সুপার কম্পিউটার কি ? সুপার কম্পিউটার এর ব্যবহার (What is Super Computer)

4.5/5 - (6 votes)

বর্তমানে আমরা ইনফরমেশন টেকনোলজির জগতে বসবাস করছি ,আর এই টেকনোলজি কম্পিউটার ছাড়া কোনো কাজে লাগবে না । টেকনোলজির সাহায্যে আমরা যে সমস্ত তথ্য বা ইনফরমেশন জানতে পারি সেইসব কম্পিউটার এর জন্য সম্ভব হয়েছে । আমাদের নিত্যদিনের কাজে আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি সেটাকে সাধারণ কম্পিউটার বলা হয়ে থাকে । সাধারণ কম্পিউটার দিয়ে যে কোনো সাধারণ কাজ করা যায় যেমন ওয়ার্ড এক্সেল এ কাজ করা , গেম খেলা , প্রেজেন্টেশন তৈরী করা , ভিডিও বা ইমেজ ফাইল এডিট করা ও দেখা , কোনো ছোটো ক্যালকুলেশন করা ইত্যাদি ।

সাধারণ কম্পিউটার ছাড়া আরও এক ধরণের কম্পিউটার রয়েছে , যা বড়ো বড়ো কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য ব্যবহার করা হয় । এই কম্পিউটার সাধারণ কম্পিউটারের তুলনায় বড়ো বড়ো কাজ কিছু সেকেন্ড এর মধ্যে সম্পূর্ণ করে দেয় , যেমন বড়ো বড়ো মেশিন বানানো ,আবহাওয়া বা Weather এর সম্বন্ধে তথ্য দেয় , প্রাকৃতিক সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে থাকে ইত্যাদি এছাড়া আরও বড়ো কাজ সম্পূর্ণ করা কম্পিউটারে নাম হলো সুপার কম্পিউটার ।

Super কম্পিউটারের নাম হয়ত আপনারা অনেকেই শুনেছেন এবং এর সম্বন্ধে কিছুটা হলেও হয়তো আপনি জানতে পারেন , তাই আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি Super কম্পিউটারের সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য , চলুন তাহলে শুরু করা যাক 

 

সুপার কম্পিউটার কি 

Super কম্পিউটারের সম্বন্ধে জানার আগে আমরা আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করবো যে কম্পিউটার কি , কম্পিউটার হলো এমন একটি ডিভাইস যে বিভিন্ন Input device (যেমন কীবোর্ড , মাউস ) এর সাহায্যে কম্পিউটার User এর কাছে ডেটা সংগ্রহ করে , এরপর সেই ডেটা কে Process করে কম্পিউটার User কে Output অর্থাৎ তথ্য প্রদান করে । একটি সাধারণ কম্পিউটার এইভাবে কাজ করে থাকে , কিন্তু একটি Super কম্পিউটারের কাজ এর থেকে অনেক গুন্ বেশি এবং দ্রুত হয়ে থাকে । যেখানে অনেক বেশি কাজ খুব কম সময়ের মধ্যে করার প্রয়োজন হয়, সেখানে এই Super Computer কে ব্যবহার করা হয় ।

 

Super Computer সাধারণ কম্পিউটারের মতো একই সময়ে একটি কাজ করেনা বরং Super কম্পিউটার এক সময়ে অনেক গুলি কাজ একসাথে করতে পারে । কারণ একটি Super কম্পিউটার Serial Processing বদলে Parallel Processing এর ভিত্তিতে কাজ করে ।

সাধারণ কম্পিউটার যে কোনো কাজ করার জন্য Serial Processing এর ব্যবহার করে থাকে যাতে এক সময়ে একটি কাজ করা যায় , অর্থাৎ একটা কাজ শেষ হওয়ার পর অন্য কাজের প্রসেসিং চালু হয় , ফলে এই সাধারণ কম্পিউটারে কাজের স্পিড কম হয় । কিন্তু একটি Super কম্পিউটারে অনেক Processor লাগানো থাকে যা নিমেষেই প্রতি সেকেন্ডে কোটি কোটি ক্যালকুলেশন করতে পারে , এই জন্য Super কম্পিউটার Parallel Processing এর সাহায্যে একটি বড়ো কাজকে ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করে দেয় , এরপর সেই সব অংশ গুলিকে সমস্ত Micro Processor আলাদা আলাদা করে কাজ টিকে সম্পূর্ণ করে । 

