আমরা সকলেই জানি যে ইন্টারনেটের আবিষ্কার অনেক বছর আগে হয়েছে , কিন্তু সেই সময় খুব কম মানুষ ইন্টারনেট সম্বন্ধে জানতো এবং ব্যবহার করতে পারতো, কারণ সেই সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য অনেক ক্যাবল বা তারের প্রয়োজন হতো আর সেটা খুব জটিল ব্যাপার ছিল । কারণ ইন্টারনেটের প্রধান মাধ্যমে ছিল ক্যাবল , কিন্তু দিনের পর দিন টেকনোলোজি উন্নত হতে লাগলো এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার সহজ হতে থাকলো।
টেকনোলোজি এর উন্নতির সাথে সাথে বিভিন্ন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট বা কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এমন এক টেকনোলোজি তৈরী করলো যার দ্বারা কোনো ক্যাবল ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করা যেতে পারে , যার নাম ওয়াইফাই । আর এই ওয়াইফাই এর ব্যবহার আপনি আমি এখন সব জায়গায় করে থাকি ।
আজ থেকে ১০ – ১২ বছর আগে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সকলের কাছে সম্ভব ছিল না ,আর যারা ব্যবহার করতো তারা এর জন্য বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে তে যেত । কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট আমাদের সকলের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে , আর তার জন্য কোনো ক্যাবল এরও প্রয়োজন পরে না ।
তাই আজকের এই পোস্টে এতো জনপ্রিয় একটি টেকনোলজি এর সম্বন্ধে সম্পূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করবো । যেমন ওয়াইফাই কি , এটি কিভাবে কাজ করে এবং এর কি কি সুবিধা রয়েছে ।
ওয়াইফাই কি ? (wifi কি)
Wifi এর পূর্ণরূপ হলো ‘Wireless Fidelity’ , ওয়াইফাই এমন একটি জনপ্রিয় টেকনোলজি যা হাই স্পিড ইন্টারনেট এবং নেটওয়ার্ক কানেকশন দেওয়ার জন্য রেডিও সিগন্যাল এর ব্যবহার করে। John O Sullivan ও John Deane ১৯৯১ সালে ওয়াইফাই এর আবিষ্কার করেছিলেন । আসলে এটি একটি ওয়ারলেস নেটওয়ার্কিং সিস্টেম যাকে WLAN বলা হয় , WLAN এর পূর্ণরূপ হলো Wireless Local Area Network ।
এটি এমন একটি টেকনোলোজি যার সাহায্যে আমরা আজকে সহজে ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক কানেকশন এর ব্যবহার করতে পারছি । যার সাহায্যে আমরা মোবাইল, প্রিন্টার ,কম্পিউটার ও ল্যাপটপ এর মতো ডিভাইস গুলিকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করতে পারি ।
সাধারণত এই টেকনোলোজি LAN (Local Area Network) এর অন্তর্গত হয়ে থাকে অর্থাৎ এই নেটওয়ার্ক এর পরিধি কম জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে । ফলে আমরা একটি সীমিত জায়গার মধ্যে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারি , শুধু ইন্টারনেট নয় এখন তো বেশ কিছু এন্ড্রয়েড এপ্লিকেশন রয়েছে যারা ওয়াইফাই এর সাহায্যে ডেটা ট্রান্সফার করে থাকে যেমন SHAREIT , XENDER ।
• ব্লুটুথ কি ? ব্লুটুথ কিভাবে কাজ করে ? (What is Bluetooth)
ওয়াইফাই এর নাম Hifi অর্থাৎ Hi Fidelity থেকে নেওয়া হয়েছে , ওয়াইফাই এমন এক টেকনোলজি যার মাধ্যমে যে কোনো কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কে wirelessly কানেক্ট করা যায় । বর্তমানে যতো ধরণের স্মার্টফোন ,ল্যাপটপ , প্রিন্টার ও কম্পিউটার রয়েছে , সেই সব গুলোর মধ্যে একটি ওয়াইফাই চিপ থাকে , যার সাহায্যে আমরা রাউটার এর সাথে আমাদের ডিভাইস কে কানেক্ট করি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি ।
Wireless রাউটার এর মাধ্যমে ওয়াইফাই যে কোনো ডিভাইস এর সাথে কানেক্ট হতে পারে, এবং ইন্টারনেট এক্সেস করতে পারে । কিন্তু রাউটার কে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করার জন্য ক্যাবল এর সাহায্য নিতে হয়, যে ক্যাবল টি ISP অর্থাৎ Internet Service Provider এর সাথে যুক্ত থাকে ।
এছাড়া আজকাল বিভিন্ন ধরণের Hotspot ডিভাইস বাজারে পাওয়া যায় , যার মাধ্যমে একসাথে অনেক গুলি ডিভাইস ওয়াইফাই এর সাথে যুক্ত হতে পারে ।
• hotspot কি ? hotspot কিভাবে চালু করব ?
