বর্তমান সময়ে এমন মানুষ কমই আছে যারা ডিম খেতে ভালোবাসে না, অনেকেই আছেন যারা সকালের ব্রেকফাস্টে ডিম খেয়ে থাকেন, এছাড়াও ডিমের বিভিন্ন বিভিন্ন পদ রান্না তো হয়েই থাকে সেদ্ধ ডিম থেকে শুরু করে ডিমের পোঁচ, অমলেট, তাছাড়াও ডিম দিয়ে যেগুলি রান্না হয়ে থাকে মানে এগরোল, মোগলাই, ফ্রাইড রাইস, এইসব সুস্বাধু খাবার তো আমরা প্রায় সবাই খেয়ে থাকি। শুধু যে নোনতা খাবারেই ডিম কে ব্যাবহার করা হয় তা কিন্তু নয়, কেক, বিস্কুট, কুকিস, পেস্ট্রি বিভিন্ন মিষ্টি দ্রব্যেও ডিম এর ব্যাবহার হয়ে থাকে।
ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন পাওয়া যাই, তাছাড়াও এর মধ্যে ক্যালসিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের উপাদান থাকে, ডিমের মধ্যে থাকা এই সকল পুষ্টিকর উপাদান আপনাকে অনেক গুরুতর রোগের হাত থেকে যেমন রক্ষা প্রদান করে ঠিক তেমনি আপনার শরীর কে ফিট রাখতেও অনেক কার্যকরী।
ডিমকে সুম্পূর্ণ আহার রূপে বিবেচনা করা হয়ে থাকে কারণ এর মধ্যে, কার্বোহাইড্রেড, Vitamin B12, ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্ক এর মতো উপাদান পাওয়া যাই যা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব কে দূর করতে সাহায্য করে। ডিম খাওয়ার উপকারিতা অনেক তাই আজ আমরা জেনে নেবো এই ডিম আমাদের শরীরে কি কি উপকারে লাগে এবং কিভাবে আমরা এর সঠিক গুণাবলী গুলো পাবো।
সুচিপত্র
১. ডিম খাওয়ার নিয়ম
অনেক সময় আমরা কোন খাবার সঠিক কতটা খাওয়া দরকার সেটা আমরা জানিনা, এবং অজান্তেই সারাদিনে হয়তো বেশি গ্রহণ করে ফেলি ফলে অনেক রকমের সমস্যা দেখা যাই তাই আমরা জেনে নেবো যে ডিম খাওয়ার উপকারিতা সঠিক ভাবে পেতে গেলে আমাদের সারাদিন কতটা পরিমানে তা খেতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা রা মনে করেন যে পৃথিবীতে যত রকমের খাবার আছে সেই সব গুলোর মধ্যে বেশি পুষ্টিসম্মৃদ্ধ খাবার হলো এই ডিম, প্রথমে একটি কোষ থেকে মুরগি তার পূর্নাঙ্গ হতে যতটা পুষ্টি লাগে তার সব কিছুই আছে ডিমের মধ্যে। ডিমের অন্যান্য পদের থেকে সবথেকে ভালো হয় যদি আপনি ডিমকে সেদ্ধ করে খেতে পারেন, পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন ডিম সেদ্ধ করে সেটা সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া খুবই ভালো কিন্তু সেটা দীর্ঘ সময় রেখে দিয়ে না খাওয়াই শরীরের জন্য ভালো। আর একটা জিনিস এর উপর আমাদের নজর দিতে হবে যেন ডিমটি রান্না করার সময় বেশি কুক না হয়ে যাই কারণ এর ফলে ডিমের প্রোটিন সবটাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
এখন অনেকেরই প্রশ্ন থাকে যে দিনে কটা করে ডিম খাওয়া উচিত, এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে যে আপনি সারাদিন কিরকম প্রোটিন গ্রহণ করছেন, যদি আপনার খাবারের সাথে মাছ এবং মাংস দুটোই থাকে তাহলে একটি করে ডিম খাওয়াই ভালো। আর যদি আপনার শরীরে সারাদিন সেরকম প্রোটিন যাচ্ছে না সেক্ষত্রে আপনি সর্বোচ্চ ৩-৪ টে ডিম খেতে পারবেন, কারণ অতিরিক্ত প্রোটিন আমাদের শরীরে পৌঁছালে সেটা ক্ষতিকর হতে পারে।
• বিশেষ 7 টি কাঠ বাদাম এর উপকারিতা
২. ডিমের পুষ্টিগুণ
সাধাণতঃ একটি ডিমের দুটি অংশ থাকে একটি সাদা অংশ এবং একটি হলুদ অংশ আমরা এবার দেখে নেবো যে এই দুটি তে কিরকম পরিমান পুষ্টিগুণ থাকে।
ডিমের সাদা অংশ
ফ্যাট – ০g
কোলেস্টরল – ০mg
কার্বোহাইড্রেড – ০g
