১০ টি সেরা কৃষি ব্যবসা আইডিয়া

5/5 - (2 votes)

ছোটো বেলা থেকে আমরা স্কুলে ভূগোলে পড়ে এসেছি যে ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ । এখানে বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয় চাষবাসের মাধ্যমে । তাই চীন,আমেরিকা , ফ্রান্স , ব্রাজিল,মেক্সিকো এইসব দেশের সাথে সাথে ভারত কেউ সেরা ১০ টি কৃষিপ্রধান দেশের মধ্যে রাখা হয় , এবং ভারতে সাধারণ চাষের সাথে সাথে জৈব চাষের অর্থাৎ অর্গানিক চাষের চাহিদাও বেড়ে চলেছে , আর এখানে উৎপাদন করা ফসল বিভিন্ন দেশ বিদেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে । ২০২০ সালে ভারতীয় কৃষি বাজার প্রায় ৫৬ হাজার বিলিয়ন এর ছিল , সেটা ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫০ হাজার বিলিয়ন হয়ে যাবে ।

কৃষি ব্যবসা আইডিয়া

যদি আপনি কৃষিখাতে বা এগ্রিকালচার সেক্টরে আগ্রহ রাখেন এবং এই ফিল্ডে নিজের একটা ব্যবসা শুরু করতে চান , তাহলে আপনি একদম সঠিক পথ বেছে নিয়েছেন । কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবসা করা মানে কিন্তু এই নয় যে আপনাকে মাঠে গিয়ে চাষাবাদ করতে হবে । এছাড়াও বেশ কিছু কৃষি ব্যবসা আইডিয়া রয়েছে , যে আইডিয়া গুলোর উপর আপনি কাজ করে নিজের একটা সফল ব্যবসা করতে পারেন ।

তাই আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের এমন ১০ টি কৃষি ব্যবসা আইডিয়া দেব , যে ব্যবসা গুলো খুব দ্রুত গতিতে বেড়ে উঠেছে এবং সেগুলোর উপর ব্যবসা করা আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে ।

 

চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক কৃষি ব্যবসা আইডিয়া গুলো

১. মাশরুম চাষ

যখন আপনি কোনো রেস্টুরেন্ট বা কোনো খাবারের দোকানে যান এবং সেখানে যদি নিরামিষ খাবার অর্ডার করার থাকে তাহলে ওয়েটার আপনাকে মাশরুম বা পনির এর কোনো খাবারের মেনুর কথা বলবে । আমাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই জানেনা মাশরুম এর পুষ্টি গুণ  খাসির মাংসের চেয়েও বেশি , মাশরুম চাষ ভারতে একটি ট্রেন্ডিং ব্যবসা যা ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে । ভারতে সবচেয়ে বেশি বাটার মাশরুম এর চাষ হয়ে থাকে , এই জন্য ভারতে মাশরুমের সম্পূর্ণ উৎপাদনের ৭০ শতাংশ বাটার মাশরুম চাষ হয়ে থাকে ।

মাশরুম চাষ এর জন্য আপনাকে মাঠে লাঙ্গল দিতে বা অনেক বেশি জমির কোনোটাই প্রয়োজন নেই । আপনি একটাই ১২*১০ মাপের একটি ঘরে মাশরুম চাষ করতে পারেন , মাশরুম চাষের সবচেয়ে মজাদার বিষয় হলো এটির চাষ বছরে ৭ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত করা যায় । ভারতে আবহাওয়া অনুযায়ী মাশরুম চাষের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো মার্চ থেকে অক্টোবর , কিন্তু এটার চাষ বা উৎপাদন বন্ধ ঘরে হয়ে থাকে , তাই যদি সেই বন্ধ ঘরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে প্রায় বছরে ১২ মাস আপনি মাশরুম চাষ করতে পারবেন । 

এছাড়া আপনার যদি মাশরুম চাষ সম্বন্ধে খুব বেশি জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে আপনি খুব সহজে এটার প্রশিক্ষণ নিতে পারেন । ভারতে বেশ কিছু রাজ্য মাশরুম চাষে সবচেয়ে এগিয়ে , যেমন অন্ধ্র প্রদেশ , কর্ণাটক , ওড়িশা , পশ্চিমবঙ্গ , মহারাষ্ট্র , মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড  ইত্যাদি । কিন্তু এই রাজ্য গুলো ছাড়াও অন্যান্য সব রাজ্যে মাশরুম চাষে এগিয়ে আসছে । ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে আপনি মাশরুম চাষ এর সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে এবং শিখতে পারবেন ।

