সেরা 7 টি ওটস এর উপকারিতা যা আপনাকে সুস্থ রাখবে

5/5 - (1 vote)

ধান এবং গমের মতো ওটস হলো এক প্রকারের খাদ্যশস্য যা প্রাচীন কালে পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতো। তবে পরবর্তী সময়ে বৈজ্ঞানিকরা পরীক্ষা করে জানতে পারেন মানুষের জন্য ওটস এর উপকারিতা বা ভূমিকা ,  আর তার প্রধান কারণ হলো এর মধ্যে থাকা এমন বিশেষ কিছু উপাদান । যেমন ফসফরাস , ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন , প্রোটিন , এবং ফাইবারে ভরপুর হলো এই ওটস, বেশি আঁশযুক্ত উপাদান বা ফাইবার থাকার কারণে এই খুব সহজেই পেট ভরিয়ে দেয় এবং তার ফলে খিদেও কম পায় ।

ওটসে রয়েছে বেটা-গ্লকোন যা দেহের মধ্যে অনেক কাজে লাগে এবং দেহের মধ্যে যে ক্ষতিকর কোলেস্টরল যা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও কাজে দেয়। রাশিয়া পোল্যান্ড এবং কানাডাতে ওটসের চাষ ভীষণ পরিমানে হয়ে থাকে , আমাদের যে বাদবাকি খাদ্যশস্য রয়েছে তার তুলনায় ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে  প্রোটিন এবং ফ্যাট। 

ওটসের উপকারিতা   

এখন প্রায় অধিকাংশ মানুষজনই নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে খুব সচেতন থাকেন তাই তারা তাদের খাদ্যতালিকার মধ্যে এই ওটস নামক খাদ্যশস্যটি রাখতে পছন্দ করে। বেশিরভাগ মানুষ এটি ব্রেকফাস্টে খেতেই বেশি পছন্দ করে তবে এখন নতুন নতুন অনেক রেসিপি আছে সেই ভাবে বানিয়ে ওটস টি লাঞ্চ এবং ডিনারের সময় ও অনেকে খেয়ে থাকেন । এছাড়াও ওটস থেকে কেক বিস্কুট ইত্যাদি ধরণের খাবারও তৈরী হয়ে থাকে। আজকের এই পোস্টটি থেকে আমরা জানবো যে ওটস খাবার সঠিক নিয়ম গুলি কি কি এবং ওটসের মধ্যে কি কি উপাদান আছে এবং তা আমাদের শরীরে কিভাবে কাজে দেয় আর জেনে নেবো ওটস এর উপকারিতা এর সাথে তার কি কি অপকারিতা থাকতে পারে , কিন্তু ওটস এর উপকারিতা জানার আগে জেনে নেবো oats খাওয়ার নিয়ম গুলি কি কি 

১. Oats খাওয়ার নিয়ম

ওটস মূলত পশ্চিমা দেশীয় খাবার তাড়া বেশিরভাগ ওটস খাবারটি ব্রেকফাস্টে খেতেই বেশি পছন্দ করে। তবে এখন ওটস আমাদের দেশেও অনেক জনপ্রীতি লাভ করেছে যারা ওজনের সমস্যায় ভুগছেন তারা সকালে ব্রেকফাস্টে এবং রাত্রে ডিনারের সময় খেতে পারেন তাতে আপনার খিদে কমে যাবে এবং তার ফলে ওজন ও কমবে। ওটসে থাকা বেটা -গ্লকোন আস্তে আস্তে খাবারটি হজম করে তার ফলে অনেক সময় পর্যন্ত পেট ভর্তি রাখে। 

  • সকালে ব্রেকফাস্টের সময় ওটস গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেয়ে পারেন যদি আপনি মিষ্টি করে খেতে চান তাহলে চিনি ব্যাবহার না করে মধু দিয়ে খেতে পারেন। আবার আপনি চাইলে ওটসের মধ্যে কলা আপেল স্ট্রবেরি ইত্যাদি নানা ধরণের ফল মেশাতে পারেন আবার ড্রাইফ্রুটস যেমন আমন্ডস , খেজুর , কিসমিস এই সব মিশিয়েও খেতে পারেন। 
  • যদি আপনি লাঞ্চ বা ডিনারের সময় খেতে চান তাহলে আপনি অন্যান খাদ্যশস্যের মতো সেদ্ধ করে নানা রকম তরকারির সাথে খেতে পারেন আবার ওটসের ডালিয়া বা খিচুড়ি বানিয়ে নিতে পারেন। 
  • এখন ওটসের স্ন্যাস অনেক চলে এসেছে যেমন নানাধনের বিস্কুট কেক , আপনি এগুলো চা বা কফির সাথে খেতে পারেন। 

