খাবার তো আমরা সকলে প্রতিদিন খেয়ে থাকি, কিন্তু আমরা যে খাবার খাই সেই খাবারে কি পুষ্টিগুণ অর্থাৎ নিউট্রেশন রয়েছে সেগুলো আমরা বেশিরভাগ সময়ে দেখিনা , খাবারে থালায় যেটা এলো সেটাকে আমরা খেয়ে নি । অনেক সময়ে মুখের স্বাদে আমরা অনেক অ স্বাস্থ্যকর খাদ্য খেয়ে নি , যেটা আমাদের শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকারক ।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য
তবে বেশ কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের কে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ রাখে , এই খাবার গুলি আপনার প্রতিদিন এর খাবারের সাথে যদি রাখতে পারেন তাহলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে এবং শরীর সুস্থ থাকলে আপনার মন মেজাজ ও ভালো থাকবে । আমাদের আজকের এই পোস্টে আমরা এরকম ৯ টি স্বাস্থ্যকর খাদ্য সম্বন্ধে আলোচনা করবো যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
সুচিপত্র
১. পালংক শাক
আমরা সকলেই কম বেশি শাক খেয়ে থাকি, কিন্তু শাক এর মধ্যে অন্যতম হলো এই পালংক শাক ।
পালংক শাক এ রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ যা আপনাদের শরীরের এনার্জি ও ক্যালোরি এর ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে , এছাড়া পালংক শাক এ রয়েছে ভিটামিন এ , ভিটামিন কে এবং আইরন ও ফাইবার । আপনার শরীরে আইরন ও ফাইবার এর ঘাটতি মেটাতে পালংক শাক অবসসই প্রতিদিন এর খাবারের রুটিনে রাখুন ।
২. কালো শিম এর বীজ বা রাজমা
আপনারা সকলেই বাজারে সবুজ রঙের শিম এবং কালো দুটোই দেখেছেন আবার খেয়েছেন , কিন্তু আপনি কি জানেন এই সিমের বীজের পুষ্টিগত গুনের সম্বন্ধে ? শিম যেহেতু মরসুমের সবজি তাই সারাবছর এটা পাওয়া যায় না , কিন্তু বাজারে মুদির দোকান গুলিতে আপনি খুব সহজে সিমের বীজ গুলি কিনতে পেয়ে যাবেন , এই বীজ গুলিকে সাধারণত রাজমা বলা হয় ।
৩. আখরোট
আখরোট খেতে আমরা কমবেশি অনেকেই পছন্দ করি, অন্যান্য সব ড্রাই ফ্রুইটস এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্য এর তালিকায় আখরোট অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার।
আখরোটের উপরের অংশটি হয় ভীষণ শক্ত ধরণের এবং সেটি কে ভাঙার পর ভেতরে থাকে বাদামের মতো অংশটি, আপনি যদি আপনার মস্তিস্ককে ভালো রাখতে চান বা আপনার বাচ্চার ব্রেন পাওয়ার কে আরো উন্নত করতে চান তাহলে আপনার জন্য আখরোট হলো একটি উপযুত খাবার।
আখরোটের মধ্যে সবথেকে বেশি পাওয়া যাই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কে দ্বিগুন পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে, তার সাথে সাথে হার্টের সাস্থ কেউ খুব ভালো রাখতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদরা বলে থাকে আপনি যদি প্রতিদিন আখরোট খান তাহলে সেটার পরিমান হওয়া উচিত ২-৪ এর মধ্যে, এর থেকে বেশি খাওয়া উচিত নয়, আখরোট খেলে যেমন আমাদের শক্তি বাড়ে, তেমনি হাড় কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে আরো মজবুত করে তোলে, এছাড়াও আখরোটের মধ্যে থাকা গুনাগুন আমাদের স্মৃতিশক্তি কে খুবই ভালো রাখে।
৪. বীটরুট
শীতের শুরু থেকেই আমরা এই সবজি বা ফল টির দেখা পেয়েই থাকি, স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে বীটরুটের জুড়ি মেলা ভার, এটি কে আমরা রান্না করে সবজি এর মতো ও খেয়ে থাকি আবার ফলের মতো কাঁচা বা তার জুস বানিয়েও খাওয়া হয়ে থাকে।
বীটরুটের মধ্যে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, আয়রন এর মতো অনেক পুষ্টিকর উপাদান আছে, বীটরুট খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কে আরো বাড়িয়ে তোলে, এবং ভেতর থেকে শরীর কে অনেক ভালো রাখে। এই ফল টির মধ্যে থাকা গুনাগুন আমাদের মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল কে স্বাভাবিক রাখে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কেউ বাড়িয়ে তোলে। বীটরুটের মধ্যে পাওয়া যাই প্রচুর পরিমানে আয়রন তাই যেসব ব্যাক্তি রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন, বা যাদের হিমোগ্লোবিন কম আছে তারা অবশ্যই নিয়মিত এই বীটরুট খাবার চেষ্টা করুন।
৫. ডার্ক চকোলেট