এর জন্য আপনি আপনার রাজ্যের যে কোনো এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি থেকে শিখতে পারেন , এছাড়া আপনার চেনা জানার মধ্যে এমন যদি কেউ থাকে যে এই কাজে সফল হয়েছে তাহলে আপনি তার কাছে থেকে বিস্তারিত জেনে এবং শিখে নিতে পারেন । 

এরপরেও যদি আপনি কোনো লিংক পাচ্ছেন না এটার সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার তাহলে আমার আপনার সকলের প্রিয় ইউ টিউব তো রয়েছে , সেখানে এরকম অনেক ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে যেখানে আপনি একটু সার্চ করলে ভালো ভালো ভিডিও পেয়ে যাবেন , সেখান থেকে খুব সহজে আপনি মাশরুম চাষ এর সম্বন্ধে শিখে নিতে পারবেন । আর একবার শিখে নেওয়ার পর আপনি খুব কম পুঁজি নিয়ে যদি এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য এটি সেরা কৃষি ব্যবসা আইডিয়া হতে পারে ।

 

• গ্রামের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে চান ? সেরা ১৫ টি গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া   

২. পোল্ট্রি ফার্মিং এর কৃষি ব্যবসা আইডিয়া

ডিম খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী এটা আমরা সকলেই জানি , ডাক্তার এবং জিম বা ব্যায়াম প্রশিক্ষকরা প্রোটিনের জন্য ডিম খেতে বলেন । ভারতে পোল্ট্রি ফার্মিং শিল্প অর্থাৎ Indian Farming Industry ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ৪৩০০ বিলিয়ন টাকার হয়ে যাবে , যেটা তে ব্রয়লার মিট ও ডিম ও রয়েছে । সারা বিশ্বে ভারত ডিম উৎপাদনে তৃতীয় এবং মাংস বা মিট উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে রয়েছে । ভারতে এটি একটি সেরা কৃষি ব্যবসা আইডিয়া ।

যদি আপনি ছোটো ভাবে এই পোল্ট্রি ফার্মিং এর ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনার ৫০ হাজার থেকে ১.৫ লক্ষ টাকার মতো বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে । যদি আপনি মাঝারি ভাবে শুরু করতে চান তাহলে ৩-৪ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে এবং বড়ো করে শুরু করতে হলে ৮ -১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন হতে পারে । সবচেয়ে প্রথমে আপনাকে একটি ফাঁকা জমি দেখতে হবে , যেখানে আপনি আপনার পোল্ট্রি ফার্মিং করবেন । জমির পরিমান নির্ভর করবে আপনি কিভাবে এবং কত টা বড়ো ভাবে ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন ।

পোল্ট্রি মুরগি রাখা থেকে শুরু করে মুরগিদের চলা ফেরার জন্য ফাঁকা জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে  এছাড়া পোল্ট্রি মুরগি নিরাপত্তা , দেখাশোনা , নিয়মিত খাবার দেওয়া , পরিষ্কার করা এবং ডিম গুলি কে সুরক্ষিত ভাবে রাখার জন্য বেশ কিছু শ্রমিক প্রয়োজন হবে । এরপর আপনাকে বেছে নিতে হবে কোন পোল্ট্রি মুরগি প্রজাতি গুলি ডিম ও মিট উৎপাদনে সবচেয়ে ভালো হয় ,ব্যবসা শুরু করার জন্য  ২- ৩ রকমের পোল্ট্রি মুরগির প্রজাতি আপনাকে বেছে নিতে হবে ।

আপনি যদি বড়ো করে শুরু করতে চান তাহলে আপনার মূলধন এবং সরকার প্রাপ্ত লাইসেন্স এর প্রয়োজন হতে পারে । মূলধনের জন্য ভারতে অনেক বাণিজ্যিক সংস্থা এবং ব্যাঙ্ক রয়েছে যেখান থেকে আপনি খুব সহজে এবং কম সুদের হারে ঋণ বা লোন পেয়ে যাবেন এবং লাইসেন্স এর জন্য নিকটবর্তী পশুপালন বিভাগ বা Animal Husbandry Department এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে ।

