রক্তশুন্যতায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা

Rate this post

ড্রাগন ফলটির নাম শুনলেই কেন জানিনা আমাদের সিনেমায় দেখা ড্রাগনের কথা মনে যাই। এই ফলটির চাহিদা আগে না থাকলেও এখন ভীষণ পরিমানে এর জনপ্রীতি বেড়েই চলেছে। মানুষের শরীরে ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক বেশি , লাল রঙের এই ফলটি দেখতে যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি প্রচুর পুষ্টিগুণে সম্পূর্ণ । বেশিরভাগ গ্রীষ্মপ্রধান দেশেই এই ফলটির চাষ বেশি হয় অস্ট্রেলিয়া , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , আমেরিকা ,ক্যারিবিয়ান , দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়া এই সব দেশে ড্রাগন ফলে অনেক চাষ হয়ে থাকে।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

ড্রাগন ফল মূলত দুই ধরণের পাওয়া যাই ,  একটি ভেতর থেকে সাদা হয় এবং অন্যটি লাল রঙের হয়ে থাকে, একটি হলুদ রঙের ও হয়ে থাকে তবে সেটাও ভেতর থেকে সাদাই হয়। ড্রাগন ফল একটি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ, এখন তো অনেক সহজেই কোনো নার্সারি থেকে এনে আপনি সেটা নিজের বাড়িতেই লাগিয়ে রাখতে পারবেন। 

  কম ক্যালোরি যুক্ত এই ড্রাগন ফলটির মধ্যে প্রচুর পরিমানে ফাইবার এবং প্রোটিন পাওয়া যাই যা আমাদের শরীরে অনেক কাজে লাগে। ড্রাগন ফলের উপকারিতা এতটাই যে যারা নিজেদের মেদ নিয়ে ভুগছেন তারাও এই ফল টি নিজেদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। আজকের আমাদের এই পোস্টটি থেকে নেবো ড্রাগন ফল আমাদের শরীরে কি কি ভাবে কাজে লাগে এবং তার খারাপ দিক গুলি কি কি থাকতে পারে। 

ড্রাগন চাষ পদ্ধতি

আমরা জানি যে বাজারে যে ড্রাগন ফল পাওয়া যাই তার দাম অনেক বেশিই হয়ে থাকে তাই আপনারা যদি চান তাহলে খুব সহজেই এই ফলটির চাষ আপনি বাড়িতেই করে ফেলতে পারবেন। প্রথমে নার্সারি থেকে ছোট অবস্থায় এই গাছটি কিনে এনে সেটা মাটিতে বা টবে পুঁতে ফেলুন। টবে গাছ লাগাতে গেলে সেখানে আপনাকে বিভিন্ন সারের প্রয়োগ করতে হবে তার তথ্য আপনি সহজেই নার্সারি থেকে পেয়ে যাবেন। এই ফলটি গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে তাই আপনি এটি এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে এই গাছ রোপন করতে পারেন। ড্রাগন গাছটি লাগানোর প্রায় এক থেকে দেড় বছর পর ফল আসে , প্রথমে গাছে একটি ফুল আসে তারপর কিছু দিনের পর সেখান থেকে আপনি একটি ড্রাগন ফল পেয়ে যাবেন। 

ড্রাগন ফল খাবার নিয়ম 

ড্রাগন ফলটি আপনি দুই ভাগে কেটে নিয়ে একটি চামচের সাহায্যে ভেতরের অংশটি আরামসে তুলে খেতে পারবেন, তাছাড়াও এই ফল টি অন্যান্য ফলের মতো ফ্রুইট সালাদ করেও খাওয়া যেতে পারে। ড্রাগন ফলটি কে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে আপনি সেটা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন , আবার এই ফলটি আপনি নিজের মতো করে জুস বা স্মুদি বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

