বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কাজ কম্পিউটার ছাড়া প্রায় অচল , বেশিরভাগ কাজেই কম্পিউটার এর প্রয়োজন হয় । এমন কি আজকাল বেশিরভাগ বাড়িতেও কম্পিউটার রয়েছে , কিন্তু আপনি কি জানেন এই কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে ? এর মধ্যে কোন কোন পার্টস থাকে ?
কম্পিউটারে সমস্ত অংশ বা পার্টস গুলি একে ওপরের সাথে যুক্ত থাকে , এর মধ্যে যদি একটি পার্টস না থাকে তাহলে কম্পিউটার টি চলবে না , সেটা সিপিইউ (CPU ) কিংবা মাদারবোর্ড হোক বা কিবোর্ড , মাউস হোক কম্পিউটার চালানোর জন্য সব পার্টস এর থাকা টা জরুরি ।
আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাদের বলবো এইসব পার্টস এর মধ্যে যেটা সবচেয়ে জরুরি পার্টস বা অংশ তার সম্বন্ধে , যার নাম মাদারবোর্ড । কম্পিউটার চালানোর জন্য প্রতিটি পার্টস গুরুত্বপূর্ণ , কিন্তু তার মধ্যে এই মাদারবোর্ডের ভূমিকা অনেক বেশি , চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক
মাদারবোর্ড কি
মাদারবোর্ড হলো এমন একটি সার্কিট বোর্ড যার মধ্যে কম্পিউটারের সমস্ত ছোটো বড়ো পার্টস যুক্ত থাকে , যেমন সিপিইউ ,র্যাম (Ram ) , ডিভিডি রাইটার , গ্রাফিক্স কার্ড , HDD বা SSD হার্ডডিস্ক , প্রসেসর , মাউস , কীবোর্ড এই সব পার্টস মাদারবোর্ডের সাথে যুক্ত থাকে , একে অনেক সময় PCB (Printed Circuit Board ) বলা হয় । নিচে একটি মাদারবোর্ডের ছবি দেওয়া হলো ।
সুচিপত্র
মাদারবোর্ড কি এবং এর বিভিন্ন পার্টস
আপনি মাদারবোর্ডের এই ছবি তে অসংখ ছোটো ছোটো পার্টস দেখতে পারছেন , কিন্তু এখানে আমরা আপনাদের এর মধ্যে যে গুলো আসল পার্টস সেগুলোর সম্বন্ধে বলবো ।
১. সিপিইউ সকেট (CPU Socket )
সিপিইউ সকেট কম্পিউটারের ভিতর মাদারবোর্ডে থাকা একটি পার্টস , যার মধ্যে কম্পিউটারের প্রসেসর লাগানো হয়ে থাকে । প্রসেসর কে প্রতিটি কম্পিউটারের ক্ষমতা অর্থাৎ Core অনুযায়ী লাগানো হয়ে থাকে , যেমন P1, P2 , Dual Core , Quad Core , Octa Core , Core I3 , Core I5 , Core I7 , Core I9 ইত্যাদি ।
২. RAM স্লট
RAM স্লটে কম্পিউটারের RAM লাগানো হয়ে থাকে , এটি কম্পিউটারের একটি ছোটো পার্টস হলেও এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্টস । যখন আমরা কম্পিউটার কিনতে যাই তখন আমরা ভালো RAM সহ কম্পিউটার কিনি , যাতে কম্পিউটারটি দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে ।
RAM সাধারণত ১ জিবি থেকে শুরু করে ১৬ জিবি পর্যন্ত হয়ে থাকে , যত বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন RAM অর্থাৎ যত বেশি জিবি সহ RAM আপনি ব্যবহার করবেন ততই বেশি দ্রুত কাজ করবে আপনার কম্পিউটার এবং একসাথে অনেক গুলো কাজ কোনো Hang করা ছাড়াই আপনি করতে পারবেন ।
কম ক্ষমতা সম্পন্ন RAM সহ কম্পিউটার গুলি বেশি কাজ করলে অর্থাৎ বেশি Application একসাথে চালানো যায় না কিংবা চালালেও কম্পিউটার অনেক Hang করে ।
দ্রষ্টব্যঃ কম্পিউটার দ্রুত চলার জন্য শুধুমাত্র RAM ক্ষমতাসম্পন্ন হলেই চলবে না , তার সাথে আরও বেশ কিছু জিনিস এর উপর কম্পিউটারের গতি বা স্পিড নির্ভর করে , যেমন প্রসেসর , মাদারবোর্ড , হার্ডডিস্ক ইত্যাদি । এই সব কিছু যদি ঠিক থাকে তাহলেই আপনি কম্পিউটারে দ্রুত গতিতে বা ফাস্ট কাজ করতে পারবেন ।
৩. IDE কানেক্টর
