জবা ফুলের উপকারিতা এবং ফুলের ব্যবহার

Rate this post

জবা ফুল(হিবিস্কাস) যাকে চীনা গোলাপ বা রোজমেলা নামেও অনেকে চেনেন, এই ফুল প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যাই, এটি বিভিন্ন বিভিন্ন রঙেরও হয়ে থাকে যেমন লাল, সাদা, গোলাপি, হলুদ ইত্যাদি, এখন অনেক অনেক রকমের বিদেশি জবা গাছ ও পাওয়া যাই তবে যেটাকে কে দেশি জবা গাছ বলে আর যেটি সাধাণতঃ লাল রঙের হয় সেই জবা ফুলের উপকারিতা অপরিসীম। 

জবা ফুলের উপকারিতা

এতদিন আমরা জবা ফুল কে শুধুমাত্র চুলের জন্যই জেনে এসেছিলাম, অনেকেই আছেন যারা চুলের জন্য এই জবা ফুলকে ব্যাবহার করে থাকেন, তবে এমন অনেক কম ব্যাক্তিই জানেন যে এই ফুলটিকে খাওয়াও যাই এবং তার থেকে পাওয়া প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের শরীরে অনেক কাজে লাগে। 

আমাদের আসে পাশেই এমন কিছু গাছ গাছালি থাকে যাদের ঔষুধি গুণাবলী অনেক বেশি এবং তার সমন্ধে অনেকেই জানে না, প্রথমত এই জবা চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে জবাব নেই, জবা ফুলে থাকা এমাইনো এসিড চুলের কেরাটিন প্রোটিন কে বাড়িয়ে তুলতে খুবই সাহায্য করে। জবা ফুলের উপকারিতা যে শুধু চুলের তা কিন্তু নয় এছাড়াও এই জবা ফুল শরীরের বিভিন্ন অসুখ যেমন জ্বর, হজম শক্তি বৃদ্ধিতে , উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এই ফুল খুবই কার্যকরী। জবা ফুলের উপকারিতা এত বেশি লক্ষ্য করে আজ বঙ্গজ্ঞান নিয়ে এসেছে আজকের এই পোস্টটি যেখান থেকে আমরা জেনে নেবো কিভাবে আমাদের কাজে লাগে এই ফুল টি চলুন তাহলে আজকের পোস্টটি শুরু করা যাক। 

আমরা এই জবা ফুলকে কিভাবে খাবো 

জবা ফুলের উপকারিতা তো অনেক আছে কিন্তু আমরা এই ফুলটিকে খাবো কি করে ? এই রকম প্রশ্ন তো আসবেই কোনো চিন্তা নেই আমি আপনাদের বলবো খুবই সহজ একটি রেসিপি যা খুবই সহজে বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারবেন কোনো জামেলা ছাড়াই। 

প্রথমে জল গরম করে নিতে হবে তারপর জল ফুটতে শুরু করলে ৪-৫ টি জবা ফুল এই জলের মধ্যে দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে যতক্ষণ না জলের রং লাল বর্ণের হয়ে যাচ্ছে, তারপর গ্যাস থেকে নামিয়ে নিন এবার আপনি চাইলে তার সাথে একটু লেবুর রস এবং মিষ্টির জন্য হালকা মধুর ব্যাবহার ও করতে পারেন, এটি সাধাণতঃ জবা ফুলের চা হিসেবেই লোকে চেনে । 

এই জবা ফুলের চা টি একদম ঘন লাল বর্ণের হয়ে থাকবে, এবং এর স্বাদ খানিকটা টক জাতীয় হবে তাছাড়াও আপনি এটি নিজের ইচ্ছা মতো ঠান্ডা অথবা গরম নিজের মনের মতো করে খেতে পারবেন। 

  • মানবজীবনে মধুর উপকারিতা

চুলের যত্নে জবা ফুলের ব্যবহার

অনেক প্রাচীন সময় থেকে চুলের জন্য এই জবা ফুলের ব্যাবহার হয়ে আসছে, খুশকি, চুল সাদা হয়ে যাওয়া এইসবের হাত থেকে রক্ষা করতে জবা ফুলের জুড়ি মেলা ভার। জবা ফুলের মধ্যে থাকা এমাইনো এসিড প্রাকৃতিক ভাবে চুলের জেল্লা বজায় রাখে এবং মাথার রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত করে ফলে নতুন চুল গজাইও খুব তাড়াতারি। 

