বর্তমান সময় এ বেশিরভাগ মানুষ এর কাছে স্মার্টফোন রয়েছে , আর আপনি যেখানে যান না কেন সব জায়গায় এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারী পেয়ে যাবেন । এর মূল কারণ হলো এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন সস্তা এবং নির্ভরযোগ্য পরিষেবা প্রদান করে এবং তার সাথে এন্ড্রয়েড OS ( Operating System ) যুক্ত স্মার্টফোন গুলি আজ সারা পৃথিবীতে সেরা ও বেশি বিক্রি হওয়া স্মার্টফোন এর মধ্যে একটি ।
Android OS যুক্ত স্মার্টফোন আসার পর একটি নতুন যুগের আবির্ভাব হয়েছে । আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয় জানেন যে এন্ড্রয়েড কি ? এবং আপনি আমাদের পোস্ট টি ও নিশ্চয় কোনো এন্ড্রয়েড ফোন এর মাধ্যমে পড়ছেন । তবে এন্ড্রয়েড কি এর সাথে সাথে আপনি কি জানেন যে এর বিশেষত্ব গুলি কি কি যেগুলো কিনা এটিকে অন্যান্য মোবাইল প্লাটফর্মগুলো থেকে আলাদা করে তোলে ।
আজকের এই পোস্ট এ আমরা আপনাদের জানাবো এন্ড্রয়েড কি এবং এর সাথে জড়িত সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য গুলি দেব ।
এন্ড্রয়েড কি ?
এন্ড্রয়েড একটি লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম যা গুগল দ্বারা Development করা হয় । লিনাক্স একটি ওপেন সোর্স অর্থাৎ ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম ।
লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ডেস্কটপ কম্পিউটার ও ল্যাপটপ গুলিতে ব্যবহার করা হয় , লিনাক্স এ অনেক পরিবর্তন ও সংশোধন করে এন্ড্রয়েড তৈরী করা হয়েছে ।
এন্ড্রোয়েড বিশেষ করে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট গুলির মতো টাচ স্ক্রিন ডিভাইস এর জন্য তৈরী করা হয়েছে যাতে আমরা কম্পিউটারে যে Function বা কাজ এবং Application সফটওয়্যার গুলি ব্যবহার করি তা আমাদের মোবাইলে সহজেই ব্যবহার করা যায় ।
• অপারেটিং সিস্টেম কি ? অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকারের হয় ?
সুচিপত্র
১. এন্ড্রয়েড কি ও এর ইতিহাস
অ্যান্ডি রুবিন ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার Palo Alto তে Android Incorporation এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । যা ১৭ ই আগস্ট , ২০০৫ সালে গুগল কিনে নেয় এবং পরে আন্ড্রি রুবিন কে android incorporation এর Head হিসেবে রাখা হয় ।
এন্ড্রোয়েড হলো আন্ড্রি রুবিন এর ডাক নাম বা Nick name ,আন্ড্রি রুবিন এর সহকর্মীরা এই ডাক নাম টি দিয়েছিলো কারণ তিনি রোবট খুব পছন্দ করতেন ।
এরপর ২০০৭ সালে গুগল এন্ড্রোয়েড কে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করে , তার সাথে এন্ড্রোয়েড development এর ও ঘোষণা করা হয়েছিল গুগল এর তরফ থেকে ।
এরপর ২০০৮ সালে HTC বাজারে প্রথম এন্ড্রোয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে আসে । তারপর থেকে এন্ড্রোয়েড এর অনেক গুলি version চালু হয়েছিল যার কারণে বিশ্ব বাজারে এন্ড্রোয়েড ব্যবহাকারী দের কাছে খুব ভালো response পেয়েছে , ফলে এন্ড্রোয়েড সারা বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে ।
এরপর ২০১৩ সালে আন্ড্রি রুবিন তার বিশেষ কাজের জন্য গুগল ছেড়ে দিয়েছিলেন । তার ছেড়ে দেওয়ার পরে সুন্দর পিচাই আন্ড্রয়েড এর Head হিসেবে নিযুক্ত হন । এবং সুন্দর পিচাই এর পরিকল্পনায় আজ এন্ড্রোয়েড অপারেটিং সিস্টেম সাফল্যের শিখরে রয়েছে ।
২. এন্ড্রয়েড এর বৈশিষ্ট্য
ইতিমধ্যে এন্ড্রোয়েড একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে । এন্ড্রোয়েড এর বৈশিষ্ট্যগুলি অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম এর চেয়ে বেশ ভালো। চলুন থামলে জেনে নেওয়া যাক এন্ড্রোয়েড এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
