প্রাচীন কাল থেকেই দুধের ব্যবহার হয়ে আসছে , শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ সবাই কিন্তু দুধ পান করে থাকে কারণ আমরা জানি এই দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুণ রয়েছে। দুধের উপকারিতা এত টাই বেশি যে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন এক গ্লাস দুধের মধ্যে একটা সময়ের আমরা যে খাবার খেয়ে থাকি সেই সম পরিমান প্রোটিন থাকে।
যারা হেলথ এক্সপার্ট রয়েছেন তারা বলে থাকে যে যদি আপনি কোনো একটা সময়ের খাবার না খান এবং তার জায়গায় শুধু এক গ্লাস দুধ খেয়ে থাকেন তাহলে সেটা আপনার এক বেলার খাবার হিসেবেই কার্যকরী হবে । তাই দুধ কে সুপার ফুড ও বলা হয়ে থাকে। দুধের উপকারিতা মধ্যে সবচেয়ে উপরে রয়েছে ক্যালসিয়াম তাই আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম কম থাকলে ডাক্তারেও প্রথমেই দুধ খাবার উপদেশ দিয়ে থাকেন।
দুধের উপকারিতা
গরুর দুধের উপকারিতা প্রচুর আছে তবে যেহেতু এটি আমরা জীবিত প্রাণী থেকে পাই তাই রাসায়নিক ক্রিয়া বা কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়ে থাকে , তাই আমরা জেনে নেবো দুধ খাবার সঠিক পদ্ধতি গুলি কি কি এবং দুধের উপকারিতা থেকে আমাদের শরীরে কি ভাবে কাজে দেয় এবং দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা । চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক প্রথমে গরুর দুধের উপকারিতা গুলি কি কি ।
সুচিপত্র
১. গরুর দুধের উপকারিতা
- বৈজ্ঞানিকরা বলে থাকেন দুধের মধ্যে প্রোবায়োটিক্স বলে একটি উপাদান আছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তোলে , তার ফলে আপনি রোগের হাত থেকে দূরে থাকবেন এবং যদি আপনার কোনো অসুখও হয় সেটি তাড়াতড়ি সেরে উঠতে আপনাকে সাহায্য করবে।
- দুধের উপকারিতা প্রচুর, দুধে পরিমানে প্রোটিন , ক্যালসিয়াম , পটাসিয়াম , যা আমাদের শরীরে পৌছিয়ে ক্লান্তি ভাবকে দূর করে। আমরা সারাদিন নানা কাজ কর্মের মধ্যে থাকি তার ফলে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পরে , আর দুধ সেই দুর্বল ভাবকে কমিয়ে শরীরে মধ্যে শক্তি যোগায়।
- ডাক্তারে বলে থাকেন রাত্রে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়া শরীরে জন্য খুবই ভালো। অনেকেরই রাত্রে ভালো ঘুম হয় না , তাই আপনি যদি এই রাত্রে দুধ খাওয়ার অভ্যাস করে নিন তাহলে ঘুমের কোনো সমস্যা হবে না।
- দুধের উপকারিতা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাই সেটি রাত্রি বেলায় সেবন করলে, আপনার যদি সর্দি কাশি লেগে যাই, বা যদি আপনার শরীরে কোথাও জখম হয় , তাহলে রাত্রে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন তাতে খুবই আরাম হয় এবং আপনার শরীরে দ্রুত সুস্থ করে তোলে।
• বিশেষ 7 টি কাঠ বাদাম এর উপকারিতা
- দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম পাওয়া যাই যা আমাদের হাড়ের জন্য খুবই ভালো , ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়কে মুজবুত রাখে এবং দাঁত ভালো থাকে , তাই শিশু বয়েস থেকেই দুধের অভ্যেস করানো খুবই দরকার।
