পেয়ারা খেতে ভালোবাসে না এমন কম জনই আছে, খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি তার গুন্, এই পেয়ারা গাছ খুব সহজেই হয়ে থাকে এবং বাজারে পেয়ারার দামও কম হয়ে থাকে। প্রতিদিন যদি আপনি একদি করেও পেয়ারা খেয়ে পারেন তাহলে আপনাকে আর কোনো রোগ নিয়ে ভাবতে হবে না, কারণ পেয়ারার মধ্যে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, আন্টি অক্সসিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন কাজে লাগে।
পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
পেয়ারা হলো গীষ্মকালীয় ফল যার প্রায় ১০০ থেকেও বেশি প্রজাতি রয়েছে, এটি সাধাণতঃ হালকা সবুজ এবং হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে, শুধু পেয়ারা নয় পেয়ারার খোসা তে কমলালেবুর থেকে পাঁচ গুন্ বেশি ভিটামিন সি থাকে। এছাড়াও পেয়ারার পাশাপাশি পেয়ারার পাতা তেও প্রচুর পরিমানে ঔষুধি গুণাবলী রয়েছে, শরীরে হজম ঠিক রাখতে এবং রক্তে শর্করার পরিমান কে ঠিক রাখতে এই পাতার জুড়ি মেলা ভার, ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ফল টিকে যদি আপনি আপনার ডায়েটে রাখেন তাহলে আপনার সাস্থ খুবই ভালো থাকবে।
পেয়ার বীজে ওমেগা- ৩ এবং ওমেগা- ৬ এবং পলিয়ান-সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড পাওয়া যাই, যা ক্যান্সার এর মতো রোগ কে সারাতেও সক্ষম, তাই বলা যেতেই পারে পেয়ারা গাছের প্রায় সর্বত্রই আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান, তবে তার সাথে আমাদের এটাও জানতে হবে যে এই সব ভিটামিন আমাদের শরীরে পৌছিয়ে কিভাবে কাজে লাগে।
তাই বঙ্গজ্ঞান নিয়ে এসেছে আজকেই এই পোস্টটি যেখান থেকে আমরা জেনে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা সম্মন্ধে এবং এই পেয়ারার গুণাবলী আমাদের শরীরে কিভাবে কাজে লাগে তাহলে চলুন আজকের এই পোস্টটি শুরু করা যাক।
সুচিপত্র
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
পেয়ার মধ্যে সবকিছু গুণাবলী পাওয়া যাই তাই তাকে সুপারফুড ও বলা হয়ে থাকে, ১০০ গ্রাম পেয়ারা তে যা ভিটামিন সি রয়েছে তা একটি কমলা লেবুর থেকেও ৪ গুন্ বেশি, এছাড়াও পেয়ারা মধ্যে ভিবিন্ন বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে।
- পটাসিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- ফাইবার
- লোহা
- আন্টি-অক্সসিডেন্ট
- ফোলেট
- ভিটামিন A
১০০ গ্রাম পেয়ারা তে পাওয়া যাই :-
প্রোটিন ০.৮২ গ্রাম, ফসফরাস ২৫ মি.গ্রা. , সোডিয়াম ৩ মি.গ্রা. , ভিটামিন A ৭৯২, আঁশ ৫.৪ গ্রাম।
ইমিউনিটি শক্তিকে বারাতে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের শরীরে ইমিউনিটি শক্তিকে ঠিক রাখা অত্যন্ত দরকারি, যদি আমাদের ইমিউনিটি শক্তি ভালো না থাকে তাহলে সবসময় শরীর খারাপ হতে পারে, এবং তা সারতেও অনেক সময় লেগে যাই। পেয়ারার মধ্যে পাওয়া যাই ভিটামিন C যা শরীরে কোলজিন সিন্থেসিস কে বাড়ায় যার ফলে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম কে বাড়ায়।
চোখ ভালো রাখতে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন নিয়ম করে যদি আমরা পেয়ারা খেতে পারি তাহলে আমাদের আর চোখের সমস্যায় কোনোদিন পড়তে হবে না, অনেকে এমন আছেন যাদের বয়েসের সাথে সাথে চোখের অবস্থায় খারাপ হতে শুরু করে কারণ হয়তো প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাবে, পেয়ারার মধ্যে ভিটামিন A পাওয়া যাই যা দৃষ্টি শক্তি ঠিক রাখতে অনেক সাহায্য করে।
ওজন কমাতে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
যারা ওজনের সমস্যায় ভুগছেন তারা তাদের খাদ্য তালিকায় এই ফল টি রাখতেই পারেন, কারণ একটি পেয়ারার মধ্যে মাত্র ৩৭ ক্যালোরি থাকে এবং আমরা জানি এই ফলটি ফাইবার যুক্ত তাই যদি আপনি এই ফাইলটির সেবন করেন তাহলে আপনার খিদে কমবে এবং খাবার তাড়াতড়ি হজম হবে ফলে আপনার শরীরে অতিরিক্তি মেদ ও খুবই সহজেই কিন্তু ঝরবে।
শর্করার মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