এরপর আপনাকে মার্কেটিং করতে হবে ক্ষুদ্র বিক্রেতা এবং পাইকারি বিক্রেতা খুঁজে বের করতে হবে এবং এর সাথে সাথে আপনার জ্ঞান বাড়াতে হবে যেমন মুরগি দের কি কি ধরণের রোগ হতে পারে , এটার ওষুধ কি , মুরগি দের কিভাবে আরও যত্নে রাখা যায় , ওই ফার্মে মুরগি ছাড়া আর কি কি ব্যবসা করা যেতে পারে , কিভাবে ব্যবসা কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় , অন্যান্য পোল্ট্রি ফার্মের মালিক দের সাথে যোগাযোগ রাখা ইত্যাদি বিষয় গুলি আপনাকে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে ।       

৩. ফার্টিলাইজার ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা

গাছপালা ও ফসলের ভালো বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন রকমের সারের বা ফার্টিলাইজার এর প্রয়োজন হয় , সেটা কেউ পেশাগত ভাবে বাগান করুক , বা কেউ শখের জন্য বাড়িতে গাছপালা প্রতিপালন করুক সকলেই তাদের গাছপালা ও ফসলের বৃদ্ধির জন্য সারের ব্যবহার করে থাকে । তাই সারের ব্যবসা একটা ভালো ব্যবসার বিকল্প হতে পারে আপনার জন্য , যদি আপনি এমন কোনো জায়গায় থাকেন যেখানে অনেক চাষবাস হয় , অনেক নার্সারি এবং উদ্যান পরিচর্যা বা Gardening হয় , তাহলে আপনার এই ব্যবসায় উন্নতি করার একটা ভালো সুযোগ হয়ে উঠতে পারে ।

আপনি খুচরো বা পাইকারি যেকোনো ভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেন , কারণ এই সার বা ফার্টিলাইজার এর বাজার কখনো খারাপ বা down যায় না । তার সবচেয়ে বড়ো কারণ হলো ভালো ও বেশি ফসল উৎপাদন করা । যদি আপনি জৈব চাষ বা Organic Farming এর কথা বলেন তাহলেও আপনি জৈব সার অর্থাৎ যেটা প্রাকৃতিক ভাবে তৈরী করা হয় সেটা বিক্রি করতে পারেন । কিন্তু এই কৃষি ব্যবসা আইডিয়া এর জন্য আপনাকে আপনার রাজ্য সরকারের কাছে লাইসেন্স নিতে হবে । 

এরপর নিজের একটা দোকান বা ডিস্ট্রিবিউশন খোলার পর আপনাকে বেশ কিছু জিনিস রিসার্চ করতে হবে , যেমন বাজারে কোন ধরণের সারের চাহিদা বেশি আছে , কোন ধরণের চাষের জন্য কোন ধরণের সার প্রয়োজন ইত্যাদি । এসব জানার দরকার কারণ যারা এর ব্যাপারে জানেনা তারা আপনার কাছে পরামর্শ নেবে , তাই আপনি অভিজ্ঞ কাউকে আপনার ব্যবসায় নিয়োগ করতে পারেন ।  এই ব্যবসা শুরু করতে আপনার ৫০ থেকে ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন ।

৪. মৌমাছি পালন এর কৃষি ব্যবসা আইডিয়া

খুব কম সংখক মানুষ হয়তো রয়েছে জরা মধু পছন্দ করেনা , কারণ বেশিরভাগ মানুষ মধু বা Honey ভালোবাসে । এর কারণ হলো এর পুষ্টিগুণ , অনেকে সকালের জল খাবারের সাথে খায় তো কেউ আবার দুধের সাথে মিশিয়ে খায় । এছাড়া মধু থেকে তৈরী হয় বিভিন্ন ধরণের ওষুধ , তাই মধুর চাহিদা মেডিকেল ও আয়ুর্বেদ ক্ষেত্রেও অনেক বেশি । তাই যদি আপনি মৌমাছি পালনের ব্যবসা শুরু করেন তাহলে আপনার ব্যবসা সবসময় লাভে থাকবে ।