IDE এর সম্পূর্ণ নাম হলো Integrated Drive Electronics , এটি কে মাদারবোর্ডের সাথে হার্ড ডিস্ক ও অপটিক্যাল ড্রাইভ কে যুক্ত করার কাজে ব্যবহার করা হয় । কিন্তু বর্তমানে টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে IDE কানেক্টর এর বদলে SATA ক্যাবল ব্যবহার করা হয়ে থাকে , SATA ক্যাবল IDE কান্নেক্টরের থেকে ছোটো এবং দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে । আজকাল SATA ক্যাবল বিভিন্ন ধরণের পাওয়া যায় যেমন SATA ১ , SATA ২ , SATA ৩ ইত্যাদি ।
৪. BIOS Chip ও CMOS ব্যাটারী
CMOS এর সম্পূর্ণ নাম Complementary Metal-Oxide Semiconductor , এটি এমন একটি ব্যাটারী যা তথ্যকে স্টোর করে রাখে , তথ্য বলতে যেমন কম্পিউটার সিস্টেমের তারিখ ও সময় , কম্পিউটার সিস্টেমে হার্ডওয়্যার সেটিংস ইত্যাদি । যখন আপনার কম্পিউটার চালু করা হয় তখন BIOS এই স্টোর করা তথ্য গুলি ব্যবহার করে থাকে । একটি CMOS ব্যাটারী সাধারণত ৫-৬ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারে , তবে এটি সম্পূর্ণ কম্পিউটার ব্যবহার করার উপর নির্ভর করে । CMOS ব্যাটারী খারাপ হয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সিস্টেম সেটিংস ও সিস্টেম তারিখ ও সময় স্টোর হবে না , কিংবা আপনার কম্পিউটার যদি দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকে তাহলেও এই CMOS ব্যাটারী নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
• সুপার কম্পিউটার কি ? সুপার কম্পিউটার এর ব্যবহার (What is Super Computer)
৫. Northbridge ও Southbridge
কম্পিউটারের মাদারবোর্ড কে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় , একটি হলো Northbridge ও অপরটি হলো Southbridge । Northbridge মেমরি PCI ( Peripheral Component Interconnect ) স্লট কে ম্যানেজ করে থাকে এবং Southbridge প্রসেসর Network Hub কে ম্যানেজ করে থাকে ।
৬. Rear Connector
মাদারবোর্ডের সাথে বিভিন্ন আউটপুট ডিভাইস যুক্ত করার জন্য কিছু PORT থাকে , যেমন মাউস , প্রিন্টার , কীবোর্ড , LAN ক্যাবল বা ডেটা ক্যাবল ইত্যদি ।
• ব্লুটুথ কি ? ব্লুটুথ কিভাবে কাজ করে ? (What is Bluetooth)
৭. গ্রাফিক্স কার্ড স্লট
মাদারবোর্ডের নিচের ডান দিকে এই স্লট লাগানো থাকে , এই স্লটের মাধ্যমে গ্রফিক্স কার্ড লাগানো হয়ে থাকে । গ্রাফিক্স কার্ডের সাহায্যে আমরা কম্পিউটারে ভিডিও ও ইমেজ ফাইল গুলি এক্সেস করতে পারি । যদি আমাদের কম্পিউটারে গ্রাফিক্স কার্ড না থাকে তাহলে আমরা আমাদের কম্পিউটার ভিডিও ও ইমেজ দেখতে পারবো না । বর্তমানে কম্পিউটারে অত্যাধুনিক এবং ক্ষমতা সম্পন্ন গ্রাফিক্স কার্ড লাগানো হচ্ছে ,যাতে আমরা High Quality বা High গ্রাফিক্স এর বিভিন্ন গেম খুব সহজে খেলতে পারি ।
একনজরে : আজকের এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে জানলাম মাদারবোর্ড কি ? মাদারবোর্ড কোথায় ব্যবহার করা হয় ?
এছাড়া মাদারবোর্ডের মধ্যে কি কি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বা পার্টস থাকে ।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে মাদারবোর্ড সম্বন্ধে বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন , যেমন মাদারবোর্ড কি , এর মধ্যে কি কি পার্টস থাকে ইত্যাদি । এছাড়া মাদারবোর্ড সম্বন্ধে যদি আরও কিছু জিনিস জানার থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন , আর আজকের এই পোস্ট যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার প্রিয়জন ও বন্ধু দের সাথে এই পোস্ট টি শেয়ার করুন , আর এই ধরণের নতুন নতুন তথ্য পেতে হলে আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন ।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টীম