আনারস যা আমরা অনেকেই কমবেশি খেতে পছন্দ করে থাকি, কারোর এটি অত্যন্ত প্রিয় ফল হয়ে থাকে আবার কেউ হয়তো এটি এলার্জির জন্য খেতে চাই না, আমরা অনেকেই জানি না যে এই টক মিষ্টি জাতীয় আনারসের উপকারিতা কিভাবে আমাদের শরীরের উপর পরে থাকে। তবে হাঁ আনারস খেলে কারোর কারোর মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা যাই যেমন ঠোঁট ফুলে যাওয়া, গলা খুশ খুশ করা। আর এই সবের সাবধান হলো আনারস কে কেটে নুন দেওয়া জলে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখলে এইসবের সমস্যা থাকে না, আর যদি তারপরেও অসুবিধে হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেওয়া দরকার।
আনারসের উপকারিতা
আনারস সুস্বাদু হবার পাশাপাশি এটি তে পুষ্টিগুণ ও প্রচুর মাত্রায় পাওয়া যাই, এই ফলটিতে ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম দেখতে পাওয়া যাই, তাছাড়াও আনারসে শর্করা থাকলেও এটি যদি সঠিক পরিমানে খাওয়া যাই তাহলে এটি দেহ থেকে চর্বি মুক্ত রাখতেও অনেক বেশি কার্যকরী।
এমনকি আপনি যদি অপুষ্টির শিকার হন তাহলে তার চাহিদা ভুরপুর রাখতেও এর জুড়ি মেলা ভার, একটি ছোট আনারসের টুকরো আপনার শরীরের বিভিন্ন ভিটামিন, পটাসিয়াম ও ফসফরাসের চাহিদা গুলো কে পূর্ণ করতে সাহায্য করবে। পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন সঠিক নিয়মে এই ফলটি খেলে আপনার শরীর সারাজীবন সুস্থ থাকবে, তাই আনারসের এতো গুণাবলী লক্ষ্য করে আজ বঙ্গজ্ঞান নিয়ে এসেছে আজকের এই পোস্টটি যেখানে আমরা জন্য যে আনারসের উপকারিতা কিভাবে আমাদের শরীরে কাজে লাগে, তাহলে চলুন আজকের এই পোস্টটি শুরু করা যাক।
সুচিপত্র
হজমশক্তি ভালো রাখতে আনারসের উপকারিতা
আনারস এক ধরণের টক মিষ্টি জাতীয় ফল, অনেক মানুষের মধ্যে একটি ভুল ধারণা আছে যে আনারস ও দুধ একসাথে খেলে সেটা বিষক্রিয়া হয়ে যাই, তবে এতে সত্যি বলে কিছুই নেই, আনারস হালকা টক জাতীয় হবার জন্য দুধ কেটে গিয়ে ছানা হয়ে যেতে পারে ফলে পেট ফোলা, বদহজম, বমি বমি ভাব এই সব হতে পারে কিন্তু কোনো ভাবেই সেটা বিষক্রিয়া সম্ভব নয়।
তবে এই ফলটিকে সঠিক নিয়ম মেনে খেলে তার সঠিক উপকারিতা আপনি পাবেন যেমন এটি হজম প্রক্রিয়া কে ঠিক রাখতে খুবই কার্যকরী, আনারসের মধ্যে ব্রোমেলিন নামক এক ধরণের পুষ্টিগুণ থাকে যা আমাদের হজম শক্তি কে খুবই উন্নত করে তোলে। তাই আপনার যদি হজমের সমস্যা থাকে বা গ্যাস্টিক এ ভুগেন অথবা যাই এই কিছু খান সেটা হজম হতে চাই না তাহলে এই আনারস আপনার জন্য।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমাবার ক্ষেত্রে আনারসের উপকারিতা অনেক ভালো ভাবে লক্ষ্য করা যাই, কারণ আনারসে রয়েছে ফাইবার এবং ফ্যাট এর পরিমান কম তাই আপনি আপনার ওজন কমানোর খাদ্যের তালিকার মধ্যে এই ফলটিকে রাখতেই পারেন।
তবে অবশ্যই সঠিক পরিমান বুঝে খাবেন, এবং রোজ না খেয়ে মাঝে মাঝে পরিবর্তন করতে হবে মানে এক সপ্তাহ আনারস খাবার পর আবার এক সপ্তাহ ফাঁকা রেখে খাওয়াই উচিত।
জ্বর ঠান্ডা কে দূরে রাখতে আনারসের উপকারিতা
আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের অনেক সময় Viral fever দেখা দেয়, জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি এই সবের সমস্যা হয় এগুলো একবার হলে সারাতেও খুব দেরি হয়, আনারসের মধ্যে পাওয়া যাই প্রচুর পরিমানে ভিটামিন C পাওয়া যাই।
যদি আপনি আনারস বা আনারসের জুস করে রোগী কে খাওয়াতে পারেন তাহলে খুব অল্প দিনের মধ্যেই সেই ব্যাক্তি সুস্থ হয়ে উঠে এবং জ্বর থেকে সৃষ্টি জন্ডিস এর হাত থেকেও নিরাপদে রাখে। এছাড়াও আনারসের মধ্যে এমন কিছু গুণাবলী আছে যা দেহে রক্ত কে জমাট বাঁধতে দেয় দেয়, রক্ত জমাট থেকেও অনেক রোগের সৃষ্টি হয়, যা বাঁধা দেয় এই আনারস, ফলে শিরা এবং ধমনী তে সঠিক ভাবে রক্ত চলাচল করতে পারে।
