Rom কি ? rom এর কাজ কি ?

5/5 - (4 votes)

যদি আপনি কম্পিউটার এবং কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সম্বন্ধে একটু জ্ঞান রাখেন তাহলে আপনি ROM এর নাম নিশ্চয় শুনেছেন , এবং আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা Rom কি এবং এটির কাজ কি জানেন । কিন্তু অনেকেই আছে যারা এটার সম্বন্ধে জানেনা আজকের এই পোস্ট টি তাদের জন্য এবং যারা জানে তারাও এই পোস্ট টি পড়তে পারে , কারণ হতে পারে  rom এর এমন কিছু বিষয় আছে যেটা আপনার জানা নেই , সেক্ষত্রে এটি আপনার কাজে আসবে । 

 

আমাদের সৃষ্টিকর্তা যেমন আমাদের মস্তিস্ক বানিয়েছে যাতে আমরা আমাদের সমস্ত তথ্য , স্মৃতি , কথা বার্তা ইত্যাদি মস্তিষ্কে জমা রাখতে পারি এবং প্রয়োজন মতো সেগুলো আমাদের মনে রাখি এবং কাজ করি । ঠিক সেই ভাবে বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার তো তৈরী করেছে কিন্তু এইমস্তিষ্কের কাজ টা করার জন্য এক ধরনের চিপ তৈরী করেছে যেটাকে মেমরি বলা হয়ে থাকে  ।

কম্পিউটারে প্রোগ্র্যাম ,ডেটা ও তথ্য স্টোর করার জন্য মেমরি এর প্রয়োজন হয় , যাতে আমরা যখনি কম্পিউটার থেকে কোনো ডেটার উপর কাজ করতে চাই তখন মেমরি সেই ডেটাকে আমাদের সামনে তুলে ধরে । এছাড়া একটি কম্পিউটারে মেমরি অনেক ধরণের হয়ে থাকে কিন্তু আমরা আজ আমরা  Rom এর সম্বন্ধে আলোচনা করবো । যেমন এই Rom কি ? Rom এর কাজ কি? rom এর পূর্ণরূপ কি ? এবং rom কতপ্রকারের হয় ও কি কি ? 

চলুন তাহলে শুরু করা যাক        

Rom কি ?

Rom এর পূর্ণরূপ হলো Read Only Memory , যেটা শুধুমাত্র ডেটা রিড করতে প্রয়োজন হয় । এটি একটি চিপ এর মতো হয়ে থাকে যেটাকে কম্পিউটারের মাদার বোর্ডে লাগানো হয়ে থাকে । যেটা কম্পিউটারের ডেটা কে স্থায়ী ভাবে স্টোর করে থাকে । Rom একটি non volatile memory অর্থাৎ যখন কম্পিউটার এর পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় তখন Rom নিজের মেমরি তে স্টোর হওয়া ডেটা কে রিমুভ করেনা ।

Rom হলো এমন একটি মেমরি যেটা কম্পিউটার তৈরী করার সময় কম্পিউটার কে স্টার্ট করার জন্য যে বেসিক প্রোগ্রাম ও সেটিং এর প্রয়োজন হয় সেটি এই rom এর মধ্যে স্টোর থাকে যেটা সাধারণত আমাদের কম্পিউটারকে বুটিং (কম্পিউটার কে স্টার্ট করার পদ্ধতিকে বুটিং বলা হয় ) করে । এই মেমরি তে স্টোর করা ডেটা পরিবর্তন বা ডিলিট করা যায় না , শুধুমাত্র রিড করা যায় , তাই rom এর পূর্ণরূপ হলো Read Only Memory ।

Rom এ স্টোর করা প্রোগ্রাম গুলি কে  BIOS এর মতো বেসিক ইনপুট আউটপুট সিস্টেম বলা হয়ে থাকে । তার সাথে কম্পিউটারে Firmware সফটওয়্যার কে স্টোর করার জন্য rom এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে । 

 

