নিম পাতার উপকারিতা

Rate this post

নিম হলো একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ, নিম গাছের ফল পাতা, গাছের ছাল, বাকল, নিম ফলের বীজ সবই ব্যাবহার হয়ে থাকে মানে নিম গাছের কোনো অংশ কেই বাদ দেওয়া চলে না, মানব জীবনে ওষুধির রূপে নিম পাতার উপকারিতা অনেক অনেক বেশি পরিমানে লক্ষ্য করা যাই। নিম পাতা এন্টিসেপটিক গুণাবলীর জন্য খুবই বিখ্যাত, এটি একটি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস রোধক হিসেবেও অনেক কাজে লাগে এমনকি কীটপতঙ্গ এবং ম্যালেরিয়া কে দূরে রাখতেও এই নিম পাতার উপকারিতা অপরিসীম। 

নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের এমাইনো এসিড পাওয়া যাই এছাড়াও নিম পাতা তে ফসফরাস, ভিটামিন C, কার্বোহাইড্রেড, ক্যালসিয়াম, প্রোটিনের মতো মূল্যবান পুষ্টিগুণের উপাদান পাওয়া যাই। নিম পাতার উপকারিতা এতটাই বেশি যে সারা বিশ্বে মনে করা যাই এই নিম পাতার মধ্যে প্রায় ৪০ টি কঠিন গুরুতর রোগ সারানোর মতো ক্ষমতা রয়েছে। 

নিম পাতা যে শুধুমাত্র ভেজষ রূপে ব্যাবহার করা হয় তা কিন্তু নয়, এই পাতার রন্ধন শিল্পেও অনেক বেশি গুন্ আছে রান্নাতে নিম পাতা ভাজা অথবা নিম পাতা সেদ্ধ করে অনেকেই খেতে পছন্দ করে মায়ানমারে নিম পাতার স্যালাড খুবই বিখ্যাত।  

নিম পাতার গুণাবলী এত প্রসিদ্ধ দেখে বঙ্গজ্ঞান নিয়ে এসেছে আজকের এই পোস্টটি, এখানে আমরা জেনে নেবো এই নিম খাবার সঠিক নিয়ম গুলি কি কি, এবং এই পাতা খেলে আমাদের শরীরে কিভাবে কাজে লাগে, তাহলে চলুন আজকের পোস্টটি শুরু করা যাক। 

নিম পাতা খাবার সঠিক নিয়ম 

নিম পাতার উপকারিতা সবথেকে বেশি পাওয়া যাই যদি আপনি সকালে উঠে এটি খালি পেতে খান, ২-৩ তে নিম পাতা চিবিয়ে খেয়ে জল খেয়ে নিতে হবে, অনেকেই বেশি তেতো খেতে পারে না তারজন্য আপনি নিম পাতা কে ভালো করে ফুটিয়ে তারপর সেই জলটি ছেঁকে নিয়ে তারসাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন এতেও আপনি অনেক লাভ পাবেন। অনেকে নিম পাতার অনেক পদ রান্না করে খেয়ে থাকে যেমন নিম পাতার পকোড়া তবে এক্ষেত্রে নিম পাতার উপকারিতা তেমন বেশি পাবেন না। 

মানব শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে নিম পাতার উপকারিতা

অ্যাজমা প্রতিরোধ করতে নিম পাতার উপকারিতা

অনেক ব্যাক্তি দীর্ঘকাল ধরে শাসকষ্টতে ভুগতে থাকেন, শ্বাসনালী সংকুচিত হওয়ার কারণে অনেকসময় এই শ্বাসকষ্ট দেখা যাই আর এই লক্ষণ কেই অ্যাজমা বলে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে নিম পাতা এবং নিমের তেল অ্যাজমাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম এবং নিয়মিত এই পাতা ব্যাবহার করলে দীর্ঘদিনের কাশি এবং কফ কে রোধ করা যাবে। 

যুগযুগ ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতে নিমের ফল,ফুল,মূল অ্যাজমা রোগ কে সারিয়ে তুলতে ব্যবহার হয়ে আসছে, শুধু তাই নয় অনেকসময় কিছু এলার্জির কারণেও সর্দিকাশি দেখা যাই নিমের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ এলার্জি কে পুরোপুরি ঠিক করতেও খুবই কার্যকরী। 

লবঙ্গের উপকারিতা

ডায়াবেটিক কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম পাতার উপকারিতা

