সেরা ৭ টি কফি খাওয়ার উপকারিতা

Rate this post

বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষের দিনের শুরু তা হয় এক কাপ কফি দিয়ে , এমন অনেকে আছেন যারা এই কফি ছাড়া থাকতেই পারে না। কফির বীজ কে গুঁড়ো করে গরম জলের সাথে মিশিয়ে এই পানীয় টি তৈরী করা হয়ে থাকে। কফি তে ক্যাফেইন নামের একটি উপাদান রয়েছে যা শরীরে এনার্জি প্রদান করে ক্লান্তি ভাব কে দূর করে ঐজন্য কফি দিন দিন ভীষণ ভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । আপনি কি জানেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে কফির জাতীয় উৎসব হিসেবেও পালন করা হয়ে থাকে। 

কফি খাওয়ার উপকারিতা এতটাই বেশি যে একটি গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে কফি খেলে আপনার হতাশা দূর হয় এবং মানসিক দিক থেকে আপনাকে সুস্থ রাখে। কফি তে ক্যাফেইন উপাদান টি ছাড়াও এমন কিছু পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ , তাই আজকে আমরা জেনে নেবো কফি খাওয়ার উপকারিতা গুলি কি কি এবং বেশি কফি আমাদের শরীরে গেলে কিভাবে তা ক্ষতি করতে পারে, চলুন তাহলে আজকের এই পোস্টটি শুরু করা যাক। 

কফি খাওয়ার উপকারিতা  

ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কে কমায় 

কফি খাওয়ার উপকারিতা এর মধ্যে প্রথমত হলো কফি খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক তাই কমে যাই , অনেকেই মনে করেন যে কফি পান করলে হৃদ রোগের ভয় থাকে কিন্তু সেই ধারণা কে ভুল প্রমাণিত করে ২০১৬ সালে বৈজ্ঞানিকরা প্রমাণিত করেন যে যেসব ব্যাক্তি নিয়মিত কফি পান করে থাকেন , তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা অনেক তাই কমে গেছে , অনেক মহিলাদের গর্ভাশয়ের ক্যান্সার হয়ে থাকে কফি খেলে সেটি হবার ঝুঁকি অনেক কমে যাই। 

লিভার কে সুস্থ রাখতে কফি খাওয়ার উপকারিতা

প্রমাণিত হয়েছে যে যেসব ব্যাক্তি কফি পান করেন তাদের লিভার এর কোনো রকমের সমস্যায় পড়তে হবে। কফির মধ্যে থাকা পুষ্টিকর উপাদান লিভার জনিত সব রকম অসুখ কে দূরে রাখে যেমন , লিভার ক্যান্সার , ফ্যাটি লিভার , লিভার সিরোসিস এইরকম ভয়ঙ্কর ধরণের রোগ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। 

ক্লান্তি বা আলস্য ভাব কে দূর করে 

কফির মধ্যে সবথেকে বেশি পাওয়া যাই ক্যাফেইন , আর এই ক্যাফেইন আমাদের শরীরে যাওয়া খুবই দরকার। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম মতো ক্যাফেইন আমাদের শরীরে প্রয়োজন পরে , তার ফলে সারাদিন অনেক কাজকর্মের মধ্যেও আমাদের ক্লান্তি ভাব লাগে না , কুঁড়েমি ভাবকে দূর করে , এনার্জি দেয় শরীর কে। কফি খেলে আপনার কর্ম ক্ষমতা কে আরো বাড়িয়ে দেয় , তবে হাঁ চকলেট এর মধ্যেও কিন্তু এই ক্যাফেইন পাওয়া যাই তাই যদি আপনি এই সব ধরণের খাবার খান যাতে ক্যাফেইন আছে সেক্ষত্রে আপনাকে কফি খাওয়া টা একটু কমাতে হবে। 

মানুষের শরীরে দুধের উপকারিতা

মেদ ঝরাতে কফি খাওয়ার উপকারিতা

আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় চিন্তিত থাকেন তাহলে আপনি আপনার খাদ্য তালিকার মধ্যে কফি কে রাখতে পারেন । অনেকেরই চা বা কফি পান করার নেশা থাকে তবে হাঁ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আপনাকে কফি দুধ এবং চিনি ছাড়া খেতে হবে তবেই আপনি সেই লাভটি পাবেন , কফি তে থাকা ক্যাফেইন ফ্যাট বার্ন করতে খুবই সাহায্য করে। 