জবা ফুলের ব্যাবহার অনেক ভাবেই করা যাই তবে সবথেকে ভালো হয় যদি আপনি নারকেল তেলের সাথে ব্যাবহার করতে পারেন তারজন্য করাই এ খানিকটা তেল গরম করতে হবে এবং তার মধ্যে ৫-৬ তা জবা ফুল এবং তার সাথে জবা ফুলের পাতাও দিতে পারেন ২-৩ তে মতো, সাথে অল্প পরিমানে মেথি দিয়ে ভালো ভাবে তেলটি গরম করে নিতে হবে, উপকরণ গুলি ভাজা ভাজা হয়ে গেলে আপনি করাই গ্যাস থেকে নামিয়ে নিন। 

এই তেল একদম ঠান্ডা হয়ে যাবার পর কোনো কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করে রাখুন এক মাস পর্যন্ত এই তাল আপনার আরামসে চলে যাবে, সপ্তাহে এক বা দু বার এই তেল এর ব্যাবহার করুন খুব ভালো করে মাথায় ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে তারপর ২ ঘন্টা রাখার পর শ্যাম্পু করে নিন। 

ধীরে ধীরে আপনার চুলের পরিবর্তন আপনার চোখে পরবে, আপনার চুল যদি খুব পাতলা হয়ে থাকে তাহলে চুলের টেক্চার কে ভালো করবে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে, আপনার চুল যদি রুক্ষ হয়ে থাকে তাহলে সেটাও সিল্কি এবং মোলায়েম হবে। 

জবা ফুলের সাথে আছে মেথি যা চুলের জন্য খুবই দরকারি একটি   উপকরণ মাথায় খুশকি হলে সেটি থেকে রেহাই দেয়, অকাল বয়েসে যদি চুলে পাক ধরতে শুরু করে তাহলে সেটি থেকেও আটকায় এই জবা ফুল, যদি এই তেলটি আপনি শীতকালে তৈরী করছেন তাহলে সেক্ষেত্রে নারকেল তেলের জায়গায় কাঠ বাদামের তেল(almond oil)ব্যাবহার করতে পারেন কারণ শীতকালে নারকেল জমে যাই তাহলে আর বারবার গরম করে নিতে হবে না। 

  • বিশেষ 7 টি কাঠ বাদাম এর উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধকে ক্ষমতা বারাতে জবা ফুলের উপকারিতা

জবা তে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এবং মিনারেলস যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কে অনেক গুন্ বাড়িয়ে তোলে, অনেক সময় হয় যে আমাদের জ্বর জ্বালা হলে সেটি সারতে অনেক সময় লেগে যাই বা যখন তখন শরীর খারাপ হয়ে উঠে এর কারণ হলো আপনার শরীরে ইমিউনিটি পাওয়ার অনেক কম আছে যার জন্য আপনার ব্যাথি তাড়াতাড়ি নিয়মই হয় না। 

গবেষণায় দেখা গেছে জবা ফুলের মধ্যে পাওয়া পুষ্টিকর উপাদান আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কে বাড়াতে খুবই সক্ষম, যদি আমরা রোজ এক কাপ করেও জবা ফুলের চা খেতে পারি তাহলে আপনার এই অবস্থা থেকে অনেক রেহাই পাবো। 

উদ্বেগ এবং উদ্দীপনা কমাতে জবা ফুলের উপকারিতা

অনেক ব্যাক্তি এমন আছেন যারা অনেক সময় উদ্বেগ অথবা এঞ্জাইটি তে ভুগে থাকেন, তারা এই পানীয় টি নিজেদের নিত্যদিনের রুটিনে নিয়ে আসতে পারেন, জবা ফুলের মধ্যে পাওয়া যাই আন্টি অক্সসিডেন যা আমাদের মন মেজাজ কে ফুরফুরে রাখে এবং শরীরে তরতাজা রাখতে খুবই কার্যকরী। 

ত্বকের যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে জবা ফুলের উপকারিতা

আপনি যদি প্রায় ত্বক নিয়ে ভুগে থাকেন অর্থাৎ মুখে ব্রণের সংখ্যা বেশি হয়ে যাই, বা মুখের মধ্যে কালো দাগ হয়ে থাকে, ত্বকের শুস্কতা যেকোনো সমস্যার জন্য আপনি এই জবা ফুলের চা খেতে পারেন। জবা ফুলের মধ্যে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং আলফা হাইড্রোক্সি এসিড যা আপনার ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করবে, এবং তারই সাথে সাথির ত্বককে আরো বেশি সুস্থ রাখবে, ত্বক ভালো রাখতে চাইলে নিয়মিত এই চা বানিয়ে আপনি খেতে পারেন। 