পেয়ারার মধ্যে মধ্যে থাকা ফাইবার এবং আন্টি অক্সসিডেন্ট শরীরে শর্করার মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, সেক্ষেত্রে আপনাকে এই পেয়ারা পাতা কে ফুটিয়ে চা এর মতো করে পান করতে হবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে যে সব ব্যাক্তি এই চা পান করে থাকেন তাদের শরীরে শর্করার পরিমান বেশি হতে পারে না, ডায়াবেটিকস রোগী যারা আছেন যারা নিয়ম করে এই পেয়ারা পাতার চা তৈরী করে খেতে পারেন তাহলে আপনি পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা সঠিক ভাবে পাবেন।
হজম শক্তি কে ভালো করে
পেয়ারা তে ফাইবার থাকা দরুন আমাদের কোষ্টকাঠিন্য দূর করে ফলে খাবার হজম ও তাড়াতড়ি হয়, পেয়ারা তে এন্টিমাইক্রোফোবিয়াল রয়েছে যা শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়া কে ধ্বংস করে ফলে ডাইরিয়ার মতো সমস্যার মুখে আমাদের আর পড়তে হয় না।
ক্যান্সার কে দূরে রাখতে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
বৈজ্ঞানিক রা মনে করেন পেয়ারা পাতার মধ্যে এমন কিছু ওষুধি গুণাবলী রয়েছে যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কে বন্ধ করতে পারে, পেয়ারা তে প্রচুর পরিমানে রয়েছে আন্টি অক্সসিডেন্টের উপাদান যা ক্যান্সার সৃষ্টি করা কোষের হাত থেকে আমাদের মুক্তি প্রদান করে। বৈজ্ঞানিক এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পেয়ারা পাতার তেল সাধারণ ক্যান্সারের ওষুধের থেকে ৪ গুন্ বেশি শক্তিশালী, তবে হাঁ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে বৈজ্ঞানিক মহলে গবেষণা চলছে।
ত্বক ভালো রাখতে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
আপনার ত্বক যদি অকাল বার্ধক্যের জন্য জড়াজিত, আপনার মুখে যদি ব্রণ হয়ে থাকে তাহলে আপনি ত্বক ভালো রাখতে নিয়ম করে এই পেয়ারা কিন্তু খেতে পারেন, পেয়ার সাথে সাথে পেয়ারার পাতাও খুবই উপকারী আমাদের ত্বকের জন্য।
পেয়ারার মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ আপনার ত্বক কে ভেতর এবং বাইরে থেকে ভালো করে তুলবে সাথে ব্রণ অতিরিক্ত ডাক ঝোপের সম্ভবনাও অনেক কবে যাবে এবং আপনার ত্বক সময় এর সাথে সাথে ভালো হয়ে উঠবে।
দাঁত এবং মাড়ি ভালো রাখতে সাহায্য করে
আমাদের মুখের ভেতরের সাস্থ ভালো রাখা জন্য ও পেয়ারা অত্যন্ত দরকারি, পেয়ারা খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, আবার মুখের দাঁত ও মারি কেউ শক্ত রাখতে সাহায্য করে। আবার আপনি পেয়ারা পাতাকে কাঁচা অবস্থা তাই চিবিয়ে খেতে পারেন, যারা নিয়মিত দাঁতের সমস্যায় ভোগেন তারা খুবই আরাম পাবেন ধীরে ধীরে দাঁতে ব্যাথা কমবে এবং আরো বেশি শক্ত করে তুলবে।
পেয়ারা খাওয়ার পার্শপ্রতিক্রিয়া
পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা সাথে সাথে তার কিছু অপকারিতাও আছে যা আমাদের জানা খুবই জরুরি।
- গর্ভবর্তী মহিলা যারা আছেন তাদের বেশি খাওয়া একদমই উচিত নয় বেশি খেলে পেয়ারা তে থাকা ফাইবার হজমে সমস্যা করতে পারে, দিনে একটি পেয়ারা ঠিক আছে তাও যত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই খাওয়া ভালো।
- কোনো পুষ্টিকর জিনিস এই বেশি শরীরে পৌঁছানো উচিত নয় তাই কখনোই একসাথে অনেক বেশি পেয়ারা খাওয়া একদমই ঠিক নয় তানাহলে পেট ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, পেটে কামড় পাওয়া বা মোচড় দিয়ে ব্যাথার সৃষ্টি হতে পারে।
- আপনার যদি একজাইমা থাকে তাহলে আপনি পেয়ারা এবং এর পাতা দুটো থেকেই দূরে থাকুন, একজাইমা অবস্থায় এই পেয়ারা খেলে শরীরে জেলা পড়ার সৃষ্টি হতে পারে।
- সাধাণতঃ পেয়ারা রক্তে শর্করার মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণে রাখে তবে আপনার যদি হাই ব্লাডপ্রেসার থাকে তাহলে এই পেয়ারা খাওয়া থেকে এড়িয়ে চোলাই ভালো, বা একবার সুগারের টেস্ট করিয়ে তারপর এই ফল খাবার সিদ্ধান্ত নিন।
- যদি আপনার সর্দি কাশির সমস্যা তাকে তাহলে এই সময় পেয়ারা খাওয়া বন্ধ করতে হবে বিশেষত যদি আপনার কাশি হয়ে থাকে পেয়ারা খেলে কাশি বেড়ে যেতে পারে তাই শরীর খারাপ চলা কালীন পেয়ারা খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
প্রথমে আমরা জানলাম যে পেয়ারার মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ পাওয়া যাই তারপর জানলাম পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি কি এবং তার পার্শপ্রতিক্রিয়া কি হতে পারে।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