রক্তে শর্করার পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়ন্ত্রণ করতে নিম পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে, আপনি যদি টাইপ ২ ডায়াবেটিক এর শিকার হন তাহলে রোজ সকালে দুটো করে নিমপাতা চিবিয়ে খেতে পারেন, নিমপাতার মধ্যে উপাদান আছে যা আপনার দেহে কোনো দিনই সুগার এর মাত্রা কে বাড়াবে না। 

দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে 

নিম পাতার উপকারিতা মধ্যে অন্যতম হলো এটি দাঁতের ক্ষয় কে প্রতিরোধ করে, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে যে নিম ব্যাকটেরিয়া কে দমন কে সাহায্য করে, তাই দাঁতের ক্ষয় এবং দাঁত ও মাড়ির প্যাথোজিনের মতো রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে, নিম পাতায় পাওয়া যাই এথানলিক এবং নিম গাছের শাকায় ব্যাকটেরিয়া রোধক গুন্ দেখা যাই যা ফেকালিস এবং মিউট্যান মতো রোগের হাত থেকে রক্ষা করে, দাঁতের পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধ এবং মাড়িকে সুস্থ রাখতে নিমের গুন্ অপরিহার্য। 

আমলকী খাওয়ার উপকারিতা

কৃমিনাশক দূর করতে নিম পাতার উপকারিতা

শিশু বয়েসে প্রায় সব বাচ্চা দের ভীষণ কৃমি দেখা দেয় ফলে চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাই , শরীর রোগ হওয়ার সাথে সাথে পেট সাঙ্গাতিক রকমের বড়ো হতে থাকে আর কৃমি কে দূর করতে নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। কৃমি কে নাশ করতে দিনে দুই  বার নিম গাছের যে মূল আছে তার ছালের গুঁড়ো কুসুম কুসুম গরম জলের সাথে খাওয়াতে হবে এতে অনেক উপকার পাওয়া যাই। 

ফাঙ্গাল ইনফেকশন কে দূর রাখে 

যদি আপনার শরীরে কোথাও ছত্রাক ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে নিম পাতা বেঁটে ঐজায়গায় লাগিয়ে দিলে সেরে যাবে, নিমের মধ্যে জেডুনিন, নিম্বিডল আছে যা ফাঙ্গাল ইনফেক্শনকে ধ্বংস করতে পারে। জলে নিম পাতা ফুটিয়ে স্নান করলে নিম পাতার উপকারিতা ভীষণ ভাবে পাওয়া যাই , এতে চুলকানি এলার্জি দূর হয় , এছাড়াও নিম পাতার সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে শরীরে মাখলে কখনোই এলার্জির মতো রোগের হাতে পড়তে হবে না। 

ওজন কমাতে সাহায্য করে 

নিম পাতার উপকারিতা সাথে সাথে নিম গাছের ফুলের অনেক উপকারিতা লক্ষ্য করা যাই, নিম গাছের ফুল ওজন কমাতে খুবই সাহায্য করে এটি শরীর থেকে বাড়তি ওজন কে কমিয়ে মেটাবলেজম কে বাড়িয়ে তোলে। নিম গাছের ফুল কে বেঁটে তার সাথে মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাই। 

চিয়া সিড এর উপকারিতা

চোখের সমস্যা কে দূর করতে নিম পাতার উপকারিতা

আপনার চোখে যদি চুলকানি, ক্লান্তি ভাব, বা লালচে হয়ে যাই তাহলে এই নিম পাতা ব্যাবহার করলে অনেক আরাম পাবেন, জলে নিম পাতাকে ভালো করে ফুটিয়ে তারপর ঠান্ডা হয়ে গেলে মুখ ধোওয়ার জন্য আপনি সেই জলটি ব্যাবহার করতে পারবেন। 

কীটনাশক নাশ করতে নিম পাতার উপকারিতা

অনেকে বাড়িতেই গাছ লাগাতে খুব পছন্দ করেন, মাঝে মধ্যে গাছে দই পোকা জাতীয় কিছু কীটনাশক দেখা যাই বা টবের মাটিতে পিঁপড়ের সমস্যা দেখা যাই সে ক্ষেত্রে নিম পাতা জলে ফুটিয়ে সেটি একটি স্পে বোতলে ভরে নিয়ে গাছের পাতার  সেই জলে ছিটে দিতে পারেন তাহলে পোকার উপদ্রব কমে যাবে। 