 

২. ওটস এর উপকারিতা

ওটসে রয়েছে নানাধনের পুষ্টিকর উপাদান যা দেহে আন্টি অক্সসিডেন্ড হিসেবে কাজে দেয় , তাহলে চলুন জেনে নি আমাদের শরীরে ওটস এর উপকারিতা কি এবং কিভাবে কাজে দেয়। 

  • যারা উচ্চরক্তচাপে ভোগেন তাদের জন্য ওটসের ভূমিকা অনেক, ওটসে মধ্যে Avenanthramide থাকে যা কিন্তু শুধু এই ওটসের মধ্যেই পাওয়া যাই এই Avenanthramide নাইট্রিক অক্সসাইডের উপাদান গুলো বাড়িয়ে দেয় তার ফলে ওটস আপনার উচ্চরক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। 
  • ওজনের সমস্যার যারা চিন্তিত তাদের জন্য ওটস একটি উপযুক্ত খাবার , একটি গবেষণায় জানা গেছে ওটসে বাকি খাদ্যশস্যের তুলনায় অনেক বেশি ফাইবার রয়েছে যা আপনার পেট অনেক্ষন পর্যন্ত করিয়ে রাখে এবং সহজেই খিদে লাগতে দেয় না ফলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হবে না এবং আপনার মেদ ও খুব তাড়াতড়ি কমতে থাকবে। 
  • আপনি যদি কোলেস্টরোলে ভোগেন তাহলে আপনি এই ওটস খেতে পারেন। ওটসের মধ্যে একটি বিশেষ উপাদান বেটা –গ্লকোন যা আপনার দেহের খারাপ কোলেস্টরলকে কমাতে অনেক সহজ করে। কোলেস্টরল যদি আপনার ঠিক থাকে তাহলে আপনি স্ট্রোক হার্ট অ্যাটাক এবং হৃদ রোগের অন্যান অসুবিধে থেকেও আপনি সুস্থ থাকবেন। 
  • যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য ওটস খাওয়া খুবই ভালো। ওটসের মধ্যে থাকা ভিটামিন ফাইবার ,প্রোটিন , ফ্যাট ও আন্টিঅক্সসিডেন্ট আপনার ডায়াবেটিকস কমাতে সাহায্য করবে। 
  • ওটস আপনার মেধাবী শক্তিকে বৃদ্ধি করে,  ভাত রুটি অল্প খেয়ে যদি ওটস খাওয়া যাই তাহলে ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্কের মেধাবী শক্তিকে আরো উন্নত করে। 

ওটস এর উপকারিতা

  • ওটস আপনার কোষ্টকাঠিন্য কে দূর করতে অনেক কার্যকরী , আজকাল অনেকেই এই কোষ্টকাঠিন্য রোগে ভুগতে থাকে ওটসের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনাকে এই সমস্যার হাত থেকে অনেক রেহাই দিয়ে থাকে। 
  • কোনো মহিলা যদি রোজ এক বাটি করে ওটস খান তাহলে ভবিৎষতে তার স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়া ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। ওটসের মধ্যে  হোল গ্রেইন্স পোস্ট -মেনোপোজাল এই উপাদানের উপস্থিতির কারণে ক্যান্সারের সম্ভবনা অনেকটা কমিয়ে দেয়। 
  • ওটস খেলে আমাদের শরীরের যে সেরোটোনিন হরমোন আছে সেটি নিয়ন্তনে থাকে তার ফলে অহেতুক দুশ্চিন্তা মন খারাপ এইগুলিকে দূরে রাখে। শুধু তাই নই ওটসে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ঘুমের সমস্যা দূর করতে অনেক সাহায্য করে তাই যারা অনিদ্রায় সমস্যায় ভুগে থাকে তারা রোজ এই ওটস খেতে পারেন। 

বিশেষ 7 টি কাঠ বাদাম এর উপকারিতা 

৩. ওটস বাচ্চাদের জন্য কি কার্যকরী 

একটি শিশুকে পাঁচ বছরের পর থেকে ওটস খাওয়ানো যেতে পারে , দুধের সাথে ভালো করে মিশিয়ে আপনি খাওয়াতে পারেন । ওটসে প্রচুর পরিমানে ফাইবার /থাকার জন্য এই শিশু কে খাওয়ানো খুব উপকারী , ছোটো বয়েস থেকে ওটসের অভ্যাস করালে বাচ্চার হাড় শক্ত এবং গঠনে ভালো হয়। ওটসের মধ্যে থাকা এমন কিছু উপাদান বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে এবং তার সাথে মস্তিষ্কের বিকাশেও অনেক বড়ো ভূমিকা পালন করে। 

