ব্লকচেইন কি ও এর 4 টি ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা ( Blockchain in Bengali )

5/5 - (3 votes)

আপনি কি ব্লকচেইন এর নাম শুনেছেন ? যদি না শুনে থাকেন তাহলে কোনো সমস্যা নেই , কারণ আপনি যদি বঙ্গজ্ঞান এর নিয়মিত পাঠক হয়ে থাকেন তাহলে বিটকয়েনের সম্বন্ধে নিশ্চয় জানেন , আর বিটকয়েনের সম্বন্ধে জানলেই আপনি খুব সহজেই Blockchain সম্বন্ধে বুঝতে পারবেন । কারণ বিটকয়েনের রেকর্ড বা হিসেব রাখার টেকনোলজি কে ব্লকচেইন বলা হয়ে থাকে , এছাড়া এটি  বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়াও Banking ও Investing সেক্টরে কাজ করে থাকে । তাই আপনি যদি Blockchain এর সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চান , তাহলে আপনাকে এই পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়তে হবে । 

চলুন তাহলে শুরু করা যাক আর দেখে নেওয়া যাক ব্লকচেইন কি এবং এর কাজ কি 

 

ব্লকচেইন কি

ব্লকচেইন হল একধরণের Database ,আর Database হলো তথ্যের একটি ভান্ডার যা কম্পিউটার সিস্টেমে ইলেকট্রনিক ভাবে স্টোর করা থাকে । এই Database এর মধ্যে ডেটা ও ইনফরমেশন গুলি টেবিল ফরম্যাটে সাজানো থাকে যাতে এর মধ্যে থাকা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ও ইনফরমেশন খুব সহজে পাওয়া যায় । এবার আপনাদের অনেকের মনে হতে পারে যে স্প্রেডশীটেও তো আমরা Database টেবিল ফরম্যাটে তৈরী করে থাকি , আসলে এই স্প্রেডশিটে থাকা Database শুধুমাত্র একজন ব্যাক্তির জন্য ডিজাইন করা হয়ে থাকে , যেখানে Database এর ব্যবহার একসাথে অনেক ব্যাক্তি করতে পারে ।

Blockchain সাধারণত ডিজিটাল ইনফরমেশন কে রেকর্ড ও ডিস্ট্রিবিউশন করার অনুমতি দিয়ে থাকে কিন্তু এডিট করার অনুমতি দেয় না ।

 

বিটকয়েন কি ? বিটকয়েনের 10 টি অবাক করা ফ্যাক্ট

 

ব্লকচেইন টেকনোলজি প্রথম ১৯৯১ সালে Stuart Haber ও W. Scott Stornetta সকলের সামনে নিয়ে এসেছিলো , কিন্তু Blockchain এর আসল পরিচয় ২০০৯ সালে হয়েছিল যখন বিটকয়েন বাজারে এসেছিলো । চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক এই টেকনোলজি কে ব্লকচেইন কেন বলা হয়

সাধারণত Blockchain ডেটা ও ইনফরমেশন কে একটি গ্রুপ এর মধ্যে সংগ্রহ কে থাকে , আর এই গ্রুপ গুলিকে ব্লক বলা হয়ে থাকে । প্রতিটি ব্লকে সীমিত জায়গা অর্থাৎ Limited Storage Capacity থাকে , আর যখন একটি ব্লকে জায়গা থাকে না অর্থাৎ একটি ব্লক যখন ভর্তি হয়ে যায় , তখন সেটা আগের ব্লকের সাথে গিয়ে জুড়ে যায় বা যুক্ত হয়ে যায় । আর এই ভাবে একটি চেইন তৈরী হয় যেটা ডেটা ও ইনফরমেশন এর চেইন হয়ে থাকে , আর একেই ব্লকচেইন বলা হয়ে থাকে ।

 

ব্লকচেইন এর বিভিন্ন উপাদান বা Elements 

Blockchain এমন কয়েকটি ব্লকের চেইন হয়ে থাকে , যার মধ্যে ডেটা ও ইনফরমেশন থাকে , এবং প্রতিটি ব্লকে আগের ব্লকের একটি Cryptography Hash থাকে , আর প্রতিটা লেনদেন বা Transaction এর সময় এই Hash Generate হয় । এই হ্যাশ নম্বর সাধারণত সংখ্যা ও শব্দের একটি সমষ্টি হয়ে থাকে , Hash এমন একটি কানেকশন যা Letters ও Number এর ইনপুট কে একটি Fixed Length Hash আউটপুটে Convert করে থাকে ।