মৌমাছি পালনের জন্য আপনার খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন নেই , আপনি আপনার বাড়ির ছাদ বা উঠোনে মৌমাছি পালন করতে পারেন । মৌমাছি পালনের জন্য আপনি ছোটো বাস্ক বানাতে পারেন বা কিনতে পারেন । মৌমাছি প্রতিপালনের জন্য আপনি এমন একটা মরশুম নির্বাচন করবেন যখন ফুল ও ফল বেশি উৎপাদন হয় । কারণ তখন মৌমাছি দের পরাগ খুঁজে বেড়াতে হবে না এবং আপনি ভালো মধু উৎপাদনও করতে পারবেন ।

যেমন অন্যান্য চাষবাসের জন্য বীজের প্রয়োজন হয় , সেরম মৌমাছি পালনের জন্য আপনাকে উন্নত প্রজাতির মৌমাছি আন্তে হবে এবং তাদের কে বস্কের মাধ্যমে একটা জায়গায় রেখে দিতে হবে , এরপর প্রতি সাতদিন অন্তর অন্তর আপনাকে এই বাস্ক গুলি যাচাই বা চেক  করতে হবে । 

একটা কথা আপনাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে প্রথম বছর থেকে হয়তো আপনি ততটা ভালো মধু উৎপাদন করতে পারবেন না , কারণ যে কোনো কাজের শুরুতে আপনাকে অনেক কিছু শিখতে হয় এবং অনেক ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে , তাই প্রথম বছরে শিখে আপনি দ্বিতীয় বছর থেকে ভালো উৎপাদন করতে পারবেন এবং আপনার ব্যবসা থেকে লাভ করতে পারবেন । যদি আপনি চান প্রথম বছর থেকে বেশি উৎপাদন করে ব্যবসা থেকে লাভ করতে , তাহলে আপনি মৌমাছি পালনের যাবতীয় জিনিস গুলি শিখে নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন । 

» আরও পড়ুন 

  • মহিলাদের জন্য ঘরে বসে ব্যবসা করার দুর্দান্ত ১০ টি আইডিয়া 

  • পাইকারি ব্যবসা কি ? সেরা ১০ টি পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া 

   

৫. ভার্মিকম্পোস্ট অরগানিক ফার্টিলাইজার

এর আগে আমরা রাসায়নিক পদ্ধতিতে সার উৎপাদনের কথা জানলাম , কিন্তু এছাড়াও প্রাকৃতিক ভাবেও সার তৈরী করা হয় । আমাদের বাড়ির আসে পাশে যে গাছপালা থেকে পরে যাওয়া পাতা , গোবর , এবং শাক সবজি থেকে বাদ যাওয়া অংশ গুলিকে আপনি মাটিতে পুঁতে মাটি চাপা দিয়ে দেন , তখন সেগুলো কেঁচো এবং বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া খেয়ে সেটাকে সার বা কম্পোস্ট এ রূপান্তরিত করে দেয় । এটা একটি ব্যবসাও বটে , জৈব চাষের চাহিদার কারণে কেঁচো থেকে তৈরী হওয়া সার বা ভার্মিকম্পোস্ট অর্গানিক ফার্টিলাইজার এর চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে চলেছে । 

প্রকৃতপক্ষে কেঁচো মাটির নিচে গাছের পাতা গোবর এইসব খেয়ে যে বর্জ্য ত্যাগ করে সেটা মাটির সাথে মিশে যায় এবং সেটাকে সারে পরিণত করে । যদি আপনার আসে পাশে গাছপালা , গোবর , শাক সবজি এইসব উপলব্ধ রয়েছে তাহলে আপনি এই ব্যবসা শুরু করে ইনকাম করতে পারেন । এই ব্যবসায় আপনার ঝুঁকি একদম নেই বললেই চলে , আপনার সার নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় নেই , আর এমন নয় যে বিক্রি হবেনা , কারণ এর চাহিদা বাজারে প্রচুর পরিমানে রয়েছে ।  তাই আপনি চাইলে খুব অল্প পুঁজি দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন ।   

৬. বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের চাষ  (Biofloc Fish Farming)

