করলা হলো এমন একটি লতানে উদ্ভিদ যা আমাদের প্রায় প্রত্যেক এর ঘরে ঘরে বানানো হয়ে থাকে, এটি তেতো বলে অনেকেই খেতে চাই না কিন্তু করলা খাওয়ার উপকারিতা যদি আমরা জানি তাহলে সত্যিই অবাক হতে হয়। করলা খুবই সহজেই বাজারে পাওয়া যাই তাছাড়াও এটি আপনি বাড়িতেও লাগাতে পারবেন শুধু মাত্র এই সবজির মধ্যে থাকা বীজ ফেলে। করলা কে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া হয়ে থাকে, করলা দিয়ে তরকারি বানিয়ে বা করলা ভাজা, এছাড়াও পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন কেউ যদি নিয়মিত করলার জুস বানিয়ে খেতে পারে তাহলে সেই ব্যাক্তির সাস্থের জন্য খুবই উপকার দেবে, এবং আপনাকে অনেক গুরুতর রোগের হাত থেকে দূরে রাখবে।
করলা খাওয়ার উপকারিতা
পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন করলার মধ্যে নায়াসিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, কপার, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, প্যান্টোথেনিক, ফ্যাট, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এর মতো অনেক উপকারি গুণাবলী আছে।
আমি জানি যে করলা কে বিভিন্ন ভাবে বানিয়ে খাওয়া যাই আমরা অনেকেই করলা ভাজা করে খেতে ভালোবাসি তবে আমরা অনেকেই এটা জানি না যে তেলে করলা কে বেশিক্ষন ভাজলে তার সব পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যাই, এবং তার ফলে সেটা খেলে আমাদের শরীরে আর তেমন উপকারে লাগে না। তাই সব থেকে ভালো হয় যদি আপনি প্রতিদিন করলার জুস করে খেতে পারেন, জুস বানানোর জন্য করলা কে কয়েক টুকরো করে কেটে নিয়ে তার মধ্যে থাকা সব বীজ গুলি বের করে নিয়ে ভালো করে ব্লেন্ডার এ পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে তারপর জল মিশিয়ে সেটা মধু অথবা লেবু দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
সুচিপত্র
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে
যদি আপনি রক্ত শুন্যতাই ভুগছেন তাহলে নিয়ম করে আজ থেকেই করলা খাওয়া শুরু করে দিন, শরীরে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বাড়াতে করলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক ভালো ভাবে লক্ষ করা যাই, তাই আপনার যদি শরীরে হিমোগ্লোবিন কম থাকে তাহলে নিয়মিত ভাবে করলে খান।
এলার্জি বা ভাইরাস থেকে দূরে থাকুন
করলার মধ্যে আছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাংগাল এর মতো উপাদান, আমাদের অনেকে শরীরে মাঝে মাঝে এলার্জি দেখা যাই, চুলকানি, চামড়া ফুলে যাওয়া, রোদে বেরোলে স্কিনে কিছু বেরোনোর মতো সমস্যা এগুলো থেকে যদি বাঁচতে চান, তাহলে রোজ পটে রাখুন এই করলাকে এছাড়াও করলে আমাদের রক্ত কেউ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে ফলে আমাদের এই সব রোগের হাতেও আর পড়তে হয় না।
ওজন কমাতে করলা খাওয়ার উপকারিতা
যদি আপনি আয়নার অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন এবং আপনার খাদ্যের তালিকার এমন কিছু খুজঁছেন যা আমাদের ত্বক ভালো রাখার সাথে সাথে ওজন কমাতেও সাহায্য করবে তাহলে আপনি এই করলাকে চোখ বন্ধ করে রাখতে পারেন। করলে আপনার অতিরিক্ত ফ্যাট বার্ন করতে অনেক সাহায্য করবে, এবং নতুন মেদ আর বাড়তে দেবে না তার সাথে আপনার শরীর এবং ত্বক কেউ খুব ভালো রাখবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করলা খাওয়ার উপকারিতা
সুগার এর রোগী যারা আছেন তাদের জন্য উপযোগী খাদ্য হলো এই করলা, করলার মধ্যে শর্করার পরিমান একেবারেই নেই, এবং শরীরে সুগারের মাত্রা কে বাড়তে দেয় না রোগী কে সুস্থ করে তোলে, তাই আপনি যদি এই রকম ব্যাক্তি হন যার সুগার আছে তাহলে এই করলা খাওয়া আপনি শুরু করতে পারেন।
