কাঠ বাদাম এর উপকারিতা সেরা 7 টি

Rate this post

কাঠ বাদাম বা Almond নাম তো আমরা সবাই জানি এবং কমবেশি কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে ও জানি  , এছাড়া অনেকেই আছেন যারা এই কাঠ বাদাম খেতে পছন্দ করেন এবং মোটামুটি কাঠ বাদাম এর উপকারিতা ও জানেন । তাছাড়াও বাড়িতে যখন পায়েস বা হালুয়া বানানো হয় তখন তার মধ্যে কাজু কিসমিস এর সাথে কাঠ বাদাম ও দেওয়া হয়ে থাকে, তাছাড়া স্ন্যাক্স মুখরোচক খাবার হিসেবেও জনপ্রিয় আছে ।

এখনকার সেলিব্রেটিদের মধ্যে অনেকের খাদ্য তালিকার মধ্যে  Almond milk দেখতে পাওয়া যায় , কেক বিস্কুট বিভিন্ন খাবারের মধ্যে কাঠ বাদামের ব্যবহার হয়েই থাকে , তাছাড়া রান্নার স্বাদ বাড়াতে সেখানেও এই বাদামটির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শুধু যে খাবারের জন্য বাদামটি ব্যাবহার হয়ে থাকে সেটি কিন্তু একদম নয় ত্বক ভালো রাখতে বা বিভিন্ন রূপচর্যার ক্ষেত্রে কাঠ বাদাম ব্যবহার করা হয় , আর এখন তো বাজারে কাঠ বাদাম এর উপর অনেক প্রোডাক্ট বিক্রি হয়ে থাকে। 

কাঠ বাদামের উপকারিতা

কাঠ বাদামের জনপ্রিয়তা দেখে আমি ভাবলাম যে কাঠ বাদামের বিষয়ে একটি পোস্ট লিখি  , তাই আমি আমার টীম এর সাথে কথা বলে আজকে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি যে এই কাঠ বাদাম এর উপকারিতা কি কি , কিন্তু তার আগে আমরা কাঠ বাদামের সম্বন্ধে আরও বিশদে জেনে নেবো ।

কাঠ বাদাম এর উপকারিতা অপরিসীম তবে কাঠ বাদামে অনেক ভালো  থাকলেও কিছু কিছু খারাপ দিক আছে যেগুলো না মেনে চললে আপনাকে সমস্যার মুখেও পড়তে হতে পারে তাই আজকে আমাদের এই পোস্ট থেকে জেনে নেবো যে কাঠ বাদাম এর উপকারিতা এর  সাথে সাথে কাঠ বাদাম খাবার সঠিক পদ্ধতি গুলি কি কি এবং এই বাদাম আমাদের শরীরে কি ভাবে কাজে দেয় ।

১. কাঠ বাদামের উৎস 

মনে করা হয় যে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া সহ আফ্রিকা এবং অস্টেলিয়া ভীষণ গরম বা উষ্ণ অঞ্চলে প্রাচীন কাঠ বাদাম গাছের জন্ম হয় । গাছের ফলটির ভেতরে ৩-৪ সেন্টিমিটারের বেশ কয়েকটি বীজ থাকে এবং সেই গুলো কাঠ বাদাম হিসেবে পরিচিত। কাঠবাদাম দেখতে অনেকটা কাঠের মতো শক্ত একটি খোলস , খোলসের ভিতরে থাকে বাদামি রঙের অংশ টি , সেই অংশটি তুলে ফেললে এবার খাবারের যে উপযুক্ত জিনিসটি সেটি বেরিয়ে আসে।

প্রাচীন কাল থেকে ফলের চাহিদা খুব বেশি , সময়ের সাথে সাথে কিছু ফলের বীজ খাবারের তালিকায় নিজেদের নাম লেখাতে শুরু করে তার মধ্যে এই কাঠ বাদাম অন্যতম। প্রচুর পরিমানে নিউট্রেশনে ভরপুর এই কাঠ বাদাম, তাছাড়াও কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর প্রচুর পটাসিয়াম ও ভিটামিন। 

২. কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম (kath badam khawar niom)

একটি ছোট শিশু মানে এক বছরের বাচ্চা থেকে আপনি কাঠ বাদাম খাওয়াতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে কাঠ বাদামটি গুঁড়ো করে ওই হাফ চা চামচ মতো দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। কাঠ বাদামটি গুঁড়ো করার জন্য সবার আগে কাঠ বাদাম গুলো ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিন তারপর গুঁড়ো করে ফ্রিজে আপনি ওটা এক মাস মতো সংরক্ষণ করতে পারেন।

