আজকের সময়ে এটা সবাই জানে যে শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো ঘুমের কতটা দরকার , কিন্তু এটা জানা সত্ত্বেও আমাদের অনেকের কাছে এটা সম্ভব হয়ে ওঠে না । আর এই কারণে আমাদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় , কারণ ভালো ঘুমের অভাবে হাইপারটেনশন , ডায়াবেটিস , আসিডিটি , হার্ট এট্যাক ও ডিপ্রেশন হয়ে থাকে । যেখানে ভালো ঘুম আপনার শরীরে ইমিউনিটি সিস্টেম কাজে শক্তিশালী করে , হার্ট এর Strength বাড়ায় , ওজন কে নিয়ন্ত্রণ রাখতে , Concentration ও কাজের Productivity বাড়াতে সাহায্য করে । অর্থাৎ ভালো ঘুম একজন মানুষের সুস্থ শরীরের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
ঘুম ভালো হওয়ার উপায়
এবার আপনারা অনেকে ভাবছেন ভালো ঘুম হওয়ার উপায় কি অথবা ভালো ঘুমের জন্য কি করা উচিত , চিন্তার কোনো কারণ নেই এবার খুব সহজেই আপনারা ভালো ঘুম উপভোগ করতে পারবেন । আজকের আমাদের এই পোস্টে আমরা সেরা ১১ টি স্টেপ সম্বন্ধে জানবো যা আমাদের ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ করে তুলবে । তাই আমাদের আজকের এই পোস্ট টি শেষ পর্যন্ত অবশ্যই পড়ুন ।
সুচিপত্র
১১ টি সেরা ঘুম ভালো হওয়ার উপায়
ভালো বিছানা ও চাদর ব্যবহার করুন
যদি আপনি ভালো ঘুম চান তাহলে আপনার বিছানা কে Comfortable রাখুন , যেখানে আপনি শুয়ে রিলাক্স এ আরাম পেতে পারেন এবং যাতে আপনার Spine বা মেরুদন্ড উপযুক্ত সাপোর্ট পায় । ফলে সকালে উঠে যাতে কোনোরকম ব্যাথা অনুভূতি না হয় , এরম হলে আপনার ঘুম খুব ভালো হবে এবং সময়ের মধ্যে ঘুমাতেও ইচ্ছা করবে । তাই আপনার বিছানার সমস্ত কিছু যেমন ম্যাট্রেস , বালিশ , বিছানার চাদর এই সমস্ত কিছু Comfortable এবং পরিষ্কার রাখুন ।
আপনার শোবার ঘরে কম আলোর ব্যবহার করুন
ঘুমানোর সময় যদি আপনি আপনার ঘরে আলো বেশি রাখেন , তাহলে আপনার ঘুমে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং ঘুম খারাপ হতে পারে , তাই ঘুমানোর সময় ঘরে কম আলোর ব্যবহার করুন । এর জন্য আপনি পর্দার ব্যবহার করতে পারেন , আবার Eye মাস্ক বা স্লিপ মাস্ক এর ব্যবহার করতে পারেন । এরম করলে আপনার ঘুমে কোনোরকম সমস্যা তৈরী হবে না এবং এর ফলে আপনার শরীর Melatonin হরমোন তৈরী করতে পারবে , যা ভালো ঘুম এর জন্য সাহায্য করে ।
ঘরে শব্দ কম করুন
ভালো ঘুমের জন্য আপনার রুম টি Sleep Friendly হওয়া প্রয়োজন , কারণ Comfortable বিছানার ও কম আলোর সাথে সাথে ঘরের মধ্যে শব্দ কম হওয়া প্রয়োজন । তাই ঘুমানোর সময় কম শব্দের মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন , তাছাড়া যদি শব্দ এর নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে না থাকে তাহলে হেডফোন কিংবা এয়ার প্লাগস এরব্যবহার করে আপনার ঘুমকে Disturbed মুক্ত করতে পারেন ।
ঘুমের একটি রুটিন সেট করুন
