প্রাচীন সময় থেকে ঘি এর ব্যাবহার হয়ে আসছে, ঘি স্বাদ এবং তার গুণাবলীর জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার, তবে বর্তমান সময়ে অনেকের ধারণা যে ঘি খেলে ওজন বেড়ে যাই বা এটি শরীর এর জন্য খুবই খারাপ, তবে এগুলো কিন্তু একদমই সত্যি নয়, ঘি খেলে আমাদের শরীর কিভাবে ঘি এর উপকারিতা পাবে তা জানলে সত্যিই অবাক হতে হয়।
ঘি কে “Navel of Immortality” বা “Tongue of the god” ও বলা হয়ে থাকে, বাঙালিদের ভাত হলো সবথেকে প্রিয় খাদ্য, যদি গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের সাথে এক চামচ ঘি থাকে তাহলে জমে যাই, আমিষ হোক অথবা নিরামিষ সবে তাই ঘি এর ব্যাবহার কিন্তু হয়েই থাকে, তাছাড়াও বিভিন্ন মিষ্টি তৈরী করতেও তেও ঘি এর ব্যাবহার তো হয়েই থাকে এতে তার স্বাদ অনেক গুন্ বেরে যাই।
ঘি এর উপকারিতা
আয়ুর্বেদে ঘি এর প্রাধান্য অনেক বেশি, শুধু স্বাদে ভালো তা কিন্তু নয় শরীরের বিভিন্ন সমস্যা ঠিক করার পাশাপাশি রূপচর্চার দিকেও ঘি এর কোনো তুলনা হয় না, যদি আপনি সঠিক নিয়মে এবং সঠিক পরিমানে ঘি এর সেবন করতে পারেন, তাহলে আপনার চর্বি নিয়ে কোনো কিছুই ভাবতে হবে না। অনেকে ওজন কমানোর জন্য ঘি কে তাদের খাদ্যের মধ্যে রাখেন না আর এটি একদম ঠিক নয়, আপনি যদি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তাহলে কোনো সম্যসায় নেই ঘি খাবার।
বর্তমান সময়ে আমরা বিভিন্ন তেল ব্যাবহার করে থাকি রান্নার জন্য কিন্তু প্রাচীন কালে বেশির ভাগ খাবার এই ঘি এ তৈরী হতো কারণ ঘরে ঘরে গরু থাকার জন্য দুধ ও অনেক পরিমানে হতো এবং তার থেকেই হতো বিশুদ্ধ ঘি, যা খাওয়ার ফলে আগে কার সময়ের মানুষ দের লক্ষ্য করবেন রোগ জ্বালাও কম হতো, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও বেশি ছিল।
খাঁটি ঘি
এখন অবশ্য বাজারে সবকিছুই ভেজাল চলে এসেছে তবে অনেক ভালো কোম্পানি আছে যারা খুব ভালো খাঁটি ঘি বিক্রি করে থাকে আপনি সেখান থেকে সংগ্র করতে পারেন, নচেৎ সব থেকে ভালো হয় যদি একটু পরিশ্রম করে বাড়িতে বানাতে পারেন। তার জন্য আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে না শুধু আপনি যে প্রতিদিন দুধ গরম করছেন তারপর যে সর পরে দুধের উপর সেই সর একটি পাত্রে তুলে রাখতে হবে, মোটামুটি ২০-৩০ দিন পর্যন্ত এই সর সংগ্রহ প্রক্রিয়া কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে।
তারপর এক মাস পর সেই সর কে একদম বরফ মিশ্রিত ঠান্ডা জলে আলাদা করে নিতে হবে তারপর, আগুনে করাই বসিয়ে সেই সর জ্বাল দিতে হবে যতক্ষণ না সব সর গলে গিয়ে তরল পদার্থে পরিণত হচ্ছে তারপর ফুটে গেলে এবং হালকা বাদামি বাদামি একটি রং ধরে গেলে এবং তার মধ্যে থেকে একটা সুন্দর আস্তে থাকবে, বাস তখনি আগুন থেকে করাই টি নামিয়ে নিন, এবং ঠান্ডা হবার পর একটি কাঁচ যুক্ত পাত্রে ভোরে রেখে দিন, বাস তৈরী আপনার একবারে খাঁটি ঘি।
• শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন ?
