ক্লাউড কম্পিউটিং কী ? Cloud computing in bangla

5/5 - (7 votes)

প্রতি সপ্তাহের মতো এই সপ্তাহে আমরা আপনাদের জন্য একটি নতুন তথ্য নিয়ে এসেছি , আপনাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই এমন আছেন যারা ক্লাউড কম্পিউটিং এর নাম শুনেছেন এবং ব্যবহার ও করেছেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত ক্লাউড কম্পিউটিং সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পান নি ।

অনেকে ভাবতে পারে যে তারা হয়তো কোনো দিন ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করেনি , কিন্তু আসলে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ যেমন ইমেইল পাঠানো , ডকুমেন্টস তৈরী করা , মুভি বা সিনেমা দেখা , গেম খেলা , গান শোনা এবং কোনো ফাইল বা ফোল্ডার কে স্টোর করে রাখা ইত্যাদি এই সব কিছু ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাহায্যে হয়ে থাকে এছাড়া বর্তমানে ছোটো থেকে বড়ো সমস্ত সংস্থা এটির ব্যবহার করছে ।

১. ক্লাউড কম্পিউটিং কী

আমরা যখন মোবাইল ও কম্পিউটারে কোনো ফাইল সেভ করি তখন সেটি কোনো ফোল্ডার এর মধ্যে সেভ করে থাকি , এই কাজ টি সাধারণত অফলাইনে হয়ে থাকে অর্থাৎ এটিতে ইন্টারনেট এর কোনো প্রয়োজন নেই । এরপর যখন আমরা আমাদের মোবাইল ও কম্পিউটার পরিবর্তন করি তখন সেই ডেটা গুলি কে খুঁজে পাইনা , এই ধরণের সমস্যার সমাধান Cloud Computing করে থাকে , যেটা কিনা আমাদের ডেটা অর্থাৎ ফাইলস গুলিকে সেভ রাখার কাজে ব্যবহার করা হয় ।

একটি সাধারণ কম্পিউটার যা যা সার্ভিস দিয়ে থাকে Cloud Computing ও একই কাজ করে থাকে তবে এদের কাজ করার প্রকৃতি একটু আলাদা ।সাধারণ কম্পিউটারের মতো ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে সার্ভার , স্টোরেজ , ডেটাবেস , নেটওয়ার্কিং , সফটওয়্যার , Analytics ইত্যাদি এইসব কিছুই উপস্থিত থাকে , আর এইসব কিছু ইন্টারনেটের মাধ্যমে উপলব্ধ হয়ে থাকে । 

Cloud Computing কে একধরণের স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয় , যার দ্বারা আমরা যে কোনো সময়ে যে কোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারি । এছাড়া এর মাধ্যমে অনলাইনে যে কোনো ফাইল এডিট করতে পারি , কিংবা কোনো ফাইল কে শেয়ার করতে পারি ।

এর সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ হলো Google Drive , গুগল ড্রাইভ বিনামূল্যে ইউসার দের ক্লাউড সার্ভিস দিয়ে থাকে , অর্থাৎ Cloud Computing ব্যবহার করা অনেক সহজ ও নিরাপদ ।

Cloud Computing এমন একটি মডেল , যা ইন্টারনেটের সাহায্যে ডেটা কে অনলাইন ম্যানেজ , স্টোর ও প্রসেস করে থাকে , এটা একটা উদাহরণের মাধ্যমে আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করবো ।

ধরুন আপনি একটি ফাইল তৈরী করলেন সেটা অডিও , ভিডিও , ওয়ার্ড , এক্সেল ইত্যাদি যে কোনো ধরণের ফাইল হতে পারে , এরপর এই ফাইল টি আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপে সেভ করে নিলেন , এবং এই ফাইল টি আপনার SSD বা HDD হার্ডডিস্কে থেকে যায় । 

 

HDD ও SSD কি ? এদের মধ্যে পার্থক্য কি কি ?

