অনেকেই মনে থাকেন যে টক জাতীয় জিনিস মানেই হলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার সেটা একদমই সঠিক নয়, এমনও অনেক খাবারের জিনিস আছে যেখান থেকে আপনি ভালো পরিমান ভিটামিন সি পেয়ে যাবেন। আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর গুরুত্ব অনেকখানি, এটি দেহে ইমিউনিটি পাওয়ার কে আরো শক্তিশালী করে তোলে এবং এটি শরীরে আন্টিঅক্সসিডেন্ট হিসেবেও কাজে দেয়।
এছাড়াও ভিটামিন C ওজন কমাতে এবং ত্বক ভালো রাখতেও বেশ কার্যকরী, আমাদের দেহে ভিটামিন C এর প্রয়োজন অনেকখানি, তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ভিটামিন কি যুক্ত খাবার কে রাখার।
ভিটামিন সি
এই ভিটামিন সি খুবই শক্তিশালী একটি আন্টিঅক্সসিডেন্ট যা দেহের মধ্যে যেসব ফ্রিরেডিক্যাল গুলি আছে তাদের সাথে লড়াই করে, এবং শরীরে যেসব টক্সিক পদার্থ গুলো থাকে সেগুলি কে বের করতে সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধকের যে ক্ষমতা আছে সেটিকে আরো উন্নত করে তোলে তার ফলে রোগ সক্রামণের ভয় ও অনেক হরে কমে যাই।
এছাড়া আমাদের দাঁতের স্বাস্থকে ভীষণ ভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করে এই ভিটামিন C, দাঁতের ব্যাথা, মাড়িতে যন্ত্রনা, রক্ত পড়া, ইত্যাদি সারাতে খুবই কার্যকরী। ভিটামিন C কথা মাথায় আসলেই সবার প্রথমে আমাদের মাথায় আসে লেবুর কথা কিন্তু অনেকেই অম্বল এর জন্য এই লেবু খেতে পারেন না, তবে লেবু তাই যে শুধু ভুটামিন C আছে তা একদমই নয়। আমাদের নিত্যদিনের খাবারের মধ্যেই অনেক এমন কিছু আছে যার মধ্যে এই ভিটামিন টি পাওয়া যাই, তাই আজ আমরা সেই সব খাবার গুলি নিয়ে আলোচনা করবো।
সুচিপত্র
১. পেয়ারা
পেয়ারা হলো এমন একটি ফল যা প্রায় সারা বছর এই পাওয়া যাই আর এর গুনাগুন খুব বেশি, একটি পেয়ারার মধ্যে প্রায় 370 মিলিগ্রাম মতো ভিটামিন সি পাওয়া যাই, শুধু যে ভিটামিন C পাওয়া যাই তা নয়, পেয়ার মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ আমাদের রক্তচাপ কেউ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কেউ অনেক গুন্ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
২. ক্যাপসিকাম
ক্যাপসিকাম কে যে শুধু লংকার পর্যায় ফেলা যাই তা কিন্তু একদমই নয়, এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই লাভদায়ক একটি সবজি, ক্যাপসিকাম শুধু যে সবুজ বর্ণের হয় তা নয় এটি লাল হলুদ রঙেরও বাজারে পাওয়া যাই।
আপনি এই ক্যাপসিকাম কে প্রতিদিন খাবারে রাখতে পারেন, এর থেকে আপনার ভিটামিন C এর চাহিদা গুলি পূরণ হবে, এছাড়াও সবুজ ক্যাপসিকামে লুইটেন নামক একটি পুষ্টিগুণ থাকে যা আপনি দৃষ্টিশক্তি কে ভীষণ ভাবে ভালো রাখে সাহায্য করে।
৩. টমেটো
টমেটো হলো এমন একটি ফল বা সবজি যাকে আপনি ফল ভাবে কাঁচাও খেতে পারবেন আবার সবজি হিসেবে রান্না করেও খেতে পারবেন, টমেটো খাই না এমন মানুষ জন কমই আছে, তবে টমেটোর জুস খাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল।
পুষ্টিবিদরা বলে থাকে এক গ্লাস টমেটো জুস এ রয়েছে 120 মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আবহ এছাড়াও এই টমেটো তে আছে বিটা ক্যারোটিনের ভান্ডার যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরি, তাই কাঁচা টমেটো বা টমেটোর জুস খাওয়া চেষ্টা করুন যাতে আপনার শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়।
৪. স্ট্রবেরি
লাল লাল দেখতে ছোট এই ফলটি প্রিয় অনেকেরই, টক মিষ্টি জাতীয় হয় এই ফলটি, স্ট্রবেরি কে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া হয়ে থাকে, শুধু স্ট্রবেরি বা স্ট্রবেরি মিল্কশেক, স্ট্রবেরি জ্যাম, স্ট্রবেরি আইসক্রিম ইত্যাদি। স্ট্রবেরি আন্টিঅক্সসিডেন্ট এবং ভিটামিনে ভরপুর, ভিটামিন C যা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, শরীরকে টক্সিক ফ্রি রাখে এবং তারই সাথে সাথে স্ট্রবেরির গুনাগুন আমাদের হার্টের সাস্থ কেউ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫. ড্রামস্টিক (সজনে পাতা এবং ডাঁটা)