- গরুর দুধের উপকারিতা মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের মানসিক চাপ কে নিয়ন্ত্রণে রাখে , আমরা অনেক সময় কিছু সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকি বা ভেগে পড়ি , দুধের মধ্যে থাকা উপাদান সেই সব ক্লান্তি গুলো কে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। মানসিক চাপের সাথে সাথে দুধ আমাদের মস্তিস্ক কেউ উন্নত করে আরো মেধাবী করে তোলে , তাই বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ বয়েস পর্যন্ত দুধ খাওয়া খুবই জরুরি।
- দুধ আমাদের হার্টের জন্য খুবই কার্যকরী। কম ফ্যাটযুক্ত দুধ পান করলে তা শরীরের মধ্যে খারাপ কোলেস্টরল কে কমিয়ে ভালো কোলেস্টরল কে বাড়াতে খুবই সাহায্য করে, তার ফলে আপনার হার্ট সুস্থ থাকে।
- হজম শক্তি বানানোর জন্য দুধের উপকারিতা জুড়ি মেলা ভার , দুধ যেহেতু পানীয় খাবার তাই সেটি আমাদের শরীরের মধ্যে গিয়ে সহজেই হজম করতে সাহায্য করে। নিয়মিত দুধ খেলে আমাদের পাকস্থলী পরিষ্কার থাকে।
২. জাফরান দুধের উপকারিতা
- আপনি চাইলে কেশর দুধ খেতে পারেন, জাফরান দুধের উপকারিতা অনেক , একজন গর্ভবর্তী মহিলাকে দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেতে বলা হয়।
- মেয়েরা যারা মাসিকের ব্যথায় কষ্ট পান তাদের জন্য জাফরান দুধের উপকারিতা খুব বেশি কার্যকরী। সেইসময় তারা দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে অনেক আরাম পাবেন।
- বিশেষজ্ঞ রা বলে থাকেন জাফরান স্মৃতিশক্তি উন্নত করে , তাই দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে আপনার স্মৃতিশক্তি ভালো থাকবে।
- জাফরান দুধের উপকারিতা মেয়েদের জন্য খুবই কার্যকরী , যেসব মেয়েরা শারীরিক দিক থেকে দুর্বল তারা যদি নিয়মিত দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খেলে তাদের হরমোন উদ্দীপিত হবে।
• 5 টি সেরা কাঁচা পেঁপের উপকারিতা যা আপনাকে ওষুধ থেকে দূরে রাখবে
৩. পাউডার দুধের উপকারিতা
পাউডার দুধ মূলত গরুর দুধ কে শুকিয়ে বানানো হয়ে থাকে , অনেকে এমন আছেন যারা কাঁচা দুধ খেতে পছন্দ করেন না বরং তার বদলে এই পাউডার দুধ খেতেই তারা অনেক ভালো বাসে। নিত্যদিনের রুটিনে কেউ যদি কাঁচা দুধের জায়গায় পাউডার দুধ খেতে চাই তাহলে অবশ্যই তারা খেতে পারবে , পাউডার দুধে কাঁচা দুধের মতোই পুষ্টিগুণ রয়েছে , তবে আপনাকে তা সঠিক পরিমান বুঝে খেতে হবে কারণ পাউডার দুধে চিনি মিশ্রিত থাকে তার ফলে আপনার ডায়াবেকিস এবং কোলেস্টরল এর অসুবিধে হতে পারে। এখন বাজারে নানা রকম কোম্পানির পাউডার দুধ পাওয়া যাই, তাই কেনার সময় আপনাকে একটু দেখে কেনা উচিত এবং তারই সাথে দুধের মধ্যে কি কি উপাদান সেগুলো একটু দেখে নেওয়া দরকার।
Note : অনেকে আছে যারা দুধ খেতে ভীষণ ভালোবাসে আবার অনেকে এমন আছে যারা একদমই দুধ খেতে পছন্দ করে না , বিশেষ করে বাচ্চারা , এখন বাজারে অনেক এমন জিনিস এসেছে যেগুলোর সাথে মিশিয়ে আপনি আপনার বাচ্চা কে দুধ খাওয়াতে পারবেন, এমনকি আপনিও দুধকে টেস্টি বানানোর জন্য কিছু নতুন নতুন রেসিপি করে খেতে পারেন।
৪. রূপচর্চায় দুধের উপকারিতা
