জানতে চান ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা কী ? এবং 2021 এ কিভাবে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা শুরু করবেন ?

3.7/5 - (3 votes)

বড়োলোক বা ধনীব্যক্তি হবার স্বপ্ন তো সকলেই দেখে থাকেন , কিন্তু শুধু ভাবলে বা স্বপ্ন দেখলে কেউ বড়োলোক বা ধনীব্যক্তি হয়ে যায় না । নিজের জীবনের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য তো অনেকে চাকরি করে থাকেন কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ব্যবসা করা দরকার । বিশ্বে যত ধনী মানুষ রয়েছেন যারা রাজকীয় ভাবে থাকেন তারা সবাই কিন্তু একজন ব্যবসায়ী ।

ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা নিয়ে কিছু মানুষের মধ্যে একটা কথা খুব শোনা যায় যে ব্যবসা শুধু ধনী ব্যক্তিরা করতে পারে এবং ব্যবসা করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন । আসলে কিন্তু এরম কোনো ব্যাপার নেই । আম্বানি , টাটা, বিড়লা , আদানী অথবা বিশ্বে যে কোনো সফল ব্যাবসায়ীদের কে দেখুন। তারা সকলে প্রথমে অনেক ছোট ভাবে নিজেদের ব্যবসাকে শুরু করেছিল কিন্তু আজ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন এ ব্যবসা করছে ।

 

সুচিপত্র

**আজকের এই পোস্ট এর মাধম্যে আমরা আপনাদের সাথে ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা এর সম্বন্ধে যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় গুলি নিয়ে আলোচনা করবো ।

 

•ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা বা উৎপাদন ব্যবসা কাকে বলে ?

ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা  বা উৎপাদন ব্যবসা হলো এমন একটি ব্যবসা যেখানে কিছু শ্রমিক ও কিছু মেশিন এর দ্বারা বিভিন্ন কাঁচামাল ও নানা উপাদান কে সাজিয়ে বা একত্র করে প্রোডাক্ট বা পণ্য সামগ্রী তৈরী করা হয় । উৎপাদিত প্রোডাক্ট বা পণ্যটি বাজার এ কাস্টমার দের কাছে পৌঁছানো হয় । আমরা সবাই যা কিছুই ব্যবহার করি সব গুলোই কোথাও না কোথাও উৎপাদন করা হয় ।

ভারত তথা গোটা বিশ্বে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন ব্যবসা অনেক দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে । ২০২৬ এর মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসার দিকে ভারত অনেক এগিয়ে যাবে অন্যান্য দেশের তুলনায় ।

 

» কম ইনভেস্টমেন্ট এ ব্যবসা শুরু করতে চান ? তাহলে এখানে ক্লিক করুন 

 

•ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা বা উৎপাদন ব্যবসা কিভাবে শুরু করবো ?

অন্য সব ব্যবসার থেকে একটু আলাদা এই ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা , তাই ব্যবসা শুরু করা থেকে প্রোডাক্ট বিক্রি পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে আপনাকে একটু আলাদা ভাবে ভাবতেও হবে এই ব্যবসার জন্য । কারণ এই ব্যাবসায়ে আপনি একটা প্রোডাক্ট নিজে তৈরী করে  সেটা বাজার এ সরবরাহ করবেন। তাই ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা শুরু করার জন্য বেশ কয়েকটি স্টেপ মেনে চলতে হবে।

চলুন তাহলে স্টেপ গুলি দেখে নেওয়া যাক

 

১.ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার কোন কোন জিনিস এর প্রয়োজন

কারণ অন্য সব ব্যবসার মতো এই ব্যবসাতে ও ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন যাতে আপনি আপনার ব্যবসার জন্য কাঁচা মাল ও মেশিন পত্র এর ব্যবস্থা করতে পারেন । তার সাথে একটু ব্যবসার পরিকল্পনা করতে হবে যেমন আপনার প্রোডাক্ট বা পণ্যের চাহিদা , ব্যবসা সেটআপ এর জন্য খরচ ,ব্যাবসায় বিনিয়োগ করা মূলধন , বাজার এ প্রতিযোগিতা ,আপনার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ,ব্যবসার লোকেশন বা অবস্থান ,নিয়মকানুন ইত্যাদি। আপনার ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন এর জন্য এবং লাইসেন্স এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার এর কাছে আবেদন করতে হবে ।

 

