ড্রপশিপিং বিজনেস কি ? ড্রপশিপিং বিজনেস কিভাবে শুরু করবো ?

4.6/5 - (7 votes)

আজকাল অনলাইন শপিং তো কম বেশি সবাই করে ,  এবং কখনো না কখনো আমাদের এটা প্রয়োজন ও হয়ে পরে যেমন ২০২০ তে যখন সরকার থেকে প্রথম লকডাউন ঘোষণা করা হলো তখন তো বেশিরভাগ মানুষ ঘরে বসে তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস অনলাইনে অর্ডার করছিলো এমনকি শাকসবজি ও মাছ মাংস পর্যন্ত , আর অনলাইন শপিং এবং এই ড্রপশিপিং একে ওপরের সাথে জড়িত । 

আজকের আমাদের এই পোস্টে আমরা আপনাদের বলবো এই ড্রপশিপিং বা ড্রপশিপিং বিজনেস কি ? তার সাথে আপনি কিভাবে নিজের ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করবেন ।

 

ড্রপশিপিং বিজনেস কি 

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ভাবে যখন আপনারা কোনো অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে কোনো জিনিস অর্ডার করেন তখন ওই অনলাইন কোম্পানি যেমন ফ্লিপকার্ট , আমাজন , ebay বা অন্যান্য কোনো কোম্পানি নিজেদের কাছে আগে দিয়ে সেই জিনিস টি কিনে রাখে , কিন্তু ব্যাপার টা এরম নয় ।

যখন আপনি কোনো জিনিস অর্ডার করেন তখন এই অনলাইন ওয়েবসাইট গুলি তাদের সাথে অ্যাসোসিয়েট সেলার বা হোলসেলার বা রিটেলার দের সেই অর্ডার টি পাঠিয়ে দেয় , এরপর সেই সেলার , হোলসেলার বা রিটেলার অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া অর্ডার কে আপনার দেওয়া ঠিকানাতে ডেলিভারি করে ।

এই যে তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ যে অনলাইন ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত রয়েছে একে ড্রপশিপার বলা হয় ,  আর এটাই হলো ড্রপশিপিং বিজনেস ।

ড্রপশিপিং ব্যবসাতে যে কোনো ব্যক্তি কোনো প্রোডাক্ট না কিনে বেশি টাকায় প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারে আর অনেক বেশি মুনাফা বা প্রফিট করতে পারে ।

 

   » এফিলিয়েট মার্কেটিং কি ? কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবো ?

 

ড্রপশিপিং বিজনেস কিভাবে কাজ করে ?

অনলাইনের মাধ্যমে হওয়া এই ড্রপশিপিং ব্যবসায় প্রোডাক্টের কোনো তালিকা বা ইনভেন্টরি রাখা কিংবা কোনোরকম প্রোডাক্ট কেনা এবং সেগুলো রাখার জন্য গুদাম ঘর বা স্টোর রুম এরও প্রয়োজন হয়না , এছাড়া ড্রপশিপিং ব্যবসায় অর্ডার করা প্রোডাক্ট গুলি ক্রেতা বা কাস্টমার দের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্বও অনলাইন ওয়েবসাইট ও ড্রপশিপিং বিজনেসম্যান দের থাকে না । সাধারণত এই কাজ সেই সেলার , হোলসেলার বা রিটেলার দের হয়ে থাকে ।

কোনো অনলাইন ওয়েবসাইট ( যেমন ফ্লিপকার্ট , আমাজন , myntra ) তার ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রোডাক্ট এর মালিক বা owner নয় , এই ওয়েবসাইট সাধারণত প্রোডাক্ট গুলিকে প্রদর্শন বা ডিসপ্লে এর জন্য রাখে এবং তাদের সাথে যুক্ত থাকা সেলার বা হোলসেলার বা রিটেলার এর সাথে যৌথ বন্ধন বা টাই আপ করা থাকে । 

অনলাইন ওয়েবসাইট সেই সেলার বা হোলসেলার দের তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে দেয়, ফলে সেলার বা বিক্রেতাদের বিক্রি অনেকটা বেড়ে যায় এবং ড্রপশিপিং দের সাথে অনেক দোকানদার প্রোডাক্ট উৎপাদনকারী কোম্পানির ওয়েবসাইট এর সাথে পরিচয় ও হয়ে যায় । আর এর থেকে ড্রপশিপিং এবং অনলাইন ওয়েবসাইটের অনেক বড়ো পরিমান প্রোডাক্ট বিক্রি করে ভালো টাকা মুনাফা বা প্রফিট হয়ে থাকে । 

ড্রপশিপিং বিজনেস এর মাধ্যমে কিভাবে ইনকাম করা যায় ?

