আপনি কি ব্যবসা করতে চাইছেন? তাও আবার বাড়িতে বসেই তাহলে আমরা আজকে আপনার জন্য নিয়ে এসেছি নতুন কিছু ব্যবসার আইডিয়া। অনেকেই চাকরি করতে পছন্দ করেন আবার অনেকে আবার ব্যবসা করতে চান। তারা চান না অন্যের কাজ ও অর্ডারে কাজ করতে। অন্যদের জন্য কাজ করলে কখনো কখনো বৈচিত্র্য ও অনুপ্রেরণার অভাবও দেখা যায়।তারা নিজের বস নিজেই হতে চান। এতে আপনি নিজের সময় সঠিকভাবে ব্যবহার, সেট করতে পারেন নিজের ইচ্ছে মতো। ব্যবসা করলে আপনি যেমন নিজেই নিজের বস হতে পারবেন ঠিক তেমনি আপনি অন্যকেও কাজ দিতে পারবেন। যদিও ব্যবসা করতে ঝুঁকি ও টাকা দুটোইরই দরকার। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের সাথে যেকোনো কাজ অথবা ব্যবসা করলে সাফল্য পাওয়াই যায়।
তবে ব্যবসা শুরুর প্রথম ও সেফ উপায় হল বাড়িতে থেকে ব্যবসা করা। এখন বাড়িতে অনলাইন ব্যবসা করা ট্রেন্ডে রয়েছে। এটিকে আপনি অনায়াসেই বাড়ি থেকে কম মাথা ঘামিয়ে করতে পারবেন। এতে আপনি নিজের প্রতিভাও কাজে লাগাতে পারবেন এবং সেটি কাজে লাগিয়ে ভালো টাকা আয় করতেও পারবেন। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে কয়েকটি অনলাইন ব্যবসার কথা বলতে চলেছি।
ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা
সুচিপত্র
১) প্রচুর পরিমাণে পণ্য কিনে অনলাইনে বিক্রি করা
এখন ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো বেশিরভাগ জিনিস কিনে সেগুলো মজুদ করে লাভের জন্য বিক্রি করছে। বিশেষ করে যেগুলো জিনিস খুব সহজে বাজারে পাওয়া যায়না সেগুলো মজুদ করে বেশি দামে বিক্রি করলে লাভ পাওয়া যায়। এখন যদিও লজিস্টিক, গ্লোবাল কানেক্টিভিটির জন্য এগুলো বিক্রি করা খুবই সহজ হয়ে উঠেছে। পাইকারি জিনিস কম দামেই প্রতি ইউনিটে কিনতে পাওয়া যায়। পরে এগুলোকে অনলাইনে বেশি দামে বিক্রি করলে আপনারই লাভ হবে। তবে দামগুলো অত্যধিক রাখলে চলবেনা বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হবে।
২) ঘরে তৈরি পণ্য বিক্রি করা
যদি আপনি হস্তশিল্প বানাতে পারেন তাহলে আপনি সেই প্রতিভাকে শখ করে নিতে পারেন। এগুলো কাজের জন্য বড় বাজারই রয়েছে। সেখানে আপনি চাইলেই বিক্রি করতে পারেন আপনার বানানো জিনিসগুলো বিক্রি করতে পারেন। এই ব্যবসায় খরচও রয়েছে কারণ সেগুলো তৈরি করতে ভালো টাকা খরচ এবং বিক্রি করার জন্যও ভোক্তা খোজা লাগে। তবে অনলাইনে কিছু মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেগুলোতে অনায়াসেই ঘরে বানানো জিনিস বিক্রি করা যায়। যেমন Etsy, Craftsville, Shopify, ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন ইকমার্স ওয়েবসাইটেও আপনি এগুলো বিক্রি করতে পারবেন।
৩) একটি ড্রপ শিপিং স্টোর শুরু করা
এই ব্যবসাটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। যেটিতে কোন ধরনের ইনভেন্টরি লাগছেনা ও এটির খরচও কম। এখানে মূলত খুচরো বিক্রেতা অথবা বিক্রেতাদের স্টকে না রেখে গ্রাহকদের আদেশ গ্রহণ করতে হয়। ড্রপ শিপিংয় সরবরাহকারীরা বিক্রেতাদের সঙ্গে ইনভেন্টরি চালনা করে এবং সেটিকে উপযুক্ত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়। যদি আপনার কোন অভিজ্ঞতা অথবা দক্ষতা নেই তবে এই ব্যবসাটি আপনি করতে পারেন।