রক্তে শর্করার পরিমান কে নিয়ন্ত্রণে রাখে 

যেসব ব্যাক্তি ডায়াবেটিকসে ভুগছেন তাদের জন্য কফি খুবই গুরুত্বপূর্ণ রূপে কার্যকরী, একজন ডায়াবেটিকস রোগী যদি দিনে ২-৩ কাপ ব্ল্যাক কফি খান তাহলে তাদের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর আপনার যদি এই মুহূর্তে ডায়াবেটিকস না থাকে কিন্তু আপনার শরীরে খুব তাড়াতাড়ি ডায়াবেটিকস ধরা পড়বার সম্ভব রয়েছে । আপনি সেক্ষেত্রেও কফি পান করতে পারেন , নিয়মিত সেবন করলে আপনি কফি খাওয়ার উপকারিতা পাবেন এবং আপনাকে আর ভবিৎষতে ডায়াবেটিকসের সমস্যার পড়তে হবে না। 

হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা করে 

কফি তে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম , রাইবোফ্লোবিন , পটাসিয়াম যা আপনার হার্ট কে সুস্থ রাখে। ফলে হার্ট অ্যাটাক এর সম্ভবনা কে অনেক কমিয়ে দেয় , তাছাড়া হার্ট এর যাবতীয় সমস্যা এবং স্ট্রোক থেকেও অনেকটা রেহাই পাওয়া যাই। 

ডিমেনশিয়া ও অ্যালজাইমার রোগ ঠিক করতে কফি খাওয়ার উপকারিতা

ডিমেনশিয়া অথবা অ্যালজাইমা এই গুলি মস্তিস্ক গঠিত রোগ , ডিমেনশিয়া হলে মানুষের ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে শুরু করে , নিত্যদিনের কাজ গুলি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং চিন্তা ভাবনার শক্তিও কমে যাই । একটি গবেষণায় জানা গেছে যারা নিয়মিত ৩ – ৪ কাপ কফি পান করে থাকে তাদের এই রোগের ঝুঁকি ৭০% কমে যাই। 

স্কিন ভালো রাখতে কফি খাওয়ার উপকারিতা

এক কাপ কফি আপনার স্কিন কেও ভালো রাখে, কফির মধ্যে থাকা আন্টিঅক্সসিডেন্ট মুখের দাগ ছোপ গুলো কে ঠিক করে , স্কিন কে আরো উজ্জ্বল করে এবং , সব থেকে বেশি কাজে দেয় ডার্ক সার্কেল কে ঠিক করতে ।  অনেকেরই চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরে তারা যদি রোজ এই কফি পান করে থাকে তাহলে তারা তাদের ডার্ক সার্কেল অনেক কমে যাবে। 

কফি খাবার সঠিক নিয়ম  

কফি তে থাকা পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরে অনেক ভাবেই কাজে লাগে , তবে কফি খাওয়ার উপকারিতা গুলি আমরা তখনি পাবো যখন আমরা জন্য যে কফি খাবার সঠিক নিয়ম গুলি কি। 

পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন যদি আপনি সারাদিনে ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ইনটেক করেন তাহলে সেটা শরীরে জন্য খুবই ভালো। তারজন্য এক দিনে আপনি ৩ – ৪ কাপ মতো কফি খেলে সেখান থেকে সঠিক পরিমানে ক্যাফেইন পেয়ে যাবেন। 

কফিকে কোনোদিনই খালি পেটে খাওয়া উচিত নয় তাতে গ্যাস এসিডিটির মতো সমস্যা হতে পারে আবার খাবার ঠিক পরেই কফি পান করা একদমই ঠিক নয়। খাবার খাওয়ার ঠিক ৩০ মিনিট পরেই কফি পান করা ভালো। আবার সারাদিনে কাজের ফাঁকে আপনি কফি পান করতেই পারেন। তবে যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের সন্ধের পর কফি খাওয়া একদমই ভালো নয় কারণ সেক্ষেত্রে ঘুম না আসার মতো সমস্যা হতে পারে।  