প্রোটিন – ৪g
ডিমের হলুদ অংশ
ফ্যাট- ৪g
কোলেস্টরল- ১৮০mg
কার্বোহাইড্রেড- ০.৪ g
প্রোটিন- ৩g
• 5 টি সেরা কাঁচা পেঁপের উপকারিতা যা আপনাকে ওষুধ থেকে দূরে রাখবে
৩. ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিম খাবার সঠিক নিয়ম গুলি তো আমরা জেনে নিলাম এবার জেনে নেবো যে ডিম খেলে আমাদের শরীরের উপকার কিভাবে হতে পারে।
৩.১ মস্তিষ্কের বিকাশে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
অনেকে আছে যাদের বয়েসের সাথে সাথে মস্তিষ্কের বিকাশ হতে পারে না, এছাড়াও কিছু মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগে থাকেন, বলা হয় যে আমাদের মস্তিষ্কে কলিন নামের একধরণের উপাদান থাকে সেটি কম হলে এরকম সমস্যা দেখা দেয়। আর ডিমের মধ্যে এই কলিন পাওয়া যাই যা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী, এমনকি যারা সময় এর সাথে ভুলে যাওয়া মতো রোগ মানে ডিমেনশিয়া মতো রোগ হওয়া থেকে আটকায় এই ডিম।
৩.২ হাড় মজবুত করতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
এখন অনেকেই হাড়ের ব্যাথায় কষ্ট পান, হাঁটু ব্যথা পেশি তে ব্যথা এসব কে দূর করতে ডিম খুবই কার্যকরী, ছোট বয়েস থেকে যদি ডিম খাওয়া যাই তাহলে পেশি মজবুত থাকে, তাছাড়া যারা নিয়মিত ব্যায়াম, যোগাসন, করে থাকেন তাদের ডাক্তারে নিয়মিত ডিম খেতে বলা হয়ে থাকে।
৩.৩ কোলেস্টরলের মাত্রা ঠিক রাখে
অনেকেই মনে করেন যে ডিম খেলে কোলেস্টরল এর মাত্রা বেড়ে যাই কিন্তু এটা একেবারেই সত্যি নয়, ডিমে থাকে ওমেগা ৩ যা শরীরে পৌছিয়ে ভালো কোলেস্টরল এর মাত্রা কে ভালো করে খারাপ কোলেস্টরল কে কমায়। তাই আপনি যদি নিয়ম করে ডিম খেতে পারেন তাহলে আপনার কোলেস্টরল এর মাত্রা একদম ঠিক থাকবে ফলে কোলেস্টরল থেকে যেসব রোগের সৃষ্টি হয় মানে স্টোক, হার্ট এটাক ইত্যাদি ভয়ঙ্কর রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাই।
• সেরা 7 টি ওটস এর উপকারিতা যা আপনাকে সুস্থ রাখবে
৩.৪ হাত পায়ের নখ কে শক্ত রাখতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
অনেকের নখ একটু বোরো হলেই ভেঙে যাই, তাই কারণ হলো শরীরের মধ্যে সালফারের অভাব, আর এই অভাব কে পুরুন করে এই ডিম, ডিমের মধ্যে পাওয়া যাই সালফার। যা শরীরে পৌঁছালে আপনার নখের সাস্থ ভালো হবে তাড়াতাড়ি ভেঙে যাবে না সাথে শক্ত হবে এবং নখ কে সাদা রাখতেও সাহায্য করে।
৩.৫ এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে
রোজ দুটো করে ডিম খেলে ডিম খাওয়ার উপকারিতা আপনি অনেক বেশি পাবেন, অনেকেই ব্রেকফাস্ট এর সময় ডিম খেতে পছন্দ করেন তার কারণ এটি সারাদিনের ক্লান্তি কে দূর করে, আপনাকে তরতাজা রাখে সহজেই খিদে পাই না, ডিম অনেক্ষন আপনার পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় আমরা খাবার খেয়েও সেরকম এলার্জি পাই না ফলে কোনো কাজে মন বসে না এবং শরীর ও দুর্বল লাগে, সেই ক্ষেত্রে ডিম খুবই উপযুক্ত একটি খাবার যা আপনার দুবলতা কে দূর করে।
৩.৬ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে বাড়াতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিমের মধ্যে এমন কিছু গুণাবলী আছে যা আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম কে বাড়ায়, প্রায় জ্বরজ্বালা হওয়া বা সর্দি কাশি লেগেই থাকে এবং সেটা ঠিক হতেও অনেক অনেক সময় নেই, সেই সময় আপনি ডিমকে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। ডিমের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে অনেক গুন্ বাড়িয়ে তুলবে ফলে আপনি বারবার রোগের কবলে পড়বেন না।
