আমাদের নিত্যদিনে খাবারে রসুন ব্যবহার হয় না এমন কিছু পাওয়া মুশকিল, রান্নাতে স্বাদ বারাতে মসলা হিসেবে এই রসুনকে আমরা ব্যবহার করে থাকি, এটি শুধু মসলাই নয়, এটি ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবেও অনেক বিখ্যাত এবং এই রসুনের উপকারিতা আমাদের শরীরে ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে। জানলে অবাক হতে হয় যে এই রসুনের ও একটি দিন পালিত হয়ে থাকে, সারা বিশ্বজুরে ১৯ সে এপ্রিল গার্লিক ডে হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। এবং সবথেকে বেশি রসুন এর উদপাদন হয়ে থাকে চাইনা তে প্রায় ৬৬% মতো , তার জন্য চাইনিস খাবারেও সবথেকে বেশি এই রসুন এর ব্যবহার হয়ে থাকে।
রসুনের উপকারিতা
আমরা জানি যে মসলা হিসেবে রসুন ব্যবহার হয়ে থাকে কিন্তু এছাড়াও বিভিন্ন রকমের বিভিন্ন স্বাদের মুখরোচক খাবার এবং নানা ধরণের আচার থেকে শুরু করে, রান্নার প্রায় সর্বত্রই রসুন রয়েছেই। খাবারের পাশাপাশি এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ তাই পুষ্টিবিদরা রসুনকে সুপার ফুড ও বলে থাকে। রসুনের মধ্যে পাওয়া যাই ভিটামিন বি৬, সালফার, নায়াসিন, থায়ামিন, সেলেনিয়াম, রিবোফ্লোবিন, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং কম্পাউণ্ড এর মতো বিশেষ পুষ্টিগুণ।
রসুন একটি ভেষজ উদ্ভিদ হওয়ায় এর উপকারিতাও অনেক, তাই আজ বঙ্গজ্ঞান নিয়ে এসেছে আজকের এই পোস্টটি, যেখান থেকে আমরা আজ জন্য যে রসুনের উপকারিতা কি কি, এবং এটি আমাদের শরীরে কিভাবে কাজে লাগে তাহলে চলুন আজকের এই পোস্টটি শুরু করা যাক।
সুচিপত্র
মানব শরীরে রসুনের উপকারিতা
- রসুনে থাকা ভিটামিন৬ খুবই ভালো একটি ভিটামিন, এটি আমাদের মস্তিষ্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এটি ডিপ্রেশন থেকে মোকাবিলা করে, অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে, এবং মন খারাপ বা উদাসী ভাব এগুলো কে সরিয়ে তুলতেও বিশেষ ভাবে কার্যকরী।
- রসুন শরীরে কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে খুবই সাহায্য করে, এটি দেহে খারাপ কোলেস্টরল কে কমাতে এবং ভালো কোলেস্টরল কে বাড়াতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত আপনি যদি রসুন খান তাহলে হার্ট এর রোগ, বা স্ট্রোক এবং হার্ট আটকের ঝুঁকি ও অনেক খানি কমে যাবে।
- রসুন একটি আন্টিএক্সসিডেন্ট এর উপাদান, যা আমাদের দেহের মধ্যে অনেক ক্ষতিকর পদার্থ থাকে যা বের করে দিতে সাহায্য করে এবং এছাড়াও, শরীরকে টক্সিন ফ্রি রাখে। এই আন্টিঅক্সসিডেন্ট আমাদের শরীরে পৌছিয়ে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কে দশ গুন্ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়, ফলে আমাদের ইমিউনিটি পাওয়ার আরো স্ট্রং হয়।
- রসুনের উপকারিতা এত তাই বেশি যে এটি আয়োর্বেদের ওষুধ হিসেবে গণ্য করা রয়েছে, কারণ এটি মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলতে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের মধ্যে এমন কিছু অংশ আছে যা সময় এবং বয়েসের সাথে সাথে সেই জায়গা গুলি সংকুচিত হতে থাকে, ফলে ধীরে ধীরে অনেক জিনিস ভুলে যাওয়া, মনে রাখতে না পাড়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই আপনি যদি কাঁচা রসুন রোজ একটি করেও খেতে পারেন তাহলে আপনার মস্তিষ্কের ওই সমস্ত কোষ গুলি কে এক্টিভ রাখতে সাহায্য করবে এবং আপনার আর স্মৃতি হারানোর ভয় ও আর থাকবে না।
- ক্যান্সার কে ধ্বংস করতেও রসুনের উপকারিতা জুড়ি মেলা ভার, রসুনে থাকে সেলেনিয়াম এর মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের শরীরে ক্যান্সার তৈরী করার ক্ষতিকর কোষ গুলি ধ্বংস করতে একটি বোরো ভূমিকা রাখে।
- রসুনের মধ্যে আন্টি ফাংগাল এবং আন্টি ব্যাকটেরিয়া এর মতো উপাদান পাওয়া যাই যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ সংক্রামণের হাত থেকে রেহাই দেয়।
- রসুন খেলে আমাদের হজম ক্ষমতা খুবই উন্নত হয়, তাই যে কোনো কাবার ও খুব তাড়াতড়ি হজম ও হয়ে যাই।
- রসুনে প্রায় ১৭ মাত্রায় অ্যামিনো এসিড থাকে, এই অ্যামিনো এসিডের গুনাগুন হলো যে এটি শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ প্রজ্ঞ কে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে থাকে।
রসুনের অপকারিতা
- যদি আপনার রসুনে কোনো রকম এলার্জি থাকে তবে একদম রসুন খাবেন না, এতে আরো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
- রসুন খেলে যদি বুকে বেথা, জ্বালাপোড়া, হয় তাহলে সাথে সাথে রসুন খাওয়া বন্ধ করুন।
- গর্ভঅবস্থায় রসুন খাওয়ার আগে অবসসই একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই খান।
- অতিরিক্ত কোনো জিনিস ই খাওয়া ভালো নয় তাই রসুন ও অতিরিক্ত খাবেন না।
রসুন খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- আমরা জানি যে রসুনের তৈরী বিভিন্ন রান্নার উপাদেয় পদ আছে তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে যে এই রসুন কে খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি কি হতে পারে সেখান থেকে আমরা এর গুনাগুন সঠিক ভাবে পাবো ,
- সবথেকে ভালো হয় যদি আপনি এটি কে কাঁচা অবস্থা তাই খেতে পারেন, সকালে খালি পেটে একটি মাত্র রসুন চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে, যদি খেতে খুব খারাপ লাগে তাহলে এক চামচ মধু সহযোগে আপনি এটি খেতেই পারেন।
- কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে সব থেকে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যাই, যদি আপনি রান্না করে খান তবে তার সবটা পুষ্টিগুণ হয়তো পাবেন না কারণ বেশি ক্ষণ সেদ্ধ হবার জন্য তার অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যাই।
- আপনি চাইলে অল্প ভেজে শাক দিয়েও রসুন খেতে পারেন, এবং গোটা গোটা রসুনের আচার হয়ে থাকে সেগুলো ও খাওয়া হয়ে থাকে।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমেই আমরা জানলাম যে রসুনের উপকারিতা কিভাবে আমাদের শরীরে কাজে লাগে এবং রসুন খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি কি হতে পারে, তারপর রসুনের উপকারিতা সাথে সাথে কিছু অপকারিতা দিক গুলি নিয়েও আলোচনা করা হলো।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি রসুনের উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া রসুনের উপকারিতা আমাদের শরীরে কিভাবে কাজ করে বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টিম