যবসা শুরু করতে চাইবেন। যেটি জনবহুল জায়গায় নিতে হবে। যেখানে ভালো আয় হবে। যদি আপনার কাছে খালি জায়গা থাকে তাহলে তো ভালোই আপনার টাকা কিছুটা বাঁচবে। এরপর রান্নাঘরের বাসনপত্র, কাঁচামাল, রেফ্রিজারেটর ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে। এখন আসছি মার্কেটিংয়ে। যেকোনো ব্যবসার মার্কেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ন।
তাই ফাস্ট ফুড ব্যবসায়ও মার্কেটিং দরকার হয়। এর মাধ্যমে আপনি একবছরেই লাইমলাইট পেয়ে যেতে পারেন l যার জন্য করতে হবে পোস্টার, হোর্ডিং বোর্ড, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। এগুলোই মূলত গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভালো মার্কেটিং করার জন্য ভালো মার্কেটিং সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে আপনাকে। আপনি চাইলে ফাস্ট ফুড ব্যবসা শুরু করার আগেই বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করতে পারেন।
তৈরি করতে হবে লাইসেন্স অথবা পারমিট
যেকোনো রেস্টুরেন্ট অথবা ফাস্ট ফুডের ব্যবসা খোলার আগে আপনাকে FSSAI (Food Safety and Standard Authority of India) থেকে অনুমতি নিতে হবে। শুধু তাই নয় আপনি যেই রাজ্যে থাকছেন বা ব্যবসা শুরু করছেন সেখানের বাণিজ্যিক কর বিভাগের সঙ্গে টিআইএন এবং জিএসটি রেসিস্ট্রার করতে হবে। এরপরই বিদ্যুৎ, জল এবং গ্যাসের সংযোগ পাওয়া যাবে। এরপর ঠিক করতে হবে রেস্টুরেন্টের সাজসজ্জা। যেটি আপনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাজাতে পারেন। প্রথমে সাধারণ সাজসজ্জা রাখতে পারেন যেগুলোর পেছনে ৫-১০ হাজার টাকা খরচ হবে। পরবর্তীতে আপনার আয় ভালো হলে সাজসজ্জার পেছন আরো বেশি টাকা খরচা করতে পারেন। যদিও কতটুকু খরচা করবেন সাজসজ্জার পেছন সেটির সিদ্ধান্ত আপনার নিজের উপরই রয়েছে।
এরপর বাছতে হবে মেনু। মেনু ঠিক করতে অনেকেরই সমস্যা হয়। কি কি মেনুতে রাখবেন আর রাখবেন না তা ঠিক করা খুবই কঠিন। এরজন্য আপনাকে সেই এলাকার বাকি রেস্টুরেন্টগুলোর মেনু দেখতে হবে। সেই অনুযায়ী কিছু মেনু রাখবেন আর কিছু আইটেম এমন রাখতে হবে যা অন্য রেস্টুরেন্টে নেই। এতে গ্রাহক বেশি আসবে আপনার রেস্টুরেন্টে। তবে খাবার আইটেমগুলোর দাম কিন্তু বাকি রেস্টুরেন্টগুলোর থেকে কম রাখতে হবে।