ছোট থেকে বোরো এমন কেউ নেই যে এই চকোলেট খেতে ভালোবাসে না, তবে সব ধরণের চকোলেট আমাদের সাস্থের জন্য ভালো নয়, তবে এই এই ডার্ক চকোলেট খেতে যেমন ভালো সুস্বাদু তেমনি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে খুবই উপকারী।
আপনি যদি নিয়মে ডার্ক চকোলেট খান তাহলে আপনার মস্তিস্ক ভালো থাকবে, এতে থাকা কোকোয়া আপনার মেজাজ কে রাখে, এবং এক ধরণের খুশি হরমোন কে উৎপাদিত করে, ফলে ডিপ্রেশন, মন খারাপ এগুলো কে দূর করতে সাহায্য করে।
ডার্ক চকোলেটে থাকে ফ্লাভনয়েড যার জন্য আমাদের শরীরে রক্ত প্রবাহের মাত্রা কে সঠিক ভাবে পরিচালনা করে, ডার্ক চকোলেট আমাদের যে খারাপ কোলেস্টরল আছে তা কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টরল কে বাড়িয়ে তোলে।
৬. রাস্পবেরি
রাস্পবেরি হয়তো আমরা অনেকেই খেয়েছি এটি অনেক তা চেরি প্রজাতির মতো, ছোট ছোট লাল বর্ণের হয়ে থাকে, তবে এই রাস্পবেরি স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ডায়াবেটিস এর রোগী যারা আছেন যারা এই ফলটি খেতে পারেন, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কে অনেক খানি কমাতে সাহায্য করে, যারা ওজন নিয়ে ভুগছেন তারা এই ফল টিকে খাদ্যের তালিকায় রাখতে পারেন এটি ওজন কমানর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। রাস্পবেরি আমাদের শরীরে আমাইলয়েড বিটা প্রোটিনের জমাট বাঁধা টিকে কমাতে পারে, ফলে আলঝেইমারের মতো রোগের ঝুঁকি অনেক তাই কমে যাই।
৭. রসুন
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবারে এই রসুনের ব্যবহার হয়েই থাকে, যেকোনো ধরণের রান্না তে খাবারের স্বাদ বাড়াতে এই রসুনের মসলা দেওয়া হয়ে থাকে।
প্রাচীন যুগে রসুন কে ওষুধি রূপে ব্যবহার করা হতো, রসুনের মধ্যে নায়াসিন, সালফার, ভিটামিন বি৬, ফোলেট, সেলেনিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের পুষ্টিগুণ আছে, এছাড়াও রসুন কে সুপার ফুড ও বলা হয়ে থাকে।
রসুনে থাকে এই সেলেনিয়াম ক্যান্সার এর কোষ গুলো ধ্বংস করতে ভীষণ ভাবে কাজে দেয়, রসুনের মধ্যে আন্টি ফাংগাল এবং আন্টি ব্যাকটেরিয়াল এর মতো গুনাগুন আছে যা যেকোনো রোগ সংক্রমণ থেকে দূরে রাখে। রসুনে পাওয়া যাই আলিসিন নামক একটি আন্টি অক্সসিডেন্ট যা আমাদের ইমিউন সিস্টেম কে ভালো রাখে, রসুন এর মধ্যে থাকা উপাদান আমাদের মস্তিস্ক কেউ উন্নত করে, তাছাড়া হৃদরোগের ঝুঁকি কে কমিয়ে দেয় এবং উচ্চরক্ত চাপ কে প্রতিরোধক করে।
৮. লেবু
আমাদের সবার বাড়িতে লেবু তো থেকেই এবং আমরা প্রায় তা খেয়েও থাকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে লেবু অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে থাকে।
লেবু তে পাওয়া যাই প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি তাই লেবু খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধকের ক্ষমতা অনেক গুন্ বেরে যাই, এবং আমাদের শরীরকে যেসব ফ্রি রেডিক্যাল আছে সেগুলি থেকে রক্ষা করে। লেবু শরীর কে ডিহাইড্রেশন এর হাত থেকে বাছাই, শরীরকে হাইড্রেড রাখে এবং ডিঅক্সিফাই করে, শরীরের যেসব টক্সিক পদার্থ আছে তা বের করে দিতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
৯. মসুর ডাল
আমাদের প্রতিদিন খাবারে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি মসুর ডাল থাকবেই, খাবারের শুরু তাই আমরা এটি খেয়েই থাকি, মসুর ডাল হলো অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাদ্য, যা আমাদের শরীরে অনেক উপকারে আসে।
মসুর ডালের গুনাগুন আমাদের চোখকে ভালো রাখে, এবং আমাদের দৃষ্টিশক্তি কে আরো প্রখর করে তোলে, কারণ এই ডালের মধ্যে আছে বিটা-ক্যারোটিন আর আমরা জানি যে এই বিটা-ক্যারোটিন আমাদের চোখের জন্য কতখানি উপকারী। এছাড়াও মসুর ডাল আমাদের হাড় কে সুস্থ রাখে, শক্ত করে তোলে, তার সাথে সাথে মসুর ডাল আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী, অর্থাৎ মসুর ডাল কে সৌন্ধর্যের কাজেও ব্যাবহার হয়ে থাকে।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে আমরা জানলাম যে স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে কি কি এমন খাবার আছে যা আমাদের শরীর কে সুস্থ রাখতে কাজে দেয়, এবং তারপর এমন কোন কোন খাদ্য আছে আমাদের আমাদের শরীর কে ভীষণ ভাবে উপকার দেয়, সেইসব নিয়ে ভালো করে জেনে নিলাম।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাদ্য বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টিম