আজকের এই পোস্টে আমরা একটি অন্য বিষয়ের উপর তথ্য নিয়ে এসেছি , যার নাম হলো মেটাভার্স । আপনাদের মধ্যে যারা নতুন প্রযুক্তি বা টেকনোলজির উপর আগ্রহ রাখেন আমি নিশ্চিত যে তারা সকলেই হয়তো এর নাম শুনেছেন । কিছু বিশেষজ্ঞ দের মতে metaverse হলো পরবর্তী কম্পিউটার ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি । মেটাভার্স কি ? বর্তমানে কেন এটা এতো জনপ্রিয় ? এছাড়া আরও বেশ কিছু তথ্য নিয়ে আজকের এই পোস্টে আলোচনা করবো
মেটাভার্স কি
মেটাভার্স ইন্টারনেটের এমন একটি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড যা একদম বাস্তব পৃথিবীর মতোই , কিন্তু দেখতে বাস্তব মনে হলেও , আসলে এটি কিন্তু বাস্তব পৃথিবী নয় । এই Metaverse এর দুনিয়ায় আপনি নিজেকে একটা Avatar বা কার্টুন হিসাবে পাবেন যা অবিকল আপনার মতোই দেখতে হবে , এছাড়া আপনি সেই সমস্ত কাজ করতে পারবেন যা আপনি বাস্তব জীবনে করে থাকেন , যেমন আপনি মেটাভার্সে জমি কিনতে পারেন এবং নিজের বাড়ি তৈরী করতে পারেন , আপনি ঘুরতে যেতে পারেন , পার্টি করতে পারেন , বিনোদন করতে পারেন , মিটিং করতে পারেন , কারোর সাথে করতে পারেন , গেম খেলতে পারেন এছাড়া আপনি কোনো ডিজিটাল সম্পত্তি বা asset এর মালিক হতে পারেন , এমনকি ডিজিটাল কারেন্সি অর্থাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারেন , এইসব ছাড়াও আরও অনেক কিছু করতে পারেন ।
কিন্তু আপনি এখানে স্নান করা , খাবার খাওয়া , কাপড় কাঁচা এসব করতে পারবেন না ,মেটাভার্সে সব কিছু বাস্তবের মতো হলেও তা সত্ত্বেও সব কিছু বাস্তব নয় , অনেক টা আমাদের দেখা স্বপ্নের মতো ।
• ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ? cryptocurrency in bengali
সুচিপত্র
১. মেটাভার্সের ধারণা
Metaverse কথাটি ১৯৯২ সালে Author Neal Stephenson এর লেখা বিজ্ঞান ভিত্তিক উপন্যাস Snow Crash থেকে নেওয়া হয়েছে , যেখানে তিনি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড এর সাথে বাস্তব দুনিয়ার কল্পনা করেছেন । এই ধারণাটি কিছুটা বাস্তবের রূপ দেওয়া হয়েছিল ২০০৩ সালে Second Life নামে একটি গেমের মধ্যে দিয়ে , এই গেমে একটি ভার্চুয়াল দুনিয়া দেখানো হয়েছিল যেখানে গেমের সদস্যরা যোগ দিয়ে যে কোনো কাজ করতে পারতো ।
২. মেটাভার্স কেন এতো জনপ্রিয়
২০২০ সালের এই মহামারী আমাদের জীবনযাত্রা কে অনেক পরিবর্তন করে দিয়েছে , অনেকে তাদের জীবিকা হারিয়েছে , আবার অনেকে কাজ থাকলেও তাদের বাড়ি থেকে কাজ করতে হয়েছে মিটিং করতে হয়েছে । এইসময় কিছু অনলাইন প্লাটফর্ম অনেক সহযোগিতা করেছে আমাদের যেমন Zoom , Google Meet , Microsoft Teams এছাড়া আরও অনেক প্লাটফর্ম ।
এতো বছর ধরে এই ভার্চুয়াল দুনিয়া কে বাস্তবের রূপ দেওয়া সম্ভব ছিলোনা , কিন্তু এই মহামারীর পর অনলাইন ও ইন্টারনেটের কাজের এতো জনপ্রিয়তা দেখে মাইক্রোসফট কোম্পানির CEO Satya Nadella Metaverse এর মতো একটি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড Microsoft Mesh এর ঘোষণা করেন । আর কিছু সময় আগে Facebook এর CEO Mark Zuckerberg তার কোম্পানির নাম facebook থেকে Meta করে দেন , এবং এটাও ঘোষণা করেন যে এরপর তাদের কোম্পানি Metaverse কে বাস্তবের রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করবে । আর এরপর থেকেই Metaverse এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠলো ।
