গ্রাম বাংলায় অতি পরিচিত হচ্ছে এই কালমেঘ পাতা, এখন অবশ্য অনেকেই এই পাতার নাম আগে কোনো দিন শুনেননি, তবে যারা এই পাতার সম্মন্ধে জানেন তারাও এটাও জানবেন যে এই কালমেঘ পাতার উপকারিতা কতখানি।
যতদিন যাচ্ছে তত অবহেলিত দলে নাম লেখাচ্ছে এই পাতা টি, অন্যান্য উপকারী পাতার মতো এই কালমেঘ পাতা কেউ অনেকেই ভুলতে বসেছেন, তবে এই ভেজষ পাতা টি আমাদের জন্য কত খানি লাভ দায়ক তা ধারণার ও বাইরে।
কালমেঘ পাতার উপকারিতা
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যদি এই কালমেঘ পাতা রোজ খাওয়া যাই তাহলে জটিল থেকে জটিলতর অসুখ থেকেও দূরে থাকা সম্ভব। আমরা অনেকেই নিজেদের স্বাস্থ ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করি, খাবারের জন্য একটা ডায়েট চাট বানাই, ইত্যাদি অনেক রকমের উপায় করে থাকি, তবে যদি আমরা সেই খাদ্যের তালিকার মধ্যে এই কালমেঘ পাতা কে যুক্ত করতে পারি তাহলে আপনি এই পার্থক্য নিজের চোখেই দেখতে পারবেন।
কালমেঘ পাতা টি খেতে একটু তিক্ত স্বাদের হলেও এর গুনাগুন অনেক বেশি ভাবে লক্ষ করা যাই, আরো যত রকমের উপকারী পাতা আছে তাদের মধ্যে সব থেকে ভেষজ গুনে ভরপুর হলো এই কালমেঘ পাতা টি, পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন যে কালমেঘ পাতার মতো এটি উপকারী একটি পাতা আর দ্বিতীয় খুঁজে পাওয়ায় বোরো মুশকিল।
কালমেঘ পাতার উপকারিতা এটি বেশি সেটি কে লক্ষ করেই আজ বঙ্গজ্ঞান নিয়ে এসেছে আজকের এই পোস্টটি, এখন থেকে আমরা কালমেঘ পাতার উপকারিতা যত আছে সেই সব বিষয়ে জেনে নেবো এবং আরো জানবো যে এই পাতা থেকে কি কি গুনাগুন আমরা পেয়ে থাকি, তাহলে চলুন আজকের এই পোস্টটি শুরু করা যাক।
সুচিপত্র
কালমেঘ পাতা খাবার নিয়ম
কালমেঘ পাতা খাবার সবথেকে ভালো নিয়ম হলো সকালে খালিপেটে খাওয়া, ২-৩ তে কালমেঘ পাতা চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যাই, অথবা কালমেঘ পাতার ভালো করে বেঁটে তার রস এক দু চামচ খাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে আর একটি হলো কালমেঘ পাতাকে ভালো করে ধুয়ে গরম জলে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখতে হবে দিয়ে সেই জল চুমুক দিয়ে পান করেও খাওয়া যাই।
এই সকল প্রকারেই আপনি কালমেঘ পাতা খেতে পারেন, সব কটি উপায় থেকেই আপনি কালমেঘ পাতার উপকারিতা পাবেন, এবং আপনার সাস্থ ভালো থাকবে।
কালমেঘ পাতার উপকারিতা এবং তার গুনাগুন
- বর্তমান সময়ে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যে বাইরের খাবার পছন্দ করেন না, প্রায় প্রতিদিনই বাইরের কিছু কিছু খাবার আমরা খেয়েই থাকি কখনো ফাস্টফুড তো কখনো চাইনিস এছাড়া আরো বিভিন্ন ধরণের খাবার যেগুলি তে তেল মসলা ভীষণ পরিমানে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর এই সব খাবারের সাইড ইফেক্ট পরে আমাদের লিভার এর উপর ঐজন্য এখন কার সময়ে ফ্যাটি লিভার, লিভার ফাইব্রোসিস, এবং লিভার সিরোসিসের মতো রোগ প্রচুর পরিমানে দেখা দিচ্ছে।
তাই আমাদের যকৃত কে ভালো রাখতে হলে খেতে হবে এই কালমেঘ পাতা, এতে এমন কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের লিভার কে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে, তাই অবশ্যই লিভার কে ভালো রাখতে চাইলে খেতেই হবে এই কালমেঘ পাতা কে।
- কালমেঘ পাতা (Green Chiretta) জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, টন্সিলস এই সবের ক্ষেত্রে একটি ওষুধের মতো ব্যবহার হয়ে থাকে, কালমেঘ পাতার রস যেকোনো ঠান্ডা জনিত রোগ তাড়াতাড়ি সরিয়ে তুলতে ভীষণ ভাবে সক্ষম। তার জন্য আপনি কালমেঘ পাতার রস বানিয়ে খেতে পারেন, এবং খাবার পর মিষ্টির জন্য একটু মধু খাওয়া যেতে পারে কারণ কালমেঘ এর স্বাদ অত্যন্ত তিক্ত ধরণের হয়ে থাকে।