ড্রপশিপিং এর মাধ্যমে যে প্রোডাক্ট টি গ্রাহক বা কাস্টমার কেনে সেই প্রোডাক্ট থেকে আপনাকে নিজের মুনাফা বের করতে হবে , অর্থাৎ কোনো প্রোডাক্ট এর দাম ১০০ টাকা আপনি সেই প্রোডাক্ট টিকে ১২০ টাকায় বিক্রি করলেন , আর এই ২০ টাকা আপনার মুনাফা হয় ।

এই জন্য আপনি যে প্রোডাক্ট টি অনলাইন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করছেন সেটির পাইকারি বা হোলসেল দাম ও সেলিং বা বিক্রির দাম এর থেকে বেশ কিছুটা কম হওয়া দরকার , এর ফলে অধিক কাস্টমার ওয়েবসাইটে আসবে এবং প্রোডাক্ট কিনবে , এতে আপনার প্রফিট বা ইনকাম ও বাড়বে ।

আমরা সকলে জানি যে কোনো প্রোডাক্ট এর ট্যাগ এ লেখা দাম বা MRP ( Maximum retail price) প্রোডাক্ট টির সমস্ত উৎপাদন খরচ এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে । এছাড়া কিছু কোম্পানি তাদের প্রোডাক্টের পাইকারি দাম এর মধ্যে shipping charge জুড়ে নেয় , আবার অনেক কোম্পানি shipping charge আলাদা করে নেয় যেটা ড্রপশিপিং দের নিজের মুনাফার অংশ থেকে দিতে হয় । এই জন্য বেশিরভাগ কোম্পানি প্রোডাক্টের দামের সাথে shipping charge যোগ করে দেয় যাতে মুনাফার পরিমান কম না হয় ।

কিভাবে ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করবো ?

আপনি যদি আপনার ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করতে চান তাহলে একজন ড্রপশিপিং সাপ্লায়ার এর দরকার হবে , কারণ যে কোনো বিজনেস চলে প্রোডাক্টের চাহিদা ও সরবরাহ এর উপর নির্ভর করে । যার প্রোডাক্ট আপনি আপনার অনলাইন ওয়েবসাইটে বিক্রি করবেন তাকে   ড্রপশিপার সাপ্লায়ার বলা হয় । 

ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করার জন্য আপনি আপনার একটা অনলাইন ওয়েবসাইটও বানাতে পারেন বা অনলাইন ওয়েবসাইট ও ড্রপশিপিং সাপ্লায়ার মাঝে থেকেও কাজ করতে পারেন । সবচেয়ে প্রথমে আপনি যে প্রোডাক্ট টা বিক্রি করবেন সেটা আপনাকে বেছে নিতে হবে তারপরে সেই প্রোডাক্ট টিকে ড্রপশিপার সাপ্লায়ার এর কাছে থেকে আনতে হবে ,  এরপর আপনার পছন্দ করা প্রোডাক্টির সাপ্লায়ার এর সাথে  যে সেই প্রোডাক্টের দাম কত হবে , সেই প্রোডাক্ট টি কাস্টমার অর্ডার করলে সেটা কতদিনের মধ্যে কাস্টমারের কাছে ডেলিভারি করা হবে ইত্যাদি ।

এরপর ড্রপশিপার সাপ্লায়ার এর সাথে চুক্তি হওয়ার পর আপনাকে অর্থাৎ ড্রপশিপিং বিজনেস করা ব্যক্তিকে নিজের প্রোডাক্ট গুলিকে অনলাইনে বিক্রি করার অনুমতি দেয় , এবং তারপর আপনি সেই প্রোডাক্টের ছবি ওয়েবসাইটে লাগিয়ে সেই প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারেন ।