 

এরপর আপনাকে কোনো কাজে বাইরে কোথাও যেতে হলো এবং সেখানে আপনার এই ফাইল টির প্রয়োজন , তাই সেই কারণে আপনি এই ফাইল টি পেন ড্রাইভ বা এক্সটার্নাল হার্ডডিস্কে কপি করে নিয়ে যাবেন । কিন্তু আপনি যদি Cloud Computing ব্যবহার করেন তাহলে আপনাকে কোনো পেনড্রাইভে বা এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক বা কোনো স্টোরেজ ডিভাইস এর দরকার হবে না ।

শুধু মাত্র আপনার কাছে ইন্টারনেট কানেক্শন থাকলেই আপনি আপনার ফাইল ও ডেটা কে Google Drive বা Dropbox এর মতো ক্লাউড সার্ভিসে স্টোর করতে পারেন , এবং যে কোনো সময় যে কোনো জায়গা থেকে আপনার ফাইল ও ডেটা কে এক্সেস করতে পারবেন । আর এর জন্য আপনাকে কোনো ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভ সাথে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না , এছাড়া আপনার কম্পিউটরে বা ল্যাপটপ খারাপ হয়ে গেলেও আপনার ডেটা নষ্ট হয়ে যাবেনা | আপনি খুব সহজে Cloud Computing থেকে আপনার ফাইলস ও ডেটার ব্যাকআপ পেয়ে যাবেন । 

কারণ আপনার ফাইল ও ডেটা Google Drive বা Dropbox এর মতো Cloud Computing সার্ভিসে স্টোর করা থাকে । 

Cloud Computing কে বোঝার জন্য কয়েকটি Cloud Computing এর নাম জানতে হবে , যাতে ক্লাউড কম্পিউটিং বিষয় টি আপনি খুব সহজে বুঝতে পারেন ।

 

• নিজের ল্যাপটপ যত্নে রাখতে চান ? জেনে রাখুন ১০ টি টিপস  

 

২. ক্লাউড কম্পিউটিং এর উদাহরণ 

ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে Cloud Computing Service Provider এর সংখ্যা অনেক বেড়েছে । তার মধ্যে সেরা কিছু Cloud Computing সার্ভিস এর নাম নিচে দেওয়া হলো 

  • Google Drive
  • Dropbox
  • Digiboxx 
  • Facebook 
  • Gmail
  • Picasa
  • Flickr
  • HubSpot
  • Salesforce
  • Adobe Marketing Cloud
  • Google Docs
  • Amazon web services
  • Slide Rocket
  • IBM Cloud
  • Microsoft Azure
  • Google Cloud
  • Oracle Cloud
  • Alibaba Cloud

বর্তমানে সকলে Cloud Computing এর দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছে , এর কারণ টি কিন্তু খুব স্বাভাবিক যেহেতু ক্লাউড কম্পিউটিং অনেক সুবিধা প্রদান করছে , যা আজকাল মানুষের অনেক কাজে লাগছে এবং অনেক সময় সাশ্রয় করছে । চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক Cloud Computing এর সুবিধা গুলি 

৩. ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা 

৩.১. ব্যবহার করা সহজ 

এটি ব্যবহার করা খুব সহজ এছাড়া এটিকে যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় শুধুমাত্র ইন্টারনেট কানেকশন এর মাধ্যমে এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন , ল্যাপটপ ও ট্যাবলেটে ব্যবহার করা যায় ।

 

এন্ড্রয়েড কি ? এন্ড্রয়েড এর ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি ?

 

৩.২. Cost বা দাম

কস্ট বা দামের কথা যদি বলা হয় তাহলে এর খরচ অনেক টাই কম হয়ে থাকে , কারণ এর ব্যবহার করা কোনো সংস্থা বা কোম্পানির হার্ডওয়্যার , সফটওয়্যার কেনা ও এগুলো সেটআপ এর কোনো প্রয়োজন হয় না , এর বদলে এই সংস্থা ও কোম্পানি গুলো অনলাইনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্টোর নিয়ে Cloud Computing সার্ভিস এর ব্যবহার করে নিজের ব্যবসা খুব কম খরচে চালাতে পারে । এই ক্লাউড সার্ভিসের যতটা সার্ভিস একটি ইউসার ব্যবহার করে , তাকে ঠিক ততটাই মূল্য দিতে হয় ।