২.আপনাকে সঠিক প্রোডাক্ট এর বিকল্প বেছে নিতে হবে

অন্য সব ব্যবসার মতো ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসায় আপনাকে সঠিক প্রোডাক্ট বেছে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি । তাই আপনার ব্যবসার জন্য এমন একটা প্রোডাক্ট পছন্দ করুন যেটা সম্বন্ধে আপনার খুব ভালো অভিজ্ঞতা আছে এবং তার সাথে সেই প্রোডাক্ট এর ভবিষৎ চাহিদাও ভালো , সেটা অটোমোবাইল পার্টস এর ব্যবসা হোক অথবা পানীয় জল এর ব্যবসা কিংবা বডি ফিটনেস এর মেশিন পত্র।ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসার জন্য আপনাকে সঠিক মেশিন ও প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে ।

 

৩.বাজার গবেষণা বা মার্কেট রিসার্চ করুন

শুধু ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসাতে নয় প্রতিটি সফল ব্যবসায়ে কিছুটা বাজার গবেষণা করা গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ । কারণ বাজার গবেষণা বা রিসার্চ না করলে আপনি বুঝবেন কিভাবে যে বাজারে কি প্রয়োজন , বাজার কোন প্রোডাক্ট এর চাহিদা কিরকম , কোন প্রোডাক্ট এর প্রতিযোগিতা বেশি বা কম , গ্রাহক বা কাস্টমার দের পছন্দ ইত্যাদি ।
এছাড়া বাজার গবেষণা বা রিসার্চ এর মধ্যে দিয়ে আপনি এটাও জানতে পারবেন যে অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসায়ীরা কিভাবে কাজ করছে , তারা কোথায় এবং কিভাবে তাদের ব্যবসায়ের বিজ্ঞাপন করছেন , এবং সেই ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসায়ীরা কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন (আপনি চাইলে সেই সব সমস্যা গুলি এড়াতে পারেন) । বাজার গবেষণা বা রিসার্চ আপনি যত ভালোভাবে করবেন আপনার ব্যবসা ঠিক ততটাই ভালোভাবে এগোবে ।

 

৪. ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা এর  জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন এর ব্যবস্থা করুন

যে কোনো ব্যবসা শুরু করতে গেলে মূলধন এর প্রয়োজন ঠিক তেমন ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসাতে ও মূলধন প্রয়োজন । মূলধন এর ব্যবস্থা করার আগে আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন যে এই ব্যবসা শুরু করতে আপনার কত টাকা প্রয়োজন ? আপনি কি ইকুইটি বা শেয়ার দেবার জন্য তৈরী ? আপনি আপনার ব্যবসা কে কতটা বড়োভাবে শুরু করতে চান ? আপনার কি একজন ইনভেস্টর বা বিনিয়োগকারীর প্রয়োজন যে আপনার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে ?

 

» পাইকারি ব্যবসা সম্বন্ধে জানতে চান? বুঝতে পারছেন না কিভাবে শুরু করবেন পাইকারি ব্যবসা ? এখানে ক্লিক করুন আর আজই  শুরু করুন আপনার পাইকারি ব্যবসা  

 

এই সব প্রশ্নের উত্তর পাবার পর আপনি আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক মূলধন এর বিকল্প বেছে নিতে পারবেন । বিকল্প গুলি হলো
সরকারী অনুদান এবং আঞ্চলিক এজেন্সি ( Government Grants and regional agencies ) , ব্যাঙ্ক থেকে ব্যবসায়িক ঋণ ( Bank Business loan),স্টার্টআপ লোন (Startup loan) , ব্যাংক জমাতিরিক্ত বা Bank Overdraft , উদ্যোগ মূলধন বা Venture capital । এগুলো হলো আপনার ব্যাবসার মূলধন এর উৎস ।

 

৫. একটা যথাযথ ব্যাবসার পরিকল্পনা তৈরী করুন

একটা দুর্দান্ত ব্যবসার প্ল্যান বা পরিকল্পনা বানাতে হবে যে আপনি কিভাবে আপনার ব্যবসা কে বৃদ্ধি করবেন , কিভাবে বিনিয়োগ করা মূলধন ব্যবসায় ব্যবহার করবেন । এই ব্যাবসার প্ল্যান বা পরিকল্পনা তৈরী করার জন্য আপনি কোনো উপদ্রেষ্টা বা advisor এর সাহায্য নিতে পারেন কারণ একটা সঠিক ব্যবসার প্ল্যান বা পরিকল্পনার উপর আপনার ব্যবসার ভবিষৎ নির্ভর করছে ।

