মেয়েদের সৌন্দর্যের মধ্যে একটি চুল কালো ঘন চুল, যা আমাদের সৌন্দর্য কে আরো বাড়িয়ে তোলে, প্রাচীন যুগ থেকেই কিন্তু মেয়েদের লম্বা সুন্দর চুল হয়ে আসছে, তার প্রচলন এখনো রয়েছে, সেইজন্যই বিভিন্ন তেল, শ্যাম্পু, সিরাম ইত্যাদির বিজ্ঞাপন তো আমরা সবসময় দেখতেই পাই।
তবে ওই যে বলে না আমরা যত আধুনিকতার দিকে এগুচ্ছি ততই যেন চুলের জেল্লা দিনদিন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে, তার কারণ অবশ্যই এখন কার লাইফ স্টাইল, খাবার এবং অতিরিক্ত পরিমানে কেমিক্যালের ব্যাবহার।
চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায়
আমরা পার্লার এ গিয়ে বিভিন্ন রকম ট্রিটমেন্ট করিয়ে থাকি সেই সম্মন্ধে ভালো করে না জেনেই, তার ফলে অনেকেরই চুল ঝরে যেতে শুরু করে, চুলে রুক্ষতার সৃষ্টি হয়, এবং আমাদের অনেকের কাছেই সঠিক ইমফর্মেশন না থাকার জন্য ঠিক মতো চুলের যত্ন ও নিতে পারি না। আজ এই পোস্ট এ চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় এ কিভাবে করবেন সেই বিষয়ে খুবই সহজ কতগুলি স্টেপ বলা হবে এবং সেগুলি যদি আপনি নিয়ম করে করে যেতে পারেন তাহলে আপনার চুল ভালো থাকতে কেউ আটকাতে পারবে না।
আমাদের মা ঠাকুমা যেগুলো বলতেন মানে চুলে তেল লাগানো, রাত্রি বেলায় চুল বাঁধা, সেই সবের পেছনেও অনেক কারণ চুল তার জন্য আপনারা দেখে থাকবেন যে আমাদের মা বা ঠাকুমা দের চুল তাদের সময়ে কত ভালো ছিল, হা তবে শাররীক অথবা জেনিটিক কোনো কারণে চুলের ক্ষতি হয় তাহলে সেই বিষয়ে অবশ্যই সর্বপ্রথম ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
সুচিপত্র
প্রতিদিন চুলে জল না দেওয়া
চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যদি আপনি প্রতিদিন চুলে জল দেন অথবা শ্যাম্পু করেন তাহলে সেটা আপনার চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকর, আমাদের চুলের গোড়ায় মানে স্ক্যাপে একটি ন্যাচারাল অয়েল বা Sebum থাকে যেটা চুল গজাতে এবং চুলের জেল্লা ধরে রাখতে অনেক সাহায্য করে।
তাই আপনি যদি প্রতিদিন চুলে জল দেন তার যে ন্যাচারাল অয়েল সেটা আস্তে আস্তে রিমুভ হয়ে যাবে ফলে আপনার চুলের জেল্লা নষ্ট হয়ে পরবে, আপনি সপ্তাহে ২-৩ বার জল দিতে পারেন সেই ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।
• অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায
শ্যাম্পু করার আগে অয়েল লাগানো
অনেকেই আছে যারা চুলে তেল লাগাতে পছন্দ করে না কিন্তু আপনি কি জানেন এটা আমাদের চুলের জন্য কতটা খারাপ, আপনার চুলের টেক্চার যেমনি হোক না কেন অয়েল লাগানো চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট একটি উপায়। এই ক্ষেত্রে আপনি যেকোনো তেল ব্যাবহার করতে পারেন, নারকেল তেল বা সর্ষে তেল উভয়ই ভালো, খুব ভালো হয় যদি সেই তেল কে লাগানোর আগে একটু গরম করে নিতে পারেন না পারলেও কোনো অসুবিধে নেই।
চেষ্টা করুন সপ্তাহে একবার অয়েল মিক্সচার লাগাতে যেমন ধরুন, একটি পাত্রে নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, এই সবের একটা মিক্সচার করে নিন এবং সেটা স্ক্যাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করুন, ম্যাসাজ কিভাবে করবেন ? কখনোই নখ দিয়ে স্ক্যাপ খুঁটবেন না সবসময় আঙ্গুল এর সাহায্যে মোলায়েম ভাবে ম্যাসাজ করতে থাকুন, যদি ওভার নাইট রাখতে পারেন তো খুব ভালো নাহলে শ্যাম্পু করার ৩০ মিনিট আগেও লাগাতে পারেন।
এর ফলে আমাদের স্ক্যাপে রক্ত সঞ্চালনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাই, চুলের রুক্ষতা দূর হয়, চুলের সাস্থ আগের থেকে অনেক ভালো হয়ে যাই এবং চুলের জেল্লা ফায়ার আসে, শ্যাম্পু করার পর দেখবেন চুল কত তা মোলায়েম লাগছে।
সঠিক ভাবে শ্যাম্পুর ব্যাবহার