৩.৩. স্পিড বা গতি 

ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিসের স্পিড অনেক দ্রুত হয়ে থাকে , আপনি কয়েকটি ক্লিক করে আপনার কাজ করতে পারেন । যদি আপনার ইন্টারনেটের স্পিড অনেক দ্রুত হয় তাহলে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে আপনার সমস্ত কাজ দ্রুত গতিতে হবে ।

৩.৪. পারফরমেন্স 

যে কোনো কম্পিউটিং সার্ভিসের পারফরমেন্স নির্ভর করে তার সিকিউরিটি ও প্রসেসর কতটা Upgrade তার উপর , ক্লাউড সার্ভিস সাধারণত secure ও অনেক বেশি Upgrade হয়ে থাকে ফলে এর performance সবসময় ভালো হয়ে থাকে ।

৩.৫. Reliable বা নির্ভরযোগ্যতা

ক্লাউড কম্পিউটিং ডেটা ব্যাকআপ থেকে শুরু করে ডেটা Recovery কে অনেক সহজ ভাবে করে থাকে , এই জন্য একে নির্ভরযোগ্য সার্ভিস বলা হয় ।

৩.৬. সিকিউরিটি 

অনেক ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার তার ইউসার এর প্রাইভেসী পলিসির দিকে বিশেষ নজর দেয় , যা একটি ক্লাউড ইউসার এর ডেটা ও এপ্লিকেশন কে চুরি হওয়া থেকে রক্ষা করে , অর্থাৎ Cloud Computing Service একটি ক্লাউড ইউসার এর ডেটার সিকিউরিটি প্রদান করে থাকে ।

৪. ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রকারভেদ

সব জিনিসের যেমন প্রকারভেদ থাকে , ঠিক তেমন ক্লাউড কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রেও তাই , এই জন্য ক্লাউড কম্পিউটিং ও  ৪ ধরনের হয়ে থাকে , এর মধ্যে নিজের প্রয়োজন হিসেবে যে কোনো এক ধরণের ক্লাউড সার্ভিস বেছে নেওয়া যেতে পারে ।

ক্লাউড কম্পিউটিং কী

কিন্তু তার আগে ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রকারভেদ গুলি জেনে রাখাও জরুরি , চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক 

৪.১. পাবলিক ক্লাউড (Public Cloud)

এই ধরণের ক্লাউড থার্ড পার্টি ক্লাউড সার্ভিস এর দ্বারা operate করা হয়ে থাকে , যেটা সার্ভার ও স্টোরেজ এর মতো সার্ভিস কে ইন্টারনেটের মাধ্যমে উপলব্ধ করিয়ে থাকে । এই ধরণের সার্ভিস সব ধরণের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ক্লাউড প্রোভাইডার দ্বারা ম্যানেজ করা হয়ে থাকে । ক্লাউড ইউসার ওয়েব ব্রাউজার এর সাহায্যে এই ক্লাউড সার্ভিস কে ব্যবহার করতে পারে এবং নিজের কাজ গুলিকে ম্যানেজ করতে পারে । 

 

  • ওয়েব ব্রাউজার কি ? ওয়েব ব্রাউজার কিভাবে কাজ করে ?

 

৪.২. প্রাইভেট ক্লাউড (Private Cloud)

এই ক্লাউড সার্ভিস কোনো বিজনেস বা কোনো সংস্থার জন্য হয়ে থাকে , যেটা ওই কোম্পানির নিজের ডেটা সেন্টার হতে পারে কিংবা অন্য কোনো থার্ড পার্টি ক্লাউড সার্ভিস দ্বারা ম্যানেজ করা যেতে পারে । সাধারণত এই ধরণের ক্লাউড সার্ভিস প্রাইভেট নেটওয়ার্ক দ্বারা ম্যানেজ করা হয়ে থাকে ।   

৪.৩. হাইব্রিড ক্লাউড (Hybrid Cloud)