বাড়িতে যদি ভীষণ মশার উপদ্রপ হয় তাহলেও এই জলের স্প্রে টি ব্যাবহার করতে পারবেন তারফলে মশা থেকে হওয়া ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার মতো রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাই। 

রক্তশুন্যতায় ড্রাগণ ফলের উপকারিতা

উকুন এবং খুশকি বিনাশে নিম পাতার উপকারিতা

নিমের মধ্যে থাকা ছত্রাক নাশক উপাদান ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, মাথায় উকুন এর মতো সমস্যা দেখা দিলে নিম পাতা বেঁটে একটা পেস্ট বানিয়ে সেটা মাথায় লাগিয়ে রাখতে পারেন তারপর সেটা শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচলালেই অনেক উকুন মরে গেছে দেখতে পাবেন। 

মাথায় খুশকি হলে চুলের গোড়া রুক্ষ হয়ে যাই এবং চুলকানির সৃষ্টি হয় সেক্ষত্রে জলে নিম ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে যতক্ষণ না জল তা পুরো সুবজ রঙের হয়ে যাচ্ছে তারপর শ্যাম্পু করার পরে সেই জল তা দিয়ে চুলটা ধুয়ে ফেলতে হপ্যে যতদিন না খুশকি যাচ্ছে তত দিন এটা করতে পারেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আপনি খুশকির হাত থেকে রেহাই পাবেন।  

ব্রণ দূর করতে নিম পাতার উপকারিতা

মুখের যদি কোনো জায়গায় ব্রণ হয়ে যাই তাহলে সেখানে নিম পাতা বেঁটে ওই স্থানে লাগিয়ে রাখতে পারেন তারফলে ব্রণ খুব তাড়াতড়ি ঠিক হয়ে যাই এবং ব্রণ হলে যে ব্যথার সৃষ্টি হয় সেই ক্ষেত্রেও আরাম দেয়। তাছাড়াও নিম পাতার গুঁড়ো দিয়ে রোজ মুখ পরিষ্কার করলে ত্বক অনেক ভালো থাকে এবং ভবিৎষতে ব্রণ হবার সম্ভবনার হাত থেকেও রক্ষা করে। 

মানবজীবনে মধুর উপকারিতা

নিমের অপকারিতা 

  • গর্ভবর্তী মহিলা যারা আছেন তাদের জন্য নিম পাতা গ্রহণ করা একদমই উচিত নয়, কারণ নিম শরীরে প্রবেশ করলে শুক্রাণু কোষকে প্রত্যাখ্যান করে এবং যিনি গর্ভবর্তী রয়েছে তার ভ্রূণ কে নষ্ট করে দেয়। 
  • ছোট বাচ্চা যারা আছে তাদের পক্ষে নিম তেলের ব্যবহার একটি ক্ষতিকর দিক হতে পারে, যদি কোনোরকম অসুবিধে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে মাথা ধরা বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। 
  • যদি নিম পাতা খেতে ডায়রিয়া বমি বমি ভাব বা মাথা ধরা এই সবের লক্ষণ দেখা যাই তাহলে বুঝতে হবে আপনার নিম পাতা থেকে এলার্জি আছে তাহলে তখুনি আপনাকে নিম পাতা খাওয়া বন্ধ করতে হবে। 
  • অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়া কখনোই উচিত নয় তাতে ভালো হবার জায়গায় খারাপ বেশি হবে, বেশি করে নিম পাতা গ্রহণ করলে অনেক সময় তা বন্ধ্যাত্বের কারণ ও হয়ে দাঁড়ায়। 
  • নিম পাতা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে তাই যারা লো ব্লাডপ্রেসার অথবা নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন তাদের নিম খাওয়া উচিত নয়। 

মানুষের শরীরে দুধের উপকারিতা

একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম 

প্রথমে আমরা জানলাম যে নিম পাতা খাবার সঠিক নিয়ম গুলি কি কি, তারপর আমরা জানলাম নিম পাতার উপকারিতা গুলি কি এবং তার সাথে নিম পাতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি কি থাকতে পারে। 

আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি নিম পাতার উপকারিতা নিয়ে  যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া নিম পাতার উপকারিতা বা এই বিষয়ে  আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই। 

আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই  আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের  সাথে  শেয়ার করতে পারেন।  আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন। 

ধন্যবাদ 

বঙ্গজ্ঞান টিম

শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

Leave a Comment