৪. ওটসের অপকারিতা 

ওটসের মধ্যে আমরা জানি অনেক গুন্ রয়েছে ওটস আমাদের দেহের জন্য নানা ভাবে কাজে দেয় কিন্তু অতিরিক্ত কোনো জিনিসই খাওয়া কি ভালো ? আমরা যদি ভাত রুটি ছেড়ে দিয়ে সবসময় ওটস খেয়েই থাকি তাহলেও সেটাও কিন্তু খুবই ক্ষতিকর একটি দিক তাই আমরা জেনে নেবো ওটস এর উপকারিতা অর্থাৎ ভালো দিক গুলোর সাথে খারাপ দিক গুলি কি কি হতে পারে। 

  • ওটসে ফাইবার থাকার জন্য ওটস কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে অনেক সাহায্য করে তবে আপনি যখন আপনার শিশু কে খাওয়াবেন তখন অবসসই আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন যে আপনার বাচ্চার শরীরের জন্য ওটস ভালো হবে কিনা। 
  • সঠিক পরিমানে ওটস যেমন আপনার হারের ব্যথা দূর করে তেমনি কিন্তু অত্যাধিক ওটস গ্রহণ করলে হাড়ে ব্যথা , অতিরিক্ত ঘুম পাওয়া , মাইগ্রেন ,পেশির দুর্বলতা , হাত এবং পা এর নখ এর বৃদ্ধি না হওয়া ইত্যাদি কঠিন রোগে পড়তে হতে পারে। 
  • ওটস এমন একটি খাদ্যশস্য যা আপনার পেট ভরিয়ে রাখে খিদে পেতে দেয় না কিন্তু আপনি যদি ওটস অনেক পরিমানে খান তাহলে আপনার শরীর আপনাকে খিদে পাওয়ার কোনো সংকেতই দেবে না র তার ফলে আপনি অপুষ্টি শিকার হবেন আপনার হাড় এবং মাংসপেশি খুব দ্রুত ক্ষয় হতে থাকবে। 
  • আপনি যখন ওটস খাবেন তখন সেটি কিন্তু ভালো করে সেদ্ধ করে খেতে হবে নাহলে পেট ব্যথা এবং কোষ্টকাঠিন্যেও পড়তে হতে পারে। 
  • আজকাল মার্কেটে ওটসের ভিন্ন ভিন্ন ফ্লেভার এবং টেস্টে পাওয়া যায় , চিনি মিশ্রিত একপ্রকার ওটস ও পাওয়া যাই তাই যারা ডায়বেটিকসে ভুগছেন তারা এই ওটস কেনা থেকে দূরেই থাকুন এবং নরমাল যে ওটস টি আছে ওটা তে বরং মধু দিয়ে খেতে পারেন । 

 • 5 টি সেরা কাঁচা পেঁপের উপকারিতা যা আপনাকে ওষুধ থেকে দূরে রাখবে

একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম 

প্রথমে আমরা জানলাম যে ওটস খাবার সঠিক নিয়ম গুলি কি কি তারপর জানলাম যে ওটস এর উপকারিতা গুলি কি কি এবং ওটস বাচ্চা দেড় জন্য কি কাজে দেয় তাছাড়াও ওটস এর উপকারিতা সাথে সাথে তার কিছু অপকারিতা সম্বন্ধেও আমরা জানলাম। 

আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি ওটস এর উপকারিতা নিয়ে  যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া ওটস এর উপকারিতা বা এই বিষয়ে  আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই। 

আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই  আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের  সাথে  শেয়ার করতে পারেন।  আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন। 

ধন্যবান 

বঙ্গজ্ঞান টিম

শেয়ার করুন:

আমি সুরভী , আমি একজন কনটেন্ট রাইটার এবং একজন প্রফেশনাল মেহেন্দি ডিজাইনার । সাধারণত আমি হেলথ লাইফস্টাইল Niche এর উপর কনটেন্ট লিখতে ভালোবাসি । আর বঙ্গজ্ঞান এর মতো ট্রাস্টেড প্লাটফর্মে কনটেন্ট রাইটিং এর সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি ।

Leave a Comment