বর্তমানে টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে ওয়্যারলেস অর্থাৎ কোনো তার ছাড়াই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস তৈরির উপর বিশেষ করে জোর দেওয়া হচ্ছে , আজকের সময়ে বেশিরভাগ ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ওয়্যারলেস অর্থাৎ তার বিহীন হয়ে গেছে , যেমন তারযুক্ত মাউস ছাড়াই আমরা এখন কম্পিউটার চালাতে পারি , তারযুক্ত হেডফোন ছাড়াই আমরা এখন আমরা গান শুনতে পারি । বর্তমান সময়ে প্রতিটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কে একে ওপরের সাথে যুক্ত করার জন্য বিভিন্ন মাধমের ব্যবহার করা হয়ে থাকে , তার মধ্যে একটি মাধমের নাম হলো ব্লুটুথ ।
ওয়্যারলেস টেকনোলজি সফল হয়েছে একমাত্র ব্লুটুথ সিস্টেম এর জন্য , এই ব্লুটুথ এর সাহায্যেই এক ডিভাইস এর সাথে অন্য একটি ডিভাইস কোনো তার বা ওয়্যার ছাড়াই যুক্ত হতে পারে ।
আপনাদের মধ্যে সবাই হয়তো এই ব্লুটুথ এর নাম শুনেছেন এবং এক মোবাইল থেকে অন্য মোবাইল ডেটা ট্রান্সফার করেছেন , কারণ ডেটা ট্রান্সফার করার জন্য এটি একটি সেরা উপায় , বর্তমানে এই ব্লুটুথ বিভিন্ন কাজে খুব বেশি ব্যবহার হওয়ার কারণে এটি আমাদের নিত্যদিনের কাজে একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে , সেটা কোনো মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে হোক বা অন্যান্য কোনো ডিভাইস এর জন্য , এছাড়া আপনি যে কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যদি দেখেন সেখানে ব্লুটুথ এর সুবিধা নিশ্চয় দেখতে পারবেন ।
কিন্তু আপনি কি জানেন এই ব্লুটুথ কি ? এবং এটি কিভাবে কাজ করে ? তাই আজকের এই পোস্টে ব্লুটুথ এর সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য আমরা আলোচনা করবো ।
ব্লুটুথ কি
ব্লুটুথ হলো এমন একটি টেকনিক যেটা দিয়ে বিনা তার এর সাহায্যে এক বা একাধিক ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কে একে ওপরের সাথে যুক্ত করে ডেটা আদান প্রদান করা যায় ।
ব্লুটুথ যোগাযোগ বা কমিউনিকেশন এর জন্য Frequency Radio Wave এর ব্যবহার করে , যেটা এক বা একাধিক ডিভাইস কে যুক্ত করে ফলে সেই ডিভাইস গুলোর মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক তৈরী হয় , আর এই নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে সমস্ত ডিভাইস একে অপরের সাথে communicate করতে পারে ।
আমরা যদি অন্যান্য communication মাধ্যমের কথা বলি তাহলে তাদের তুলনায় ব্লুটুথ এর range অনেকটাই কম , অর্থাৎ অনেক কম দূরত্বের বা কম জায়গার মধ্যে এই ব্লুটুথ কাজ করে , আসলে ১০ থেকে ১০০ মিটার এর দূরত্বের মধ্যে communicate করার জন্যই এই ব্লুটুথ কে বানানো হয়েছে ।
• অপারেটিং সিস্টেম কি ? অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকারের হয় ?