Rom এর ব্যবহার কম্পিউটার ছাড়াও আরও বেশ কিছু ডিভাইস এ করা হয় যেমন মোবাইল ফোন , ডিজিটাল ঘড়ি বা ওয়াচ , ওয়াশিং মেশিন , টেলিভিশন , রোবট , ড্রোন , ভিডিও গেম ডিভাইস ইত্যাদি ।  কম্পিউটারে Rom মেমরি ছাড়াও Ram (Ram এর পূর্ণরূপ Random Access Memory ) ও সেকেন্ডারি মেমরির ব্যবহার করা হয়ে থাকে । Ram কম্পিউটারে অস্থায়ী রূপে ডেটা স্টোর করে থাকে অর্থাৎ কম্পিউটার বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে Ram এ থাকা সমস্ত ডেটা ডিলিট হয়ে যায় , এই কারণে Ram কে Volatile মেমরি ও বলা হয়ে থাকে । 

Ram ও Rom দুটোই কম্পিউটারের main মেমরি হিসেবে কাজ করে , এবং সেকেন্ডারি মেমরি কম্পিউটারে অতিরিক্ত মেমরি হিসেবে কাজ করে । কম্পিউটারে স্থায়ী রূপে ডেটা সেভ রাখার কাজে সেকেন্ডারি মেমরি কে ব্যবহার করা হয় । সেকেন্ডারি মেমরির স্টোরেজ ক্ষমতা main মেমরির থেকে অনেক বেশি হয় । HDD ও SSD হার্ডডিস্ক , পেনড্রাইভে , সিডি ও ডিভিডি ড্রাইভ , এসডি কার্ড ইত্যাদি এগুলি হার্ডডিস্ক এর উদাহরণ ,  আজকাল অনেকেই এগুলো ব্যবহার করে তাদের এক্সট্রা এবং বেশি ডেটা স্টোর করতে ।

 

HDD ও SSD কি ? এদের মধ্যে পার্থক্য গুলো কি কি ? এবং এদের সুবিধা ও অসুবিধা  

 

Rom এর কাজ কি ?

Rom সাধারণত একটি চিপ এর মতো হয়ে থাকে , যেটা মাদার বোর্ড এবং সিপিইউ এর সাথে যুক্ত থাকে । Rom কোনো কম্পিউটারে main মেমরি বা স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয় , যার মধ্যে আমরা যে কোনো রকমের  ডেটা স্টোর করতে পারি যেমন সফটওয়্যার , অ্যাপ্লিকেশনস , ডকুমেন্টস , অডিও এবং ভিডিও ফাইলস । Rom হলো একটি স্থায়ী বা Permanent স্টোরেজ ডিভাইস যেটাতে আমরা যে কোনো সময়ে আমাদের ডেটাকে এক্সেস করতে পারি ।

Rom সাধারণত আমাদের কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইস কে বুটিং অর্থাৎ স্টার্ট করতে সাহায্য করে , তাই এটিকে কম্পিউটার এবং মোবাইলের একটি বিশেষ অংশ হিসেবে ধরা হয় , আমরা কখনোই Rom ছাড়া আমাদের ডেটাকে স্টোর করে রাখতে পারবো না । 

যখন আমরা কোনো কম্পিউটার বা মোবাইল অন অর্থাৎ চালু করি তখন কোনো সফটওয়্যার বা আপ্লিকেশন কে চালানোর জন্য কম্পিউটার বা মোবাইল সিস্টেম Rom থেকে ডেটা এক্সেস করে , তারপরে Ram এর সাহায্যে সেই সফটওয়্যার ও আপ্লিকেশন গুলি কাজ করা শুরু করে । এরপর যখন আমরা আপ্লিকেশন টিকে বন্ধ করি , তখন সেই আপ্লিকেশন এর ডেটা আবার Rom এর মধ্যে ফেরত চলে যায় এবং তার সাথে সাথে Ram থেকে ডেটা খালি হয়ে যায় । 

আমরা কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে যতরকম ফটো , অডিও , ভিডিও , আপ্লিকেশন ডাউনলোড করি সেই সব ডেটা Rom এর মধ্যে স্টোর হয়ে থাকে ।

চলুন এবার দেখে নি Rom কত প্রকারের হয় এবং সেগুলির নাম কি 

আরও পড়ুন

অপারেটিং সিস্টেম কি ? অপারেটিং সিস্টেমের কাজ কি ?

 

সবাই তো এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন কিন্তু আপনি জানেন এন্ড্রয়েড কি ?  চলুন দেখে নি

 

Rom কত প্রকার ও কি কি ?