৩.৭ ওজন কমাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
অনেকেরই ধারণা যে ডিম বা ডিমের কুসুম খেলে ওজন বাড়ে কিন্তু একদমই নয়, বর্তমান সময়ে অনেকেই যারা ওজন কমাতে চান তারা তাদের খাদ্যের তালিকার মধ্যে এই ডিমকে রাখেন। এই ক্ষেত্রে আপনি ডিম কে সেদ্ধ করে খেতে পারবেন, ডিম শরীর থেকে প্রায় ৩০০-৪০০ ক্যালোরি পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে, যারা ওজন কমাতে চান তাদের রোজ শরীরচর্চাও করা উচিত আর তখন এই ডিমের ভিটামিন আপনার কাজে লাগে, এনার্জি দেয়, এবং অনেক্ষন পর্যন্ত আপনার পেট কে ভরিয়ে রাখে।
• মানুষের শরীরে দুধের উপকারিতা
৩.৮ ত্বককে ভালো রাখতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিম নখের সাথে সাথে আমাদের ত্বক এবং চুলের ও যত্ন নেই, নিয়মিত ডিম খেলে আমাদের ত্বক খুবই ভালো হয়, ব্রণ এবং দাগছোপ এর সমস্যা কমে যাই। চুলের গোড়া কে শক্ত রাখে এবং স্বাস্থবান করে তোলে, এছাড়াও আপনি এই ডিম কে চুলেও লাগাতে পারেন খুশকির সমস্যা বা চুলের ড্রাইনেস এর জন্য খুবই উপকারী। টক দইয়ের সাথে ডিম মিশিয়ে লাগাতে পারেন অথবা, হেনা পাউডার এর সাথেও এই ডিম কে মিশিয়ে দেওয়া যাই তবে সেইসব ক্ষেত্রে শুধু ডিমের সাদা অংশ টি দেওয়াই ভালো, এরকম হেয়ার প্যাক করে লাগালে আপনার চুল তরতাজা থাকবে , চুল আগের থেকে অনেক সিল্কি এবং ঘনো হয়ে উঠবে।
৩.৯ ডিম খাওয়ার অপকারিতা
ডিম খাওয়ার উপকারিতা সাথে সাথে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ও আছে সেগুলো যদি আমরা না জানি তাহলে হয়তো অজান্তেই অনেক বিপদ ডেকে আনতে পারি।
- যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদেরকে সাধাণতঃ ডিম খেতে বারণ করা হয়, ডিম খেলে যদি পেটে ব্যাথা, গায়ে হাতে চুলকানি, ইত্যাদির সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
- ডায়াবেটিক রোগী যারা আছেন তাদের ডিম্ খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে, ডিমের কুসুম তাদের জন্য ক্ষতিকর তাই আপনার যদি ডায়াবেটিকসের সমস্যা থাকে তাহলে আপনি ডিম খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
- কোনো জিনিসই বেশি পরিমানে খাওয়া উচিত নয়, আপনি যদি বেশি পরিমানে ডিম্ খান তাহলে কোলেস্টরল হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা তো রয়েছেই।
- ডিম্ যেমন ওজন কমাতে সাহায্য করে তেমনি বেশি পরিমানে ডিম খেলে তার বিপরীত ও হতে পারে, বেশ পরিমানে ডিম খেলে আপনার ওজন অনেক বেশি পরিমানে বেড়ে যেতে পারে তাই পরিমানে ডিম খান তাহলে আর এই সবের ভয় থাকবে না।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে আমরা জানলাম যে ডিম খাবার সঠিক নিয়ম কি এবং তা কতটা পরিমানে খাওয়া উচিত তারপর আমরা জানলাম ডিমের মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং ডিমের উপকারিতা গুলি কি কি তারই সাথে ডিমের কিছু অপকারিতা দিক গুলিও আলোচনা করলাম।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি ডিম খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া ডিম খাওয়ার উপকারিতা বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবান
বঙ্গজ্ঞান টিম