এই টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে কোনো ইউসার কে কোনো রকম কোড বা তার ও এডাপটার এর প্রয়োজন পরে না ।
ব্লুটুথ সর্বাধিক ৭ টি ডিভাইস এর সাথে একসাথে যুক্ত হতে পারে । ব্লুটুথ এর ব্যবহার এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন , ডিজিটাল ক্যামেরা , কম্পিউটার , ল্যাপটপ , প্রিন্টার ইত্যাদিতে করা হয় , এছাড়া যে কোনো ডিভাইসে ডেটা ট্রান্সফার করার প্রয়োজন হয়ে থাকে ।
ডেটার ব্যাপার যেখানে থাকে সেখানে ডেটা সুরক্ষা থাকাটাও জরুরি তাই এই ব্লুটুথ টেকনোলজি তে ডেটা সুরক্ষার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হয় । ডেটা সুরক্ষার জন্য যখন দুটি ডিভাইস একে ওপরের সাথে যুক্ত হয় তখন একটি পিন কোড বা notification এর দ্বারা দুটি ডিভাইস যাচাই বা verify হয়ে একে ওপরের সাথে যুক্ত হয় ।
সুচিপত্র
১. ব্লুটুথ এর ইতিহাস
১৯৯৪ সালে Ericsson কোম্পানি তে কর্মরত Dr. Jaap Hartsen এই ব্লুটুথ এর আবিষ্কার করেন । এই ব্লুটুথ ব্যবহারের জন্য ৬ টি বড়ো বড়ো কোম্পানি যেমন Sony Ericsson , Nokia , Toshiba , IBM , Intel ও Ericsson মিলিত হয়ে একটি গ্রুপ তৈরী করে যার নাম Bluetooth Special Interest Group ।
Bluetooth টেকনোলজির নামকরণ করা হয়ে ছিল Denmark এর রাজা King Herald Bluetooth এর নামে , King Herald Bluetooth দশম শতাব্দীর শাসক ছিলেন , King Herald Bluetooth সেই সময় রাজাদের সাথে যুদ্ধ করার বদলে পারস্পরিক চুক্তি করার রাজনীতি করেছিল যার ফলে অনেক রাজা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধকরা থেকে বিরত থাকে । তার এই গুণাবলীর জন্য তার নাম থেকে এই টেকনিক এর নাম Bluetooth রাখা হয়েছে , কারণ এই Bluetooth টেকনোলজি এর দ্বারা এক বা একধিক ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কে যুক্ত করে ডেটা আদান প্রদান করা যায় ।
গত কয়েক বছর ধরে Bluetooth এর বেশ কয়েকটি version মার্কেটে এসেছে যেমন V1.2 , V2.0 , V2.1 , V3.0 , V4.0 , V4.1 ও V5.0 , এই সকল Version এর আলাদা আলাদা Speed এবং Data transfer rate রয়েছে , কিন্তু এই সব Bluetooth Version গুলি compatible হয়ে থাকে , অর্থাৎ দুটি ডিভাইস এর version আলাদা আলাদা হলেও দুটি ডিভাইস একে ওপরের সাথে কোনো বাধা ছাড়াই যুক্ত হতে পারে এবং ডেটা ট্রান্সফার করতে পারে ।
২. ব্লুটুথ কিভাবে কাজ করে
Bluetooth এর ব্যবহার বর্তমান সময়ে বেশ কিছু ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এর মধ্যে করা হচ্ছে , যেমন
› মাউস ও কীবোর্ড কে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এর সাথে wirelessly যুক্ত করা ,
› কম্পিউটার ও ল্যাপটপ এর সাথে প্রিন্টার কে যুক্ত করা ,
› দুটি ল্যাপটপ কে একসাথে যুক্ত করা এবং ডেটা শেয়ার করা ,
› কোনো অডিও ডিভাইস বা Speaker কে কম্পিউটার বা মোবাইলের সাথে যুক্ত করার জন্য ,
› দুটো মোবাইল কে একসাথে যুক্ত করে ডেটা শেয়ার করা ইত্যাদি
মোবাইল এবং ডেস্কটপ কম্পিউটার ও ল্যাপটপে Bluetooth সিস্টেম আগে দিয়ে থাকে , এছাড়া আলাদা ভাবে Bluetooth Device ও কিনতে পাওয়া যায় , যার সাহায্যে যে কোনো ডিভাইস কে Bluetooth Enable করা যেতে পারে ।
Bluetooth ব্যবহার করার জন্য প্রথমে এটিকে চালু করতে হয় তারপর তার আসে পাশে Bluetooth চালু থাকা ডিভাইস এর সাথে যুক্ত হয়ে যায় এবং দুটি ডিভাইস এর মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক তৈরী হয় । নেটওয়ার্ক তৈরী হওয়ার পর এই ডিভাইস দুটি ডেটা শেয়ার বা ডেটা আদান প্রদান এর জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় । যদি এই দুটি ডিভাইস এর মধ্যে কোনো একটি ডিভাইস নেটওয়ার্ক এরিয়ার বাইরে চলে যায় তখন এই নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ।
সমস্ত ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কে একসাথে যুক্ত করার জন্য একটি নেটওয়ার্ক গঠন করতে হয় , এই নেটওয়ার্ক এর সাহায্যে একে ওপরের সাহায্যে যুক্ত হতে পারে এবং communicate করতে পারে । যখন বেশ কিছু ব্যক্তি একে ওপরের ডিভাইস এর সাথে Bluetooth এর সাথে যুক্ত থাকে তখন তাদের মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক তৈরী হয় তখন সেটিকে Bluetooth Network বলা হয় ।