এই Hash কেবল Transaction এর উপর নির্ভরশীল হয়না , চেইন এর মধ্যে আগের ব্লকের Transaction Hash এর উপরেও নির্ভর করে । যদি Transaction এর মধ্যে সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হয় তাহলে একটি Hash তৈরী হয়ে যায় অর্থাৎ যদি Blockchain এর ডেটার মধ্যে কেউ যদি কিছু পরিবর্তন করার চেষ্টা করে তাহলে এর সমস্ত সেটিং বদলে যায় , আর এই ভাবে খুব সহজে রেকর্ডে থাকা ডেটা অদল বদলের সন্ধান পাওয়া যায় তাই এটিকে নিরাপদ বা Secure মাধ্যম বলা হয় ।

এই Blockchain অনেক গুলো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে , আর প্রতিটা কম্পিউটারের মধ্যে Blockchain এর কপি উপলব্ধ থাকে , আর এই কম্পিউটার গুলিকে Nodes বলা হয়ে থাকে । এই Nodes Hash কে চেক করে দেখে যে Transaction এর মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা , যদি Transaction গুলিকে  Nodes Approve করে দেয় তখন সেই Transaction গুলিকে ব্লকের মধ্যে সাজানো হয়ে থাকে ।

এই Nodes Blockchain এর Infrastructure তৈরী করে এবং এই ব্লকচেইন ডেটা ও ইনফরমেশন কে যুক্ত ও স্টোর বা সংরক্ষণ করে থাকে । একটি Nodes কম্পিউটার ডিভাইস এর মধ্যে ব্লকচেইন এর প্রতিটা Transaction History উপলব্ধ থাকে , এবং Blockchain প্রতি ৫ -১০ মিনিটে আপডেট হতে থাকে ।

Blockchain এর এলিমেন্টস গুলি কি কি এবং এগুলো কিভাবে একসাথে কাজ করে সেগুলো জেনে নেওয়ার পর এবার জেনে নেওয়া যাক বিটকয়েনের ক্ষেত্রে ব্লকচেইন কিভাবে ব্যবহার করা হয় ।

 

বিটকয়েনে ব্লকচেইন এর ব্যবহার 

বিটকয়েন এর ক্ষেত্রে ব্লকচেইন একধরণের Database হয়ে থাকে , যা সবধরণের বিটকয়েনের Transaction গুলিকে স্টোর করে রাখে , বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি তে Blockchain এই কারেন্সি গুলোকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেয় । ফলে এই কারেন্সি গুলোকে কোনো সরকারি সংস্থা বা Authority ছাড়াই Operate করা সম্ভব হয়ে থাকে , এবং এর ব্যবহারের ফলে ঝুঁকি বা Risk অনেকটাই কম হয়ে যায় এবং Processing ও Transaction Step ও অনেক কম হয়ে যায় ।

ব্লকচেইন কি

বিটকয়েনের ব্লকচেইনের মধ্যে যে ব্লকস গুলো থাকে সেগুলো সমস্ত Transaction গুলিকে স্টোর করে থাকে , বেশ কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে Blockchain ব্যবহার যোগ্য হতে পারে এবং এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বা Sector এর সার্ভিস কে বেশ উন্নত করতে পারে ।

 

ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ? cryptocurrency in bengali

 

উদাহরণস্বরূপ যেমন ব্যাঙ্কিং সেক্টরে সপ্তাহে ৫-৬ দিন Working Days থাকে , এবং বাকি ১ – ২ দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকে , আপনি যদি কোনো কাজ করতে চান যেমন Cheque Deposit , Cash Withdraw ইত্যাদি তাহলে আপনাকে এই ওয়ার্কিং Days এর মধ্যে যেতে হবে , তাছাড়া আপনি Cheque Deposit করার পর আপনাকে ২-৩ দিন অপেক্ষা করতে হয় Cheque Clearance এর জন্য , আর তার মাঝে যদি ছুটি পরে যায় তাহলে সেটা ৫-৬ দিন হতে পারে ।

তাই Blockchain টেকনোলজির সাহায্যে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে বিভিন্ন কাজ খুব সহজে এবং খুব কম সময়ে হতে পারে , যেখানে Cheque Clear হতে ২-৩ দিন সময় লাগে সেখানে মাত্র ১০ মিনিটে এই Cheque Clear হয়ে যাবে ।

» এছাড়া Blockchain এর সাহায্যে খুব সহজে ও খুব কম সময়ে আপনি যে কোনো সংস্থা ও ব্যাঙ্ক এর মধ্যে Fund Exchange করতে পারেন ।