ব্যাথা থেকে আরাম পেতে করলা খাওয়ার উপকারিতা
বয়েসের সাথে সাথে আমাদের অনেকের পায়ে ব্যাথা, হাঁটু ব্যাথা এবং বাতের ব্যাথা নিয়ে খুবই ভুগে থাকেন, করলার রস খেলে এই বেথা গুলোর থেকে খুবই আরাম পাওয়া যাই।
পেটের সমস্যা কে দূরে রাখে
আয়ুর্বেদের মতে করলাকে কৃমিনাশক, পিত্তনাশক, এবং কফনাশক বলা হয়ে থাকে, এছাড়াও আমাদের লিভারকে ভালো রাখতে খুবই কার্যকরী, যদি জন্ডিস হয় তাহলে তা তাড়াতাড়ি সুস্থ করতে এবং শরীর খারাপের সময় মুখের রুচি ফেরাতে করলা খাওয়ার উপকারিতা খুব ভালো ভাবে পাওয়া যাই।
ক্ষত সরিয়ে তুলতে করলা খাওয়ার উপকারিতা
করলা পুষ্টিগুণের সাথে সাথে এই সবজি কে আয়ুর্বেদেও ব্যাবহার করা হয়ে থাকে ক্ষত স্থান ঠিক করতে, কোথাও কেটে ছড়ে গেলে তার উপরে যদি এই পাতার রস দেওয়া হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এই ক্ষত স্থান টি ঠিক হয়ে যাই এছাড়াও ওই পাতাকে সেদ্ধ করে এই জলটি যদি ক্ষত স্তনে দেওয়া যাই তাহলে সেটিও খুব উপকারী।
ত্বক এবং চুল ভালো রাখতে করলার উপকারিতা
করলার মধ্যে প্রচুর পরিমানে আন্টিঅক্সসিডেন্ট যা আমাদের ত্বক এবং চুল কে সুস্থ রাখে, ত্বকের মধ্যে তরুণত্ব বজায় রাখে, এবং আরো উজ্জ্বল করে তোলে, তাছাড়াও করলা খেলে চুলের সাস্থ ও খুব ভালো রাখে, চুলের গোড়া মুজবুত হয়, এবং আরো সিল্কি হয়ে উঠে।
• চুলের জেল্লা ফিরিয়ে আনতে মেনে চলুন সুম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এই ৭ টি টিপস
রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে করলা খাওয়ার উপকারিতা
করলার মধ্যে থাকা গুণাবলী আপনার ইমনিটি শক্তি কে বাড়িয়ে তোলে এবং আপনাকে সক্রামন রোগ থেকে দূরে রাখে, তাছাড়াও করলা খেলে আমাদের হজম শক্তিও খুব ভালো হয়ে যাই ফলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়, এবং কোষ্টকাঠিন্য মতো রোগ কে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
করলা খাওয়ার পার্শপ্রতিক্রিয়া
করলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি তবে আমাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক হওয়া তাই খুব জরুরি।
- করলা নিয়মিত খাওয়া খুবই ভালো তবে ১ মাস খাওয়ার পর ১০-১৫ দিনের একটা বিরতি নিন তারপর আবার খাওয়া শুরু করতে পারেন।
- কম বয়েসি অর্থাৎ শিশু দের কে এটি আপাতত না দেওয়াই ভালো কারণ তা থেকে পেটে ব্যথা, বমি ইত্যাদির মতো সমস্যা হতে পারে।
- গর্ভবর্তী মহিলা যারা আছেন তারা সেই সময় এই করলা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন আর যদি খেতেই হয় তাহলে অবসসই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই খান।
- অনেকেই ভাবে যে তারা সারাদিনে কতটা পরিমান করলা খাবেন একটা বোরো করলা যেমন হয় সেটা একটা করেই ঠিক আছে, খুব ছোট হলে দুটো করে খেতে পারেন, নাহলে অতিরিক্ত খেয়ে নিলে পেটের অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই সঠিক পরিমানে খান।
- যেসব ব্যাক্তি কোনো কারণে প্রতিদিন ওষুধ খান তারা অবসসই করলা খাবার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে আমরা জানলাম যে করলার মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ আছে যা আমাদের শরীরে কাজে লাগে, এবং তারপর করলার সমস্ত গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করে নিলাম।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি করলা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া করলা খাওয়ার উপকারিতা বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টিম