সুচিপত্র
১. ওয়াইফাই কিভাবে কাজ করে ?
ওয়াইফাই টেকনোলজি তে এমন একটি ডিভাইস থাকে যা wireless সিগন্যাল কে Transmit করে যেটাকে আমরা ওয়াইফাই রাউটার বা Hotspot বলে থাকি । এখানে ওয়াইফাই রাউটার কোনো ISP এর সাথে যুক্ত হয়ে ইন্টারনেট কে রেডিও Waves বা তরঙ্গে পরিণত করে এবং এই ওয়াইফাই রাউটার এর সংলগ্ন সকল ডিভাইস ওয়াইফাই এর মাধ্যমে কানেক্ট হয় এবং একটি ছোট ওয়াইফাই এরিয়া সিগন্যাল তৈরী করে যেটাকে Wi-Fi Zone বলা হয়।
এই ছোট এরিয়া একটি Wireless Local Area Network অর্থাৎ WLAN হিসেবে কাজ করে , এই ছোট এরিয়া তে যতগুলো ডিভাইস থাকে যেমন স্মার্টফোন , ল্যাপটপ ও প্রিন্টার ইত্যাদি সব ডিভাইস গুলোতে Inbuilt Wireless Adapter থাকে , যার সাহায্যে এইসব ডিভাইস ওয়াইফাই সিগন্যাল এর সাথে যুক্ত হতে পারে । কিন্তু ডেস্কটপ বা কম্পিউটারে এরম কোনো inbuilt Adapter থাকে না , সেক্ষেত্রে আমরা আলাদা করে একটি ওয়াইফাই এডাপটার লাগিয়ে ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারি ।
• অপারেটিং সিস্টেম কি ? অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকারের হয় ?
যদি আপনারা রেলওয়ে স্টেশন , রেস্ট্রুরেন্ট ও কফি শপে যান তাহলে আপনারা নিশ্চয় ফ্রি Wi-Fi Zone দেখেছেন বা ওয়াইফাই ব্যবহার করেছেন , এছাড়া এমন কিছু শহর আছে যেখানে সরকার ওয়াইফাই জোন বানিয়ে রেখেছে অর্থাৎ সেখানে গিয়ে যে কেউ ফ্রি তে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে ।
যখন কোনো wireless কমিউনিকেশন হয় তখন Two way Radio Communication হয়ে থাকে , এখন আপনারা ভাবছেন যে Two Way Radio Communication টা আবার কিভাবে হয়, চলুন তাহলে দেখে নি
ধরুন একটি ল্যাপটপ Wi-Fi এর সাথে connect হয়ে data transmit করার জন্য ইন্টারনেটের ব্যবহার করছে , তখন আপনার ল্যাপটপের Wireless Adapter টি ডেটা কে radio waves এ পরিণত করে দেয় এবং antenna এর সাহায্যে Transmit করে । এরপর Wireless Router এই Signal কে Receive করে এবং এটিকে Decode করে দেয় । রাউটার ইনফরমেশন কে Physical Wired Ethernet Connection এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে পাঠিয়ে থাকে । আর এইভাবে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে একটি ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইস এ ডেটা Transfer করা যায় ।
আর এই প্রক্রিয়া টি ঠিক এর বিপরীতে কাজ করে , যেখানে রাউটার ইন্টারনেট থেকে ইনফরমেশন Receive করে এবং তারপর এটিকে Radio Signal এ পরিণত করে এবং ল্যাপটপ বা অন্যান্য ডিভাইস এর Wireless Adapter এ পৌঁছে দেয় ।
• ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো? কিভাবে একজন ফ্রীলান্সার হওয়া যায় ?