কফি কে অনেক ভাবেই খাওয়া হয়ে থাকে কোল্ড কফি , ক্যাপুচিনো , ল্যাটেস , এসপ্রেসো, মোচাস , নানারকম ভাবে কফি বানানো হয় । তবে আপনি যদি দুধ এবং চিনি ছাড়া শুধু গরম জলের সাথে কফি মিশিয়ে খান তাহলে তার পুষ্টিগুণ অনেক ভালো ভাবে পাওয়া যাই। সাধাণত এই ধরণের কফি কে ব্ল্যাক কফি বলা হয়ে থাকে। কফি খাওয়ার উপকারিতা আরো ভালো ভাবে পেতে বাড়িতেই কফি এর বীজ (coffee beans) কে গুঁড়ো করে সেটা দিয়ে কফি বানালে আরো ভালো হয়।

কফি খাওয়ার অপকারিতা 

কফি খাওয়ার উপকারিতা অনেক থাকলেও তার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখতে পাওয়া যাই , তাই আমরা জেনে নেবো কফির ব্যবহার সঠিক ভাবে না করলে তার থেকে আমাদের ক্ষতি কিভাবে হতে পারে। 

অনিদ্রা গঠিত সমস্যা 

যাদের ইনসোমনিয়া আছে বা যাদের ঘুম খুবই পাতলা তাদের বেশি কফি খাওয়া একদমই উচিত নয়।  কফি তে থাকা ক্যাফেইন শরীরে বেশি পরিমানে গেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় , সারাদিনে আপনি এককাপ কফি খেতেই পারেন তাও সেটা দিনের বেলায় বিকেলের পর থেকে কফি পান না করাই ভালো। 

হাড় ক্ষয়ে যাওয়া 

নিয়মিত কফি সেবন করা অবশ্যই ভালো তবে যেন সেটা সঠিক পরিমানে হয় , অতিরিক্ত কফি পান করলে হাড় ক্ষয় হবার সম্ভবনা দেখা দেয়। সেটা ক্যাফেইন থেকেও হতে পারে। অস্টিওপোরোসিস রোগী যারা আছেন তারা কফি পান করার আগে অবশ্যই একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন। 

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা 

গবেষণায় দেখা গেছে যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ অর্থাৎ যারা হাইপারটেনশনে রোগী তাদের কে কফি খেতে মানা করা হয়ে থাকে। কফি খেলে রক্তবাহী নালিগুলি চরম ভাবে বাড়তে থাকে এবং তার ফলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে , তাই এইসব রোগীদের কফি থেকে দূরে থাকায় ভালো ।

হজমের সমস্যা  

লক্ষ্য করা যাই যে অতিরিক্ত কফি খেলে বেশি পরিমানে ক্যাফেইন আমাদের শরীরে ইনটেক হয় ফলে হজমের সমস্যা দেখা যাই এবং মাথা ধরা , অস্বস্তি বোধ হওয়া এইসব সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

কিডনির পক্ষে ক্ষতিকর 

কোনো জিনিসই আমাদের শরীরে বেশি পরিমানে গেলে তা আমাদের ক্ষতি করে , তাই কফি ও দিনে ৩-৪ বার নেওয়া টাই ভালো অতিরিক্ত কফি খেলে আপনার কিডনি চরম ভাবে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এবং কিডনি জনিত অন্যান্য রোগের মুখেও পড়তে হতে পারে । 

একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম 

প্রথমে আমরা জানলাম যে কফি খাওয়ার সঠিক নিয়ম গুলি কি কি এবং কফি খাওয়ার উপকারিতা আমাদের শরীরে কি কি ভাবে হতে পারে। তারপর আমরা জানলাম কফি খাওয়ার উপকারিতা সাথে সাথে বেশি কফি পান করলে কি কি অসুবিধে হবে পারে এবং কাদের কফি খাওয়া উচিত নয়। 

আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি কফি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে  যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা বা এই বিষয়ে  আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই। 

আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই  আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধুদের  সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন। 

ধন্যবান 

বঙ্গজ্ঞান টিম

শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

Leave a Comment