৪) একটি প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড ব্যবসা
এই ব্যবসাটি হল অর্ডার অনুযায়ী কাস্টোমাইজ জিনিস বিক্রি করা। এখানে কোনো আপ- ফ্রন্ট বিনিয়োগ হয়না। এখানে আপনি নিজের মতো ডিজাইন তৈরি করতে পারবেন এবং নিজস্ব ব্র্যান্ডও তৈরি করতে পারবেন।
৫) ব্যক্তিগত দক্ষতা নগদীকরণ
যদি আপনি শিক্ষকতা করতে পছন্দ করেন তাহলে এটিকে আপনি ব্যবসায় পরিণত করতে পারেন। কারণ অনলাইন টিচিং অথবা অনলাইন কোচিং সেন্টার অনেকেই শুরু করেছেন। এছাড়াও প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফি, গ্রাফিক ডিজাইনিং ইত্যাদিও করতে পারেন। শুধু তাই নয় ই-বুক, ডিজিটাল টেমপ্লেট, লাইসেন্সযোগ্য সম্পদ যেমন স্টক ফুটেজ, সঙ্গীত এগুলোকে বিক্রি করে টাকা আয় করতে পারবেন। যদিও এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ব্যবসা করতে বাইরেও যেতে হতে পারে।
৬) নগদীকরণের জন্য গ্রাহক ভিত্তি তৈরি করা
ইন্টারনেটের দৌলতে টাকা আয় করা খুব সহজ হয়ে উঠেছে। আজকাল ব্লগ, ইউটিউব ভিডিও, ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট অথবা পডকাস্ট করে মানুষ ভালোই টাকা আয় করছেন। এখন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা ছোট ছোট রিল ও ক্লিপ বানিয়ে কোথায় কোথায় কোন খাবার, পোশাক ভালো পাওয়া সেগুলো জানাচ্ছেন। যেগুলোকেই অনেকেই তাদের ব্যবসায়ে পরিণত করেছে।
৭) Airbnb ব্যবস্থা
খালি জায়গা বা বাড়ি ভাড়া দেওয়া এখন ভারতে ভালো জনপ্রিয় হচ্ছে। গত ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে অনেকে ভারতীয়রাই Airbnb ভাড়া দিচ্ছেন ও নিচ্ছেন। যারজন্য এই মান্ডজমেনটের সার্ভিস প্রভাইডাররা রোজকার ক্রিয়াকলাপ করার জন্য বুকিং খরচ ও সেটি সেট করার জন্য মাসিক ব্যবস্থার ফিও পান।
৮) একটি বিদ্যমান ইকমার্স ব্যবসা কেনা
যদি আপনি শুরু থেকে অর্থাৎ জিরো থেকে শুরু করতে চান না তাহলে আপনি বিদ্যমান ইকমার্চ ব্যবসা কিনতে পারেন। যদিও এটিতে বিনিয়োগের খরচ, মোট রাজস্ব, লাভ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে থাকে।
৯) খাবারের হোম ডেলিভারি করা
এখনকার ব্যস্ত জীবনে রোজ রান্না করা খুব চাপের বিষয়। অনেকেই রোজ রোজ রান্না করতে পারেন না। হোটেল খাওয়াও ঠিক মনে করেন না। এগুলোর জন্যই শুরু হয়েছে খাবারের হোম ডেলিভারি ব্যবসা। আপনি যদি রান্না করতে পারেন এবং সেটি নিয়েই ব্যবসা করতে চান তাহলে এই ব্যবসাটি আপনার জন্য উপযুক্ত। তাই ভালো ভালো রান্না করে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারেন। সাধারণ গৃহস্ত ও কলেজ, ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রীরা অনেকরই ভরসা এখন খাবারের হোম ডেলিভারি অ্যাপগুলো এবং হোম ডেলিভারি ব্যবসাগুলো। এই ব্যবসা করার জন্য খুব বেশি নয় ১০ টাকাই লাগবে।