ওয়াইফাই রাউটার থেকে নির্গত Radio Wave দেওয়াল ভেদ করতে পারে অর্থাৎ ঘরের এক জায়গায় রাউটার থাকলেও অন্য ঘরের মধ্যে থেকেও আপনি ওয়াইফাই এর ব্যবহার করতে পারবেন । তবে রাউটার থেকে যত দূরে যেতে থাকবেন ততই এর রাউটার এর সিগন্যাল কমতে থাকবে এবং আপনি ইন্টারনেটের স্পিড কম পাবেন ।
বর্তমানে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ গুলিতে ওয়াইফাই এর সুবিধার সাথে সাথে Hotspot এর সুবিধা ও উপলব্ধ থাকে , অর্থাৎ আপনি আপনার স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ টিকে রাউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এবং অন্যান্য ডিভাইস গুলিকে ইন্টারনেট কানেকশন দিতে পারেন ।
আমাদের মধ্যে অনেকের হটাৎ করে ইন্টারনেটের ডেটা শেষ হয়ে যায় তখন জরুরি কিছু কাজের ক্ষেত্রে খুব সমস্যার সৃষ্টি হয় , তখন আপনি এই Hotspot এর মাধ্যমে কোনো বন্ধুর কাছে ওয়াইফাই নিয়ে আপনার কাজ করতে পারবেন ।
২. ওয়াইফাই এর সুবিধা গুলি কি কি ?
সব কিছুর মতো ওয়াইফাই এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে , যা আমাদের অনেক সাহায্যে করে থাকে । চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক ওয়াইফাই এর সুবিধা গুলি
১. এই টেকনোলোজি User Friendly , অর্থাৎ আপনি খুব সহজে আপনার স্মার্টফোন, ল্যাপটপ , কম্পিউটারে কানেক্ট করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন ।
২. ওয়াইফাই ব্যবহার করা খুবই সহজ , খালি আপনাকে ওয়াইফাই অন করতে হবে এবং যদি ওয়াইফাই এর মধ্যে যদি পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকে তাহলে সেই উপযুক্ত পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়াইফাই Connect করে ইন্টারনেট চালাতে পারেন ।
৩. একটা সময় সব জায়গায় ওয়াইফাই পাওয়া মুশকিল ছিল কিন্তু বর্তমানে এটি বেশিরভাগ জায়গায় উপলব্ধ থাকে । ওয়াইফাই এর সাহায্যে আপনি যে কোনো সময়ে যে কোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন , যেমন রেলওয়ে স্টেশন , Restaurant , শপিং মল , সুপার মার্কেট ইত্যাদি ।
৪. একটি ওয়াইফাই ডিভাইস এর সাথে আপনি অনেক গুলি ডিভাইস কে connect করতে পারবেন ।
৫. Cellular Network (মোবাইল এর মধ্যে যে SIM থাকে) এর থেকে এই ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক অনেক টাই ফাস্ট বা দ্রুত , কারণ এটি WLAN টেকনোলোজি তে কাজ করে ।
৬. মোবাইল ডেটা অথবা Cellular ডেটার একটি নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা থাকে , কিন্তু Broadband থেকে নেওয়া ওয়াইফাই ডেটার কোনো নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা থাকেনা , অর্থাৎ আপনি যত ইচ্ছা ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার করতে পারেন ।
৭. ওয়াইফাই এর একটা অন্যতম সুবিধা হলো আপনি বিশ্বের যে কোনো দেশে আপনার ওয়াইফাই রাউটার টি ব্যবহার করতে পারবেন ।
• কীভাবে একজন সফল ইউটিউবার হওয়া যায় ? সেরা ১৫ টি টিপস
একনজরে : আজকের এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম ?
প্রথমে জানলাম ওয়াইফাই কি ? এবং এটি কিভাবে কাজ করে ?
তারপর জানলাম ওয়াইফাই সুবিধা গুলি কি কি ?
আজকের আমাদের এই পোস্ট থেকে আশা করি আপনার ওয়াইফাই এর সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন যেমন ওয়াইফাই কি , এটি কিভাবে কাজ করে এবং সুবিধা গুলি কি কি , এছাড়া যদি আমাদের তরফ থেকে কোনো বিষয় ভুল হয়ে থাকে তাহলে আমাদের সেটা কমেন্ট করে জানাতে পারেন , আর এই পোস্ট থেকে কিছু জানতে অথবা শিখতে পারলে অতি অবশ্যই কমেন্ট করে জানান এবং আপনার বন্ধু ও প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টীম