Rom এর গঠন, উৎপাদন ও ডেটা স্টোর এর হিসেবে  rom কে ৩ ভাগে ভাগ করা হয় । সেই ৩ টি Rom এর নাম হলো 

» PROM 

» EPROM

» EEPROM 

চলুন এই ৩ ধরণের Rom এর সম্বন্ধে একটু জেনে নেওয়া যাক 

১. PROM 

PROM এর সম্পূর্ণ নাম Programmable Read Only Memory , এটি সাধারণত মেমরি চিপ এর মতো হয়ে থাকে যেটাকে OTP অর্থাৎ One Time Programmable Chip ও বলা হয়ে থাকে । কারণ এই Rom এর মধ্যে ডেটাকে শুধু মাত্র একবার প্রোগ্রাম করা যেতে পারে , এবং তারপরে সেই ডেটাকে মুছে ফলে বা ডিলিট করা যায় না । ব্যবহারকারীরা বাজার থেকে খালি PROM কিনে এবং তারপরে PROM এর মধ্যে প্রয়োজন অনুসারে ডেটা স্টোর করতে পারে ।

এই মেমরি তে ছোটো ছোটো Fuse ব্যবহার করা হয় যার মধ্যে প্রোগ্রামিং এর সাহায্যে নির্দেশ বা instruction দেওয়া হয় যে সেটা কিভাবে কাজ করবে । যেটাকে দ্বিতীয়বার আপডেট ও ডিলিট কোনোটাই যায় না । PROM এর মধ্যে স্থায়ী ভাবে ডেটা কে রাইট করার প্রোগ্রামিং কে বার্নিং বলা হয়ে থাকে আর এই কাজের জন্য একটি বিশেষ ধরণের মেশিনের প্রয়োজন হয় , যেটাকে PROM Burner বলা হয়ে থাকে । 

ডিজিটাল ডিভাইস এর ডেটাকে সবসময় সুরক্ষিত রাখার কাজে PROM এর ব্যবহার করা হয় ।

 

২. EPROM

EPROM এর সম্পূর্ণ নাম Erasable Programmable Read Only Memory , এই মেমরি তে থাকা ডেটা বা তথ্য গুলিকে ডিলিট করার জন্য এই চিপে থাকা কোনো  ইনফরমেশন বা তথ্য গুলিকে আলট্রা ভায়োলেট রে দ্বারা ৪০-৪৫ মিনিট ধরে লাইট পাস করতে হয় । EPROM এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এই EPROM থেকে খুব সহজেই ডেটা ডিলিট করা যায় এবং নতুন করে প্রোগ্রাম ও করা যায় । এছাড়া এই EPROM কে রিপ্রোগ্রাম ও করা যেতে পারে অর্থাৎ পুরোনো প্রোগ্রাম কে ডিলিট করে তার মধ্যে নতুন প্রোগ্রাম করা যেতে পারে । 

EPROM অন্যান্য ROM এর তুলনায় সস্তা এবং বিশ্বাসযোগ্য কিন্তু এই rom এর কিছু ত্রুটি ও রয়েছে । যেমন এই EPROM থেকে ডেটা ডিলিট করতে গেলে অনেক বিদ্যুত খরচ হয় , আর এই ROM এর মধ্যে নতুন করে প্রোগ্রাম করার জন্য এটাকে কম্পিউটার থেকে খোলার প্রয়োজন হয় , আর আপনি যখন আলট্রা ভায়োলেট রে দিয়ে ডেটা ডিলিট করা হয় তখন rom এ থাকা সমস্ত ডেটা ডিলিট হয়ে যায় । 

 

৩. EEPROM বা Flash Memory 

EEPROM এর সম্পূর্ণ নাম Electrically Erasable Programmable Read Only Memory , এটি একটি অপরিবর্তনশীল মেমরি অর্থাৎ এই rom এর মধ্যেও ডেটা কে স্থায়ী ভাবে স্টোর করা হয় । EEPROM বা FLASH মেমরি কে ইলেকট্রিকাল সিগন্যাল বা বিদ্যুতের সাহায্যে এর মধ্যে থাকা স্থায়ী ডেটা কে ডিলিট করা যেতে পারে । এই ধরণের মেমোরি এর ব্যবহার সাধারণত ডিজিটাল ক্যামেরা , MP3 প্লেয়ারে করা হয় । এই ধরণের মেমরি কে সাধারণত হাইব্রিড মেমরিও বলা হয় কারণ এটি ram এর মতো ডেটাকে রিড ও রাইট করতে পারে কিন্তু rom এর মতো ডেটা সেভ করে রাখতে পারে ।

এই EEPROM কে RAM ও ROM মিশ্রণও বলা যেতে পারে । EPROM এর মতো EEPROM এর ডেটা ডিলিট করতে হলে এটিকে কম্পিউটারের বাইরে বের করতে হয় । আর এর মধ্যে আমরা শুধুমাত্র বাছাই করা ডেটা গুলিকে ডিলিট করতে পারি , যেটা আমরা EPROM এ করতে পারি না । EEPROM এ প্রোগ্রাম করা অনেক সহজ এবং আপনি অসংখবার প্রোগ্রাম করা যেতে পারে ।

   

Rom এর সুবিধা গুলি কি কি ?