৩. মেটাভার্স এর অর্থ কি
মেটাভার্স এর অর্থ হলো এমন একটি দুনিয়া যা আমাদের চিন্তা ভাবনার জগৎ থেকে অনেক বড়ো এবং সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি দুনিয়া । মেটাভার্স কথাটি দুটো আলাদা আলাদা শব্দ দিয়ে তৈরী হয়েছে , একটি মেটা এবং অন্যটি ভার্স , মেটা কথার অর্থ হলো কাল্পনিক কিছু যা আপনার চিন্তা ভাবনার থেকে বড়ো ও ভার্স শব্দের অর্থ হলো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বা ইউনিভার্স । আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে সম্প্রতি ফেসবুক কোম্পানি তার নাম পরিবর্তন করে ফেসবুক থেকে মেটা রেখেছে এবং এর উপর কাজ করছে ।
৪. মেটাভার্স এর উদাহরণ
এরপর আপনাদের এই মেটাভার্সের একটি ছোটো উদাহরণ দেব , যাতে আপনারা এই মেটাভার্স কি সেটা সহজে বুঝতে পারেন । আপনাদের মধ্যে যারা গেম খেলাতে আগ্রহ রাখেন তারা নিশ্চয় PUBG ও Free Fire এই দুটি গেম এর নাম শুনেছেন এবং খেলেছেন । এই গেমে আপনি একটি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড পান যেখানে আপনি বাস্তব জীবনের মতো অনেক কিছু দেখতে পান , যেমন ঘর বাড়ি , গাছ পালা , রাস্তা , পাহাড় , গাড়ি , হেলিকোপটার , মানুষ জন , বাজার হাট , স্কুল , নদী , জঙ্গল ইত্যাদি আরও অনেক কিছু ।
মেটভার্সও ঠিক এমন একটি দুনিয়া হবে যেখানে আপনার মতোই একটা 3D Avatar থাকবে , যেখানে আপনি জমি কিনে বাড়ি তৈরী করা থেকে নিজের মতো সাজানো , জিনিস পত্র কেনা কাটা সব কিছুই খুব সহজে করতে পারবেন । Metaverse দুনিয়া ঠিক এইরকম যা কিছু আপনি ভাবছেন তা মেটাভার্সে আপনি খুব সহজে করতে পারবেন ।
৫. মেটাভার্স এর সুবিধা
মেটাভার্সের সবচেয়ে বড়ো একটি সুবিধা হলো যে Metaverse একটি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড হবার দরুন আপনি কারোর সাথে যে কোনো সময়ে দেখা করা কথা বলা সহজ হয়ে যাবে ।
১. Metaverse এর জন্য আমরা নতুন ভাবে একটি অভিনব প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা পাওয়ার সুযোগ পাবো ।
২. আমাদের এডুকেশন সিস্টেম আগের থেকে অনেক বেশি আগ্রহী ও Visual হয়ে যাবে ।
৩. অফিসের কাজ ও বিভিন্ন কনফারেন্স বা মিটিং আগের থেকে অনেক সহজ হয়ে যাবে এবং প্রোডাক্টিভিটি ও অনেক বৃদ্ধি পাবে ।
৪. আপনি যদি গেম খেলায় আগ্রহ রাখেন তাহলে জেনে রাখুন Metaverse এর দুনিয়ায় গেমিং সেক্টর Next Level এ পৌঁছে যাবে , অর্থাৎ আপনি এখানে গেম খেলে একটা আলাদা অভিজ্ঞতা পাবেন ।
৫. Metaverse এর জন্যে আইটি সেক্টরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু অনলাইন চাকরির বা অনলাইন জব এর সুযোগ পাওয়া যাবে , কারণ এই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ম্যানেজ করতে প্রচুর মানুষের প্রয়োজন হবে ।
৬. নতুন একটু ভার্চুয়াল ইকোনমি তৈরী হবে অর্থাৎ এখানে সকল বিনিয়োগকারীরা ইনভেস্ট করবে কারণ এখান থেকে একটা ইনকামের রাস্তাও থেকে যায় ।
৬. মেটাভার্স এর অসুবিধা
সব জিনিসের সুবিধার সাথে সাথে কিছু না কিছু অসুবিধা থেকেই থাকে , চলুন তাহলে দেখে নি Metaverse এর অসুবিধা গুলি