এরপর যখন কোনো প্রোডাক্টের অর্ডার আসবে তখন সেই অর্ডার আপনি আপনার ড্রপশিপার সাপ্লায়ার কে পাঠিয়ে দেবেন , তারপর সেই প্রোডাক্ট টি ড্রপ শিপার সেই কাস্টমার এর কাছে পৌঁছে দেবে ।

দ্রষ্টব্যঃ অনেকসময় কিছু ড্রপশিপার কাস্টমার দের খারাপ প্রোডাক্ট ডেলিভারি করে এতে আপনার ওয়েবসাইটের বদনাম হতে পারে , তাই আপনাকে ভাবনা চিন্তা করে ড্রপশিপার ঠিক করতে হবে , যে ড্রপ শিপার ভালো মানের প্রোডাক্ট কাস্টমার কে ডেলিভারি করবে । আপনারা অনেকেই হয়তো দেখেছেন অনলাইনে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে যে মোবাইল অর্ডার করা হয়েছিল কিন্তু সাবান বা ইটের টুকরো চলে এসেছে ,  ফলে আপনার সুনাম ও খ্যাতি নষ্ট হতে পারে ।

যদি আপনি নিজের একটা ওয়েবসাইট খুলে ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করতে চান তাহলে প্রথমে আপনি নির্বাচন করুন যে আপনার ওয়েবসাইটে কি ধরণের প্রোডাক্ট সেল করবেন , কিংবা আপনি মার্কেট রিসার্চ করতে পারেন যে কি ধরণের প্রোডাক্ট মানুষ বেশি কেনাকাটি করছে ।

যেমন মোবাইল, খেলার সরঞ্জাম বা স্পোর্টস গুডস , বই বা বুক।  ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসপত্র , কসমেটিক্স জিনিস , কাপড় জামা , জুয়েলারি ,  ফার্নিচার ইত্যাদি আরও অনেক কিছু আপনার ওয়েবসাইটে আপনি দিতে পারেন ,  আর এর জন্য আপনার একজন ড্রপশিপার এর প্রয়োজন হবে যে কিনা আপনাকে লোকাল মার্কেটের থেকে কম দামে প্রোডাক্ট দেবে ।

» তাই ড্রপ শিপার ঠিক করার আগে এবং ড্রপসিপিং বিজনেস শুরু করার জন্য আপনাকে বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে ।

• ড্রপশিপার যাচাই 

ড্রপ শিপার সাপ্লায়ার সার্টিফাইড কিনা এবং প্রোডাক্ট টি আপনি নিজে পরীক্ষা বা ইন্সপেকশন করে দেখতে পারেন যাতে আপনার কাস্টমার দের ভালো মানের প্রোডাক্ট ডেলিভারি পায় । সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি একজন ড্রপশিপার এর উপর নির্ভর না থেকে আপনি বিভিন্ন ড্রপশিপার এর সাথে যুক্ত হতে পারেন , ফলে আপনি বিভিন্ন ড্রপ শিপার এর প্রোডাক্ট এর মধ্যে তুলনা বা compare করতে পারবেন যে কার প্রোডাক্ট বেশি ভালো এবং কার কাছে কতটা কম দামে প্রোডাক্ট টি পাওয়া যাচ্ছে । 

• কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন ও আইনি কাগজ পত্র 

ড্রপশিপিং বিজনেস করার জন্য আপনি sole Proprietorship কোম্পানি , LLP ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে শুরু করতে পারেন , এর সাথে যে কোনো ব্যবসা শুরু করতে গেলে একটি ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়ে থাকে , তাই আপনি নিজের ড্রপশিপিং বিজনেসে ট্রেড লাইসেন্স বানিয়ে নিন , যদি আপনি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন , ট্রেড লাইসেন্স ও আরও বিভিন্ন আইনি ব্যাপার সম্বন্ধে অতটা জ্ঞান না রাখেন তাহলে আপনি কোনো CA (Chartered Accountant ) বা ট্যাক্স কনসালটেন্ট এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ।