বিশেষ 7 টি কাঠ বাদাম এর উপকারিতা

ড্রাগন ফলের উপকারিতা 

  • ড্রাগন ফলের উপকারিতা মধ্যে প্রথমত হলো এই ফলে প্রায় ৮ গ্রাম মতো ফাইবার থাকে , যারা ভীষণ কোষ্টকাঠিন্যে ভুগে থাকে তাদের জন্য ফাইবার অত্যন্ত দরকারি একটি উপাদান। এই ফাইবার আপনার হজম শক্তি কে অনেক গুন্ বাড়িয়ে তোলে এবং এটি পাকস্থলীর প্রক্রিয়া গুলি কে অনেক সহজ করে দেয়। 
  • ড্রাগন ফলে পটাসিয়াম থাকার কারণে এই ফল টি খেলে আপনার কিডনির কোনো সমস্যা হবে না। অনেকে কিনডিতে পাথর হওয়া সমস্যা নিয়ে ভোগেন , ড্রাগন ফল এই সমস্ত রোগ থেকে আপনাকে দূরে রাখে। 
  • ড্রাগন ফলের উপকারিতা মধ্যে অন্যতম হলো এই ফলটিতে মনোস্যাচুয়েড এর পরিমান অনেক পরিমানে পাওয়া যাই আর এই মনোস্যাচুয়েড আপনার শরীরে পৌছিয়ে খারাপ কোলেস্টেরলকে কমায় এবং ভালো কোলেস্টরল কে বাড়িয়ে তোলে তার ফলে আপনার হার্ট সুস্থ থাকে এবং ভবিৎষতে হার্ট এট্যাকের সম্ভবনা থেকে রেহাই দেয়। 
  • আপনি যদি নিয়মিত এই ড্রাগন ফলটি খান তাহলে আপনার ভবিৎষতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক খানি কমে যাবে।  কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে উপস্থিত আন্টি অক্সসাইড শরীরে ক্যান্সার উদপাদন করি কোষ গুলি ধ্বংস করে দেয়। 

মানবজীবনে মধুর উপকারিতা

  • আজকের দিনে অনেকেই চোখের সমস্যায় ভুগে থাকে। ড্রাগন ফলের উপকারিতা আমাদের চোখের দৃষ্টি ঠিক রাখতেও অনেক পরিমানে সক্ষম।  ড্রাগন ফলটির মধ্যে বিটা -ক্যারোটিন পাওয়া যাই যা আমাদের দৃষ্টি শক্তির জন্য খুবই ভালো। এই বিটা -ক্যারোটিনটি টি গাজরের মধ্যেও থাকে তাই যারা গাজর খেতে পছন্দ করে না তারা সেই পরিবর্তে এই ড্রাগন ফলটি খেতে পারে।
  • যারা ডায়াবেটিকসে ভুগছেন তারা এই ফলটি খেতে পারবেন ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা কে কমিয়ে দেয় তার মধ্যে ডায়াবেটিকসে যারা ভুগছেন তাদের সুগার বাড়তে দেয় না। 
  • যারা নিজেদের ওজন নিয়ে চিন্তিত তারা নির্ভয়ে এই ড্রাগন ফলটি খেতে পারবেন।  এই ফলটির মধ্যে কোনো ক্যালোরি নেই তার ফলে কোনো ফ্যাট জাতীয় উপাদান আপনার শরীরে প্রবেশ করে না। 
  • আপনি কি হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন তাহলে এই ফলটি খেতে পারেন।  কারণ ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম যা আপনার হার কে মুজবুত করে , স্বাস্থ ঠিক রাখে। তাই যারা হাড়ের যাবতীয় সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক গুন্ বেশি। 
  • ড্রাগন ফলের মধ্যে আয়রনের উপাদান পাওয়া যাই তাই যারা রক্ত শুন্যতায় ভুগছে তারা এই ফল টি খেতে পারবেন। 

5 টি সেরা কাঁচা পেঁপের উপকারিতা যা আপনাকে ওষুধ থেকে দূরে রাখবে

Note – ড্রাগন ফলের উপকারিতা গর্ভবর্তী মহিলাদের জন্য খুবই কার্যকরী। বিশেষজ্ঞদের মতে ড্রাগন ফলটি খুবই ভালো একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য। এতে থাকা ভিটামিন বি এবং আয়রন খুবই দরকারি উপাদান। তবে অনেকেরই এই ফলটি থেকে এলার্জি হতে পারে তাই অবশ্যই একবার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো। 

ত্বকের যত্নে ড্রাগন ফলের ভূমিকা   

  • একটি সময়ের পর বয়েসের চাপ পড়তে থাকে আমাদের মুখের মধ্যে , ফাইন লাইন , চামড়া আলগা হওয়া , ইত্যাদি সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে কিন্তু আপনি এই ড্রাগন ফলটি ব্যাবহার করতে পারেন, ড্রাগন ফলের উপকারিতা শুধু শারীরিক নয় আমাদের ত্বক কেউ যত্নে রাখে।  দীর্ঘদিন এই ফল টি খেলে আপনার ত্বকের উন্নতি তো হবেই , স্কিন আরো উজ্জ্বল হবে টানটান ত্বকের সাথে বয়েসের ছাপও কমবে।
  • মুখের জেল্লা ফিরিয়ে আনতে আপনি এই ড্রাগন ফলটি ফেসপ্যাক হিসেবেও ব্যাবহার করতে পারবেন , তার জন্য একটি ড্রাগন ফল নিয়ে তার ভিতরের অংশটিকে বের করে ফেলতে হবে এবং তারপর সেটি আপনি মিক্সি তে ব্লেন্ড করে নিয়ে সাথে সাথে টকদই মুধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন।  তারপর ২০ মিনিট হয়ে গেলে জলে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই প্যাকটি আপনি ব্যাবহার করতে পারবেন। এর ফলে আপনার ত্বক টানটান থাকবে , মুখের মধ্যে পড়া টান দূরে থাকবে এবং আপনার স্কিনকে আরো উজ্জ্বল বানাবে। 
  • ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিনযা মুখের ব্রণ কে দূরে রাখতে সাহায্য করে , ড্রাগন ফলের রস রোজ যদি আপনি সকালে এবং রাত্রে আপনার যেখানে ব্রণের সমস্যা রয়েছে সেখানে লাগিয়ে রাখলে খুব তাড়াতড়ি ব্রণের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাই। 
  • ড্রাগন ফলের উপকারিতা শুধু আপনার ত্বকেরই নয় চুল ভালো রাখতেও খুবই উপকারী।  এই ফলের রস যদি আপনি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রেখে সেটি ৪০ মিনিট মতো রেখে শ্যাম্পু করে ফেলেন তাহলে আস্তে আস্তে আপনার চুল পড়া কমবে , অনেকেই বয়েসের আগে চুলে পাক ধরে যাই সেটির হার থেকেও এই ফলটি বাঁচাবে তার সাথে চুল কে আরো বেশি স্বাস্থবান করে তুলবে। 