শুধু ঘুমালেই চলবে না , ঘুম সম্পূর্ণ হচ্ছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে , শরীর সুস্থ রাখতে গেলে ৭-৮ ঘন্টার ঘুম প্রয়োজন । তাই আপনাকে একটি রুটিন সেট করতে হবে যাতে আপনি ৭-৮ ঘন্টার ঘুম সম্পূর্ণ করতে পারেন এবং এর জন্য আপনাকে একটি সঠিক সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হইব , আবার ঠিক একই সময়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে । এর ফলে আপনার শরীরে ঘুমের সময়সীমা সঠিক থাকে এবং রাত্রে ঘুমানোর সময় ও সকালে সময়ে ঘুমথেকে উঠতে কোনো সমস্যা না হয় ।
দিনের বেলা কম ঘুমানোর চেষ্টা করুন
আমাদের মধ্যে বেশ কিছু জন দুপুরে খাওয়ার পর ২-৩ ঘন্টা ঘুমিয়ে নেয় , আর রাত্রে ভালো ঘুমের আশা করে , এটা কিন্তু একটু মুশকিল হতে পারে তাদের জন্য , কারণ এর ফলে আপনাদের ঘুমের সময়ের সমস্যা হতে পারে , এমনকি আপনার রাত্রের ঘুম উধাও হয়ে যেতে পারে । যদি আপনি একান্তই খুব ক্লান্ত অনুভব করেন , তাহলে দিনের বেলা খুব বেশি হলে ২০-৩০ মিনিট ঘুমান , এর ফলে আপনি কালন্ত অনুভব করবেন না এবং রাত্রে আপনার ভালো ঘুমের ও চিন্তা করতে হবে না ।
ঘুমানোর আগে সমস্ত ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস দূরে রাখুন
আমি জানি আজকের সময়ে এটা একটু চাপের হতে পারে অনেকের ক্ষেত্রে আবার অনেকের ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব হতে পারে । আপনি সারাদিন মোবাইল , ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট এর সাথে থাকেন , কিন্তু রাত্রে ঘুমানোর আগে এদের থেকে দূরে আসার সময় । এর কারণ এই ডিভাইস থেকে আসা এল আপনার শরীরে Melatonin হরমোনের প্রাকৃতিক ক্ষরণ কে বাধা দিতে পারে , আর এরম টা হলে আপনি চাইলেও ভালো ঘুম নিতে পারবেন না । তাই ঘুমানোর অন্তত ১ ঘন্টা আগে এইসব ডিভাইস কে নিজের থেকে দূরে রাখুন , এবং Melatonin হরমোন কে নিজের কাজ করতে দিন ।
ঘুমানোর আগে রিলাক্স হওয়া জরুরি
ভালো ঘুমের জন্য ঘুমানোর আগে আপনাকে রিলাক্স থাকা জরুরি , এই জন্য বিছানায় শুয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমানো থেকে নিজেকে বিরত রাখুন । ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে নিজেকে রিলাক্স করুন , আর এই ৩০ মিনিট সেইসব কথা একদম ভাববেন না , যেগুলো আপনাকে চিন্তায় ফেলে দেয় , এইসব কথা মাথায় আসলেও সেগুলোকে ইগনোর করুন , কিংবা সেগুলোকে ডায়েরি তে লিখে রাখুন ।
এতে সেইসব কথা আপনার মাথা থেকে বেরিয়ে যাবে এবং এতে আপনার Mind বুঝবে যে এই কথা গুলো বা কাজ গুলো নোট করা আছে , অর্থাৎ বার বার নোটিফিকেশন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই । এছাড়া রিলাক্স হওয়ার জন্য মেডিটেশন ও Deep Breathing এর সাহায্য নিতে পারেন , রিলাক্স Exercise করতে পারেন , বই পড়তে পারেন , হালকা Music শুনতে পারেন এবং এইভাবে আপনি রিলাক্স অনুভব করতে পারতেন এবং ভালো ঘুম উপভোগ করতে পারেন ।
প্রতিদিন সূর্যের আলো বা প্রাকৃতিক আলো নিন