• সহজ রিটার্ন পলিসি 

অনেকসময়  এমন টা হয় যে কাস্টমার অর্ডার করা প্রোডাক্ট ডেলিভারি পাবার পর সেই প্রোডাক্ট পছন্দ হয় না কোনো কারণ বশত , তখন সেক্ষত্রে সেই কাস্টমার প্রোডাক্ট টি  ফেরত বা রিটার্ন করতে চায় । তাই আপনার ড্রপশিপার কোম্পানির রিটার্ন পলিসি ভালো এবং অনেক সহজ হওয়া দরকার , যাতে কোনো প্রোডাক্ট ফেরত হওয়ার সময় আপনার এবং আপনার কাস্টমারের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় । 

 

ড্রপশিপিং বিজনেস এর সুবিধা

» যে কোনো অন্যান্য ব্যবসার থেকে ড্রপশিপিং বিজনেস করাটা বেশ সহজ , আর ড্রপশিপিং বিজনেস করার জন্য কোনো রকমের বিশেষ কোনো দক্ষতা ও পড়াশোনার প্রয়োজন নেই , তবে একটু বুদ্ধি ও পরিশ্রম দিয়ে ড্রপশিপিং বিজনেস খুব সহজে করা যায় । 

» ড্রপ শিপিং বিজনেস শুরু করতে খুব বেশি বিনিয়োগ বা ইনভেস্টমেন্টের প্রয়োজন নেই , তাই যারা কম ইনভেস্টমেন্টের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে চায় তাদের জন্য ড্রপশিপিং বিজনেস একটি দারুন ব্যবসার বিকল্প হতে পারে । এই বিজনেস শুরু করার জন্য শুধু মাত্র আপনাকে একটা ওয়েবসাইট বানানোর মতো খরচ করতে হবে।

» এই ব্যবসায় ঝুঁকিও অনেক কম ,আর এই ব্যবসা করতে হলে আপনাকে কোনো রিটেলার ,  হোলসেলার বা ম্যানুফ্যাকচারার এর সাথে একটি চুক্তি করতে হয় । আর তাদের বানানো প্রোডাক্ট তাদের কাছে না কিনে বিক্রি করতে হয় , তাই যদি আপনার এই ব্যবসা কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায় তখন সেই পরিস্থিতিতে আপনার খুব বেশি ক্ষতি হবে না।

» আপনি চাইলে এই ব্যবসা একা শুরু করতে পারেন , কারণ এই ড্রপশিপিং বিজনেস এমন একটি ব্যবসা যার মধ্যে কোনো কর্মচারী বা লেবার এর প্রয়োজন হবে না যার কারণে আপনার খরচ অনেকাংশে কমে যাবে।

» এই ড্রপ শিপিং বিজনেস কে দুই ভাবে করা যেতে পারে , প্রথমত আপনি আপনার নিজের একটা ওয়েবসাইট বানিয়ে শুরু করতে পারেন , এবং দ্বিতীয়ত আপনি কোনো অনলাইন ওয়েবসাইট যেমন আমাজন ও eBay এর মতো ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবসা করতে পারেন।

একনজরে : আজকে  আমরা  কি কি  জানতে পারলাম ?

ড্রপ শিপিং  বিজনেস কি ? এটি কিভাবে কাজ করে ? কিভাবে আপনি এই ব্যবসা  শুরু করতে পারবেন এবং এই ব্যবসা শুরু করা আগে  কোন কোন জিনিস গুলো মাথায় রাখতে হবে ? এই ব্যবসা থেকে আপনি কিভাবে ইনকাম করতে পারবেন ?  ড্রপ শিপিং বিজনেসের সুবিধা কি কি ?

আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা নিজের একটা সফল ব্যবসা শুরু করতে চান , তারা যদি মনে করে তাহলে এই ড্রপ শিপিং এর ব্যবসা শুরু করতে পারে খুব অল্প বিনিয়োগে , আর ব্যবসা শুরু করার জন্য যাবতীয় তথ্য আমরা আলোচনা করেছি আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে। এছাড়া ড্রপশিপিং সম্বন্ধে যদি আরও কিছু জানার থাকে , তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর আমাদের আজকের এই পোস্ট ভালো লাগলে অতি অবশ্যই আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করবেন।

ধন্যবাদ

বঙ্গজ্ঞান টীম    

শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

6 thoughts on “ড্রপশিপিং বিজনেস কি ? ড্রপশিপিং বিজনেস কিভাবে শুরু করবো ?”

Leave a Comment