প্রাচীন কাল থেকে মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে , অনেক কাল থেকে মানুষ এই মধুকে ঔষুধি রূপে ব্যবহার করে আসছে। প্রতিদিন প্রায় লক্ষ লক্ষ মৌমাছি অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন ফুলের মধ্যে থেকে রস সংগ্রহ করে নিজেদের পাকস্থলীতে রেখে দেয় তারপর মৌমাছির লালার সাথে মিশ্রিত হয়ে এই মধু তৈরী হয় যা মৌমাছির চাকে জমা হতে থাকে। এই খাঁটি মধু হাজার হাজার বছর পরে থাকলেও নষ্ট হবে না। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু, ওষুধের গুলাবলির জন্য খুবই বিখ্যাত তার স্বাদ , হালকা রং , সুগন্ধী মধুকে আরো জন প্রিয় করে তোলে।
বর্তমান সময়ে কমবেশি অনেকেই মধু খেতে খুব পছন্দ করে , চিনির পরিবর্তে মধু খেলে মধুর উপকারিতা অনেক গুন্ বেশি পাওয়া যাই, কারণ চিনি আমাদের শরীরে ক্ষতি করে কিন্তু মধু করে না। শুধু আমাদের দেশে নয় বিদেশেও মধুর ভীষণ পরিমানে ব্যবহার হয়ে থাকে। সকালে গরম জলের সাথে মধু হোক বা চায়ের সাথে চিনির বিকল্প হিসেবে মধুর ব্যাবহার হয়ে থাকে।
মধুর উপকারিতা
মধু আমাদের জন্য এতটাই মূল্যবান যে আমাদের শরীরে কোনো ক্ষত বা ঘা হলে সেটি অনেক তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে কারণ মধুর মধ্যে পাওয়া যাই এন্টিসেপটিক এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল এর উপাদান। মধু তে থাকা প্রচুর পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরে অনেক ভাবে কাজে দেয় তাই আমরা জেনে নেবো মধুর উপকারিতা গুলি কি কি এবং তার সাথে আমরা জেনে নেবো যে মধুর ব্যাবহার সঠিক ভাবে না করলে তার থেকে আমাদের শরীরে ক্ষতি কি কি ভাবে হতে পারে।
সুচিপত্র
১. খাঁটি মধু (Raw Honey) কি ?
খাঁটি মধু হলো যেটা একেবারে মৌমাছিদের বাসা থেকে সংগ্রহ করা হয় , এবং সেটি কে সামান্য একটু ফিল্টার করে বাজারে বিক্রি করা হয়ে থাকে এই মধু খাওয়া খুবই ভালো মধুর যত পুষ্টি গুন্ আছে আপনি তা এই খাঁটি মধু থেকে পেয়ে যাবেন। বলা হয়ে থাকে খাঁটি মধু ৫০০০ হাজার বছর পর্যন্ত ও নাকি ভালো থাকে নষ্ট হয়ে যাই না।
• মানুষের শরীরে দুধের উপকারিতা
এখন বাজারে যেগুলো বিক্রি করা হয় সেই মধু প্রথমে ফ্যাক্টরী ভালো করে ফিল্টার করে পাস্তুরাইজ করা হয় , ফেক্টরিতে মধু কে অনেক কিছু প্রসেস করে বানানো হয়ে থাকে সেই প্রক্রিয়া কেই পাস্তুরাইজেশন বলা হয়ে থাকে। সেখানে মধু কে অনেক্ষন পর্যন্ত গরম করা হয় তাতে মধুর মধ্যে থাকা ইস্ট টি নষ্ট হয়ে যাই এবং মধুর স্বাদ কে আরো বাড়িয়ে তোলে এবং মধু টি দেখতেও অনেক সুন্দর করে তোলে।
তবে এই মধুর মধ্যে সেরকম আর পুষ্টিগুণ পাওয়া যাই না যেটি খাঁটি মধুর মধ্যে পাওয়া যাই , পুষ্টিগুণের উপাদান গুলি অনেক মাত্রায় কমে যাই , তাই আপনি যদি খাঁটি মধু কিনে সেটি ব্যাবহার করতে পারেন তাহলে তার আসল গুন্ গুলি আপনি অবশ্যই উপলব্ধি করতে পারবেন।