১০) বিউটিশিয়ান হওয়া
যদি আপনার কাছে দক্ষতা এবং ট্রেইনিং থাকে তাহলে আপনি অল্প টাকা দিয়েই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। এরজন্য প্রথমেই প্রয়োজনীয় জিনিস অর্থাৎ প্রাথমিক পরিষেবা দেওয়ার উপকরণ কিনতে হবে। সরল ভাষায় বলতে গেলে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ফেসিয়াল, পেডিকিওর, ম্যানিকিওর, অয়েল ম্যাসাজ বা ওয়্যাক্সিংয়ের মতো পরিষেবা দিতে হবে। এইসময়ে অনেকেই পার্লারে গিয়ে এগুলো পরিষেবা নিতে পছন্দ করেন না। তাই এটিই সুযোগ আপনাদের জন্য। যদি আপনার কাজ ভালো হয় তাহলে মানুষেরাই আপনার প্রচার করে দেবে। এছাড়াও আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ও নিজের ওয়েবসাইট খুলে সেখানেও আপনার ব্যবসার প্রচার করতে পারেন। এই ব্যবসাটিও শুরু করতে ১০ হাজার টাকা লাগবে।
১১) মেকআপ আর্টিস্ট হওয়া
আপনি কি নিজে সাজতে ও অন্যকে সাজাতে ভালবাসেন। তাহলে আপনি হতে পারেন মেকআপ আর্টিস্ট। এরজন্য দরকার হয় মেকআপের প্রশিক্ষণ। এটি শুরু করতেও খুব কম পুঁজি লাগবে। কনে সাজানো, পার্টি মেকআপ, নাচ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে সাজাতে পারেন। এরজন্যও আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার কাজের প্রচার করতে হবে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়াই আপনাকের খুব সহজে ক্রেতাদের মাঝে পৌঁছতে সাহায্য করবে।
১২) বিদেশী ভাষা শেখানো
যদি আপনি বিদেশি ভাষা জানেন তাহলে সেটিকে কাজে লাগিয়ে ভালো ব্যবসা করতে পারেন। আপনি বিদেশী ভাষা অনলাইনে শেখাতে পারেন। এখন ছোট বাচ্চা থেকে বয়স্করা সকলেই বিদেশী ভাষা শিখছেন। এটি এরকম একটি ব্যবসা যেখানে কোন বিনিয়োগ করতে হয়না। এরজন্য শুধু সেই ভাষায় দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ থাকা উচিত। তবে এখানে কিন্তু আপনার ধৈর্য্য ও আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হতে হবে।
এছাড়াও অনেক ব্যবসা রয়েছে যেগুলো বাড়ি থেকেই করা যায়। এগুলোতে লাভ করার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত ও যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। তবে ব্যবসা শুরুর আগে অনেকবার ভাবা উচিৎ। কারণ অনেক ব্যবসায়ীরা তাদের স্টার্টআপ শুরু তো করেন কিন্তু ভালো মুনাফা কামানোর আগেই তাদের অর্থ শেষ হয়ে যায়। ফলে তাদের ব্যবসা ব্যর্থ হয়ে যায়। ব্যবসায়ে সফল হতে হলে দরকার খুব পরিশ্রম, অধ্যাবসায় ও ধৈর্যের। যেকোন কাজ শুরু করতেই অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। যদি আপনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ না হন তাহলে কোনোকাজেই সফল হতে পারবেন না। টাকা আয় করতে যেমন দরকার প্রতিভার ঠিক তেমনি দরকার সময়েরও। দুটোর কোনোটাই বাদ দেওয়া চলবেনা। তাই যেকোনো ব্যবসা শুরু করার আগে ভালো করে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।