এই ক্লাউড সার্ভিস পাবলিক ও প্রাইভেট ক্লাউড এর সমষ্টি হয়ে থাকে , এই ধরণের ক্লাউড সার্ভিসে ডেটা ও এপ্লিকেশন কে প্রাইভেট ও পাবলিক ক্লাউড এর মধ্যে movement করানো হয়, আর এই সুবিধা প্রদান করে থাকে এই হাইব্রিড ক্লাউড সার্ভিস । আর এর ফলে একজন ক্লাউড ইউসার বা ব্যবহারকারী একটি সুন্দর অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকে ।  

৪.৪. কমিউনিটি ক্লাউড (Community Cloud)

এই ধরণের ক্লাউড কম্পিউটিং এমন কিছু কোম্পানি বা সংস্থায় ব্যবহার করা হয় যাদের কাজের নমুনা ও ব্যবসার লক্ষ্য একই হয়ে থাকে এবং যারা একত্রে একটি কমিউনিটি তৈরী করে এবং শুধুমাত্র এই কমিউনিটির সদস্যরা এই সার্ভিস ব্যবহার করতে পারে ।

৫. ক্লাউড কম্পিউটিং এর মডেল

সাধারণত ক্লাউড কম্পিউটিং ৩ টি আলাদা আলাদা মডেল এর উপর কাজ করে , চলুন সেই মডেল গুলি দেখে নেওয়া যাক ।

৫.১. Infrastructure as a Service (IaaS)

এটি Cloud Computing এর বেসিক ক্যাটাগরি হয়ে থাকে , যার দ্বারা একজন ক্লাউড ইউসার নিজের প্রয়োজন মতো resources ভাড়া বা Rent হিসেবে নিতে পারে । এই resources এর মধ্যে Server , Network , Visualization , Storage ইত্যাদি এগুলো থাকে ।  

৫.২. Platform as a Service (PaaS)

এই ক্লাউড সার্ভিস সফটওয়্যার এপ্লিকেশন কে Develop , Test , Deliver Manage করতে ইউসার কে একটি প্লাটফর্ম প্রদান করে থাকে । এছাড়া এই ক্লাউড সার্ভিস কে ওয়েব ও এন্ড্রয়েড app তৈরী করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে । 

৫.৩. Software as a Service (SaaS)

এই ক্লাউড সার্ভিস সাধারণত On Demand Application সফটওয়্যার সার্ভিস দিয়ে থাকে , এই সার্ভিসে একজন ক্লাউড ইউসার কে তার কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কোনোরকম সফটওয়্যার ইনস্টল করার দরকার পরে না , এছাড়া এর মূল্য খুব কম হয়ে থাকে । 

এছাড়া বর্তমানে একজন ক্লাউড কম্পিউটিং Service provider আরও কিছু সার্ভিস প্রদান করতে পারে যেমন Create Cloud Application , Store Backup and Recover Data , Stream  Video , Software Deliver , Analyze Data , Testing and Build Apps ইত্যাদি ।

একনজরে : আজকের এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানতে পারলাম

প্রথমে জানলাম ক্লাউড কম্পিউটিং কি ? ও Cloud Computing এর উদাহরণ

তারপরে জানলাম Cloud Computing এর সুবিধা গুলি কি কি ?

তারপরে জানলাম Cloud Computing এর প্রকারভেদ এবং সবশেষে জানলাম Cloud Computing এর ৩ টি মডেল সম্বন্ধে ।

আজকের আমাদের এই পোস্ট থেকে আশা করি আপনারা জানতে পেরেছেন যে ক্লাউড কম্পিউটিং কী ও ক্লাউড কম্পিউটিং সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত তথ্য , এছাড়া আরও যদি কিছু জানার থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন , আর আমাদের এই পোস্ট ভালো লেগে থাকলে অতি অবশ্যই আপনার প্রিয়জন ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে করবেন এবং নানা বিষয়ের উপর বিভিন্ন তথ্য পেতে হলে আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন ।

ধন্যবাদ

বঙ্গজ্ঞান টীম

শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

Leave a Comment