গরম পড়তে না পড়তেই বাজারে কিন্তু এখন থেকেই চলে এসেছে তরমুজ, গরমে সূর্যের ভীষণ তাপে শরীর কে ঠান্ডা রাখতে এই ফল টির এর জুড়ি মেলা ভার, ঠান্ডা ঠান্ডা এই ফল টির মধ্যে ৯২% জলে ভর্তি তাই শরীর এ জলের চাহিদা খুবই সহজে মেটাতে সক্ষম এই রসালো ফল টি।
তরমুজ
তরমুজ একটি মৌসুমী ফল তাই খেতে সুস্বাদু হবার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের রোগ থেকেও আমাদের কে রক্ষা করে, এই ফল টির মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীর এর অঙ্গ পতঙ্গ কে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে থাকে। যেকোনো মৌসুমী ফল এই আমাদের জন্য খুবই উপকারী তার মধ্যে এটি অন্যতম, যারা ওজন নিয়ে ভোগেন তারাও নির্ধিদায় এই ফল টি খেতে পারবেন কারণ এতে খুবই কম ক্যালোরি থাকে, তাছাড়া বাদবাকি ৯২% জল, ৬% শর্করা এবং ২% অন্যান্য খনিজ উপাদান।
এই রসালো ফলটি তো প্রায় সবাই খেতে খুব পছন্দ করেন, কিন্তু খাওয়ার পাশাপাশি যদি আমরা একটু জেনে নি যে তাকে খাওয়ার উপকারিতা কিভাবে আমাদের শরীরে কাজে লাগছে বা এটি খেলে আমাদের কি কি রোগের আশঙ্কা কমে যাই, শুধু তাই নয় আজকে আমরা এটাও দেখে নেবো যে এই ফল টির কোনো অপকারিতা আছে কিনা, তাহলে চলুন আজকের এই পোস্টটি শুরু করা যাক।
সুচিপত্র
ডিহাইড্রেশন(Dehydration)
গরমে অনেক সময় আমরা ঠিক মতো জল খেলেও শরীরে ক্লান্তি লাগে অথবা মাথা ঝিম ঝিম করে উঠে বা কোথাও বাইরে গেলে জল খেলেও সেটা আমাদের শরীরে লাগে না ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যাই ফলে শরীর দুর্বল হবে পরে এর কারণ হলো ভীষণ গরমের জন্য আপনার শরীরে এ ডিহাইড্রেশন হয়ে গেছে। আমরা জানি যে এই ফল টিতে এ প্রায় ৯২% জল থাকে তাই চেষ্টা করুন গরমে অল্প করে হলেও পরদিন একটু করে তরমুজ রাখার অথবা বাইরে গেলে তরমুজ এর জুস ও খেতে পারেন, এতে আপনার শরীরের জলের চাহিদা পূর্ণ হবে আপনি এই ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পাবেন।
ক্যান্সার থেকে মুক্তি
তরমুজ এ রয়েছে প্রচুর পরিমানে আন্টিঅক্সসিডেন্ট, এবং লাইকোপেন তাই এই ফলটি নিয়মিত খেলে কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার এর মতো বড় বোরো অসুখের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাই।
স্নায়ু কে সঠিক ভাবে পরিচালনা করে
এই ফলে আছে ভিটামিন বি, পটাসিয়াম এবং আঁশ জাতীয় উপাদান, আমাদের শরীর তথা মুখে অসংখ স্নায়ু থাকে খুবই পাতলা পাতলা শিরার মতো দেখতে হয় অনেক টা মাকড়সার জালের মতো এই স্নায়ু তন্ত্রের সঠিক পরিচালনার জন্য এই ভিটামিন গুলি থাকা খুবই দরকার যে সারা শরীরে স্নায়ুর পরিচালনা ঠিক ভাবে করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়ায়।
দৃষ্টিশক্তি
তরমুজ প্রতিদিন খেলে আপনার চোখের দৃষ্টি খুবই ভালো থাকে, এতে ক্যারোটিনয়েড নামক এক ধররণের পুষ্টিকর উপাদান থাকে যার ফলে চোখ ভালো থাকে, তাছাড়াও চোখের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা যেমন চোখে ছানি পরে যাওয়া অথবা চোখের পাওয়ার কমে যাওয়া এই সবের হাত থেকে বাছাই, এবং অনেকেই রাতকানা মতো অসুখে ভুগেন এই ক্যারোটিনয়েড রাতকানা মতো অবস্থা থেকেও রাখা করতে এই ফলটি খুবই কার্যকরী।
গর্ভবর্তী মহিলাদের জন্য উপকারী ফল