২. খাঁটি মধু চেনার সহজ উপায়
বাজারে অনেক মধু এমনও বিক্রি হয় যারা দাবি করে যে তাদের প্রোডাক্ট একদম খাঁটি , তাই আমরা এরপর জেনে নেবো যে আসল বা নকল মধুর পার্থক্য আমরা কিভাবে করবো।
১. আপনি যদি খাঁটি মধু কে রেফ্রিজারেটরে রেখে দেন তাহলে সেটি ঠান্ডা হয়ে জমে যাবে না , সামান্য অবস্থা তাই থাকবে।
২. জলে ভিনেগার দিয়ে কয়েক ফোটা মধু তাতে দিয়ে দিতে হবে , জলে যদি ফেনা দেখা দেয় তাহলে সেটি খাঁটি মধু নয় , খাঁটি মধু তে ফেনা হবে না।
৩. খাঁটি মধু বাজারে পাওয়া মধুর থেকে অনেক বেশি পুরু এবং আঠালো।
৪. এক টুকরো সাদা কাপড়ে একটু মধু লাগিয়ে দিতে হবে এবং কাপড় টি কিছুক্ষন পরে ধুয়ে ফেলতে হবে যদি সাদা কাপড়ে মধুর দাগ থেকে যাই তাহলে বুঝতে হবে সেটা নকল মধু , খাঁটি মধু তে কখনোই কাপড়ে দাগ পড়বে না।
• বিশেষ 7 টি কাঠ বাদাম এর উপকারিতা
৩. মধুর পুষ্টিগুণ
মধুর মধ্যে থাকা উপাদান গুলি পুষ্টিগুণে ভরপুর , মধুর মধ্যে থাকা উপাদান গুলো হলো কার্বোহাইড্রাটেস , ডায়েটারি ফাইবার , প্রোটিন ,সোডিয়াম ,ভিটামিন C , পটাসিয়াম এছাড়াও ক্যালসিয়াম ,আয়রন ,ম্যাগনেসিয়াম ,জিঙ্গ ,কপার ,ম্যাঙ্গানিজ , ভিটামিন B6 পাওয়া যাই , মধুর মধ্যে ফ্যাট এবং কোলেস্টরলের মাত্রা শুন্য থাকে।
৪. মধুর উপকারিতা
৪.১. সর্দি কাশি দূর করে
মধুর উপকারিতা মধ্যে অন্যতম হলো আপনি যদি প্রায় কাশির সমস্যায় ভুগে থাকে তাহলে রোজ মুধ খেলে আপনি অনেকটাই আরাম পাবেন , মধুর মধ্যে থাকে এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান এই অসুখ টিকে ছড়িয়ে পড়তে দেবে না। মধু খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয় এবং সেটি সহজে বেরিয়ে আসে , যারা শুখনো কাশি তে ভোগেন তাদের জন্য মধু খাওয়া অত্যন্ত দরকারি।
৪.২. ওজন কমাতে মধুর উপকারিতা
যেসব ব্যাক্তি নিয়মিত ডায়েট করেন তাদের জন্য মধু একটি উপযুক্ত খাবার, মধুর মধ্যে থাকা উপাদান অনেক তাড়াতাড়ি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। রোজ সকালে খালি পেটে যদি এক গ্লাস গরম জলের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া হয় তাহলে সেটি ওজন কমাবার জন্য খুবই ভালো কাজে দেয়, মধুর সাথে আপনি লেবুর রস দিতে পারেন । আবার খাবার কে মিষ্টি করার জন্য আপনি চিনির পরিবর্তে মধুর ব্যাবহার করতে পারেন। চিনি আপনার ওজন কে বাড়িয়ে তুলবে কিন্তু মধু সেটি করবে না।
৪.৩. ত্বক জ্বলে বা কেটে গেলে মধুর ব্যবহার
মধুর উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হলো মধুর মধ্যে থাকা এন্টিসেপ্টিক উপাদান টি , যা ত্বক পুড়ে গেলে বা কেটে গেলে সারিয়ে তোলে। আগুনে যদি আপনার ত্বক কোথাও জ্বলে পুড়ে যাই অথবা কোথাও কেটে গেলো তারপর আপনি যদি সেই ক্ষত স্থানটি তে সঙ্গে সঙ্গে মধু লাগিয়ে দিলে ক্ষত স্থানটি অনেক তাড়াতড়ি সেরে উঠবে।