- দুধের মধ্যে থাকে ট্রাই-গ্রিসারাইড যা আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। নিয়মিত দুধ খেলে আমাদের স্কিন ভালো থাকে।
- শীতকালে আপনি যদি দুধের সর মুখে মাখেন তাহলে আপনার স্কিন আর রুক্ষ হবে না বরং আরো মোলায়েম হয়ে উঠবে।
- দুধের সাথে মিশিয়ে বিভিন্ন ঘরোয়া ফেস প্যাক বানানো যেতে পারে যেমন বেসন এর সাথে দুধ মিশিয়ে এলটি প্যাক বানাতে পারবেন , আবার মুলতানি মাটির সাথে কাচার দুধ মধু মিশিয়েও লাগাতে পারবেন। এমনকি কাঁচা দুধ আপনি টোনার হিসেবেও লাগাতে পারবেন।
- দুধ কে আপনি ময়েশ্চরাইজার হিসেবেও ব্যাবহার করতে পারবেন , এক টেবিল চামচ কাঁচা দুধের সাথে হাফ টেবিল চামচ গ্রিসারিন মিশিয়ে মুখে ১৫ মিনিট মতো লাগিয়ে ধুয়ে দিতে হবে , তার ফলে ত্বকে ময়েশ্চার থাকে এবং স্কিন হাইড্রেড থাকে।
• সেরা 7 টি ওটস এর উপকারিতা যা আপনাকে সুস্থ রাখবে
দুধের অপকারিতা
বেশ কিছু দুধের উপকারিতা সম্বন্ধে তো জানলাম , কিন্তু যে কোনো ভালো জিনিসের কিছু খারাপ দিক ও থাকে যদি আপনি সেটা সঠিক ভাবে না খান , তাহলে চলুন উপকারিতার সাথে সাথে দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা ।
- আপনার যদি দুধে কোনোরকম এলার্জি থাকে তাহলে দুধ খাওয়া থেকে দূরে থাকুন , তাছাড়াও যাদের এর্লাজির সমস্যা রয়েছে তাদের কে ডাক্তারে দুধ খেতে নিষেধ করে দেয়।
- যে সব ব্যাক্তিদের কিডনিতে পাথর আছে তাদের দুধ না খাওয়াই ভালো।
- যদি আপনি রাত্রে দুধ খান তাহলে অবশ্যই সেটা কুসুম গরম করে খাবেন রাত্রে ঠান্ডা দুধ খাওয়া একদমই উচিত নয়।
- কাঁচা দুধকে অনেকে বেশি পুষ্টিকর বলে মনে করে কিন্তু কাঁচা দুধ পান করা একদমই উচিত নয় কারণ কাঁচা দুধের মধ্যে জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া থেকে যাই আর সেটা খেলে বমি বমি ভাব , পেটে ব্যথা এই সব সমস্যার মধ্যে পড়তে হতে পারে , তাই সবসময় দুধ কে গরম করেই খাওয়া ভালো।
- আপনি যদি আয়রনের ওষুধ খান তাহলে সেক্ষেত্রে ততদিন আপনাকে দুধ খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।
- দুধের মধ্যে ল্যাকটোজ বলে একটি উপাদান পাওয়া যাই আর তাই এই ল্যাকটোজ বেশি পরিমানে আমাদের শরীরে গেলে গ্যাস এর বিভিন্ন সমস্যা , ডায়রিয়া , এবং পেট খারাপের মতো রোগের হাতে পড়তে হতে পারে।
- যারা গ্যাস্টিক রোগী এবং যাদের আলসারের সমস্যা রয়েছে তাদের ও দুধ খাওয়া উচিত নয়।
- যাদের সম্পত্তি পেটের অপারেশন হয়েছে তাদের দুধ খাওয়া উচিত নয় , পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে তারপর আপনি দুধ পান করতে পারবেন।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে আমরা জানলাম যে দুধের উপকারিতা গুলি কি কি এবং দুধ আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করতে কিভাবে সাহায্য করে তারপর জানলাম গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলি কি কি হতে পারে।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি দুধের উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া দুধের উপকারিতা বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টীম