এরপর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রেস্টুরেন্টের জন্য ভালো রাঁধুনি ও কর্মী। কর্মী ও রাঁধুনি ভালো হলেই কিন্তু মানুষ আপনার রেস্টুরেন্টে বারবার আসতে বাধ্য হবে। তারা তাদের আচরণ ও রান্নার মাধ্যমে গ্রাহকদের অকৃষ্ট করবে। এটি একটি প্লাস পয়েন্ট হবে আপনার রেস্টুরেন্টের জন্য। তাদের জন্য বিশেষ পোশাকও বানাতে পারেন। যেটিকে আপনার রেস্টুরেন্টের নাম থাকবে। এতে আপনার রেস্টুরেন্টের নাম হবে। এছাড়াও জানতে হবে আপনার প্রতিযোগীরা কারা করার। এতেই আপনি বাজারের ফাঁকগুলো বের করতে পারবেন এবং সেই অনুয়ায়ী কাজ করতে পারবেন।
ফাস্ট ফুড ব্যবসার ধরন
ফাস্ট ফুড ব্যবসার অনেকগুলো ধরন রয়েছে। কি কি সেগুলো জেনে নিন :-
রেস্তোরাঁ বা ডিনার
রেস্তোরাঁ বা ডিনারগুলো খুব খরচের কিন্তু একবার এটি সফল হলে আপনার অনেক লাভ হবে। এটি একটি সম্প্রদায়ের অনুভূতি বাড়ায় মানুষের মধ্যে। এই জায়গাগুলো মূলত বেশিরভাগ মানুষের পছন্দের জায়গা হয়। মানুষ আজকাল একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন তাই রেস্তোরাঁগুলো ভালো লাভ করছে।
ফুড ট্রাক
ফুড ট্রাক হল একটি রান্নাঘর যা রাস্তায় রাস্তায় গ্রাহকদের খাবার সরবরাহ করে। এই ফুড ট্রাকগুলো খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি অনন্য ডাইনিং এবং মানসম্পন্ন খাবারকে এক করে। যদি আপনি নিজে নিজের মালিক হতে চান তাহলে ফুড ট্রাক ব্যবসা আপনার জন্য উপযুক্ত। এখানে আপনি নিজের ইচ্ছে মতো খাবার তৈরি করতে পারেন। এছাড়াও ফুড ট্রাক খুব সাশ্রয়ী ব্যবসা। খুব কম বাজেটে আপনি এটি শুরু করতে পারেন।
ক্যাটারিং সার্ভিস
ক্যাটারিং সার্ভিস এমন একটি ব্যবসা যা বিভিন্ন ইভেন্টে খাবার ও জলের পরিষেবা দেয়। ইভেন্ট যেমন জন্মদিন, বিয়ে, কর্পোরেট ইভেন্ট, ব্যক্তিগত পার্টি ইত্যাদি৷ অনেক ক্যাটারিং সার্ভিস শুধু খাবার সরবরাহ করেনা এরসঙ্গে ওয়েটিং স্টাফ, ড্রপ-অফ ক্যাটারিংও সরবরাহ করে।
টেক আউট এবং ফুড ডেলিভারি
টেকআউট এবং ফুড ডেলিভারি ছোট আকারের ব্যবসা থেকে বড় চেইনের ব্যবস্থাও অফার করে। যদি আপনি টেক আউট ও ডেলিভারি খুলতে চান তাহলে আপনাকে দক্ষতার দিকে নজর রাখতে হবে। এতেই গ্রাহকরা দ্রুত ও সুবিধাজনক বিকল্প খুঁজতে পারবে।
বিশ্বস্ত গ্রাহক বেস বানাতে চাইলে আপনাকে সঠিকভাবে তার মার্কেটিং করতে হবে। মূলত টেক এবং আউট ফুড ডেলিভারি তাদের জন্যই যারা খুব কম খরচে ব্যবসা শুরু করতে চান। যদি আপনি খাবার বানাতে ভালোবাসেন কিন্তু রেস্তোরাঁ বা ক্যাটারিং ব্যবসা চালাতে চান না বা সেটির জন্য মুলধন নেই। তাহলে এই ব্যবসাটি আপনার জন্য উপযুক্ত।
ফাস্ট ফুডের ব্যবসা একটি ভালো ব্যবসা। এই ব্যবসার জন্য দরকার হবে সঠিক পরিকল্পনা, ব্যবসায়িক মডেল, লাইসেন্স ও আধুনিক পেমেন্ট সিস্টেম। এটি অপনাকে ফাস্ট ফুড ব্যবসা শুরু করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। আশা করছি যে এই আর্টিকেলটি আপনার সকল প্রশ্নের উওর দেবে।