৪.৪. রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে মধুর উপকারিতা
নিয়মিত মধু খেলে আমাদের শরীরে ইমিউনিটি শক্তি কে বাড়িয়ে তোলে , যার ফলে আপনার জ্বর , সর্দি , কাশি ইত্যাদি রোগ হলে সেগুলি তাড়াতড়ি সরিয়ে তুলতে অনেক সাহায্য করে। ছোট খাটো কোনো অসুখ হলে আপনি সহজেই দুর্বল হয়ে পড়বেন না।
৪.৫. কোলেস্টরল কে কমায়
মধু নিয়মিত খেলে আপনার কোলেস্টরল কে কমাবে। যাদের ডায়াবেটিস এর ভয় থাকে তারা যদি চিনির পরিবর্তে মধু ব্যাবহার করে তাহলে তাদের আর ডায়াবেটিস দেখা দেবে না। আর যেসব ব্যাক্তির আগে থেকেই ডায়াবেটিকস আছে তারা মাঝে মাঝে এই মধুর সেবন করতে পারেন।
৪.৬. রক্ত উদপাদনে সাহায্য করে
যেসব ব্যাক্তি রক্ত শুন্যতায় ভুগছেন তারা নিয়মিত এই মধুর সেবন করতে পারেন , জানা যাই যে মধুর মধ্যে থাকা উপাদান রক্ত কে তৈরী করতে অনেক বেশি কার্যকরী।
৪.৭. গলার স্বর ঠিক রাখে
যারা সঙ্গীত জগতে আছেন তাদের কে বিশেষ ভাবে এই মধু সেবন করতে বলা হয়ে থাকে। গলার স্বর কে ভালো রাখতে মধুর উপকারিতা অনেক ভালো ভাবে পাওয়া যাই। বেশি কথা বললে বা গান গাইলে আমাদের গলা মাঝে মধ্যে ব্যথা বা গলার স্বর ভেঙে যাই সেখানে গরম জলের সাথে মধু বা শুধু মধু খেলেও আমাদের গলার স্বর ঠিক হয় এবং গলা কেউ সুস্থ রাখতে অনেক সাহায্য করে।
• সেরা 7 টি ওটস এর উপকারিতা যা আপনাকে সুস্থ রাখবে
৪.৮. শিশু দের জন্য মধুর উপকারিতা
- শিশু দের খুব তাড়াতড়ি সর্দি কাশি লেগে যাই তার জন্য আপনি এক চামচ করে মধু খাওয়া তে পারেন , শিশু দের গলায় মধু পড়লে খুব তাড়াতাড়ি সর্দি কাশি থেকে রেহাই দেয়।
- আপনার শিশু কে আপনি ছোট বয়েস থেকেই মধুর অভ্যেস করতে পারেন কারণ মধুর মধ্যে থাকা উপাদান শিশুর মস্তিস্ক উন্নত করে খুব সাহায্য করে তার ফলে শুরু থেকেই ব্রেনের বিকাশ ঘটতে থাকে।
- বাচ্চারা সারাদিন খেলাধুলা তে মগ্ন থাকে আর তার জন্য তাকে এনার্জিও রাখতে হবে , মধু আপনার বাচ্চা কে রোজ এক চামচ করে খাওয়ালে এনার্জি বাড়বে এবং সহজেই কালো হয়ে পরবে না।
Note: আপনি আপনার শিশু কে এক বছরের পর থেকে মধু খাওয়াতে পারবেন , তার আগে অবশ্যই একবার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়াই ভালো।
৫. ত্বক ভালো রাখতে মধুর উপকারিতা
- রোদে বেরোলেই আমাদের ত্বকের মধ্যে সান বার্ন বা সান টান পরে যাই সেই গুলো কে সরিয়ে তুলতে সব থেকে ভালো ঘরোয়া উপায় হলো এই মধু। এলোভেরা জেলের সাথে যদি কাঁচা মধু মিশিয়ে লাগানো হয় তাহলে খুব তাড়াতড়ি আপনার সান টান দূর হবে।