এজ রিলেটেড ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন(Age-related macular degeneration)
ম্যাকুলার ডিগ্রেডেশন এক ধরনের চোখের রোগ যা ধীরে ধীরে চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে গিয়ে অন্ধ করে দেয়, এবং আনারসে থাকা পুষ্টি গুন্ আমাদের এই রোগ থেকে রক্ষা করে। আনারসে আছে বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের আমাদের চোখ কে ভালো রাখতে খুবই কার্যকরী, গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা বিটা ক্যারোটিন সম্মৃদ্ধ খাবার খাই তাদের অন্য দের তুলনায় এই রোগ হবার প্রায় ৩০% শতাংশ পর্যন্ত কমে যাই।
হাড়ের রোগ দূর করতে আনারসের উপকারিতা
আনারসের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম আছে, আর আমরা জানি যে হার ভালো রাখতে ক্যালসিয়াম এর গুরুত্ব কতখানি, আর তার সাথে এই ফল টিতে পাওয়া যাই ম্যাঙ্গানিজ যা হার মজবুত করতে সাহায্য করে, ফলে হার ক্ষয়ে যাওয়া, দুর্বল হওয়া এই সবের আর সমস্যা থাকে না।
কৃমিনাশক
আনারসের এত গুনাগুনের সাথে সাথে এটি একটি কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে থাকে, আপনি যদি কৃমির সমস্যায় চিন্তিত হন তাহলে নিয়ম করে এই আনারস খেতে পারেন, এতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার কৃমি ঠিক হয়ে যাবে।
ত্বকে আনারসের উপকারিতা
আনারসের গুনাগুন আমাদের ত্বকের উপরেও দেখা যাই, আনারসের মধ্যে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান আমাদের ত্বক কে ভালো রাখে এবং উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে, এছাড়াও ত্বকের বলিরেখা কে দূর করতেও ভীষণ ভাবে সাহায্য করে।
আনারসের অপকারিতা
আনারসের উপকারিতা সাথে সাথে তার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে যেগুলো আমাদের জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
- গর্ভবর্তী মহিলা যারা আছেন তাদের জন্য সে সময়ে আনারস খাওয়া একদমই উচিত নয়।
- আনারসে আছে প্রাকৃতিক চিনি, পরিমান মতো আনারস আপনার জন্য খুবই ভালো কিন্তু অধিক আনারস আপনার ওজন ও বাড়িয়ে দিতে পারে আবার যারা ডায়াবেটিস আছে তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো বলে মনে করা হয়।
- কোনো ব্যাক্তির যদি ঔষধ খেতে হয় রোজ বা কোনো কোনো আন্টি বায়োটিক খাচ্ছেন তাহলে সেই সময় আনারস খেতে নিষেধ করে থাকেন ডাক্তারে।
- আনারস বেশি খেলে দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই যে সব ব্যাক্তি দেড় আগে থেকেই কিছু দাঁতের সমস্যা রয়েছে তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো।
- যাদের বাতের সমস্যা রয়েছে তাদের এই ফল টি খাওয়াই ভালো বলে মনে করা হয়েছে, আনারস খাবার পর সেটি গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল এ পৌছিয়ে এলকোহল পরিণত হয়, যা বাতের রোগী দেড় জন্য একদম ভালো নয়।
- আনারসের জুস অবশ্যই ভালো তবে সেটা যেন কাঁচা আনারসের না হয়, অনেক সময় আমরা দোকানে আনারসের জুস খেয়ে থাকি সেখানে মাঝে মাঝে কাঁচা আনারস ব্যাবহার করা হয়ে থাকে, যা খেলে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এই সবের সমস্যা দেখা দেয় তাই বাইরের জুস খাওয়া থেকে এড়িয়ে চললে ভালো হয়।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে আমরা জানলাম যে আনারসের মধ্যে কি কি উপাদান আছে , এবং তারপর জানলাম আনারসের উপকারিতা কি কি ভাবে আমাদের শরীর এর মধ্যে পরে, আর তার সাথে সাথে আনারসের কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধেও জেনে নিলাম।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি আনারসের উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া আনারসের উপকারিতা বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টিম