Super কম্পিউটারে অনেক গুলি Micro Processor একসাথে কাজ করে জটিল সমস্যা বা ক্যালকুলেশন গুলিকে নিমেষে সমাধান করে দেয় , এই কারণে এই ধরণের কম্পিউটারকে Super Computer বলা হয় , কারণ এই কম্পিউটার কঠিন থেকে কঠিনতম কাজকে খুব সহজে সমাধান করে দেয় । 

Super কম্পিউটার ১ সেকেন্ডে ১০০ কোটি গণনা বা ক্যালকুলেশন করতে পারে , সুপার কম্পিউটারের গতি বা স্পিড এর পরিমাপ FLOPS ( Floating Points Operations Per Second ) এর দ্বারা করা হয় , সেখানে একটি সাধারণ কম্পিউটারের গতি বা স্পিড এর গণনা বা ক্যালকুলেশন MIPS ( Million Instruction Per Second ) দ্বারা করা হয় ।

এবার আপনাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই ভাবছেন যে সাধারণ কম্পিউটারে যেরকম অপারেটিং সিস্টেম থাকে তো এই সুপার কম্পিউটারে কি অপারেটিং সিস্টেম থাকে । যখন প্রথম Super Computer আবিষ্কার করা হয়েছিল তখন Unix অপারেটিং সিস্টেম এর ব্যবহার করা হতো , কিন্তু সময় এবং টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে এখন বেশিরভাগ সুপার কম্পিউটারে Linux অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় । এছাড়া প্রয়োজন অনুসারে Centos , bullxCRAY Linux অপারেটিং সিস্টেম এর ব্যবহার করা হয় ।

 

 • অপারেটিং সিস্টেম কি ? অপারেটিং সিস্টেম কিভাবে কাজ করে ?

 

বেশিরভাগ Super কম্পিউটার Scientific অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় ,  Traditional Programming Language এবং Modern Programming Language এর ব্যবহার করা হয় , এছাড়া C,C ++ ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যবহার করা হয়ে থাকে । 

একটি Super কম্পিউটার একটি সাধারণ কম্পিউটারের থেকে সব দিক থেকেই ভালো এবং উন্নত হয়ে থাকে , তাই এর মূল্য বা দাম অনেক বেশি হয় বলে সবাই এটি কিনতে পারে না । একটি Super কম্পিউটারের মূল্য বা দাম নির্ভর করে যে এটি কত FLOPS এর স্পীডে কাজ করে ,  যে Super কম্পিউটারের স্পিড সবচেয়ে বেশি হবে তার মূল্য বা দাম ততই বেশি হবে ।

Super কম্পিউটারের আকৃতি সাধারণ কম্পিউটারের তুলনায় অনেকটাই বড়ো হয় এর উচ্চতা ৫ ফুট থেকে শুরু করে ১০০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে তাই এই সুপার কম্পিউটারের দাম অনেক বেশি হয় । 

একটি Super কম্পিউটারের মূল্য বা দাম ১.৫ লক্ষ ডলার থেকে শুরু করে ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে । একটি Super কম্পিউটার কতগুলি কম্পিউটারের সমষ্টিতে তৈরী হয়েছে তার উপর এর আকৃতি বা সাইজ নির্ভর করে । একটি Super Computer ১০ অথবা ১০০ কিংবা ১০০০ কম্পিউটার মিলে তৈরী হতে পারে এবং এই কম্পিউটার গুলি একসাথে কাজ করে ।

সুপার কম্পিউটার এর ব্যবহার 

ছোটো খাটো কাজের জন্য সাধারণ কম্পিউটার যথেষ্ট , কিন্তু যেখানে বড়ো বড়ো কাজের কথা আসে তখন সুপার কম্পিউটার এর ব্যবহার করা হয় । যেখানে খুব কম সময়ে অনেক বড়ো বড়ো কাজ করার প্রয়োজন হয় সেখানে কাজের জন্য সুপার কম্পিউটার রাখা হয় । বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় , যাতে এটি বড়ো বড়ো ডেটাবেস কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং বেশি মাত্রায় কাজ বা Operations । 