সুচিপত্র
ঘি এর পুষ্টিগুণ
ঘি এর উপকারিতা আমাদের শরীরে অনেক বেশি লক্ষ করা যাই কিন্তু আমরা জেনে নেবো যে ঘি এর মধ্যে এমন কি উপাদান আছে যা আমাদের শরীরের জন্য লাভদায়ক।
ঘি তে পাওয়া যাই আন্টিঅক্সসিডেন্ট, ওমেগা৩, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ব্রেন টনিক, ভিটামিন কে যা আমাদের দেহের হার,মাংসপেশি কে ভালো রাখে, রক্ত কে জমাট বাঁধতে দেয় না, পেশি মুজবুত রাখে, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়াও ঘি এর মধ্যে পাওয়া যাই, ফসফরাস, জিঙ্ক, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, যা আমাদের শরীর কে ভালো রাখার পাশাপাশি ত্বক কেউ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
হজম ভালো রাখতে ঘি এর উপকারিতা
পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন আপনি যদি সঠিক নিয়মে ঘি খান তাহলে পেটের যেকোনো সমস্যা থেকে আপনি দূরে থাকবেন, ঘি তে প্রচুর পরিমানে বিউটারিক এসিড আছে যা আমাদের ইন্টেস্টাইনের ক্ষমতা কে অনেক পরিমানে সক্ষম করে তোলে। খালি পেটে ঘি খাওয়া খুবই ভালো, এবং যদি কোনো কার্বোহাইড্রেড খাবারের সাথে ঘি খাওয়া যাই তাহলে এতে থাকা পুষ্টিগুণ শরীরে অম্বল এবং গ্যাস জাতীয় সমস্যা কেউ দূরে রাখতে সাহায্য করে।
ঘি শরীরে দূষিত কোলেস্টরলের মাত্রা কে অনেক টা পরিমানে নিয়ন্ত্রণে রাখে, এবং তারই পাশাপাশি দেহের কোষ্টকাঠিন্য মতো রোগ কেউ দূর রাখে।
রোগ প্রতিরোধক শক্তি কে বাড়াতে ঘি এর উপকারিতা
করোনা ভাইরাসের পর থেকে মানব জীবনে শারীরিক ভাবে অনেক অসুবিধের সৃষ্টি হয়েছে, জ্বর ঠান্ডা লেগে গেলে সারতে অনেক সময় লাগে তার কারণ হলো আমাদের শরীরের মধ্যে ইমিউনিটি পাওয়ার কমে গেছে, ঘি এর মধ্যে থাকা উপাদান আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম কে বাড়াতে অনেক কাজে লাগে।
ঘি এর মধ্যে পাওয়া যাই Omega 3 ,আন্টিঅক্সসিডেন্ট, ভিটামিন এ, এবং ভিটামিন ডি যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।
মস্তিস্ক ভালো রাখতে ঘি এর উপকারিতা
ঘি এর মধ্যে পাওয়া যাই ব্রেন টনিক এর মতো উপাদান যা মানব দেহের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই কার্যকরী, ছেলেবেলা থেকে যদি আপনি আপনার শিশুকে এই ঘি খাওয়ার অভ্যেস করিয়ে নেন তাহলে আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাস খুবই সুন্দর ভাবে হয়ে উঠবে এবং তার সাথে সাথে মেধাবী ও বুদ্ধিমান ও হয়।
হাড় ভালো রাখতে সাহায্য করে
আমাদের শরীরে হাড়, মাংসপেশি, দাঁত, কে শক্ত রাখতে এবং ভালো রাখতে ঘি এর উপকারিতা অনেক, জয়েন্ট এর ব্যাথা এবং আর্থাইটিস এর মতো ব্যাথা কেউ দূরে রাখতে অনেক সাহায্য করে, তাছাড়া দেহের রক্ত চলাচল কে স্বাবাবিক রাখে, রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না।
সৌন্দর্য ভালো রাখতে ঘি এর উপকারিতা
- শুধু মাত্র ঘি খাওয়ার ফলে আপনি আপনার সৌন্দর্যকে চিরতরে ধরে রাখতে পারবেন, নিয়মিত ঘি খেলে আপনার ত্বক এবং আপনার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, মুখের মধ্যে তরুণত্ব ফিরিয়ে আনবে, এবং খুব তাড়াতাড়ি বার্ধক্যের চাপ ফেলবে না।
- যদি আপনার ঠোঁটে কালো কালো ভাব হয়ে থাকে এবং ঠোঁট ফেটে যাওয়া শুস্ক হয়ে যাওয়া এই সব সমস্যা থাকলে রাত্রে একটু ঘি লাগিয়ে রাখতে হবে এবং সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে, এই ভাবে করে গেলে ঠোঁট অনেক ভালো থাকে।
- চুলের গোড়া যদি ফেটে যাই সেই ক্ষেত্রে আপনি চুলে ঘি লাগিয়ে দেখতে পারেন যেখানে যেখানে চুল ফাটা রয়েছে সেখানে দিতে হবে নিয়মিত ব্যাবহার করলে এর অনেক ঘি এর উপকারিতা অনেক ভালো ভাবে পাওয়া যাই।
- আপনার ত্বক যদি শুস্ক হয়ে উঠে তাহলে ঘি এর সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে এবং সেটি মুখে লাগিয়ে নিতে হবে তারপর ১৫ মিনিট পর জলে ধুয়ে নিলেই আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার ত্বক এর মধ্যে একটা আলাদা অনুভূতি।
• প্রতিদিন ২ টো করে খেজুর যা আপনাকে সকল প্রকার রোগ থেকে দূরে রাখবে
ঘি এর অপকারিতা
- ঘি খাওয়া খুবই ভালো তবে সেটা যেন পরিমানে সঠিক হয় বেশি ঘি শরীরে গেলে অনেক পেটের সমস্যায় পড়তে হতে পারে, যেমন বদ হজম, পেট খারাপ, হজম না হওয়া ইত্যাদি।
- সঠিক পরিমানে ঘি খেলে অবশ্যই আমাদের ওজন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে কিন্তু অতিরিক্ত ঘি খেলে শরীরে মেদের সৃষ্টি করে
- দুগ্ধ জাতীয় কোনো খাবার খাওয়ার পরে ঘি খাওয়া একদমই উচিত নয়, তাই দুধ মিষ্টি জাতীয় খাবারের ১-২ ঘন্টা পর ঘি খেতেই পারেন।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে আমরা জানলাম খাঁটি ঘি আমরা কোথায় থেকে সংগ্রহ করবো এবং ঘি এর মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। তারপর জানলাম ঘি এর উপকারিতা কি কি এবং তার সাথে ঘি বেশি খেলে আমাদের কি কি অসুবিধে হবে সেটাও জেনে নিলাম।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি ঘি এর উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া ঘি এর উপকারিতা বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টিম