গর্ভবর্তী মহিলা যারা আছেন তাদের জন্য বলা হয় যে তরমুজ খাওয়া খুবই ভালো, তাই চিকিৎসকরাও এই ফলটিকে খাওয়া উপদেশ দিয়ে থাকেন, পুষ্টি তে ভরপুর এই ফল টি শক্তি যোগান দেয় এই এতে থাকা জল শরীর কে জলের ঘাটতি থেকে দূরে রাখে।
নখ কে ভালো রাখে
এই ফল টিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং বি যা আমাদের হাত পায়ের নখ কে ভালো রাখতে খুবই কার্যকরী, মাঝে মাঝে নখ হলুদ হয়ে যাই বা নখের আকার ভালো হয় না অথবা খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে যাই, এই সমস্ত রকম সমস্যা কে দূরে রাখে এই তরমুজ।
তাছাড়াও নখের পাশাপাশি নিয়মিত তরমুজ খেলে আমাদের দাঁত এর সমস্ত সমস্যা দূর হয় এবং চুল কেউ খুব ভালো রাখে।
ত্বক কে ভালো রাখে
শরীর কে ভালো রাখার সাথে সাথে এই ফল টি আমাদের ত্বক কেউ খুব ভালো রাখতে সক্ষম, তরমুজ এর মধ্যে পাওয়া যাই কোলাজেন নামক এক ধরণের উপাদান যা আমাদের ত্বকের উপর কাজ করে। আমাদের মুখে অনেক সময় একটা কালো ভাব চলে আসে, অনেক সময় রাত জাগলে বা অনেক চিন্তার মধ্যে থাকলে মুখের লাবণ্য নষ্ট হয়ে যাই, চোখের তোলাই কালী পরে যাই এবং মুখ এ আরো বিবর্ণ করে তোলে এই সকল সমস্যা থেকে লড়াই করে এই কোলাজেন তাই নিয়মিত এই ফল টি খেলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে সাথে মুখের লাবণ্য ও ফিরে আসে।
তরমুজের অপকারিতা
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা এই দুই বিষয়ে আমাদের জ্ঞান থাকা দরকারি, ফল টির ভালো দিক গুলোর সাথে সাথে কিছু খারাপ দিক ও আছে সেগুলো কে একটু মাথায় রেখে চলতে হবে।
- তরমুজের মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবে শর্করা রয়েছে তাই এর অতিক্ত সেবন কখনোই ভালো নয়, এতে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- আপনি যদি খুবই বেশি করে তরমুজ খেয়ে পেলেন তাহলে পেট ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর জল তাই খান অবসসই তবে অল্প খান। একসাথে অনেক তা না খেয়ে অল্প করে বার বার খেতে পারেন এতে কোনো সমস্যা নেই।
- আমরা জানি এই ফল টিতে প্রচুর জল থাকে তাই তরমুজ খাওয়ার ৩০ মিনিট পরেই আবার জল পান করুন।
- রাত্রি বেলায় তরমুজ না খাওয়ার ভালো একান্ত যদি খেতে চান তাহলে সন্ধে দিকে অল্প করে খেতে পারেন কারণ রাত্রে আমরা কোনো এক্টিভিটি করি না তার ফলে হজমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে তাই চেষ্টা করুন রাত্রে না খাওয়ার।
একনজরে : আজকে এই পোস্ট থেকে আমরা কি কি জানলাম
প্রথমে আমরা জানলাম যে তরমুজ খেলে আমাদের শরীর কিভাবে তার উপকার পাবে , এবং তারপর জেনে নিলাম এটি খেলে কি কি শারীরিক সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাবো, এবং এই ফল টির খাওয়ার উপকারিতার সাথে তার কিছু অপকারিতা নিয়েও আমরা আলোচনা করলাম ।
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে পেরেছেন , এছাড়া তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা বা এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান যেখান থেকে আমরা আরো মোটিভিশন পাই।
আমাদের আজকের এই পোস্ট টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধু দের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর এরকম নিত্যনতুন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ব্লগের সাথে যুক্ত থাকুন, এবং আমাদের সহযোগিতা করতে থাকুন।
ধন্যবাদ
বঙ্গজ্ঞান টিম