সূর্যের আলো আমাদের শরীরে ভিটামিন D এর সঞ্চয় করে থাকে , এটা তো আমরা সকলে জানি । কারণ ভিটামিন D আমাদের শরীরে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে । তাই প্রতিদিন Sunlight অথবা সূর্যের আলো নিন , অন্তত ৩০ মিনিট চেষ্টা করুন সূর্যের আলো নেওয়ার , এর ফলে আমাদের শরীরে sleep Circle ঠিকঠাক ভাবে কাজ করে , এবং আমাদের ভালো ঘুম ও আসে ।
ক্যাফেইন এর মাত্রা কমান
যদি আপনি চা কফির ভক্ত হয়ে থাকেন , অর্থাৎ ৮-১০ কাপ চা বা কফি খান , তাহলে এখুনি থামুন এবং সাবধান হন , কারণ চা ও কফিতে থাকা ক্যাফেইন আপনার ঘুমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে । কারণ এর প্রভাব ৩-৭ ঘন্টা পর্যন্ত থাকে , অর্থাৎ দুপুরের পর বা বিকেলে চা বা কফি খান , তাহলে এতে রাত্রের ঘুমে সমস্যা হতে পারে ।
বেশি পরিমানে ক্যাফেইন নেওয়া বা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চা কফি খাওয়া আপনার ভালো ঘুমের শত্রু হয়ে দাঁড়াতে পারে । আর রাত্রে ভালো ঘুম না হওয়ার জন্য আপনার সারাদিন এর activity তে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে ।
• ডার্ক চকোলেট খাওয়ার উপকারীতা
প্রতিদিন ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন ব্যায়াম এর অভ্যাস শুধু আপনাকে ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস নয় ভালো ঘুমের জন্য সাহায্য করবে , কারণ প্রতিদিন ব্যায়াম করলে আপনি স্ট্রেস মুক্ত হবেন , Sleep Disorder এর সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন এবং ঘুমের Quality আগের থেকে অনেক ভালো হয় । তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০মিনিট ব্যায়াম অবশ্যই করুন ।
উপযুক্ত ডায়েট মেনে চলুন
উপযুক্ত ডায়েট বলতে শাকসবজি ও ফলের একটি ব্যালান্স ডায়েট তৈরী করতে হবে , অর্থাৎ আপনার প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে উপযুক্ত শাকসবজি ও ফল রাখতে হবে , যাতে আপনার শরীর যথোপযুক্ত নিউট্রেশন পায় । আপনার শরীরে নিউট্রেশন যখন ব্যালান্স থাকবে তখন আপনার শরীরে ১১ টি অর্গান সিস্টেম ও ঠিকঠাক কাজ করবে , আর যখন আপনার অর্গান সিস্টেম ঠিকঠাক কাজ করবে তখন ভালো ঘুমের জন্য আপনাকে চিন্তা করতে হবে না । তাই আপনি যদি ভালো ঘুম চান তাহলে আজ থেকে একটি ব্যালেন্স ডায়েট তৈরী করুন এবং সেই মতো ডায়েট নিন ।
তাহলে আপনারা দেখলেন যে ভালো ঘুমের জন্য শুধু বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করলেই হবে না , তার সাথে বেশ কিছু জিনিস মেনে চলতে হবে , এবং তার সাথে বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে আমরা জানলাম যে ঘুম ভালো হওয়ার উপায় কি কি হতে পারে , এবং তারপর জানলাম এমন কিছু উপায় যেগুলো মেনে চললে খুব সহজেই আমাদের এই ঘুম না সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাবো।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি ঘুম ভালো হওয়ার উপায় নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া ঘুম ভালো হওয়ার উপায় বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টিম