২.১. এন্ড্রয়েড এর ইউসার ইন্টারফেস ( User Interface)
এন্ড্রোয়েড একটি সুন্দর ও attractive ইউসার ইন্টারফেস দিয়ে থাকে যা ব্যবহার করা খুব সহজ । যে কোনো সাধারণ মানুষ যিনি প্রথমবার স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন তাদের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহার করা খুব সহজ ।
• ভবিষ্যতে কম্পিউটার কোর্স করে ভালো চাকরি পেতে চান তাহলে এখানে ক্লিক করুন
২.২. কানেক্টিভিটি ( Connectivity)
এন্ড্রোয়েড এ বেশ কিছু কানেক্টিভিটির এর সুবিধা রয়েছে যেমন ওয়াই -ফাই , ব্লটুথ , হটস্পট , জিএসএম , 3G , 4G ও 5G , VOLTE , ইত্যাদি, এগুলোর ব্যবহার করে অনেক সহজে কাজ করা যায় । এবং আমাদের মোবাইল কে অন্যান্য নেটওয়ার্কগুলির সাথে Connect করতে পারি ।
• ব্লুটুথ কি ? ব্লুটুথ কিভাবে কাজ করে ? (What is Bluetooth)
২.৩. এক বা একধিক ভাষার ব্যবহার
আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে যে মোবাইল ফোন গুলির ব্যবহার করা হতো সেগুলিতে শুধুমাত্র একটা Language বা ভাষার প্রচলন দেখা যেত , যেটা হলো English । কিন্তু এন্ড্রোয়েড শুধু English নয় তার সাথে অনেক গুলি আসার ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছে । যেমন বাংলা , হিন্দি , মারাঠি , পাঞ্জাবি , গুজরাটি , তেলেগু ইত্যাদি। আপনি আপনার পছন্দ মতো ভাষাটি বেছে নিতে পারেন এবং এটি আপনার এন্ড্রোয়েড স্মার্টফোন এ ব্যবহার করতে পারেন ।
২.৪. এন্ড্রয়েড Apps বা Applications
এন্ড্রোয়েড অপারেটিং সিস্টেম যুক্ত স্মার্টফোন গুলি আসার পর মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে বেশ অনেকটাই সুবিধা হয়েছে , বিশেষ করে এই স্মার্টফোন গুলিতে ব্যবহৃত হওয়া apps বা সফটওয়্যার গুলির দ্বারা । আপনি আপনার পছন্দ মতো applications গুলি Install করে ব্যবহার করতে পারেন খুব সহজে ।
আর এই জন্য গুগল একটি প্লাটফর্ম বানিয়ে রেখেছে যার নাম Google Play Store , যেখান থেকে এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারে ।
২.৫. মাল্টিটাস্কিং
মাল্টিটাস্কিং অর্থাৎ আপনি এক সাথে বিভিন্ন কাজ করতে পারবেন এই অপারেটিং সিস্টেম এ , আপনি আপনার স্মার্টফোন এ গেম খেলতে খেলতে , ফোন করা , তার সাথে কিছু ডাউনলোড করা , সব কিছুই একসাথে করতে পারবেন , ঠিক যেমন আমাদের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ এর মধ্যে করতে পারি ।
এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এর সব চেয়ে ভালো বৈশিষ্ট্য হলো এটি ফ্রি ও ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম , সে জন্য এটি যে কোনো ফোন ব্যবহার করা যেতে পারে ।
• আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি ? ( artificial intelligence in bangla )
এন্ড্রয়েড Programmers এবং এন্ড্রয়েড developer দের মতামত অনুযায়ী এই অপারেটিং সিস্টেম এর জন্য নিত্য নতুন সফটওয়্যার বা applications বানানো খুব সহজ অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম এর থেকে ।এই কারণে অনেক নামি দামি মোবাইল কোম্পানি এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম যুক্ত স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট বাজারে এনেছে ।
গুগলের তৈরী এই অপেরেটিং সিস্টেম আজ পৃথিবীর প্রায় সকল মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয় । এই এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম কে আরও আধুনিক ও উন্নত করতে গুগল এর নতুন নতুন আপডেট আনতেই থাকে । আর এই নতুন আপডেট গুলো ব্যবহার করার জন্য আপনাকে প্রতিবার নতুন নতুন স্মার্টফোন কেনার কোনো প্রয়োজন নেই ।