যারা গ্রামে বসবাস করেন তারা নিশ্চই তাদের আসে পাশে এই সজনে গাছ কে দেখে থাকবেন, বসন্ত কালে এমন বাড়ি কমই আছে যেখানে এই সজনে ডাঁটা দিয়ে রান্না হয় না, জানলে অবাক হতে হয় যে প্রতি গ্রাম সজনে পাতা তে একটি কমলা লেবুর থেকে প্রায় সাত গুন্ বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যাই এটি রক্তস্বল্পতার সাথে সাথে আরো যেসব ভিটামিনে ঘাটতি থাকে শরীরে সেগুলি কে নিরাময় করতে কার্যকরী।
৬. পাকা পেঁপে
বাড়িতে রান্নাঘরে পেঁপে থাকবে না এটা হয়তো ভাবা মুশকিল, সবাড়ির ঘরেই প্রায় কাঁচা পেঁপের সবজি বানানো হয়ে থাকে, কিন্তু আপনি যদি ভিটামিন C কে সুম্পূর্ণ ভাবে নিতে চান তাহলে আপনি কিন্তু কাঁচা পেঁপে বা সেটি কে রান্না করে একদমই খেতে পারবেন না।
পেঁপে কে একদম পাকা অবস্থায় খেতে হবে যখন এই পেঁপে সবজি থেকে ফলে রুপান্তিরিত হয়, পাকা পেঁপে তে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যাই, একটি পেঁপেতে প্রায় 90 মিলিগ্রাম মতো ভিটামিন C থাকে, এছাড়াও পেঁপে খেলে আরো অনেক উপকার পাই আমাদের শরীর তাই আপনি আপনার লিস্টে এই পেঁপে কে রাখতেই পারেন।
• 5 টি সেরা কাঁচা পেঁপের উপকারিতা যা আপনাকে ওষুধ থেকে দূরে রাখবে
৭. আনারস
আনারস এই ফলটি অনেকেরই খুবই প্রিয় একটি ফল, এই ফলটির মধ্যে অনেক গুনগুন থাকার পাশাপাশি এটিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন C থাকার জন্য ভাইরাসের কারণে অনেক সময় ঠান্ডা এবং সর্দি লেগে যাই সেটি কে সারাতে এই আনারসের খুব বোরো একটি অবদান। এছাড়াও নাক দিয়ে বারবার জল পড়া, গলা ব্যাথা, এবং ব্রংকাইটিসের জন্য আপনি এই আনারসের জুইস খেতে পারেন।
৮. আমলা
ভিটামিন C এর একটি বোরো উৎস হলো এই আমলা, আমলা তে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যাই, এটি ঠান্ডা সর্দি, কাশি পরিরোধে খুব ভালো কাজে দেয়, এছাড়া আমলার মধ্যে থাকে গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর উপাদান যা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তুলতে অনেক কার্যকরী।
৯. ব্রকোলি
ফুলকপির মতো দেখতে এই সবুজ রঙের ব্রকোলি অনেকেই খেয়ে থাকেন তবে এর গুনাগুন জানলে হয়তো রোজ ই পটে রাখতে চাইবেন এই ব্রকোলি কে, এই সবজি তীর একাধিক গুণাবলী রয়েছে যা আমাদের শরীরের খুবই উপকারী। একটি ব্রকোলি তে রয়েছে প্রায় 90 মিলিগ্রাম মতো ভিটামিন C এর উৎস, এটি রোগ প্রতিরোধকের ক্ষমতা বাড়াতে খুবই কার্যকরী।
১০. লেবু
কমলা লেবু বা পাতি লেবু আমাদের প্রায় সবাড়ির ঘরে ঘরে, কমলা লেবু বেশির ভাগ সময় শীত কালেই ভালো পাওয়া যাই এবং পাতি লেবু তো সারাবছর এই থাকে, আমরা জানি যে ভিটামিন সি এর চাহিদা পড়ুন করতে লেবুর কত বোরো হাত, তাই রোজ ভাতে একটু করে লেবুর রস রাখতে পারেন, বা লেবুর শরবত এই সব খেতেই পারেন।
উপরে অনেক গুলি এমন খাবার আছে যেগুলি আপনার ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে, তবে এগুলো ছাড়াও আপনি আরো অনেক জিনিস থেকে ভিটামিন সি পেতে পারেন যেমন লাউশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, আলু, করলা, বাঁধাকপি, আম, ও সবেও আপনি ভিটামিন C পেয়ে যাবেন।.
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমেই আমরা জানলাম যে ভিটামিন C আমাদের শরীরে কিভাবে কাজে লাগে এবং ভিটামিন C আছে এমন কি কি খাবার হতে পারে . তারপর এমন কিছু ফল এবং সবজির ব্যাপারে জেনে নিলাম যার ভেতরে ভিটামিন C এর পরিমান পাওয়া যাই।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি ভিটামিন সি নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া ভিটামিন C আমাদের শরীরে কিভাবে কাজ করে বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টিম