আপনি যদি কৃষি শিল্প ও কৃষি ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে একটু জ্ঞান রাখেন তাহলে আপনি নিশ্চয়  বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের কথা নিশ্চয় শুনেছেন । পুকুরে মাছ চাষের বদলে বড়ো বড়ো গোল জলের ট্যাংক এর মধ্যে মাছ চাষ করা হয়, সাধারণত একেই বায়োফ্লক মাছ চাষ বলা হয় । পুকুরে মাছ চাষের তুলনায় এটাতে খরচ কম হয় এবং মাছের উৎপাদনও অনেক বেশি পাওয়া যায় । ৩ – ৪ ডায়া মিটারের ট্যাংকের দাম প্রায় ৩০-৫০ হাজার টাকা হয়ে থাকে যেটা থেকে বছরে প্রায় ৯০০ থেকে ১২০০ কেজি মাছের উৎপাদন হতে পারে ।

আপনি আপনার পুঁজি হিসেবে কম বা বেশি ট্যাংক রাখতে পারেন । তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো যে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে গেলে ২৪ ঘন্টা ইলেকট্রিসিটি এর প্রয়োজন হবে , কারণ এই পদ্ধতিতে জলের মধ্যে যে ব্যাক্টেরিয়া থাকে তাদের ২৪ ঘন্টা হাওয়া বাতাসের প্রয়োজন হয় । তাই এর জন্য আপনাকে ২৪ ঘন্টা ইলেক্ট্রিসিটির ব্যবস্থা রাখার জন্য বিকল্প হিসেবে ইনভার্টার রাখতে হবে ।

এরপর বিভিন্ন ধরণের মাছ বিভিন্ন তাপমাত্রা থাকে , তার জন্য আপনাকে সেরম পরিবেশ তৈরী করতে হবে । মাছেদের খাবার , দেখাশোনা এবং অন্যান্য খরচ বাদে একটা ট্যাংকে যদি ৫০০ – ৬০০ টি মাছ থাকে তাহলে ৪-৫ মাসের মধ্যে একটা ট্যাংক থেকে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হতে পারে । কিন্তু এই কাজ শুরু করার আগে এই কাজ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ তথ্য জেনে নিন তাতে আপনার এই কাজ শুরু করতে সুবিধা হবে । যদি আপনি ঠিক ঠাক এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন তাহলে আপনার জন্য এটি সেরা কৃষি ব্যবসা আইডিয়া হতে পারে ।   

৭. ফুলের দোকান 

বছরে ১২ মাসেই ফুলের চাহিদা বেশি থাকে , বিয়ে, বার্ষিকী , জন্মদিন , সামাজিক অনুষ্ঠান , রাজনৈতিক অনুষ্ঠান , মিটিং এবং পুজো পার্বনেও ফুলের ভীষণ চাহিদা থাকে । তাই আপনি যদি একটি ফুলের দোকান খোলেন তাহলে আপনি ভালো ইনকাম করতে পারবেন । এই ব্যবসা আপনি কম পুঁজি বা মূলধন দিয়ে শুরু করতে পারেন । ভারতে এটি একটি অন্যতম কৃষি ব্যবসা আইডিয়া ।

বর্তমানে ফুলের চাহিদা বড়ো শহরের সাথে সাথে ছোটো ছোটো শহরেও বেড়েছে , আর তাই এখন অনলাইন এ কমার্স সাইট গুলোতে ফুল বিক্রি হচ্ছে । তাই আপনি এই ব্যবসা শুরু করলে বিক্রি নিয়ে অতটা ভাবনা চিন্তা না করলেও চলবে কারণ আপনি অনলাইন এবং অফলাইন দুভাবেই ফুল বিক্রি করতে পারবেন । আপনি ফুলের সাথে সাথে আপনার দোকানে কিছু গিফট ও রাখতে পারে এতে আপনার বিক্রি দুগুণ হতে পারে ।  

৮. দুগ্ধজাত দ্রব্য 

দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের চাহিদা কোনোদিন কম হবে না , দুগ্ধজাত দ্রব্য বলতে যেমন দুধ , ঘি , মাখন , দই , পানির , চিজ ইত্যাদি । আপনি যদি একটি দুগ্ধজাত পণ্যের একটি দোকান খোলেন তাহলে আপনাকে গ্রাহক বা কাস্টমার খোঁজার কোনো দরকার নেই , বাজারে বেশ কিছু কোম্পানি আছে যেমন আমূল , মাদার ডায়েরি এবং আরও অন্যান্য লোকাল কোম্পানির কাছে আপনি ডিলারশিপ নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন অথবা আপনি নিজের একটা ব্র্যান্ড বানিয়েও এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন । আপনার জন্য এটা একটি সেরা কৃষি ব্যবসা আইডিয়া হতে পারে ।   