বয়স্ক মানুষেরা অনেকে রাতে দুধের সাথে কাঠ বাদামের গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে ভালোবাসন , একটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ দিনে ৩-৪ তে কাঠ বাদাম খেতে পারবেন। রাত্রে শোবার আগে ৩-৪ তে কাঠ বাদাম খোসা সহ ভিজিয়ে রাখবেন তারপর সকালে ব্রেকফাস্ট করার মোটামোটি ৩০ মিনিট আগে খোসা ছাড়িয়ে খেয়ে নিতে হবে। 

৩. কাঠ বাদাম এর উপকারিতা

কাঠ বাদামের উৎস এবং কাঠ বাদাম খাবারের নিয়ম তো জানা গেলো , কিন্তু যেটা আমাদের আজকের এই পোস্টের মূল বিষয় বস্তু অর্থাৎ কাঠ বাদাম এর উপকারিতা সেটা এবার দেখে নেওয়া যাক ।

  • কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম থাকে যার জন্য আপনার শরীরে কোনো রকম ব্যাথা যন্ত্রনা থেকে আপনাকে মুক্তি দেবে। আপনি হারের ব্যথায় ভুগছেন বা মাংসপেশির ব্যাথা, দাঁতের ব্যাথা কাঠ বাদাম আপনার শরীরের সমস্ত রকম ব্যাথাকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম।
  • ডায়াবেটিক সেসব লোকজন আছেন তারা যদি নিয়ম করে এই কাঠ বাদাম টি গ্রহণ করে তাহলে তাকে আর কোনো দিন ডায়াবেটিস নিয়ে ভাবতে হবে না।  কাঠ বাদাম শরীরে গ্লকোজে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ব্লাড সুগার আর বাড়তে দেয় না। 
  • কাঠ বাদাম মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ কাল পর্যন্ত এই বাদাম খাওয়া খুবই ভালো, কাঠ বাদাম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা গুলো আরো উন্নত করে এবং মনোযোগ বাড়ায় এবং স্মৃতিভ্রম রোগ থেকে আটকায়। 
  • কাঠ বাদাম আমাদের শরীরে অতিরিক্ত বজ্য বাড়াতে খুবই  কার্যকরী, অর্থাৎ কোষ্টকাঠিন্য রোগে যারা ভোগেন তারা যদি এই কাঠ বাদাম টি গ্রহণ করে তাহলে তাদের এই সমস্যাটি দূর হবে। কাঠ বাদামে থাকা ফাইবার পেট পরিষ্কার করতে কাজে দেয়।
  • কাঠ বাদাম আপনার হার্ট কে সুস্থ রাখে ,  কাঠ বাদামে থাকে ফলিক অ্যাসিড এবং ম্যাগনেসিয়াম আপনার শরীরে রক্ত জমতে দেয় না ফোরে আপনার হার্টটি ভালো থাকে। কাঠ বাদামে পটাসিয়ামের পরিমান বেশি থাকায় আপনার শরীরে উচ্চরক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রণে থাকে , ফলে আপনি হার্ট অ্যাটাক থেকে নির্ভয়ে থাকতে পারবেন। 
  • আপনি কি নিজের ওজন নিয়ে ভুগছেন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে এই কাঠ বাদাম যার মধ্যে আছে স্যাটুরেটেড ফ্যাট অ্যাসিড যা দেহের অতিরিক্তি কোলেস্টেরল কমাতে খুব কাজে দেয়। কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন যার জন্য খুব তাড়াতড়ি খিদে পেতে দেয় না, এবং আপনার ওজন কেউ নিয়ন্ত্রণে রাখে। 
  • কাঠ বাদাম যদি আপনি খান তাহলে আপনার হজম করার ক্ষমতা অনেক গুন্ বেড়ে যাবে বদ হজম এবং এসিডিটির সমস্যার সম্মুখীন আপনাকে হতে হবে না। 
  • কাঠ বাদামে রয়েছে ভিটামিন A যা আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি কে ঠিক রাখতে খুবই কার্যকরী। 
  • কাঠ আপনার ইমিউনিটি শক্তিকে বাড়ায়, কাঠ বাদামে যেসব ভিটামিন রয়েছে তা আপনার শরীরে বিভিন্ন রোগ থেকে আপনাকে সুরক্ষা করে। 