নতুন আপডেট গুলি আপনার ফোনে আপনি ডাউনলোড করে ইনস্টল করে বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন । আর প্রতিবার নতুন আপডেট এ কিছু না কিছু নতুন features বা বৈশিষ্ট্য দেখা যায় । এবং তার সাথে সাথে আপনার স্মার্টফোনের speed ও performance বৃদ্ধি পায় ।
২.৬. এন্ড্রয়েড এর versions গুলি কি কি
২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত গুগল এন্ড্রোয়েড এর ১১ টি আপডেট versions চালু করেছে , গুগল সময়ের সাথে সাথে নতুন বৈশিষ্ট্য বা Features সহ versions চালু করে । গুগল এন্ড্রোয়েড অপারেটিং সিস্টেমের উপর নিয়মিত কাজ করে চলেছে এবং প্রতি বছর একটি নতুন android version চালু করছে ।
চলুন তাহলে এবার দেখে নেওয়া যাক এন্ড্রোয়েড এর সব versions গুলো
এন্ড্রয়েড Versions (২০০৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত )
Serial No. | প্রকাশের সময় বা Release Date | এন্ড্রয়েড সংস্করণ বা Android Versions | Versions এর নাম |
1 | ২৩ সেপ্টেম্বর , ২০০৮ | 1.0 | কাপকেক (Cupcake ) এর পরে ১.৬ এর পর আপডেট আসে ডোনাট (Donut) |
2 | ২৬ অক্টোবর , ২০০৯ | 2.0 | ২.০ ও ২.১ ছিল Eclair Version এবং এর পরে আপডেট আসে ২.২ Froyo ও ২.৩ Gingerbread |
3 | ২২ ফেব্রুয়ারী , ২০১১ | 3.0 | Honeycomb |
4 | ১৮ অক্টোবর , ২০১১ | 4.0 | Ice Cream Sandwich, এর পরে আপডেট আসে যথাক্রমে ৪.১,২,৩ Jelly Bean ও ৪.৪ Kitkat |
5 | ১২ নভেম্বর , ২০১৪ | 5.0 | ৫.০ থেকে ৫.১.১ Lollipop Versions |
6 | ৫ অক্টোবর , ২০১৫ | 6.0 | Android Marshmallow |
7 | ২২ আগস্ট , ২০১৬ | 7.0 | Android Nougat |
8 | ২১ আগস্ট ২০১৭ | 8.0 | Android Oreo |
9 | ৬ আগস্ট ২০১৮ | 9.0 | Android Pie |
10 | ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | 10 | Android ( Quince Tart ) |
11 | ১৯ ফেব্রুয়ারী , ২০২০ | 11 | Android (Red Velvet Cake) |
12 | ৪ অক্টোবর , ২০২১ | 12 | Android 12 (Snow Cone) |
13 | ১৫ অগাস্ট , ২০২২ | 13 | Android 13 ( Tiramisu ) |
আপনি যদি এই নামগুলি দেখেন , তবে আপনি বুঝতে পারবেন যে প্রতিটি version এর নাম ইংরেজি বর্ণমালা অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে ।
এন্ড্রয়েড এর আগে শুধুমাত্র মোবাইল ফোনের জন্য বিখ্যাত ছিল , তবে এর প্রচলন বাড়ার সাথে সাথে বর্তমানে টিভি , smartwatch , ও বিভিন্ন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদিতে এন্ড্রয়েড এর ব্যবহার করা হচ্ছে ।
আশা করি আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা এন্ড্রয়েড কি ও এন্ড্রয়েড সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনেছেন এবং ছোট ছোট জিনিস গুলো ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন ।
যদি আপনার এই তথ্য সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা ও সমস্যা থাকে তবে আপনি নিচের কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং আমরা আপনার সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করবো ।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টীম
শুধু মাত্র স্মার্টফোন ব্যবহার করি , এন্ড্রয়েড এতো সব বিষয় জানা ছিল না স্যার
ধন্যবাদ ভাই
Android er sombondhe eto govir totho guli jana chilo na
Dhonnobaad
eto ta deep information deuar jonno dhonnobaad sir, bongogyan sera bangla blog
ধন্যবাদ , আমাদের ব্লগ এর সাথে এইভাবে যুক্ত থাকুন , আশা করছি আমরা আরও ভালো কাজ করতে পারবো আপনাদের জন্য