সব জিনিসের সুবিধা অসুবিধা থাকে , ঠিক তেমন Rom এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে , চলুন তাহলে সেগুলো দেখে নেওয়া যাক 

১. সিস্টেম সফটওয়্যার বা ফার্মওয়্যার সফটওয়্যার কে স্টোর করার কাজে rom এর ব্যবহার করা হয় ।

২. Rom Ram এর থেকে অনেকটা সস্তা হয় এবং বিভিন্ন রকম সাইজ এরও হয়ে থাকে ।

৩. Rom এর ডেটা গুলি নিজে নিজে পরিবর্তন হয় না , এটাতে শুধুমাত্র ডেটাকে রিড করা যায় , rom এর মধ্যে আমরা কোনো নতুন ডেটা লোড করতে পারবো না , কারণ এটিতে একবার ডেভেলপার ও প্রোগ্রামার দ্বারা রাইট করা হয় ।

৪. Rom একটি non volatile memory হওয়ার দরুন কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলেও আমাদের ডেটা সেফ এবং স্থায়ী ভাবে স্টোর থাকে । 

৫. ROM কম্পিউটারের অন্য এক মেমরি অর্থাৎ RAM এর থেকে বেশি ভরসাদায়ক হয় , কারণ Ram এর মধ্যে ডেটা ততক্ষন সেভ থাকে যতক্ষণ কম্পিউটারে পাওয়ার সাপ্লাই থাকে ।

৬. Rom এর মধ্যে অনেক ভাবনা চিন্তা করে প্রোগ্রাম করা হয়ে থাকে , এর কারণ হলো এটাকে আমরা বার বার পরিবর্তন করতে পারিনা ।

একনজরে  : আজকে তাহলে আমরা  rom সম্বন্ধে  কি কি  জানলাম ? চলুন  সংক্ষেপে  সেগুলো দেখে নি

Rom কি ? rom এর পূর্ণরূপ কি ?

rom এর কাজ কি বা এটি কিভাবে  কাজ করে ?

Rom কত  প্রকারের হয় এবং সেগুলো কি কি  এবং সেই গুলির সম্বন্ধে বিস্তারিত  তথ্য

Rom এর সুবিধা গুলি কি কি ?

আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি নিশ্চয় জানতে পেরেছেন যে Rom কি ? এবং rom এর কাজ কি ? এছাড়া যদি Rom সম্বন্ধে আপনাদের  আরও কিছু জিজ্ঞাসা থাকে , তাহলে অতি অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন । যদি আমাদের পোস্ট আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে এই পোস্ট টি শেয়ার করুন এবং সবাইকে Rom সম্বন্ধে জানার সুযোগ করে দিন ।

এছাড়া যদি আমাদের এই ওয়েবসাইট আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে নোটিফিকেশন বাটন ও করে আমাদের ব্লগ এর  সাথে যুক্ত থাকুন , এরপর যখনই আমরা নতুন ব্লগ পোস্ট পাবলিশ করবো তখন সবার আগে আপনার কাছে নোটিফিকশন পৌঁছে যাবে , এবং সবার আগে আপনি আমাদের পোস্ট দেখতে পাবেন ।

ধন্যবাদ 

বঙ্গজ্ঞান টীম    

শেয়ার করুন:

নমস্কার , বঙ্গজ্ঞান ওয়েবসাইটে আপনাদের স্বাগত , আপনাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন ব্যবসা , ক্যারিয়ার , কম্পিউটার জ্ঞান , ইন্টারনেট ইত্যাদির উপর আমরা তথ্য নিয়ে আসি প্রতি সপ্তাহে সোমবার এবং শুক্রবার । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের সবার কাছে বাংলা ভাষায় সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া।

2 thoughts on “Rom কি ? rom এর কাজ কি ?”

Leave a Comment