- শরীরে ব্যাথা থেকে নিয়াময়ের জন্য কিন্তু কালমেঘ পাতার জুড়ি মেলা ভার, আজকাল এমন কেউ নেই যার শরীরে ব্যাথা নেই, বয়েসের সাথে সাথে অনেক ধরণের ব্যাথা হয়েই থাকে, যেমন হাটু ব্যাথা, হাঁটুর জেলি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে হাটতে চলতে অসুবিধা, গাঁটে গাঁটে ব্যাথা, ব্যাথার ফলে জায়গা গুলি ফুলে যাওয়া, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হলো এই কালমেঘ পাতা।
- ছোট বাচ্চাদের জন্য এই কালমেঘ পাতার উপকারিতা অনেক বেশি এটি ওষুধের মতো কাজ করে, খিদে কমে যাওয়া, ডায়রিয়া, গ্যাস, জ্বর, ঠান্ডা এমন কি পেতে কৃমি হলেও এই পাতার রস খাওয়ানো হয়ে থাকে, ফলে এই পাতার রস শরীরের ভেতরে পৌছিয়ে এই সমস্ত রোগ গুলি কে দূরে রাখতে সাহায্য করে থাকে।
- পেটে আলসার হওয়া এটি ভালো নয় একদম, তাই আলসারের কোনো সমস্যা দেখা দিলে এই পাতার রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাই।
- কালমেঘ পাতার উপকারিতা আমাদের রক্ত করে পরিষ্কার এবং রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া কে স্বাভাবিক রাখতে খুবই কার্যকরী, এতে থাকা আন্টি অক্সসিডেন্টের জন্য রক্ত দেহে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারে।
- ডায়াবেটিস যাদের আছে তারা চোখ বন্ধ করে এই পাতা খাওয়া আজ থেকেই শুরু করে দিন, কারণ ডায়াবেটিস এর রোগী আজকাল ঘরে ঘরে, সুগার এর মাত্রা বেড়েই চলেছে, এই কালমেঘ পাতা দেহে গ্লোকোজের মাত্রা কে অনেক অংশে কমিয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে, তাই যদি আপনি আপনার ডায়াবেটিস কে ভালো করতে চান, অথবা যারা টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর রোগী তারাও আজ থেকেই এই পাতা খাওয়া শুরু করে দিন।
- কালমেঘ পাতা ক্ষত সারাতেও কিন্তু বেশ কার্যকরী, অনেক দিনের ক্ষত সেটি সারতে সময় লাগছে সেই জায়গায় এই কালমেঘ পাতার রস লাগিয়ে দিতে পারেন আবার কোথাও লেগে লেগে এই পাতা একটু বেঁটে তার উপর প্রলেপ দিয়ে লাগিয়ে দিলে ক্ষত তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাই, এবং এই ক্ষেত্রে প্রাচীন যুগ থেকেই কালমেঘ পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে।
- কোনো বিষাক্ত প্রাণী যদি কোথাও কামড়ে দেয় যেমন সাপ বা বিষাক্ত বিছে সেই ক্ষেত্রে শুধু কালমেঘ এর পাতা নয় পুরো গাছ টিকেই ওষুধের মতো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- অনেকেই আছেন যারা গ্যাস, অম্বল, বদ হজম, খাবার না হজম হাওয়া এই সবে ভীষণ ভাবে ভুগতে থাকেন, সেই সব ব্যাক্তি যদি এই কালমেঘ পাতার রস খান তাহলে আপনার বদ হজম দূর হবে, খাবার তাড়াতাড়ি হজম হবে ফলে আপনার খিদেও বাড়বে।
কালমেঘ পাতার অপকারিতা
- গর্ভবর্তী মহিলা যারা আছেন তারা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করেই এই পাতা খাবেন।
- যখনি এই পাতা ব্যবহার করবেন তখন সমসময় পরিষ্কার জলে ভালো করে ধুয়ে ব্যবহার করবেন।
- কালমেঘ পাতা তে এমনি এলার্জি হবার লক্ষণ কম তবে এটি খেলে কোনো রকমের অসুবিধে মনে হলে সাথে সাথে খাওয়া খেতে দূরে থাকতে হবে।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমেই আমরা জানলাম যে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কালমেঘ পাতার উপকারিতা কিভাবে আমাদের কাজে লাগে এবং তারপর কালমেঘ পাতার উপকারিতা সাথে সাথে তার কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধেও জেনে নিলাম।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি কালমেঘ পাতার উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া কালমেঘ পাতার উপকারিতা আমাদের শরীরে কিভাবে কাজ করে বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টিম