» যদি মেডিকেল সেক্টরের কথা বলি তাহলে Blockchain এর সাহায্যে রোগীর বা Patient এর মেডিকেল Records বা তথ্য গুলি Secure বা নিরাপদ রাখা যায় , যখন কোনো মেডিকেল রেকর্ড Generate করা হয় , তখন সেটিকে ব্লকচেইনে লেখা যেতে পারে , ফলে একজন রোগী জানতে পারবে যে তার মেডিকেল Record একদম সঠিক , তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি ।

 

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি ? ( artificial intelligence in bangla )

 

» ব্যাঙ্কিং ও মেডিকেল সেক্টর ছাড়াও ব্লকচেইনের ব্যবহার Supply Chain ও Voting System ইত্যাদি ক্ষেত্রে করা যেতে পারে । Supply Chain এর ক্ষেত্রে একজন Supplier তার সমস্ত প্রোডাক্ট ও Materials Record ব্লকচেইনে রাখতে পারে , যাতে সেই প্রোডাক্ট ও Materials এর Authenticity Verify করা যেতে পারে ।

» Voting সিস্টেম এর ক্ষেত্রে Blockchain এর ব্যবহার করে ভোট চুরি ও প্রতারণা বন্ধ করা যেতে পারে ,এবং ব্লকচেইন প্রোটোকলে স্বচ্ছতা বা Transparency বজায় থাকে ।

এছাড়া আরও বেশ কিছু সেক্টরে Blockchain এর ব্যবহার করা যেতে পারে , এবং এর কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে , চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক ।

ব্লকচেইন টেকনোলজির সুবিধা 

১. এই টেকনোলজির প্রধান সুবিধা হলো সব উপায়ে এটি এক্সেস যোগ্য , অর্থাৎ যে কেউ Blockchain টেকনোলজি তে অংশগ্রহণ করতে পারে , আর তার জন্য কোনোরকম কারোর কাছে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না ।

২. Blockchain প্রতিটি Transaction কে একে অপরের সাথে যুক্ত করে ব্লকচেইন এর ব্লকে স্টোর করে , এবং তার জন্য ব্লকচেইন নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দেয় , অর্থাৎ ব্লকচেইন Secure ।

৩. Blockchain স্বচ্ছতা বা Transparency বজায় রাখে ।

৪. Blockchain টেকনোলজি তে ডেটা চুরি বা হারানোর কোনো ভয় থাকে না ।

 

মেটাভার্স কি ? মেটাভার্স কেনই বা এতো জনপ্রিয় ? (what is metaverse in bangla)

ব্লকচেইন টেকনোলজির অসুবিধা

১. Blockchain টেকনোলজি তে প্রচুর পরিমানে বিদ্যুৎ খরচ হয় ।

২. কয়েকটি দেশে পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এই Blockchain টেকনোলজির উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ।

৩. Blockchain টেকনোলজি তে ব্লক এর সাইজ ছোটো থাকায় , একটি ব্লকে বেশি ডেটা স্টোর থাকতে পারেনা ।

৪. Blockchain একটি নতুন টেকনোলজি তাই এর বিষয়ে প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ জানে না ।

 

একনজরে : আজকের এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম

প্রথমে জানলাম ব্লকচেইন কি ? তারপরে জানলাম ব্লকচেইন এর বিভিন্ন উপাদান বা Elements , তারপরে জানলাম ব্লকচেইন এর ব্যবহার , এবং তারপরে জানলাম ব্লকচেইন বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধা ।

আজকের এই পোস্ট থেকে আশা করি আপনাদের কাছে ব্লকচেইন বিষয় টি পরিষ্কার হয়েছে , যে এই ব্লকচেইন কি ? এটি কিভাবে কাজ করে , এর ব্যবহার এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা ইত্যাদি । এছাড়া যদি আপনার এই বিষয়ে কিছু প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনি আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আপনার প্রশ্ন আমাদের জানাতে পারেন , আর তার সাথে আমাদের এই পোস্ট যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলেও কিন্তু কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না , কারণ আপনাদের কমেন্ট থেকে আমরা অনেকটা উৎসাহ পাই বা মোটিভেট হতে পারি । আর এরম তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন , আর এই ধরণের নতুন নতুন তথ্য পেতে থাকুন ।

ধন্যবাদ 

বঙ্গজ্ঞান টীম

শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

2 thoughts on “ব্লকচেইন কি ও এর 4 টি ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা ( Blockchain in Bengali )”

  1. বঙ্গজ্ঞান টিমের কাছে জানতে চাই , ডাইনামিক ও স্টাটিক ওয়েবসাইটে ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়? যদি যায় তবে এর অসুবিধা কি আছে?

    Reply

Leave a Comment