সেরা 7 টি ওটস এর উপকারিতা যা আপনাকে সুস্থ রাখবে

ড্রাগন ফলের অপকারিতা 

ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্মন্ধেই তো আমরা জানলাম তবে এর সাথে সাথে আমাদের এটাও জানতে হবে যে এই ফল টি আমাদের কি কি ভাবে ক্ষতি করতে পারে। 

  • এই ড্রাগন ফলটি অনেকেরই এলার্জির কারণ হতে পারে , ফলটি খেলে হটাৎ করে ঠোঁট ফুলে যাওয়া , জিভ এবং গলা চুলকুনি এসব সমস্যা দেখে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আপনি এই ফলটি খাওয়া বন্ধ করে দিন এবং ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিন। 
  • সঠিক পরিমানে ড্রাগন ফল খেলে আমাদের হার্ট ভালো থাকে এবং কোলেস্টরল কে কমাতেও সাহায্য করে এই ফল টি। তবে ড্রাগন ফল বেশি পরিমানে খেলে উচ্চ রক্ত চাপ , হার্ট এর বিভিন্ন রোগ , হার্ট এটাক , স্ট্রোক এই সব সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে। 
  • ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা ফাইবার আমাদের পাচন তন্ত্র কে ভালো রাখে পেটের অনেক সমস্যার হাত থেকে আমাদের দূরে রাখে তবে হা যদি এটা আমরা সঠিক পরিমানে ব্যাবহার করি তবেই। বেশি পোনে ফাইবার আমাদের শরীরে গেলে আর তার উপর যদি আমরা ঠিক মতো জল না খাই তাহলে , কোষ্টকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মতো রোগের হাতেও পড়তে হতে পারে। 
  • আমরা জানি ড্রাগন ফলের মধ্যে পটাসিয়াম পাওয়া যাই আর অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে বেশি পরিমান পটাসিয়াম যদি আমাদের শরীরে যাই তাহলে ব্লাড পেসারের লেভেল কিন্তু অনেক খানি কমে যেতে পারে এবং তারফলে মাথা ঘোরা , বমি বমি ভাব , দুর্বল ইত্যাদির সমস্যা হতে পারে।  

ড্রাগন ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল তাই আমরা যদি সঠিক পরিমানে এই ফলটি খেতে পারি তাহলে এসব রোগের মুখে পড়তে হবে না , অতি পুষ্টিকর খাবার বেশি পরিমানে খাওয়া কখনোই উচিত নই। 

মানুষের শরীরে দুধের উপকারিতা

একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম 

প্রথমে আমরা জানলাম যে ড্রাগন ফলের চাষ কিভাবে করা যাই এবং এই ফলটি খাবার নিয়ম গুলি কি কি। তারপর আমরা জানলাম ড্রাগন ফলের উপকারিতা গুলি কি কি  এবং তার অপকারিতা কি থাকতে পারে।

আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি ড্রাগন ফলের উপকারিতা নিয়ে  যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া ড্রাগন ফলের উপকারিতা বা এই বিষয়ে  আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই। 

আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই  আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের  সাথে  শেয়ার করতে পারেন।  আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন। 

ধন্যবাদ  

শেয়ার করুন:

আমি সুরভী , আমি একজন কনটেন্ট রাইটার এবং একজন প্রফেশনাল মেহেন্দি ডিজাইনার । সাধারণত আমি হেলথ লাইফস্টাইল Niche এর উপর কনটেন্ট লিখতে ভালোবাসি । আর বঙ্গজ্ঞান এর মতো ট্রাস্টেড প্লাটফর্মে কনটেন্ট রাইটিং এর সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি ।

Leave a Comment