এই নেটওয়ার্ক এর মধ্যে দুটি Element থাকে , একটি হলো Master , এবং দ্বিতীয় টি হলো Slave । যখন অনেক গুলি ডিভাইস একসাথে যুক্ত হয় তখ তার মধ্যে একটি Primary অর্থাৎ Master ডিভাইস হয়ে থাকে এবং বাকি সব ডিভাইস Secondary অর্থাৎ Slave ডিভাইস হয়ে থাকে ।
Bluetooth টেকনোলজি তে সাধারণত দুই প্রকারের নেটওয়ার্ক টেকনোলজি হয়ে থাকে , একটি হচ্ছে Piconet এবং অপরটি Scatternet ।
২.১. Piconet
যখন একটি Master ডিভাইস ও একটি Slave ডিভাইস কিংবা একটি Master ডিভাইস এবং অনেক গুলি Slave ডিভাইস একসাথে যুক্ত হয় যে Network তৈরী হয় , তখন তাকে Piconet Network বলে । Piconet নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ ৭ টি ডিভাইস যুক্ত হতে পারে । তাই এটি তে সর্বোচ্চ ৮ টি ডিভাইস অর্থাৎ একটি Master ডিভাইস ও ৭ টি Slave ডিভাইস যুক্ত করা যেতে পারে ।
২.২. Scatternet
অনেকগুলি Piconet এর সমষ্টিকে Scatternet বলা হয়ে থাকে , একটি Piconet এ যে Slave ডিভাইস রয়েছে , ওই ডিভাইস টি আবার অন্য Piconet এ Master ডিভাইস হিসাবে কাজ করতে পারে । এই ভাবে একটি ডিভাইস দুটি Piconet এর অংশ হতে পারে , কিন্তু একটি ডিভাইস একসাথে দুটি Piconet এর Master ডিভাইস হতে পারে না ।
Scatternet কে এক বা একাধিক Piconet এর সাথে যুক্ত করে তৈরী করা হয়ে থাকে , যদি কোনো ডিভাইস একটি Piconet এ Slave ডিভাইস হয় এবং অন্য Piconet এ Master ডিভাইস হয়ে থাকে , তাহলে ওই ডিভাইস যে Piconet এ Slave হিসেবে কাজ করে সে Piconet থেকে পাওয়া Data বা Information অন্য Piconet অর্থাৎ যেখানে সে Master ডিভাইস হিসেবে রয়েছে , সেখানে Slave ডিভাইস এ একই ডেটা পাঠাতে পারে ।
আরও পড়ুন :
সেরা ১০ টি স্টুডেন্ট অনলাইন ইনকাম
HDD ও SSD কী ? HDD ও SSD এর মধ্যে পার্থক্য গুলো কী কী? ( HDD and SSD )
কীভাবে একজন সফল ইউটিউবার হওয়া যায় ? সেরা ১৫ টি টিপস
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো? কিভাবে একজন ফ্রীলান্সার হওয়া যায় ?
৩. ব্লুটুথ এর সুবিধা
ব্লুটুথ কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে সেটা তো জানা হলো , এবার দেখে নেওয়া যাক ব্লুটুথ এর সুবিধা গুলি কি কি
১. Bluetooth কোনো তার বা Wire ছাড়াই দুটি আলাদা ডিভাইস কে যুক্ত করতে পারে ।
২. খুব সহজে একটি ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইস এ ডাটা আদান প্রদান করা যায় ।
৩. এই টেকনোলজি বেশ কিছু ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস এ ব্যবহার করা হয় যেমন Mobile , Car System , Printer , Webcam , GPS System , Keyboard & Mouse , Digital Watch , Digital Camera ।
৪. Bluetooth টেকনোলজি বেশ Powerful , কারণ এটি দুটি আলাদা ঘরের মধ্যে থাকা দুটি ডিভাইস কে যুক্ত করতে পারে , কিন্তু অবশ্যই তা ১০ থেকে ৫০ মিটার এর মধ্যে হতে হবে ।
৫. দামের দিকে এটি অন্যান্য Wireless টেকনোলজির থেকে অনেকটাই সস্তা হয় ।
৬. এই টেকনোলজি যে কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এর ব্যাটারী থেকে খুব কম Consumption নিয়ে থাকে।
৭. Bluetooth Data ট্রান্সফার এর ক্ষেত্রে security প্রদান করে থাকে ।
একনজরে : আজকের আমাদের এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম ?
প্রথমে জানলাম ব্লুটুথ কি ? তারপরে জানলাম ব্লুটুথ কি ভাবে কাজ করে এবং ব্লুটুথ এর ইতিহাস , এবং সবশেষে জানলাম Bluetooth এর বেশ কয়েকটি সুবিধা ।
আশা করি আজকের আমাদের এই পোস্ট থেকে আপনি ব্লুটুথ এর সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , যেমন ব্লুটুথ কি , এবং এটি কিভাবে কাজ করে এবং এর সুবিধা গুলি কি কি । আমাদের আজকের এই পোস্ট যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন , এবং আপনার যদি অন্যান্য কোনো বিষয়ের উপর তথ্য জানার থাকে সেটাও আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন ।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টীম