আপনি যদি মূলধন এর জন্য ঋণ নিতে চান তাহলে আপনাকে এই ব্যবসার প্ল্যান বা পরিকল্পনাটি ডকুমেন্ট হিসেবে জমা করতে হবে লোন বা ঋণ সংস্থার কাছে ।

 

৬. ব্যাবসার জন্য একটা ভালো সেটআপ বানিয়ে নিন

আপনার ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা শুরু করার জন্য একটা ভালো সেটআপ তৈরী করতে হবে । জেতার জন্য একটা ভালো জায়গার প্রয়োজন । এর সাথে বিল্ডিং এর ভিতরে ডিসাইন , মেশিন পত্র এর ইনস্টলেশন এইসব ব্যাপার গুলি মাথায় রেখে আপনাকে সেটআপ তৈরী করতে হবে । অবশ্য এটা অনেকটা নির্ভর করবে আপনার প্রোডাক্ট এর উপর। আপনি কি ধরণের প্রোডাক্ট এর উপর ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা করবেন সেই মতো আপনার জায়গা , কাঁচামাল , মেশিন পত্র এর প্রয়োজন হবে ।

যেমন একটা উদাহরণ এর মধ্যে দিয়ে বলি ধরুন আপনি একটা পানীয় জল এর ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা শুরু করবেন , তো আপনাকে দেখতে হবে কোন জায়গায় আপনি কাঁচা মাল মানে জল তা সহজে পেয়ে যাবেন , এরপর সেটাকে পরিশুদ্ধ বা purify করার জন্য মেশিন এর প্রয়োজন । সেই মেশিন টিকে সঠিক জায়গায় বসানো , তারপর পরিশুদ্ধ করার জন্য কিছু শ্রমিক এর ও প্রয়োজন , তারপর সব হয়ে গেলে সেই পানীয় জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা । এইসব ব্যাপার গুলি নিয়ে একটা সেটআপ তৈরী হবে ।

 

৭.আপনার ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা এর জন্য একটি নাম এবং লোগো বানিয়ে ফেলুন

এখন আপনার ব্যবসার জন্য একটা নাম বাছুন , এটা অতন্ত্য জরুরি একটা কাজ কারণ ভবিষৎ এ আপনার প্রোডাক্ট এর ব্র্যান্ড হিসেবে ইটা অনেক কাজে আসবে , তাই ব্যবসার নাম টা সেভাবে রাখবেন যাতে সেটা আপনার প্রোডাক্ট বা পণ্য সম্পর্কিত হয় । আর তার সাথে একটা লোগো , যেটা আপনার ব্যবসার সূচক বা চিহ্ন হিসেবে পরিচিত হবে সবার কাছে ।

 

৮. আপনার ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা তে পণ্য বা প্রোডাক্ট তৈরী শুরু করুন

সব কিছু হয়ে যাওয়ার পর এবার আসল কাজ সেটা হলো আপনার প্রোডাক্ট বা পণ্য বানানো শুরু করুন । প্রথমে অল্প পরিমান পণ্য উৎপাদন করুন তারপর সেটা পরীক্ষা করুন বিশেষজ্ঞ দের দিয়ে , সেই প্রোডাক্ট টাতে সব ঠিকঠাক আছে কিনা, প্রোডাক্ট এর মধ্যে সব ধরণের কাঁচামাল সঠিক অনুপাত এ আছে কিনা , সেটা ব্যবহার এর যোগ্য কিনা ইত্যাদি । সব ঠিক ঠাক থাকলে আপনার প্রোডাক্ট বা পণ্য টিকে বাজারজাত বা বাজার এর বিক্রির জন্য প্রস্তুত করুন ।

 

এই ৮ টি স্টেপ মেনে যদি আপনি ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন তাহলে আশা করি খুব বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না । এরপর এর পোস্ট এ আমরা আলোচনা করবো কিছু ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে , যেগুলো আপনি খুব সহজে শুরু করতে পারেন । বাছাই করা সেরা বেশ কিছু ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবসা বা উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া দেব। এই ৮ টি স্টেপ সম্বন্ধে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে অতি অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ।

ধন্যবাদ

 

বঙ্গজ্ঞান টীম

শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

Leave a Comment