১. বর্তমানে সকলেই এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া তে আসক্ত হয়ে পড়েছে , আমাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছে যারা ৩০ মিনিট নিজের স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া থাকতে পারে না, সকলের একটা বদঅভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে , যেটা Metaverse আসার পর এর ৪ গুন্ হয়ে যাবে ।
২. Metaverse যেহেতু একটি ভার্চুয়াল দুনিয়া তাই সেখানে থাকতে থাকতে মানুষ Natural অর্থাৎ প্রাকৃতিক জিনিস টা উপভোগ করতে পারবেনা , সাধারনত আমরা বাইরে বের হই মানুষ জন দের সাথে কথা বলি অনেক কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করি , এইসব দিক থেকে অনেক টা মানুষ পিছিয়ে যাবে ।
৩. Physically অর্থাৎ শারীরিক দিকেও এর খারাপ প্রভাব পড়বে , কারণ আপনি যখন ভার্চুয়াল দুনিয়ায় থাকবেন তখন বাস্তব দুনিয়ার থেকে আপনি দূরে থাকবেন , এবার এক জায়গায় বসে আপনি সারাদিন ভার্চুয়াল দুনিয়ায় থাকলে সেটা শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতেই পারে , কারণ সব জিনিস যখন ডিজিটাল হয়ে যাবে তখন আপনার বাইরে যাওয়া , ঘোরা ফেরা , খাওয়া দাওয়া এইসব কিছুর উপর প্রভাব পড়বে ।
৪. Metaverse আপনার প্রাইভেসী বা গোপনীয়তায় অনেক টাই প্রভাব ফেলবে , কারণ Metaverse যখন আপনাকে কোনো সুবিধা প্রদান করবে তখন আপনার ডেটা কে নিশ্চয় ব্যবহার করবে ।
৫. প্রকৃতির বা nature এর থেকে অনেক দূরে হয়ে যাবেন , কারণ আপনি যখন ভার্চুয়াল দুনিয়ায় জীবন যাপন করতে থাকবেন তখন আপনি প্রকৃতি বা nature এর সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবেন না ।
৬. যখন আমরা সমস্ত কাজ ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে করবো , তখন স্বাভাবিক ভাবে Power Consumption অনেক টাই বৃদ্ধি পাবে , এবং তার প্রভাব আমাদের প্রকৃতিতে পড়বে , অর্থাৎ যখন সবাই বেশি অনলাইন অনলাইন থাকবে তখন ইলেক্ট্রিসিটি , ইন্টারনেট এইসব এর বেশি ব্যবহার হবে , এর ফলে ইলেক্ট্রিসিটির চাহিদা বেড়ে যাবে , এবং সেটা আমাদের পরিবেশের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে ।
একনজরে : আজকের এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম ?
প্রথমে জানলাম মেটাভার্স কি ও মেটাভার্সের ধারণা
তারপরে জানলাম মেটভার্স কেন এতো জনপ্রিয় ?
তারপরে জানলাম মেটাভার্সের অর্থ ও উদাহরণ এবং সবশেষে জানলাম Metaverse এর সুবিধা ও অসুবিধা
আমাদের কে বেশ কিছু বন্ধুরা আমাদের ইনস্টাগ্রামে মেসেজ করেছিল এবং জানতে চেয়েছিলো মেটাভার্স কি , এবং এর উপর একটি পোস্ট নিয়ে আস্তে অনুরোধ করেছিল, আজকের এই পোস্ট টা বিশেষ করে সেই বন্ধু দের জন্য এবং যারা আমাদের ব্লগের নিয়মিত পাঠক তাদের জন্য । আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি Metaverse এর সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন , যদি আমাদের এই পোস্ট আপনাদের ভালো লেগে থাকে এবং এই পোস্ট থেকে যদি কিছু জানতে পারেন , তাহলে অতি অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন । কারণ আপনার একটা কমেন্ট আমাদের টিম কে অনেকটা Motivate করে । তাই কমেন্ট করুন বন্ধু দের সাথে শেয়ার করুন এবং আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন ।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টীম
Khub sundor sir..
Dhonnobaad
Nice information
Thanks
Good Info sir
Thanks