৯. ঝাঁটা তৈরী বা Boom Production 

সমস্ত পরিষ্কার পরিছন্ন ব্যক্তি তার বাড়িতে দিনে অন্তত দুবার ঝাঁটার ব্যবহার করে পরিষ্কার পরিছন্নতার জন্য । তাই আপনি এই ঝাঁটা তৈরীর কাজ শুরু করে ভালো টাকা লাভ করতে পারবেন । এই ব্যবসায় বড়ো কোনো বিনিয়োগ ও জায়গার প্রয়োজন নেই । আপনি ১-৩ জন লোক ঝাঁটা বানানোর কারিগর দিয়ে ঝাঁটা বানাতে পারেন , এবং সেই ঝাঁটা বিভিন্ন পাইকারি এবং খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে সাপ্লাই করতে পারেন ।

ঝাঁটা বানানোর জন্য কাঁচামাল ভারতে উত্তরপ্রদেশ , পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম ইত্যাদি রাজ্যে থেকে আসে । প্রতিটি ঝাঁটা বাজারে ৫০- ৬০ টাকাতে বিক্রি হয় , এবং এক একটি ঝাঁটা তৈরী করতে আপনার ৩০-৩৫ টাকা খরচ আসবে । আশা করি এবার আপনার বুঝতে পারছেন যে কিভাবে এই ব্যবসা থেকে লাভ করা যেতে পারে । তাই এই কৃষি ব্যবসা আইডিয়া সম্বন্ধে আরেকটু জেনে নিয়ে এই ঝাঁটা তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারেন ।     

১০.সূর্যমুখী চাষ এর কৃষি ব্যবসা আইডিয়া

সূর্যমুখী চাষ শুরু করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন জমি বা জায়গা । সূর্যমুখী চাষের জন্য আপনাকে  একটি ছোট বিনিয়োগ বা পুঁজি লাগাতে হবে । সাধারণত সূর্যমুখী থেকে তেল তৈরী হয় । তেল উৎপাদনে সূর্যমুখী একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল এবং এটি জন্মাতে খুব কম সময় লাগে মাত্র ৯০ – ১২০ দিন। এটির উৎপাদন   সাধারণত বর্ষাকালে বেশি হয়ে থাকে । বাজারে এই ধরনের তেলের ভীষণ চাহিদা রয়েছে , আপনি চাইলে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করতে পারেন ।

 

   আজকে আমরা জানলাম সেরা ১০ টি কৃষি ব্যবসা আইডিয়া এর সম্বন্ধে , এর মধ্যে যে কোনো একটি কৃষি ব্যবসা আইডিয়া এর উপর আপনি কাজ শুরু করতে পারেন । আপনার পছন্দ এবং সুবিধা অনুযায়ী আপনি যে কোনো একটি আইডিয়ার উপর কাজ শুরু করে নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন । এখানে বেশ কিছু কৃষি ব্যবসা আইডিয়া রয়েছে যে গুলো আপনি খুব অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করতে পারবেন ।

আশা করি আপনাদের আজকের এই পোস্ট টি ভালো লেগেছে ,  যদি এই ব্যবসার আইডিয়া গুলোর মধ্যে কোনোটির সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার থাকে তাহলে অতি অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন ।

ধন্যবাদ 

বঙ্গজ্ঞান টীম  

শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

4 thoughts on “১০ টি সেরা কৃষি ব্যবসা আইডিয়া”

  1. আমার নাম সৈয়দ আসিফ , আমি বাংলাদেশের এক গ্রামে বসবাস করি , আমি নিজের একটা ব্যবসা শুরু করতে চাই , আপনার ব্লগ নিয়মিত আমি ফলো করি , গ্রামের মধ্যে এতো ধরণের কৃষি ব্যবসা করা যায় আগে মাথায় আসেনি স্যার ।

    Reply
  2. amio bebsa korte chai , kintu grame thakar karone hotash hoye porechilam kintu ekhon ashar alo dekhte pacchi , khub sundor totho vai

    Reply

Leave a Comment