- মধু আপনার মুখে ক্লিনজার হিসেবে খুবই কার্যকরী , মধুর মধ্যে থাকা এন্টিসেপটিক এবং এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আপনার মুখের ছিদ্র গুলি থেকে ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে , কাঁচা মধুর সাথে টক দই মিশিয়ে লাগালে একটি সুন্দর ক্লিনজার এর মতো কাজ করবে ফলে আপনার ত্বক আরো তরতাজা হয়ে উঠবে।
- অনেক সময় কম বয়সেই আমাদের মুখের মধ্যে বয়েসের ছাপ দেখা যাই , চামড়া ঝুলে যাওয়া , রিঙ্কেলস , বলিরেখা ইত্যাদির সমস্যার মুখে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে মধুর উপকারিতা অপরিসীম। মধু ত্বকের মধ্যে ব্যবহার করলে রিঙ্কেলস পরে না , স্কিন কে ময়েশ্চরাইজার করে , ত্বক আগের থেকে আরো উজ্জ্বল এবং লাবণ্য ময়ী হয়ে উঠে।
৬. মধুর অপকারিতা
মধুর উপকারিতা প্রচুর তবে আমাদের এটাও জানতে হবে যে কারা এই মধু খেতে পারবে না , অনেক সময় অজান্তেই আমরা মধু খেয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনি। চলুন তাহলে দেখে নি কোন ব্যাক্তি এই মধুর সেবন করতে পারবে না।
- অনেকের পরাগ দানা থেকে এলার্জি থাকে , মধু তৈরী হয় ফুলের পরাগ থেকে তাই যাদের এরকম এলার্জির সমস্যা রয়েছে সেই সব মানুষদের মধু থেকে দূরে থাকায় নিরাপদ।
- এক বছরের নিচে শিশু দের কখনোই মধু খাওয়ানো উচিত নয় কারণ কম বয়েসে মধু খাওয়ালে শিশু পঙ্গু বা প্যারালাইসিস এর শিকার পর্যন্ত হতে পারে।
- মধু তে থাকা আন্টিঅক্সসিডেন্ট উপাদান টি উচ্চ রক্তচাপকে কমাতে সাহায্য করে কিন্তু বেশি পরিমানে মধু সেবন করতে রক্তচাপের পরিমান অনেক গুন্ বেশি বেড়ে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিকস রোগী যারা আছেন তাদের নিয়মিত মধু খাওয়া উচিত নোই কারণ তাতে রক্তে শর্করার পরিমান আরো বেড়ে যাবার আশঙ্কা থাকে। হাঁ আপনি মাঝে মধ্যে মধুর ব্যাবহার করতে পারেন।
- সঠিক পরিমানে মধু ব্যাবহার করলে আপনার কোনো ক্ষতি হবার সম্ভবনা নেই , প্রতিদিন ৪-৫ চামচ মধু খাওয়া উচিত এর থেকে বেশি হলে কোষ্টকাঠিন্য এর মতো অসুখেও আপনাকে পড়তে হতে পারে।
- অল্প মুধ যেমন দাঁতের পক্ষে ভালো তেমনি অত্যাধিক মধু আপনার দাঁতের জন্য ক্ষতিকর বেশি মধু খেলে দাঁতে এনামেল তৈরী হয়ে দাঁত দুর্বল হয়ে পরে , বেশি মধু খেলে দাঁতে ক্যাভিটি সৃষ্টি হতে পারে।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে আমরা জানলাম যে খাঁটি মধু আসলে কি এবং কিভাবে আমরা সঠিক খাঁটি মধু কে বেছে নেবো। তারপর জানলাম মধুর উপকারিতা গুলি কি কি এবং তা বাচ্চাদের কিভাবে সাহায্য করে তাছাড়াও মধুর উপকারিতা সাথে সাথে তার অপকারিতা গুলি কি কি থাকতে পারে।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি মধুর উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া মধুর উপকারিতা বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবান
বঙ্গজ্ঞান টিম