বাচ্চাদের জন্য জবা ফুল 

বাচ্চা বয়েসে শিশুদের অনেক রোগ জ্বালা হয়ে থাকে কখনো জ্বর আবার কখন ঠান্ডা প্রাচীন কাল থেকেই শিশু দের বিভিন্ন পাতার রস  খাওয়ানো হয়ে থাকে, এবং যদি আপনার বাচ্চার বয়স ১ বছরের থেকে বেশি হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি বাচ্চাকে খাওয়া পারবেন তবে তখন আপনাকে জবা ফুলের পাতা কে বেঁটে তার রস ওই এক চামচ মতো খাওয়াতে হবে, হাঁ জবা ফুলের পাতা তেও অনেক গুন্ রয়েছে আর ছোট বয়েস থেকে যদি আপনার শিশু কে খাওয়া পারেন তাহলে সেটা খুব ভালো তার সাস্থের জন্য। 

ওজন কমাতে জবা ফুলের উপকারিতা

যেসব ব্যাক্তি ওজনের সমস্যায় ভুগছেন তারা এই জবা ফুলের চা নিজেদের খাদ্য তালিকার মধ্যে রাখতেই পারেন, বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন জবা ফুলের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনার মেদ কে ঝরিয়ে তুলতে সক্ষম এবং তারই সাথে আপনার শরীরকে এনার্জি প্রদানও করে থাকে তাই আপনি যদি ওজন কমাতে চা তাহলে অবশ্যই অন্যান্য খাবারের সাথে এই হার্বার টি কেও সাথে রাখতেই পারেন। 

  • চিয়া সিড এর উপকারিতা

হজমে সহায়তা করে 

হজম ভালোর জন্য জবা ফুলের উপকারিতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাই, এই জবা ফুলের চা নিয়মিত খেলে আপনাকে আর হজম নিয়ে কোনো সমস্যা তাই পড়তে হবে না, বদ হজম, খাবার ঠিক করে হজম না হওয়া, খিদে না পাওয়া এইসব সমস্যার থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। 

উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচাতে জবা ফুলের উপকারিতা

যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য এই জবা ফুলের চা অত্যন্ত উপকারী, এটি শরীরে পৌছিয়ে উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এমনকি এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টরল কে কমাতেও সাহায্য করে ফলে আমাদের হার্ট জনিত কোনো রোগে পড়তে হয় না। বোরো বোরো অসুখ যেমন ক্যান্সার এর হাত থেকেও রক্ষা করে এই জবা ফুল তাই আপনি যদি এই চা নিয়মিত পান করেন তাহলে আপনি শরীরের অনেক অসুখ থেকে সুস্থ থাকতে পারবেন। 

জবা ফুলের পার্শপ্রতিক্রিয়া 

জবা ফুলের উপকারিতা সাথে সাথে কয়েকটা দিক আমাদের মাথায় রাখতে হবে নাহলে শরীরের অনেক ক্ষতিও হতে পারে। 

  • গর্ভবর্তী মহিলা যারা আছেন তাদেরকে এই জবা ফুলের চা না খাওয়াই ভালো। 
  • যদি কোনো ব্যাক্তির হরমোনের সমস্যা থাকে তাহলে তার এই জবা ফুল চা খাওয়া একদমই উচিত নয়। 
  • জবা ফুলের চা খেলে যদি কোনো রকম এলার্জি  তাহলে খাওয়া  বন্ধ করে দেওয়া উচিত। 

 

প্রথমে আমরা জানলাম যে জবা ফুলকে খাবার পদ্ধতি কি তারপর জানলাম জবা ফুলের উপকারিতা কি কি এবং তারই সাথে কাদের এই জবা ফুলের চা খাওয়া উচিত নয়। 

আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি জবা ফুলের উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া জবা ফুলের উপকারিতা বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই। 

আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই  আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের  সাথে  শেয়ার করতে পারেন।  আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন। 

ধন্যবাদ 

শেয়ার করুন:

আমি সুরভী , আমি একজন কনটেন্ট রাইটার এবং একজন প্রফেশনাল মেহেন্দি ডিজাইনার । সাধারণত আমি হেলথ লাইফস্টাইল Niche এর উপর কনটেন্ট লিখতে ভালোবাসি । আর বঙ্গজ্ঞান এর মতো ট্রাস্টেড প্লাটফর্মে কনটেন্ট রাইটিং এর সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি ।

Leave a Comment