আপনার চুল যেমন সেই বুজে আপনার পছন্দ মতো শ্যাম্পু আপনি ব্যাবহার করতে পারেন কিন্তু শ্যাম্পু আমরা কিভাবে লাগাই? ডাইরেক্ট হাতে নিয়ে মাথায় লাগিয়ে ফেলি এটা একদমই করা উচিত নয়, শ্যাম্পু একটি কেমিক্যাল বেশ জিনিস যা আমরা কখনোই সোজাসুজি আমাদের স্ক্যাল্পে দিতে পারি না তাই একটি পাত্রে একটু জল নিয়ে তাতে শ্যাম্পু দিয়ে একটু মিশিয়ে নিন তারপর সেটি আস্তে আস্তে মাথায় লাগিয়ে নিন এই ভাবে শ্যাম্পু করলে আপনার স্ক্যাল্পে কোনোদিন ক্ষতি হবে না।
চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় এ চাল ধোওয়া জলের ব্যাবহার
চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হলো এই চাল ধোয়ার জল, যখন ভাত রান্না করার জন্য আপনি চাল পরিষ্কার করেন তখন সেই জল টি আর আজ থেকে ফেলে দেবেন না, এই জল আপনার চুলের সাস্থের জন্য খুবই উপকারী।
চাল ধোওয়া জলে ফাইটিক এসিড, এবং লিপিক নামক একরকম পুষ্টিকর উপাদান থাকে যা আমাদের চুলের বৃদ্ধি তে খুবই কার্যকরী, চুলের সাস্থ ভালো রাখার পাশাপাশি চুলে যে অকালে সাদা হয়ে যাই বা পাক ধরে যাই সেইসব সমস্যাও দূর করে।
হেয়ার প্যাক এর ম্যাজিক
চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় এ ভালো ভাবে নিতে গেলে চুলের কন্ডিশন করা খুবই দরকার সেটা অবশ্যই দু এক মাসে একবার করা যেতে পারে সেটি হলো হলো ম্যাজিক প্যাক, এই প্যাক তৈরী করার জন্য লাগবে উন্নত মানের হেনা পাউডার যাতে কেমিক্যাল নেই, এবং তার সাথে মেশাতে হবে টক দই, লেবুর রস, ডিমের সাদা অংশ এগুলিকে একত্রে মিশিয়ে একটি মোলায়েম প্যাক বানিয়ে নিতে হবে তারপর সেটি চুলের সব জায়গায় লাগিয়ে এক ঘন্টা মতো রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
হেনা চুলে মসৃন এবং চুলের মোলায়েম ভাব কে ধরে রাখতে খুবই কার্যকরী, তার সাথে মেশানো দই এবং লেবুর রস আপনার স্ক্যাপে এন্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে এবং দিমে এক ধরণের ফ্যাটি এসিড লেসিথিনের উপস্থিতির কারণে চুল পড়া থেকে বাছাই এবং চুল কে স্বাস্থবান করে তোলে।
• শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন ?
চুল আঁচড়ানো
চুল কে যদি সর্বদাই ভালো রাখতে চান তার একমাত্র চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ উপায় হলো দিনে অন্তত ৪-৫ বার চুল আঁচড়ানো, চুল আঁচড়ালে স্ক্যাপের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে, যা চুল এর গ্রোথের জন্য খুবই দরকার, তাই প্রতিদিন নিয়ম করে এটি করলে আপনার চুল ও সুস্থ থাকবে।
তবে হা ভিজে চুল একদমই আঁচড়াবেন না, চেষ্টা করুন চুলকে আগে একটু শুকিয়ে নেবার, ৯০% মতো শুকিয়ে গেলে তারপর আচড়াতে পারেন, ভিজে চুলের গোড়া অনেক বেশি নরম থাকে তাই তখন আঁচড়ালে চুল অনেক বেশি ঝরতে পারে।
আমলকি
চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে আর একটি উপায় হলো এই আমলকি, আমলকি যেমন খাওয়া ভালো তেমনি চুলের জন্য ও খুবই উপকারী, আমলকি তে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি আছে যা ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকালের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তাই তেলের সাথে এই আমলকির রস লাগাতে পারেন এতে আপনার চুলের সাস্থ খুবই ভালো থাকবে চুল যেমন শক্ত তেমনি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে আমরা জানলাম যে আমরা খুবই সহজে চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় এ কিভাবে নেবো, এবং তারপর জেনে নিলাম এমন কিছু খুবই সহজ স্টেপ যেগুলি মেনে চললে আমাদের চুল খুবই ভালো থাকবে।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায় বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টিম