Super কম্পিউটার শক্তিশালী ও মূল্যবান হওয়ার দরুন এটি জটিল থেকে জটিলতম কাজে ব্যবহার করা হয় যেমন Weather এর রিপোর্ট পেতে , Climate Research বা জলবায়ু এর তথ্য , বড়ো বড়ো Mathematical ক্যালকুলেশন , Medical  Science , মহাকাশ ও স্যাটেলাইট এর বিভিন্ন তথ্য পেতে ইত্যাদি এছাড়া আরও বিভিন্ন জটিল কাজে Super Computer ব্যবহার করা হয় ।

 

   • স্যাটেলাইট কি ? এর কাজ কি ? সম্পূর্ণ তথ্য

 

সুপার কম্পিউটার এর ইতিহাস

সুপার কম্পিউটারের আবিষ্কার কোনো একজন ব্যক্তি করেনি বরং অনেক জনের প্রচেষ্টায় এবং সময়ের সাথে সাথে সুপার কম্পিউটারের উৎপত্তি হয়েছে , যদি সেভাবে দেখতে যাই তাহলে Super Computer বানানোর পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান Seymour Cray এর রয়েছে । Seymour Cray কে সুপার কম্পিউটারের জনক ও বলা হয় , পৃথিবীর প্রথম Super Computer ১৯৬০ সালে নির্মাণ হয়েছিল , যার নাম ছিল CDC 1604

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ২ টি কম্পিউটার আমেরিকা তে রয়েছে , যাদের মধ্যে একটির নাম হলো Summit এবং অপরটি SierraSummit Super Computer ২০১৮ সালে জুন মাসে সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার হিসেবে পরিচিত হয়েছিল । এর আগে চীন দেশে সবচেয়ে শক্তিশালী Super কম্পিউটার ছিল যার নাম Sunway Taihulight , এর মূল্য ছিল প্রায় ২৭৩ মিলিয়ন ডলার

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ টি Super কম্পিউটারের মধ্যে ৫ টি রয়েছে আমেরিকার কাছে , ২ টি রয়েছে চীনের কাছে , এবং বাকি ৩ টি Switzerland , জাপান এবং জার্মানি এর কাছে রয়েছে ।

 

Super Computer এর ব্যাপারে ভারত ও বেশ এগিয়ে , কারণ বর্তমানে ভারতের কাছে ৫ টি শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার রয়েছে , যাদের নাম হলো Pratyush Cray XC40 , Sahastra Cray, XC40 , Aaditya IBM / Lenovo System , IIT Delhi HPC , Param Yuva 2 ইত্যাদি ।

ভারতে প্রথম সুপার কম্পিউটার এসেছিলো ১৯৯১ সালে যার নাম ছিল Param 8000 , বর্তমানে ভারতে সবচেয়ে শক্তিশালী ও আধুনিক Super কম্পিউটার হলো Pratyush Cray XC40 । এই Super কম্পিউটারের মেমরি হলো  ১.৫ টেরা বাইট , এটি ভারতের পুনে শহরে IIT তে রয়েছে । ভারতের Super কম্পিউটারের সর্বোচ্চ গতি হলো 42.56 TFLOPS / Second , আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন এই সুপার কম্পিউটার কে বানানো হয়েছিল । এই Super কম্পিউটার ভারতে তাপমাত্রা , ঝড় , বৃষ্টি , বাতাসের গতি নির্ণয় ইত্যাদি সঠিক ভাবে করতে পারে । এছাড়া ভারতে Automobile , Medical , Engineering এবং বিভিন্ন রিসার্চের কাজে Super কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হয় ।  

একনজরে : আজকে আমরা কি কি জানলাম ?

প্রথমে জানলাম সুপার কম্পিউটার কি  ? তারপরে জানলাম সুপার কম্পিউটারের কাজ কী ? এটি কোথায় ব্যবহার করা হয় ?

তারপরে জানলাম বিভিন্ন Super কম্পিউটারের মূল্য , এবং সব শেষে জানলাম Super কম্পিউটারের ইতিহাস ।

আশা করি আজকের আমাদের এই পোস্ট থেকে আপনি সুপার কম্পিউটার কি এবং সুপার কম্পিউটার সম্বন্ধে অন্যান্য তথ্য জানতে পেরেছেন , আমাদের আজকের এই পোস্ট যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অতি অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন আর আপনার প্রিয়জন ও বন্ধু দের সাথে শেয়ার করবেন ।

ধন্যবাদ 

বঙ্গজ্ঞান টীম 

শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

4 thoughts on “সুপার কম্পিউটার কি ? সুপার কম্পিউটার এর ব্যবহার (What is Super Computer)”

Leave a Comment