৪. রূপচর্চা তে কাঠ বাদাম এর উপকারিতা বা ভূমিকা 

কাঠ বাদাম শুধু শারীরিক নই সৌন্দ্যর্য বাড়াতে ত্বকের যত্ন নেওয়াও ক্ষেত্রেও অনেক কার্যকরী চলুন তাহলে দেখে নি কাঠ বাদাম আমাদের রূপচর্চার দিকে কিরকম কাজে লাগে।

  • যদি আপনি অতিরিক্ত চুল ওঠা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাহলে কোনো ভাবনা নেই, কাঠ বাদামে রয়েছে ভিটামিন D এবং ভিটামিন E যা চুল পরে থেকে আপনাকে বাঁচাবে। কাঠ বাদামের তেল যদি আপনি মাথায় লাগান তাহলে অনেক রেহাই পাবেন। 
  • কাঠ বাদাম আপনার ত্বক বা স্কিনে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কাঠ বাদামে রয়েছে ভিটামিন E তাই আপনি যদি কাঠ বাদামটি বেঁটে একটা পেস্ট তৈরী করে  লাগান তাহলে আপনার শুস্কতা দূর হবে , ত্বককে আরো উজ্জ্বল বানাতে সাহায্য করে , আপনার মুখে যদি কোনো রকম দাগ চোপের অসুবিধে হয় তাহলে সেগুলিও আস্তে আস্তে চলে যাই। 

Note : তবে আপনার আপনার যদি কোনো রকম এলার্জি থাকে কাঠ বাদাম এর উপর তাহলে আপনি সেক্ষেত্রে ব্যাবহার করবেন না। কাঠ বাদামে তেল বা পেস্ট ব্যাবহার করার আগে স্কিনে একটু লাগিয়ে দেখবেন যদি কোনো প্রকার চুলকানি বা কোনো অসুবিধে হয় তাহলে আপনি বুঝে যাবেন যে  আপনার এলার্জি রয়েছে। 

৫. কাঠ বাদামের অপকারিতা 

  • যদি কেউ ভিটামিন E সাপ্লিমেন্ট নিয়ে থাকে তাহলে তাদের কাঠ বাদাম না খাওয়াই ভালো কারণ কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন E থাকে ঐজন্য খুব সম্ভবনা যে সেটি ওভার ডোস হয়ে পারে। তার ফলে আপনার দুর্বল লাগতে পারে এমনকি দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হতে পারে চরম ভাবে। 
  • অনেকেরই কাঠ বাদামে এলার্জি থাকে , আপনি সেটি কি করে বুঝবেন। কাঠ বাদাম খাবার পর যদি আপনার শরীরে চুলকানি হয় বা ফুলে যাই কিংবা চোখ লাল হয়ে যাওয়া অস্বস্তিবোধ হওয়া এগুলো বাদামের এলার্জির বিশেষ লক্ষণ। এগুলো যদি আপনার শরীরে দেখা যাই তাহলে আপনি কাঠ বাদাম খাওয়া বন্ধ করে দিন। 
  • কাঠ বাদাম খাবার কিছু নিয়ম আছে যেমন কাঠ বাদাম আপনারা চেষ্টা করবেন তেলে না ভেজে খাবার , বিশেষ করে নুন দিয়ে ভাজা , এটি খুবই ক্ষতিকর আপনার শরীরের জন্য। 
  • যারা এন্টিবায়োটিক ওষুধ খান তারা অবশ্যই কাঠ বাদাম খাবার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন কারণ কাঠ বাদামে ম্যাঙ্গানিজ থাকে আর আমরা সারাদিন যে খাবার খাই তাতেও ম্যাঙ্গানিজ এর মাত্রা ভালোই থাকে তার উপর কেউ যদি এন্টিবায়োটিক ওষুধ খান সেক্ষেত্রেও ম্যাঙ্গানিজ এর পরিমান থাকে এত বেশি ম্যাঙ্গানিজ আমাদের শরীরে যাওয়া ক্ষতিকর। 

আরও পড়ুন : 

১০ টি ব্যবসার আইডিয়া (business idea in bangla) যা আপনার কেরিয়ার বদলে দেবে

একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম 

প্রথমে আমরা জানলাম যে কাঠ বাদামের উৎস কি এবং কাঠ বাদাম আমরা সঠিক ভাবে কিভাবে গ্রহণ করবো। তারপর আমরা জানলাম কাঠ বাদাম এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্মন্ধে। 

আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি কাঠ বাদাম এর উপকারিতা নিয়ে  যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া কাঠ বাদাম এর উপকারিতা বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই। 

আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই  আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের  সাথে  শেয়ার করতে পারেন।  আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন। 

ধন্যবান 

বঙ্গজ্ঞান টিম

শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

Leave a Comment